somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসমানী: নিরুত্তাপ জীবনে দরিদ্রতার ছাপ

২৫ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রিয় কবি জসিমউদ্দিন। পল্লিকবির টাইটেল যাকে এনে দিয়েছে মহিয়ান জীবন। বাংলার সহজ সরল মানুষদের নিয়েই পল্লিকবির কাব্যের যাত্রা ছিল অন্তপুরে, আকাশছোয়া স্বপ্নে বিভোর চিন্তাশৈলি। মানুষকে দেখেছেন, লিখেছেন কবিতা। যা দেখা তা নিয়েই লেখা এ বুঝি পল্লিকবির ক্ষেত্রেই বড়ো বেশি মানিয়ে যায়। সহজ জীবন ও প্রকৃতির অপরিসীম উপাত্তে রসদ যুগিয়েছে কবির চিন্তায়, মননে ও কর্মসাধনায়। আড়ষ্টিত ছিল বাংলার পাখি, বাংলার ফল, বাংলার জল। সবুজ শ্যামল গ্রাম বাংলার ধ্যান মগ্নে প্রাধান্য পেয়েছে প্রিয় মাঠ, ফসলি ক্ষেত, সবুজ চত্তর, গোল ভরা ধান, গরুর গোয়াল, পাখিদের কলকাকলি,কৃষানির ঘামঝরা অলস দুপুর, লাঙ্গল জোয়ালসমৃদ্ধ কৃষক, চতুর মহাজন, লাজুক লতার মতো নুয়ে পড়া গায়ের বধূ। পল্লিকবির কাব্যভাবনায় তাই অতিযতেœ উঠে আসে দরিদ্রমানুষজনের প্রতিনিয়ত সংগ্রামী অসাড় জীবন।
আসমানি কবির সৃষ্ট এক অনবদ্য সহজ সরল গ্রামীণ চরিত্র। যার জীবন অনাহারের, পেটপুরে খেতে না পারার গগণবিদারি হাহাকার, হতাশা নির্ভর প্রকট ও প্রচ্ছন্ন এক জীবন, পুবের আকাশে কালোমেঘের সঞ্চারন হলেই আসমানির বুক জুড়ে নেমে আসা আতন্ক । তাই বৃষ্টি মানেই আসমানির কাছে বিড়ম্বনার, শীতল কষ্টের । জম জমিয়ে বৃষ্টির সহিত ঝুমুর ঝুমুর নুপুরের আওয়াজের মিল আসমানীর জীবনে অনুপ¯িহত ছিল। বৃষ্টিও আনন্দের হতে পারে তা ছিল চিন্তা থেকেও অনেক দূরে।মিল খোজার কোন চেষ্টাই জীবনকে উৎসাহিত করেনি। জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার প্রাণবন্ত প্রচেষ্টাই ছিল প্রকৃতির অপ্রকৃতিস্হ দান। তাই আসমানি বৃষ্টির হলে আনন্দে আতœহারা হবার আগে আতœসংবরনই যার অপাঙ্ত্যায় চিন্তায় আলোড়িত হয় ক্ষুধার্ত মস্তিস্ক, যার জীবন আটকে আছে ভেন্নাপাতার ছাউনির ঢেরায়, আর সেই ঢেরায় আটকে থাকা জীবন নিয়েই আসমানির জীবনে অসন্তুষ্টি লুকায়িত। এ এক চিরায়িত বাংলার দরিদ্র জীবনের প্রলম্বনমাত্র। আর সেই জীবন দেখার আহবান জানিয়েছেন কবি। কিন্তু কেন? কেন আসমানিকে দেখতে যেতে হবে? খেতে না পাওয়ার কষ্ট ও হাহাকার ভরা বুকের হাড়গুলোর কি দাবি ছিল কবির কাছে? সমাজ রাষ্ট্রের প্রতি আসমানিদের ঘৃনা কি খেয়ে বেচে থাকার উপর দন্ডায়মান!
কবির কবিতা পড়ে আসমানিরে হাজার মানুষ দেখতে যায় তাতে আসমানির ভাগ্যের কি বদল ঘটে? কবিতায় বর্ণিত আসমানির চেয়ে ভয়াবহ এক দরিদ্র আসমানিকে দেখা গেছে প্রতিনিয়ত। একই রুপে আসমানি স্তিমিত হয় কাব্যে তাতে কাব্যের কি জাত যায়? নোংরা আবর্জনা অস্বাস্হ্যকর এক পরিবেশ আসমানীর জীবন বলয়ে আবদ্ধ। সেই জায়গা থেকে তাকে কেউ তুলে আনতে পারেনি। উপরুন্তু আসমানি রাজনীতির শিকার হয়েছে। কতোক এমপি কতোক মন্ত্রীর সফরও আসমানিকে দারিদ্রমুক্ত করতে পারেনি। আসমানির সান্নিধ্য আসমানির সহিত ফটোসেশন ইত্যাদি নিয়মিত দস্তাদস্তিতে আসমানির ক্ষুধার্ত জীবনকে ভারাক্রান্ত করেছে। তাই আসমানি লোকদেখলেই লোকচক্ষুর আড়ালে যাওয়ার চেষ্টা তার ক্লান্তিকে স্পষ্ট করেছে। এ যেন দারিদ্রতার সহিত তামাশাই ছিল সমধিক। আসমানি অনবদ্য কাব্যের এক অমর চরিত্র কিন্তু আসমানির জীবনের দু:খ কষ্ট ও গ্লানি প্রতিনিয়ত কাব্যের নিসৃত রসে হাবুডুবু খাবে। তাতে আসমানির জীবদ্দশায় কি ফয়দা ছিল বা মরে গিয়েও কি ফয়দা পাবে? এমন প্রশ্নের উত্তরওতো উত্তরাধুনিকায়ন কাব্যসংগ্রহশালায় থাকা উচিত বা প্রযোজ্য বলে পঠিত হতে পারে। আসমানির দরিদ্রতার যে তামাশা সমাজ ও রাষ্ট্রিয় জীবনের গোপন সাক্ষি তা থেকেও তো উত্তরনের কোন পথ থাকলোনা।
প্রায়শ্চই স্হানীয় জেলা প্রশাসনকে পত্রিকান্তরে জানা যায় আসমানির চিকিৎসা দায়িত্ব নেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা ছিল বিপরীতব্য। সশরীরি সাক্ষাতে আসমানির ঔষুধের কষ্টও ছিল অপরিসীম। তার পরিধেয় বস্ত্রও তো জোড়া তালিমুক্ত হতে পারেনি। ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এই লেখক আগ্রহী হয়ে আসমানির সাক্ষাত লাভের আশায় ছুটে যায় সেই রসুলপুর। কিন্তু আসমানির শারীরিক হালহকিয়ত দেখে চমকে যেতে হয়েছিল সেদিন। ৭ দিনের জ্বরে ভোগে আসমানীর জবান দিয়ে কথা বের হতে চায়নি। কথাগুলো কেমন যেন প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল জীবন সংগ্রামে বেচে থাকার বিরুদ্ধে। তার অসুস্হতার খবর শুনে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা মিডিয়াসমেত উপস্হিত হতো আসমানির বাড়িতে। তারপর একটা সরকারি এম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে বাজিয়ে ছুটে যেত ফরিদপুর জেলা সদর হাসপাতালে। তারপর দুই দিন সরকারি চিকিৎসা শেষে তাকে বাড়ি ফিরতেও হাত পাততে হতো হাসপাতালের সদর দরজায় সাধারন মানুষের কাছে। হাসপাতাল থেকে ফিরে ঔষুধ খাওয়ার পয়সার অভাবে আসমানির চোখের কোনে জমাটবদ্ধ জল যেন প্রতারনার বিরুদ্ধে লোক দেখানো সেবার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত প্রতিবাদ করে গেছে। ভেন্না পাতার ছানির জায়গায় টিনের চালা আসমানি পেয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার ক্ষুধার্ত পেট পায়নি দুবেলা পেটপুরে খাওয়ার দাবি অপুর্ণই থেকে গেছে। এমনকি তার ব্যবস্হাপত্রেও স্পষ্ট করে লেখা আছে পুষ্টিহীনতার কথা।
জেলা প্রশাসন কিংবা রাষ্ট্রযন্ত্র উদ্যোগি হয়ে আসমানিকে পুর্ণবাসনে তার পুত্র কিংবা নাতি নাতনিকে কর্মসংস্হানের ব্যবস্হা করতে পারেনি। যতোবারই আসমানি অসুস্হ হয়েছে ততবারই মিডিয়ার প্ররোচনায় রাষ্ট্র অনেকটা বিচলিত হয়ে তার চিকিৎসার দায়হীন দায়ভার গ্রহণ করেছে। তাও ছিল ফরিদপুর উপজেলা বা জেলা স্বাস্হ্যকমপ্লেক্স পর্যন্ত। এমনকি ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ পর্যন্তও যাওয়া আসমানির ভাগ্যবিড়ম্বিত করেছে! প্রশাসন ব্যয়ভার গ্রহনের নামে ব্যয়হীন চিকিৎসার দিকে বেশি মনোযোগী ছিল তা সাদা চোখেও দৃশ্যমান ।
সংক্ষেপে যদি বলি এই ছিল আসমানির ৯৯ বছরের না খেয়ে থাকার সংগ্রামের কথা। এই সেই পল্লিকবির আসমানি। একটা আসমানিকেই রাষ্ট্র দারিদ্রমুক্ত করতে পারেনি, সেই রাষ্ট্র কিনা দারিদ্রমুক্ত জাতিতে পরিগণিত হওয়ার স্বপ্নে বিভোর! কাব্য প্রেমিক, সুশীল সমাজ, কবিগোষ্ঠি, শিল্পগোষ্ঠি, সাংস্কৃতিক গোষ্ঠি কেউ ই আসমানির জীবনে কাজে আসেনি। সবই ছিল মিডিয়ায় প্রচারিত হওয়ার মিথ্যে প্রবঞ্চনা । তাই আসমানির সমার্থক নাম দারিদ্রতা। না খেয়ে থাকা ৯৯ বছরের অধিকাংশ মহুর্তগুলো। ধিক সমাজব্যবস্হা! ধিক তথাকথিত সুশীল বুদ্ধিজীবি সমাজ। জয় হেতু মিথ্যে প্রচারনা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কোথায় বেনজির ????????

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫




গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। গত ২৬ মে তার পরিবারের সকল স্থাবর সম্পদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×