somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাদুর মেশিন আর আমি।

২৩ শে আগস্ট, ২০১২ সকাল ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“সুমন” ঢাকায় থাকা একটি মধ্যবর্তি পরিবারের ছেলে, সে ভার্সিটিতে প্রথম বর্ষের ছাত্র। সে একদিন ঠিক করল এমন একটি মেশিন তৈরি করবে যা দিয়ে প্রকৃতির সাথে যোগাযোগ করা যায়। অনেক গবেষণা আর চেষ্টার পর একদিন সে যা আবিষ্কার করল তার ফলাফল যতটা তার কল্পনায় ছিল তারচে অনেক বেশই হয়েছে । তখন সে মাস্টার্স শেষ করেছে মাত্র।
এরমদ্ধে অনেক বিজ্ঞানীর সাথে তার ইন্টারনেটে যোগাযোগ হয়েছে, পরিবার থেকে বা বন্ধুমহল থেকে অনেকটা দূরে সরে গেছে সুমন।
কাউকে না যানিয়েই একদিন সুমন তার মেশিনটি নিয়ে পরীক্ষায় নামলেন। মেশিনটার ধরন অনেকটা কালো বাক্সর মত একটি ছোট ল্যাপটপ ও আছে তার সাথে যাদিয়ে প্রকৃতি থেকে আসা বিভিন্ন সিগন্যাল কনভার্ট করে মানুষের উপযুগি করে তোলা হয়। সেখানে একটা হেডফোন রয়েছে যেখানে প্রকৃতি থেকে আসা বিভিন্ন সিগন্যাল কনভার্ট করে যে শব্দ তৈরি হয় তা শোনা যায়।

এবার সুমন ওর বাসার ছাদে ছোট্ট বাগানের মাঝে বসে অন করে(হেডফোন কানেদিয়ে)। প্রচন্ড শব্দে ও ভয়পায়। এরপর মেশিনটা একটু ঠিকঠাক করে আবার চালায়। এবারো সে একই বিকট শব্দ যা কোন মানুষের পক্ষে টানা দুই মিনিট এর বেশি শোনা সম্ভব না। এরপরও সুমন যোরকরে কিছু বোঝার চেষ্টা করছে কোন ম্যাসেজ পাওয়া যায় কিনা। কিন্তু সেটা আর পাওয়া গেলনা। কিন্তু ল্যাবেতো ঠিকই স্বাভাবিক টিউনটা ছিল যখন সে একটি ক্যাঁকটাস নিয়ে পরীক্ষা করছিল! মনটা একটু খারাপ হয়ে যায় সুমনের।
এভাবে সে বাইরে পরীক্ষা করে, কিছু সবুজ বাগান, কিছু গাছের নিচে বা পার্কে কিন্তু লাভ হয় না। প্রতিবারিই মাথাধরা কিছু নয়েজ যা সুমনের কাছে কোন অর্থ বহন করে না।
এবার সে মানুষিক ভাবে খুবই ভেঙ্গে পরে ও মেশিনটাকে ভেঙ্গে ফেলতে চায় টেবিলের উপর সব গবেষণার পেপার ছি্রে ফেলে অনেক ছিগারেট খায় আর ভাবতে থাকে কি করাযায়।

এভাবেই চলে যায় কিছুদিন...
হথাৎ কলিং বেল বাজে , সুমন অনেক কষ্টে খাট থেকে উঠে দরজা খুলে দেখে নাতাশা ।
“নাতাশা” নাতাশা হচ্ছে সুমনের একমাত্র বন্ধু যার কাছে সে সব সময় অনেক শিশুসুলভ। নাতাশা চারুক্লায় পড়ে, অনেক সুন্দর নয় কিন্তু ওর কাছে কিছু একটা আছে যা সুমনকে বাদ্ধ করে জীবনকে ভিন্নভাবে দেখতে। সাদাকালো জীবনের মাঝে একটুকর রঙ্গিন আলো।
নাতাশার সাথে এ ব্যাপারে তার কোন কথা হয় না। সুমন সুধুই বলে নাতাশা আমি মুক্তি চাই, আমার এখানে কোন অধিকার নাই। নাতাশা সুমনকে বলে কতদিন আর এভাবে ছায়ার পেছনে ছুটবি।

-আমি পরশু গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি...
-কেন ?
-গ্রাম দেখতে।
-ও তুইত পেইন্টার।
-যাবি ? অনেক সুন্দর আমাদের গ্রাম।
-না? আমার অনেক কাজ।
-হ্যাঁ ওখানে যেয়েও ত করা যায় তাই না। এখন ইন্টারনেট এর যুগে তুই...

এভাবে অনেকক্ষণ কথা চলার পর সুমন যেতে রাজী হয় কিন্তু সর্ত হচ্ছে সে তার মেশিন নিয়ে যাবে। নাতাশা তাতেই খুশী। সুমন তার মেশিন নিয়ে অনেক চিন্তিত। প্রতিদিন ২/৩ জন বিদেশি প্রফেসর এর সাথে কথা হয়। সবাই বিভিন্ন সমাধানের চেষ্টা করে কিন্তু কোন লাভ হয় না। হেডফোন কানেই দেওয়া যায় না। বরং মেশিন যত আপডেট হচ্ছে শব্দ ততই বিকট হচ্ছে।
এর মধ্যে নাতাশার গ্রামের বাড়ি যাবার সময় এসে পরে। সুমন সব কিছু গুছিয়ে নেয়। সে মানুষিক ভাবে প্রস্তুত না এখন কোথায় যাবার জন্য। নাতাশার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর অতএব অনেক লম্বা পথ।
অবশেষে তারা যায় এবং ভালোই ঘুরতে থাকে। সবুজ গ্রাম, মেঠপথ, বাজার, ষাণ বাঁধানো পুকুর আরও কতকি। এদিকে নাতাশার এক মামত ভাই সুজন সুমনের মেশিনটা দেখতে পায় ও হেডফোন দেখে ভাবে কোন গান-টান শোনার জিনিস। সে সরল মনে কানে লাগিয়ে অন বাটন চাপে। কিন্তু কিছুই হয় না। এরপর ব্রিফকেসের মত একটা ডালা খোলে এবং দেখে অনেক তারটার যরানো, সে এগুলো বোঝেনা তাই আর না দেখে রেখে দেয়।

এভাবে একদিন বিকালে সুমন, সুজন ও নাতাশা একসাথে কুকুর ধারে বসে আছে। তখন হথাৎ সুজন বলে

-সুমন ভাই আমি একটু গান শুনতে চাই।
-তার জন্য আমি কি করতে পারি ভাই ?
-আপনার কাছে যে বিশাল মেশিন দেখলাম, ওটা দিয়ে আপনি কি করেন ! আমি একটু খানই শুনব।
-সুমন ত অবাক। আর নাতাশার অবস্থা নাও করতে পারে না হ্যাঁও বলতে পরে না।
সুমন বোঝাবার চেষ্টা করে যে
-এটা কাজের জিনিষ, গান শোনা যায় না, শুধুই বিরক্তিকর শব্দ হয়।
-আমি ওই শব্দই শুনব আপনি আমারে একটু দেন প্লিজ সুমন ভাই।

এরপর সুমন রাজি হয়। এবং পরদিন সকালে সে তার মেশিনটি নিয়ে যায় বাড়ির বাইরে যেখানে অনেক গাছ আর বিশাল মাঠ আর মাঠ। সেখানে দুজন (সুজন ও নাতাশা) অধির আগ্রহ নিয়ে আছে যে কি হয়, কিবা শোনা যায়। সুমন খুব সাধারণ ভাবেই মেশিনটা চালাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সুজন – সুমন ভাই এটা দিয়ে কি শোনা যায় ?
সুমন- কিছুই না(একটু রেগে) আগে শোন।
এই বলে সুজন কানে হেডফোন লাগিয়ে নেয়। কিচ্ছুক্ষণ পরে সুমন মেশিন অন করে আর সুজনকে বলে শোন । নাতাশা এবং সুমন দুজনেই সুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে।
একটু পর সুমন বলে
-ও পারছে কিভাবে ?
-কেন ? প্রকৃতির শব্দ কি আতি খারাপ।

এবার সজুনের কান থেকে হেডফোন নেয় নাতাশা। সুজন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নাতাশা দিকে। ওমা সে কি নাতাশাও অনেক্ষন ধরে শুনছে। তার মানেকি। তাদের ঐ বিরক্তিকর শব্দ শুনতে ভাল-লাগছে!
নাতাশা বলে,
-এত মধুর শব্দ আমি আমার জীবনে শুনি নি। আর তুমি বল যে বাজে নয়েজ যা ১মিনিট শোনা যায় না। সুমন তারাতারি নাতাশার কানের থেকে হেডফোনটা খুলে নিজের কানে পরে নেয়। এরপর যা সে শুনতে পায় তা আর আমি লিখে বোঝাতে পারলাম না।

পরদিনিই সুমন রওনা হয় ঢাকা। এবং আবার সে মেশিনে শুনতে পায় সেই বিরক্তিকর কান নষ্ট করা আওয়াজ। এবার সুমন বুঝতে পারে সে যেই জিনিশ তৈরি করেছে তা খুবই শক্তিশালি যন্ত্র। আমাদের ঢাকার শহর এখন যে কতটা আক্রান্ত তা এই যন্ত্রর মাধ্যমে আমি পরিস্কার।

© সাজিদুর রহমান ২০১২
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১২ সকাল ১১:৩০
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×