ধর্মের মানবতা।।
লেখিকা ঝর্ণাদাশ পুরকায়স্থ একাত্তরেপাকিস্তানে আটকা পড়েছিলেন ।পুরো ’৭২-এও দেশে ফেরার সুরাহা না হওয়ায় দুঃসহ সেই বন্দী জীবন থেকে মুক্তির জন্য প্রচুর অর্থের বিনিময়ে আরও পাঁচ মুসলিম পরিবারের সাথে দীর্ঘ পথ পাড়ি জমান। পাকিস্তান পেরুবার শেষ বর্ডার “চমন” এর কাছে এক ট্রাইবাল চিফ এর বাসায় আশ্রয় মেলে । মেয়েরা বাড়ির অন্দর মহলে যায় । সবাই ক্ষুধার্ত, তার চেয়েও বেশি তৃষ্ণার্ত ।জল চাই একটু তৃষ্ণা মেটাতে । কিন্তু বাড়ির কর্ত্রী জল দেবার আগে যাচাই করতে চাইলেন –তোমরা সবাই মুসলমান তো ? সবাই এক বাক্যে হ্যাঁ বললেন । কিন্ত বাড়ির কর্ত্রী বোধহয় তাতেও বিশ্বাস হল না । জল হাতেই সবাইকে পরীক্ষা করতে চাইলেন-কলেমা বল । এক এক করে মুসলিম মেয়েরা এগিয়ে যান। কলেমা পড়ে তবে জলপান । এবার ঝর্নাদাশ পুরকায়স্থের পালা । তিনি তো কলেমা জানেন না , - জীবন মরণের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে শেষে এক উপস্থিত বুদ্ধির জোরে বেঁচে গেলেন । কাছে একটু এগিয়ে বললেন-‘সারাদিন তো পথে পথে,নানা অবস্থায় শরীর তো পবিত্র নাই,কলমা পড়ি কি করে ?’
সর্দারের বিবি শুধু তাকে ছাড়ই দিলেন না,আরও খুশী হয়ে বললেন-এত্ না পরহেযগার ! (পাকিস্তানের বন্দিশালায় দিনরাত্রি- নঝর্নাদাশ পুরকায়স্থ)
ধর্ম মানুষকে উদার করে ।কিন্তু দেখা যাচ্ছে তা সব সময় সত্যি নয় । পাক ট্রাইবাল মহিলাটির এই আচরণ কোন্ নৈতিকতার মানদন্ডে বিচার করবো জানিনা । তৃষ্ণার্ত মানুষের মুখের সামনে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য যাকে পরীক্ষা দিতে হয় –সেই মানসিকতার ধর্মীয় ব্যখ্যা আমার জানা নাই। সত্যিকার ধার্মিকেরা হয়তো এটি সমর্থণ করবেন না,বলবেন -এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা , অথবা বলবেন- ধর্ম এমন বলেনা ।
আমি ঠিক জানিনা । কিন্তু আমার মনে হয় –নিশ্চয়ই কোথাও বলে। নইলে এমন ব্যবহার কেন তৈরি হয় ধর্মীয় মানুষের মনে ? ধর্ম কখনও এমন অধর্মীয় আচরণ করে -সেটা ধর্ম মেনেই করে ,তার বিশ্বাস থেকেই করে । বিশ্বাস অন্ধ- সেখানে মানবতা নাই ।