somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসুস্থ মানুষের পাশে জান্নাতের পরিবেশে

২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাম্য ও সৌহার্দ্য এবং মায়া ও ভালোবাসার ধর্ম ইসলাম। সমাজ ও জীবনের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় স¤প্রীতির সবক শিখিয়েছে ইসলাম। আমাদের চারিদিকে কৃত্রিম লৌকিকতা এবং স্বার্থের হানাহানিতে ঢাকা পড়ে আছে ইসলামের অজস্র অনুপম নির্দেশনা এবং সুদূরপ্রসারী নীতিমালা। শুধু নামাজ-রোজা কিংবা হজ্জ-যাকাতের বেলায় নয়, সওয়াব কিংবা গযবের ওয়াজ-নসীহত নয়, বরং সামাজিক বিষয়সমূহে ইসলামের বাণীগুলোতেই এ সুমহান ধর্মের আসল রূপ এবং প্রকৃত সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। তেমন অসংখ্য বর্ণনা থেকে আজকের বিষয়- রোগীর পাশে থাকার ফযিলত এবং উপকারিতা।

আমরা বিশ্বাস করি, রোগ-ব্যধি এবং বালা-মুসিবত আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে আসে। জীবন সংসারে বিপদগ্রস্ত এবং অসুস্থ রোগীদের জন্য তাই ইসলামে অনেক রকমের সুসংবাদ এবং সান্তনা জানানো হয়েছে। বিছানায় কাতর অসুস্থ মানুষ নিজেও যেমন পূণ্য এবং সওয়াবের অধিকারী, তেমনিভাবে যারা তাকে দেখতে যায়, শিয়রে বসে রোগীর সেবা-শুশ্র“ষায় সময় কাটায়- তাদের জন্যও নবী করিম সা. সুসংবাদ শুনিয়েছেন। হাদীসের বিশুদ্ধতম গ্রন্থ বুখারী শরীফে অসুস্থ মানুষের শুশ্র“ষা সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসসমূহ নিয়ে একটি আলাদা অধ্যায় রয়েছে। এর শিরোনাম ‘অসুস্থ মানুষের সেবা-শুশ্র“ষা আবশ্যক সংশ্লিষ্ট অধ্যায়’।
রাসূল সা. বলেছেন, যে কেউ অসুস্থ রোগীকে দেখতে যায়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত যেন জান্নাতের বাগানে বিচরণ করছে। (মুসলিম) স্বয়ং আল্লাহ পাক কিয়ামতের দিন অসুস্থ অসহায় মানুষদের পক্ষ থেকে অনুযোগ করে বলবেন, ‘আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, তুমি তো আমাকে দেখতে আসোনি।’ হযরত আলী রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, কেউ যদি সকাল বেলায় কোন অসুস্থ মানুষকে দেখতে যায় তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য দুআ করতে থাকেন। আর সন্ধ্যায় দেখতে গেলে সকাল হওয়া পর্যন্ত তারা দুআ করতে থাকেন। (তিরমিযী) আবু হুরাইরা রা. এর বর্ণনায় রাসূল সা. বলেছেন, অসুস্থ মানুষকে দেখা শেষে ফেরার পথে আকাশ থেকে একজন ঘোষক ঐ ব্যক্তির উদ্দেশ্যে ঘোষনা করেন, তুমি ভাগ্যবান। তোমার এ আসা-যাওয়া কতই না চমৎকার। তোমার জন্য জান্নাতে লেখা হল একটি বাসস্থান। (তিরমিযী)

শুধু উৎসাহ কিংবা সুসংবাদ নয়, তিনি এ ব্যাপারে আদেশও দিয়েছেন। বুখারী শরীফে সাহাবী হযরত আবু মূসা আশআরী রা. এর বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সা. বলেছেন, তোমরা ক্ষুধার্তকে আহার করাও, অসুস্থ মানুষকে দেখতে যাও এবং অসহায় মানুষের বিপদমুক্তিতে সাহায্য করো। মুসনাদে আহমদের বর্ণনায় অসুস্থ মানুষকে দেখতে যাওয়াকে এক মুসলমানের উপর অন্য মুসলমানের হক বা কর্তব্য বলা হয়েছে। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তায়মিয়া রহ. এ বিষয়টিকে ফরযে কেফায়া বলেছেন। কারণ এতে অসুস্থ ব্যক্তির মনে সান্তনা তৈরী হয়, সেবাকারীও সুস্থতার মূল্য সম্পর্কে সজাগ হয় এবং তাদের দুজনের মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়।
হাদীসের গ্রন্থসমূহে বর্ণিত বিভিন্ন রোগীকে দেখতে যাওয়ার কিছু নিয়ম ও আদাব রয়েছে। সেসবের মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হচ্ছে- অসুস্থ মানুষকে উপযুক্ত সময়ে দেখতে যাওয়া। গরমকালে দুপুর বেলায় কিংবা রমযান মাসে দিনের বেলা না গিয়ে বরং সকাল কিংবা সন্ধ্যায় যাওয়া। সম্ভব হলে রোগীর শিয়রে কিছুক্ষণ বসে মাথা বা কপালে হাত রাখা। বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় আয়েশা রা. বলেছেন, রাসূল সা. অসুস্থ মানুষকে দেখতে গেলে তার শরীরে ডান হাত বুিলয়ে দুআ পড়তেন।
রোগীর বর্তমান অবস্থা এবং তার মনের ভাব ও ইচ্ছার কথা জিজ্ঞেস করা। অসুস্থ মানুষের পরিবারের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে খুব বেশিক্ষণ তার কাছে না থাকা। অযথা বিষয়ে অসুস্থ ব্যক্তিকে অনবরত প্রশ্ন করে কিংবা তার সামনে কোন অনাকাঙ্খিত বিষয়ে কথা বলে বিরক্ত না করা। তার পাশে বসে সুস্থতার ব্যাপারে উৎসাহমূলক কথা বলা এবং রোগমুক্তির জন্য দুআ করা। যতক্ষণ অসুস্থ মানুষের পাশে বসে থাকার সুযোগ হয় ততক্ষণ আন্তরিকতা ও মায়া এবং ভালোবাসার অভিব্যক্তি প্রকাশ করা। আসার সময় অসুস্থ মানুষের কাছে নিজের জন্য দুআ চেয়ে আসা।

কল্যাণের উদ্দেশে অমুসলিম রোগীকে দেখতে যাওয়ায় কোন অসুবিধা নেই। রাসূল সা. ইহুদীর অসুস্থতার খবরে তার বাড়ীতে দেখতে গিয়ে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন। (বুখারী) শুধু পরিচিত স্বজন-বন্ধুকে নয়, বরং অপরিচিত অচেনা অসুস্থ মানুষকেও দেখতে যাওয়া উচিত। হাদীসের কিতাবসমূহে রোগীর পাশে পড়ার জন্য রাসূল সা. এর শেখানো বেশকিছু দুআ উল্লেখিত হয়েছে। সুযোগ হলে সেগুলো মুখস্ত করে তিনবার পড়া।
আমাদের আশেপাশে কত ক্লিনিক-হাসপাতালে নানা রকমের রোগ-অসুখে আক্রান্ত হয়ে কাতরাচ্ছে অসংখ্য অসহায় মানুষ। শুধুমাত্র রোগীকে দেখতে যাওয়ায় যদি এত ফযীলত থাকে তবে অসহায় গরীব অসুস্থ মানুষদেরকে কিছু আর্থিক সহায়তায় সেই পূণ্য এবং সওয়াব আরও অনেকগুণ বেশি বেড়ে যাবে নিশ্চয়ই।

আজকের ব্যস্ত নগরজীবনে সকাল কিংবা সন্ধ্যায় কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে অথবা ছুটির দিনের অবসরে আমরা চাইলে অসুস্থ মানুষদের পাশে কিছুক্ষণ সময় অবস্থান করতে পারি। মুসলমান হিসেবে হক আদায়ের পাশাপাশি এটুকু সময় জান্নাতের বাগানে আল্লাহ পাকের করুণাছায়ায় সমর্পিত হওয়ার সুবর্ণ উপায়। মানবিকতা চর্চার এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে পারি পরকালের যাত্রায়। আমাদের প্রতিটি কাজ ও পদক্ষেপ মানবতার জন্য মঙ্গলময় হোক, ইসলামের রঙে রঙিন হোক আমাদের প্রতিটি প্রহর।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×