somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

/:)তিন্নি ও তার প্রবাসী বাবার ঈদ প্রবাসী বাবাদের জন্য উৎসর্গ করলাম):((

২৩ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৪:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের বাড়ির তিনটা বাড়ির পরেই তিন্নিদের বাড়ি। তিন্নি খুব ছোট একটা মেয়ে। ভাঙ্গা ভাঙ্গা কথা বলতে পারে। তার বাবা থাকে বিদেশে। ঈদের দুদিন আগের রাতে তার বাবা ছুটি নিয়ে বাড়ি আসার কথা। সবারই আনন্দ। কিন্তু তিন্নির আনন্দ ছিল অন্যরকম। আমরা বাড়ি গিয়েছি শুনেই তিন্নি এক দৌড়ে চলে এলো আমার কাছে। তার হাতে তার বাবার একটা পুরনো ছবি। সে আমার সামনে এসেই আমার মুখটা টেনে নিয়ে বলছে, ‘এই যে আমাল বাবাল ফুটু। এই যে চুক, এই যে নাক, এই যে বাবাল কান, এই যে চুল, আমাল বাবা খুপ সুন্দল। এই যে বাবা হাসে হি: হি:।’

আমি বললাম, তোমার বাবা আসলেই খুব সুন্দর। তোমার বাবা ঈদ করতে আসবে না তোমার কাছে?
সে চোখ বড় করে বলে, ‘আমাল বাবা আততেতে। আমাল বাবা উলুজাজে আততে। আমাল বাবা ঈদ নিয়ে আততে। আমাল লাল ফলক আনবে, ডুটা আনবে, মুজা আনবে, চিলুনি আনবে আল মজা আনবে।’ তোমালে দিতাম না বলে সে তার সমস্ত শরীর ডাতে-বামে মোচড়াতে লাগল।
আমি বললাম, ত তুমি কী খাওয়াবে তোমার বাবাকে?

তিন্নি কিছু না বলে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল তার বাড়ি। এই ছোট মেয়ে বাবার জন্য যে আয়োজন করে রেখেছে, তা দেখে অবাক হয়ে গেলাম। সে তার মাকে বলে নতুন ফরাশের চাদর আর বালিশ পেতেছে খাটে। বালিশের ওপর সে রেখে দিয়েছে একটি ফুলের তোয়ালে। বাবার পুরনো জুতো মুছে পুছে রেখেছে খাটের তলে। বালিশের পাশেই সে তার বাবার জন্য সবচেয়ে দামি প্লেট, গ্লাস মুছে রেখে দিয়েছে। আমরা যখন খাটে বসতে গেলাম সে বসতে দিল না, ‘আমাল বাবাল খাট, বাবাল চাদল নত্ত হবে ত’ 'বলে ঠেলতে ঠেলতে আমাদের দূরে সরিয়ে দিল।
তার মা অনেকটা রাগ করেই বলল, ‘কী করব কওতো। এই বাবা পাগল মাইয়া লইয়া বড়ো বিপদের মধ্যে আছি। সারাদিন বাবা, বাবা করে, ছবি লইয়া ঘুরে, যারে দেখে তার কাছেই বাবা আসার কথা বলে। ইত্তা বাল্লাগে কতক্ষণ, কও তো।’

তিন্নির বাবার ফোন এলো রাতে। কাঁদতে কাঁদতে জানালো, একটা সমস্যা হয়ে গেছে, ঈদের আগে দেশে আসতে পারবে না। তার এই ফোন পেয়ে তার মা কান্নাকাটি করতে লাগল। আন্টিরা গেল দৌড়ে। তিন্নির মা বারবার বলছে, ‘এখন আমি মাইয়ারে কী কমু কন। এই মাইয়ারে তো আমি মানাইতে পারতাম না। মাইয়াডাতো কানতে কানতে শেষ অইয়া যাবে। মাইয়া যদি জানে তার বাবা আসবে না কী অবস্থাটা অইবে, কন। আমার মাথায় কিচ্ছু ধরছে না।’ সবাই বুঝিয়ে তিন্নির মাকে শান্ত করেছে কিন্তু তিন্নিকে কী বলে শান্ত্বনা দিবে কেউ বুঝতে পারছে না।

ঈদের আগের রাতে তিন্নি তার বাবার অপোয় থেকে আর ঘুমায় না। অনেক রাতে ঘুমালো। ঘুমের মাঝেও সে নাকি বাবার সঙ্গে কথা বলে। ঈদের দিন সকালে সবাই যখন ঈদ করছে তিন্নি তখন তার বাবার ছবিটা নিয়ে একা একা কথা বলছে। তার মা তিন্নির দিকে তাকিয়ে গোপনে চোখের পানি ফেলে।
তার মা অনেক চেষ্টা করেও তিন্নিকে গোসল করাতে পারেনি, কাপড় পরাতে পারেনি। আমাদের কাছে এসে বলল তিন্নিকে গোসল করিয়ে কাপড় পরিয়ে দিতে। গেলাম। বললাম, তিনি আপুনি চলো চলো গোসল করিয়ে দেই, নতুন জামা পরিয়ে দেই, আজ না ঈদ।
তিন্নি দুহাতে সরিয়ে দিয়ে বলে, ‘না, না, একন ঈদ না। আমাল বাবা ঈদ নিয়ে আততে। আমি বাবাল থাতে ঈদ কলবো। যাও।’
এই দিকে একটু পরে পরে তিন্নির বাবা ফোন করে কাঁদে আর তিন্নির খবর নেয়। তিন্নির বাবাও কিছু খায়নি। খালি আফছুছ করে। তিন্নির হাতে ফোন দেয়নি। বাবার জন্য তিন্নির নানা আয়োজনের কথা আগেই বলেছিল বাবাকে। এসব মনে করে তার বাবা খালি কাঁদে।

ঈদের দিন। সারাদেশের মানুষ আনন্দ আর হই চই করছে। তিন্নিছোট্ট একটা ঘরে বসে আছে তার বাবা অপেক্ষায়।


সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:৩৪
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাইনারি চিন্তাভাবনা থেকে মুক্তি: পূর্ণাঙ্গ তুলনার ধারণা এবং এর গুরুত্ব

লিখেছেন মি. বিকেল, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩০



সাধারণত নির্দিষ্ট কোন বস্তু যা শুধুমাত্র পৃথিবীতে একটি বিদ্যমান তার তুলনা কারো সাথে করা যায় না। সেটিকে তুলনা করে বলা যায় না যে, এটা খারাপ বা ভালো। তুলনা তখন আসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×