somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন প্রজন্ম-সমাজ ও সামাজিকতা- কিছু আশা আশঙ্কা ও একটি ছেলের গল্প

২৩ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা ছোট ছেলের কথা দিয়ে শুরু করা যাক। ছেলেটি তার বাবা মা’র একমাত্র সন্তান। বাবা মা’র আদরে কখনও তার বোঝা হয়ে ওঠেনি ভাই বোন সম্পর্ক কি , কেমন, এর মাধুর্যটাই বা কেমন। এটা আসলে গল্পের লক্ষণীয় বিষয় না। ছেলেটি একা বড় হলেও খুব ই বন্ধুসুলভ। ছেলেটি মধ্যবিত্ত পরিবার এর , আত্মীয় তথা ব্যাকগ্রাউন্ড স্ট্যাটাস বলতে আমরা যা বুঝি তাও ভাল, বলতে গেলে অনেক ভাল। এখন ছেলে তার বন্ধু-বান্ধবদের কাছে প্রায় একটা কথা শুনে--- বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে কাজিন রা একসাথে অনেক মজা করা হয়, সবাই একসাথে ঘুরে বেড়ানো , খেলা ইত্যাদি ইত্যাদি। -তার মাকেও কোন অনুষ্ঠান এ গেলে ছেলে দেখে ওর মা র সাথে মা’র কাজিন দের অনেক ভাল সম্পর্ক!


অনুষ্ঠানে গেলে তার যা করা হয় তা হল কোন এক কোণায় একা বসে থাকা। মাঝে মধ্যে মা বাবা এসে পরিচয় করিয়ে দেয়, এটা তোমার অমুখ তমুখ , এটা তোমার চাচাতো ভাই, ফুফাত বোন, তোমার এদিকের মামা, ওদিকের খালা! কিন্তু ছেলে তাদের কাওকেই চেনেনা! অনেক ক্ষেত্রে তাদের কে সে হয়তো প্রথম বার এর মত তাদের দেখল! তখন ছেলেটি ভাবে, ‘’আমার তো অনেক গুলো কাজিন! তাহলে আমরা একসাথে মজা করিনা কেন? এটা কেমন কথা , তাদের তো আমি চিনিই না! ‘’

ছেলে অবাক হয়। মা’র কাছে সে জিজ্ঞাসা করে, ‘ মা তোমাদের ছেলেবেলা কেমন ছিল? ’ মা বলে, ‘আমরা কত মজা করতাম তখন! ছুটি পেলেই মামার বাড়ি, খালুর বাড়ি, খালার বাসায় চলে যেতাম, সেখানে কাজিন মিলে ঘোরা , খেলা কত্ত মজা হত!’
ছেলের কাছে মায়ের ছেলেবেলা রুপকথা মনে হয়। সে বুঝে উঠতে পারেনা তার দোষটা কোথায়!কেন তাকে মামার বাসায়, খালার বাসায় জেতে দেওয়া হয়না। ছুটি তো তার ও হয়! কেন তখন ও তাকে সবসময় বই খাতা, so called Extra curricular activities( যা শিশুকে নিজের খুশিতে নয় জোর
পূর্বক করতে বাধ্য করা হয়) নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়? কেন সে তার সব কাজিনদের সাথে মজা করা দূরে থাক চেনেইনা? কেন সবার সাথে তার এত দূরত্ব ? কেনই বা তাকে কেও চেনেনা আর সেই বা কাওকে চেনেনা! ---


ঘটনা হোক, হোক গল্প- আমার মনে হয় এটা আজ এই সমাজ এর অনেক ছেলেমেয়ের জন্যই সত্যি। আমাদের ঠিক আগের জেনারেশনে এ সমস্যা তেমন একটা না থাকলেও এখন এটা রীতিমত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সময়ের সাথে পারিবারিক তথা সামাজিক বন্ধনের সুতা টা ব্যস্তানুপাতিক হারে দুর্বল হচ্ছে। শিকড় ছেড়ে যাওয়ার এ প্রবণতার কারণ দেখতে গেলে সবার আগে যে কথাটা বলা যায় তা হল – গ্রাম থেকে শহরের দিকে মানুষের একমুখী যাত্রা তথা একান্নবর্তী পরিবার থেকে একক পরিবার এর দিকে মানুষের বেশি ঝুঁকে পড়া। অবশ্যই এ কথা স্বীকার করতে বাধা নেই যে সময়, পরিবেশ- সবই মানুষকে এ পথে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু কথা থেকে যায় এখানে, যে দলবদ্ধতার মূলচেতনা থেকে পরিবার তথা সমাজ এর উৎপত্তি, মূল ছেড়ে এভাবে ম্যারাথন দৌড়ে থাকা মানুষ কতটুক ই বা এই চেতনা ধারণ করছে? এটা অবশ্যই এক ধরণের অবক্ষয় আর এটা সত্যি অন্য সব কারণ এর মত ক্যান্সার এর হয়ে সমাজ কে কুরে কুরে খাচ্ছে। এর সাথে যোগ হচ্ছে অহঙ্কার, ঈর্ষা আর হিংসার মত ব্যাপারগুলো! সম্পর্কের চেতনা মানসিক বন্ধন থেকে গিয়ে ঠেকছে স্বার্থপরতায়। তাই আজ ছেলেমেয়েদের মানসিক বিকাশে আসছে বাধা আর দুঃখের কথা এটা যে আমরাই এ বাধার জনক ও প্রণেতা। তবুও ঈদ পুজা পার্বণে মানুষের শিকড় এর টানে ছুটে যাওয়া দেখতে সত্যি অনেক ভাল লাগে। আশা জাগে। কিন্তু আশার মাঝে জাগে আশঙ্কা। গল্পের মত অনেক ছেলেমেয়ে ই আছে এদের মাঝে যাদের মনে এই দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে, যা বাড়তে থাকা ক্যান্সার এর মত, যা একটা সময় এই প্রজন্মকে অথবা তার পরের প্রজন্মকে মানসিক অস্থিরতা আর একাকিত্তের মত বেশ কিছু ঝামেলায় ফেলতে যাচ্ছে।
আমাদের আগের প্রজন্মের ভুল এর মাশুল দিচ্ছি আমরা আর প্রজন্মের ধারায় ভুলের ধারা যদি চলতে থাকে আগামী এক কিংবা দুই প্রজন্ম পরে এই পারিবারিক আনুষ্ঠানিকতা গুলো রুপকথা হয়ে যাবে। এখন ছেলেমেয়েরা নিকট আত্মীয়দের চেনেনা, এই ছেলেমেয়েদের ছেলেমেয়েরা চেনার প্রয়োজনটুকও বোধ করবেনা। বর্তমানের ধারা আমাদের নিয়ে যাচ্ছে ভয়াবহ এক ভবিষ্যৎ এর দিকে। এই ধারা বন্ধ করতে হবে আজই। করতে হবে আমাদের কেই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এমন বন্ধনহীন মুক্ত বন্দিত্ব দিতে চাই না আমরা। পরিবর্তন এর শুরু হোক আজই, আমাদের নিজ পরিবার থেকেই...
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:০১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×