somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বকসিস

২২ শে এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৬:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুইটা পরোটা আর ডাল-ভাজি। এটা আমার প্রিয় নাস্তা। অবশ্য নাস্তাটা যখন হোটেলে করা লাগে তখন। অফিসের গলির মুখের হোটেলটায়ই বেশি নাস্তা করা হয় । সকাল বেলায় হোটেলটায় বেশ ভিড়। মামাদের ছুটোছুটি , পানি দেবার বালকদের বিস্তর দৌড়াদৌড়ি। ডেকেই পাওয়া যায় না।একটা পরোটা প্লেটে দিয়ে গেল তো আরেকটা তখনও উনুনে তপ্ত কড়ুইয়ের উপর খুন্তির উপর্যপুরি আঘাতে লাফাচ্ছে। আবার কখনও ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া মেন্তা মারা পরোটাই থাকে ভাগ্যে। পরোটা যেমনি হোক ন না কেন দুই পরোটা আর ডাল-ভাজি, এই নাস্তার বিল ৩০ টাকা। হোটেলের জন্য আমি সস্তা কাস্তমার। তাই নাস্তা খাবার সময় মামাদের কোনও খোঁজ থাকে না কিন্তু বিল দেবার জন্য যখন কাউন্টারে যাওয়া হবে তখন কোত্থেকে ওয়েটার মামা হাজির। ১০০ টাকার নোট হাত থেকে একরকম কেড়ে নিয়ে ক্যাশ অফিসারকে দিয়ে বলবে , ত্রিশ টাকা রাখেন। তার এই ঊড়ন্ত আগমনের হেতু পরিষ্কার। ৩০ টাকার বিলে কয় টাকা বকসিস দেয়া যায় সেটা আমার মাথায় খেলে না। তাই তাকে মাঝে মাঝে খুশি খুশি মুখ আবার কখনও দুখি দুখি মুখ দেখেও না দেখার ভান করে বেরিয়ে আসি।

নাপিতের দোকানে চুল কাটানো আরও মজাদার। চুল অর্ধেক কাটা হওয়া থেকে শুরু হয় কানের কাছে আস্তে আস্তে ঘ্যানর ঘ্যানর। স্যার, চুল তো পাইকা একদম সাদা হইয়ে গেছে। ভাল দামী কলপ আছে করে দেই। কেশ কালা মেন্দিও আছে , স্যার লাগায় দেই। আমি তখন নিসচুপ , একেবারে বধির যেন।(অবশ্য তাদের মিষ্টি কথায় ভুলিয়া পকেট ফাঁকা করার ঘটনা যে একাবারে নাই তা নয়...) ঘ্যানর ঘ্যানর করতে করতে চুল কাটা শেষ হয় একসময়। যখন নরসুন্দর সাহেব দেখেন, ব্যবসা একেবারে মাঠে মারা তখন শেষ চেষ্টা করে, স্যার মাথাডা বানায় দেই, আরাম পাইবেন। আমি শুনিয়া ও না শোনার ভান কইরা উহাকে মাথাডা বানানোর হাত হইতে বঞ্চিত করিয়া , আড়মোড়া ভাঙিয়া চেয়ার হইতে দণ্ডায়মান হই। বাসার পাশের সেলুনে শুধু চুল কাটা বিল ৬০ , ক্যাশ অফিসারকে টাকা দিচ্ছি কিন্তু কেউ আরেকজন পিছন থেকে আমার হাতের দিকে মানে ক্যাশ লেনদেনের দিকে তাকিয়ে আছে। অথচ পরের কাস্টমার তার চেয়ারে বসে। যাই হোক ৬০ টাকার বিলে কয় টাকা বকসিস দেয়া যায় সেটা আমার মাথায় খেলে না। এখানেও কোনোদিন সে খুশি আবার কোনোদিন সে ব্যাজার। সেটা অবশ্যই নির্ভর করবে আমার মেজাজ মর্জির উপর।

পেপারের হকারটা নিয়মিতই পেপার দিয়ে যায় নিচে দারোয়ানের কাছে কিন্তু আমার বাসায় পেপার কখনো পৌছায় , কখনও পৌছায় না আবার কখনও বা পৌছায় আংশিক। আংশিক মানে পেপার দরজার নিচ দিয়ে এসেছে কিন্তু সাথে ‘রস-আলো’ বা ‘আনন্দ’ মিসিং। এই না পাওয়ার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে দেখলাম । এটা আমাদের দুষ্টু দারোয়ান আর তার পরিবারের কৃত্তি। অবশেষে হকার ছেলেটাকে বললাম , দেখ বাপু, আমি তো পেপার ঠিকমত পাচ্ছি না। তুমি যদি উপরে এসে নিজে পেপার দিয়ে যেতে পার তাইলে দিবা নাইলে আগামী মাস থেকে খোদা হা-ফেজ। তারপর থেকে সে উপরে এসেই পেপার দিয়ে যায়। আমার পেপার মিসিং ঘটনার ইতি হয়। মাঝখান থেকে দারোয়ান সাহেবের পরিবার আগে রস-আলো পড়ে বিনে পয়সায় একটু হাসা-হাসি করত সেটা মাঠে মারা যায়। হকার ছেলেটা যখন বিল নিতে আসে , তখন তার এই সিঁড়ি বেয়ে এক্সট্রা কষ্টের জন্য আমার একটু এক্সট্রা খাতির করতে হয় এই যা...। কিন্তু আজকে দেখি সে পেপার বিলের সাথে একদম সার্ভিস চার্জ বাবদ ২০ টাকা ধার্য করে বিল বানিয়ে নিয়ে এসেছে। কি দারুণ বুদ্ধি। বকসিসটা একটু হালাল করে নেয়া। বুদ্ধিটা আমার পছন্দ হইছে।

এসব ছোটোখাটো বকসিস আমরা খুশি হয়েই দেই। অনেক ক্ষেত্রেই দেই। সবাই জানে আর তাতে দেশের কোনও যায় আসে না। কিন্তু বড় বড় বকসিস কিছু আমরা জানি কিছু জানতে পারি না। দেনে-ওলার স্বার্থ উদ্ধার আর পানেওলার দিল খুশ হচ্ছে কিন্তু তলে তলে দেশ জাতির বারোটা হয়ত ঠিকই বেজে যাচ্ছে ...
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×