somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্বাসরুদ্ধকর দিনগুলি - ৪

২২ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও তাঁর অনুসারীদের নদীর তীরের জমি অবৈধভাবে দখল ও ভরাট করে বিপণীবিতান তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া প্রসঙ্গে পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে আমার বিরুদ্ধে শুরু হয় ধারাবাহিক সাজানো মামলার দুর্যোগ। ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় ২০০৯ সালের ২১ আগস্ট। আর আমার বিরুদ্ধে সাজানো মামলাগুলো দায়ের করা শুরু হয় ৮ সেপ্টেম্বর রাত থেকে। ১৩ সেপ্টম্বরের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে করা মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় চার-এ। এর মধ্যে ৮ সেপ্টম্বর রাতে করা মামলাটিতে আনা হয় চাঁদাবাজি ও জোর করে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ। ১০ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা পাঁচ মিনিটে এক নারীকে বাদী করে ধর্ষণের অভিযোগ এনে আমার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করানো হয়। এ মামলাটি রেকর্ড হওয়ার পাঁচ মিনিট পরে অর্থাৎ রাত ১০টা ১০ মিনিটে আগের মামলাটির বাদীর প্রতিবেশী ও আত্মীয় অপর এক নারীকে বাদী করে আরেকটি মামলা করা হয়। এ মামলায় প্রতারণা ও ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় এবং তা আত্মসাৎ করার অভিযোগ তোলা হয়। এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে আরো একটি মামলা করানো হয় প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলে।
উল্লেখিত চারটি মামলার মধ্যে ধর্ষণের অভিযোগ এনে করা মামলাটি ছাড়া বাকি তিনটি মামলায় আমার ছোট ভাই আমার দেশ পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি সাইমুন রহমান এলিটকেও আসামী করা হয়।
একের পর এক মামলার কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ারই কথা আমার। কিন্তু আমার এ দুঃসময় দেশের প্রায় প্রতিটি গণমাধ্যম ও সর্বস্তরের সংবাদ কর্মীরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। গণমাধ্যমে আমাদের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভিসি ড. আরেফিন সিদ্দিকী স্যার, প্রবীণ সাংবাদিক এ বি এম মুসা, সাংবাদিক নেতা আলতাফ মাহামুদ, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরসহ অনেক প্রথিতযশা ও বরেণ্য ব্যক্তি। আলতাফ মাহামুদ এবং তৎকালীন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ.শ.ম রেজাউল করিম বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে আমাদের পক্ষে জোড়ালো বক্তব্য রাখেন। আমাদের পক্ষে সরাসরি কলম ধরেছেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান (মতি ভাই)। তিনি প্রথম আলোয়ে মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছেন। বিভিন্ন পত্র-ত্রিকায় আমাদের পক্ষে বিশেষ কলাম প্রকাশিত হয়েছে। আর সংবাদ-প্রতিবেদন তো ছিল নিয়মিত বিষয়। আমাদের পক্ষে প্রথম আলো ছাড়াও সমকাল, মানব জমিন, যুগান্তর, ডেইলি স্টারসহ বিভিন্ন পত্রিকা বেশ জোড়ালো অবস্থান নেয়। অধিকাংশ ইলোকট্রনিক মিডিয়া অর্থাৎ টেলিভিশন চ্যানেল আমাদের পক্ষে অবস্থান নেয়। সারা দেশের সংবাদকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। জেলায়-উপজেলায় প্রেসক্লাবসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে থাকে। পটুয়াখালী প্রেসক্লাব প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন, কলম-ভাঙা কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। আমাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক সাজানো মামলা প্রত্যাহারের দাবি তুলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয় পটুয়াখালী ও বরগুনা প্রেসক্লাব।
এদিকে বসে থাকেননি সেই প্রভাবশালীরাও। তাঁরাও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছিলেন। মোটা অংকের টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন আকারে আমার গীবত গেয়ে প্রথম আলোর সম্পাদকের বরাবর খোল চিঠি প্রকাশ করেন। ওই খোলা চিঠিতে তিনি নিজের জানাশোনা ও জ্ঞানের পরীক্ষা দেওয়ার আকাঙ্খাও প্রকাশ করেন। তাঁর অনুসারীরা টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো করে স্থানীয়ভাবে আমাদের বিরুদ্ধে একাধিক সভা-সমাবেশ-মিছিল করেন। এরই একটি সমাবেশ থেকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে লাঠি-যুদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। সমাবেশ শেষে মিছিলে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে 'ধরি ধরি ধরি না, ধরলে কিন্তু ছাড়মু না। *** (প্রভাবশালী নেতার নাম) ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।' ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।
তবে সুখকর ব্যাপার হল, তাঁদের এসকল কর্মসূচি পালনের কয়েকদিন আগে থেকেই স্থানীয় আ.লীগের মধ্যে ভাঙ্গন দেখা দেয়। দলে এ ভাঙ্গনের জন্য ওই প্রভাবশালী নেতার দলের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী কার্যকলাপ ও স্বেচ্ছারী আচরণকে দায়ী করা হলেও মুখ্য কারণ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা করে তাঁদের হয়রানি করা বলে দলের একাধিক সূত্র তখন জানিয়েছিলেন। দলের স্থানীয় নেতাদের বেশ বড় একটা অংশ দলের সভাপতির নেতৃত্বে ওই প্রভাবশালী নেতার পক্ষ ত্যাগ করে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলার ঘটনা তাঁদেরকে ক্ষুব্ধ করে। দলীয় সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা গণমাধ্যমে আমাদের পক্ষে বিবৃতি দিতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে তাঁরা অনেকটা প্রকাশ্যে আমাদের পক্ষে জনমত তৈরি করতে থাকেন। এসকল নেতাদের মধ্যে রয়েছেন, জেলা আ.লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক বাবু কাশীনাথ দত্ত, উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশিদ, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও পৌরসভার মেয়র আ. ওহাব খলিফা, অধ্যাপক সন্তোষ কুমার দে, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. শামীম মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার মো. শাহ আলাম, সামসুজ্জামান লিকন প্রমুখ।
আমাদের বিরুদ্ধে প্রভাবশালী সেই নেতার অনুসারীদের সমাবেশ ও মিছিলের ঘটনায় ২০০৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
প্রথম আলোয়ে ওই সংবাদের শিরোনাম ছিল -
"গলাচিপায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সাংসদের সমর্থকদের বিক্ষোভ, আ.লীগের একাংশের নিন্দা"
প্রথম আলো, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯।
ওই দিনই প্রথম আলোয়ে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। পাঠকদের সুবিধার জন্য সম্পাদকীয়টি ছবি আকারে দেওয়া হলো।


(বাকি অংশ পঞ্চম পর্বে)
শ্বাস রুদ্ধকর দিনগুলি - ৩
শ্বাসরুদ্ধকর দিনগুলি - ২
শ্বাসরুদ্ধকর দিনগুলি - ১
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১০:০৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×