somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃষ্টির রাত, বৃষ্টির কান্না !!

২৪ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৪ বছরের ছোট্ট মেয়ে, বৃষ্টি। দিনমজুর বাবা আকবর মিয়ার একমাত্র সন্তান। আষাঢ়ের এক বৃষ্টির রাতে জন্ম ওর, তাই মা আদর করে নাম রেখেছিল বৃষ্টি। ভদ্রলোকের এই ঢাকা শহরের কোনও এক বস্তিতে সমবয়সীদের সাথে খেলেই দিনগুলি কেটে যায় বৃষ্টির। বরফ পানি, চোর-পুলিশ , রান্নাবারি . . . . . . আরও কত কি খেলে ও!! তবে, চোর পুলিশ খেলাটায় মজা হয় সবচেয়ে বেশি । একজন চোর হয়ে লুকায়, বাকিরা সবাই তখন পুলিশ হয়ে চোরটাকে খোজে। সব চোরকেই
একসময় খুজে পাওয়া যায়, শুধু ঝামেলা করে রুনু। ও যে কই কই পালায়, খুজেই পাওয়া যায় না। তাই ,রুনুকে কেউ চোর বানাতে চায় না। রুনু যেবার চোর হয়, পুরো খেলা শেষ হয়ে যায় শুধু ওকে খুজতে খুজতেই।

খাওয়া দাওয়া বৃষ্টির একদম ভালো লাগে না। বেলায় বেলায় ওই একই ডাল আর আলুভর্তা- কতদিন এই খাওয়া ভালো লাগে?

তবে খুব ভালোলাগে টিভিতে কার্টুন দেখতে। বস্তির পাশে যে একতলা রিকশার গ্যারেজ, সেই গ্যারেজের মালিক জয়নাল চাচা। খুব আদর করে চাচা ছোট্ট বৃষ্টিকে। বাসায় গেলেই কোলে বসিয়ে এটা খাওয়ায়, ওটা খাওয়ায়। ঈদের দিন জয়নাল চাচার বাসায় গোস্ত দিয়ে যে পোলাও খেয়েছিল, ওইরকম খায়নি ও অনেকদিন।
খাওয়া দাওয়া ছাড়া চাচার বাসায় আর সবচেয়ে যেটা ভালো, সেটা হল ইচ্ছামত কার্টুন দেখা যায়। ঐ যে একটা কার্টুন আছে, ইদুর আর বিড়ালের, একটা আরেকটার পেছনে সারাদিন ছুটে আর ছুটে, ওই কার্টুনটা দেখতেই ওই বাসায় বেশি যায় বৃষ্টি।
আম্মা মানা করে, শুনলেই খুব বকে। তবু, গোপনে যায় ও।
কি করবে না গিয়ে? এত মজা কার্টুনটা। আর, ওদের বাসায় তো টিভি নেই। আব্বাকে একবার বলেছিল একটা টিভি কিনে দেয়ার জন্যে। আব্বা এমন বকা দিয়েছে, আর সাহস হয়নি কোনদিন বলার।
তাই ও গোপনে জয়নাল চাচার বাসাতেই যায়। ছোট মানুষ বেচারা !

একদিনের কথা। সেই সকালে বের হয়েছে বৃষ্টি, এখন প্রায় দুপুর , কিন্তু বৃষ্টির ফেরার নাম নেই। ততোক্ষণে ওর আম্মার রান্নাও প্রায় শেষ। অথচ বৃষ্টির খবর নেই। খেলতে গেলে কখনো এত দেরি তো করে না ও !!

শুরু হল খোঁজাখুঁজি। কিন্তু, আশেপাশের ঘরগুলোতে অনেক খুজেও পাওয়া গেলনা ওকে। চিন্তায় পড়ে গেলেন মা বেচারি। খুজতে লাগলেন সারা বস্তি। কোথাও নেই, কোথাও নেই !! হাক ডাক কান্নাকাটির রোল পড়ে গেলো। আশেপাশের ঘরের মহিলারাও খুজতে নেমে গেলেন।

অবশেষে অনেক খোজাখুজির পর বৃষ্টিকে পাওয়া গেল। বস্তি আর গ্যারাজের মাঝে যে গলিটা, ওই গলির শেষ মাথায় পরে আছে ও, নিরব, নিথর, ঠাণ্ডা হয়ে। পা দুটো রক্তে ভেজা। ঠিক ওই মুহূর্তেই রিকশা নিয়ে গ্যারেজে ঢুকছিল বাবা আকবর মিয়া। হাঁকডাক শুনে গিয়ে দেখে
এই অবস্থা। এরপর মেয়েকে বুকে চেপে কীভাবে যে হাসপাতালে পৌঁছে গেলো, তা বোধহয় সে নিজেও জানেনা। কোনও কিছুই খেয়াল ছিলনা তার ওই মুহূর্তে। শুধু কানে বাজছিল বৃষ্টির মার গলা- "আমার মাইয়ার এই সর্বনাশ কে করল রে ??"

হাসপাতালে গভীর রাত্রে জ্ঞান ফিরল বৃষ্টির। মায়ের কোলে ভয়ে একদম জড়সড় হয়ে আছে বেচারা। কারো সাথে কথা বলছে না একদম। জ্বর এসেছে অনেক, ১০৩ এর উপরে। চোখ বুজে কোনরকমে শুয়ে আছে,
আর একটু পরে পরে বিড়বিড় করে বলছে- "আম্মা, আমি আর টিভি দেখতে যামু না আম্মা, আমারে আর মাইরো না।"
আকবর মিয়া আস্তে আস্তে মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর শুধু বারবার জিজ্ঞেস করছে- "কেউ তোরে মারবে না মা, কেউ তোরে আর মারবে না। তোরে কে ব্যাথা দিছে মা? আমারে শুধু একবার বল।"

অনেকবার জিজ্ঞেস করার পর কোনোরকমে একবার চোখ মেলে তাকালো বৃষ্টি। আর বলল- "আমি জয়নাল চাচার বাসায় টিভি দেখতে গেছিলাম। তখন চাচায় আমারে কোলে নিয়া আমার ওইখানে অনেক জোরে ব্যাথা দিছে আব্বা। আমি আর যামু না টিভি দেখতে, আমারে মাইরোনা আব্বা। আমারে মাইরোনা।" বলেই ডুকরে কেঁদে উঠলো বৃষ্টি। ওর কান্না দেখে কেঁদে ফেলল বাকী সবাই ।
আর, সেই কান্নার তোরে আরও জোরে কেঁদে ফেলল বৃষ্টি।

সব শুনে কোনোরকমে দীর্ঘশ্বাস চেপে রাতের শেষ ইনজেকশনটা পুশ করে আস্তে আস্তে ডক্টরস রুমে ফেরত আসে ডাঃ নিম্মি । রাত অনেক হয়েছে। একটু শুতে পারলে ভালো হয়। কাল আবার সারাদিন ডিউটি আছে। বাইরে ঝমঝম বৃষ্টি পড়ছে। দরজার ছিটকিনিটা শক্ত করে লাগিয়ে দিলো সে। এখনও অনেক অন্ধকার বাইরে !! এখনও অনেক রাত !!
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×