somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা বাংলা মায়ের সন্তান, মায়ের কাছ থেকে শুধু নেয়া যায় দেয়ার প্রয়োজন হয়না!

২২ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনৈতিকতা আর অবিচার যেন আমাদের ট্রেডমার্ক হয়ে গেছে। পরিস্থিতি এখন এমন সবাই আপ্রান চেষ্টা করছে অন্যকে ছাড়িয়ে যেতে। ছাড়িয়ে যাওয়ার এই প্রবনতা খারাপ না কিন্তু যেনতেনভাবে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টায় অনৈতিকতার আশ্রয় নেয়া ছাড়া সামনে এগুনো অসম্ভব। বড় কর্তা বেশি তোয়াজ চায়, কেরানি বেশি বেশি ঘুষ চায়, মাছ আর ফলওয়ালা বেশি বেশি লাভ চায়। এই বেশি চাওয়ার ঘূর্ণাবর্তে পরে সাধারনের চিঁড়েচ্যাপটা অবস্থা। কাজ করিয়ে নিতে ঘুষ দিয়ে একদিকে পকেট হালকা আর অন্যদিকে ফর্মালিন, কার্বাইডে চোবানো মাছ আর ফল খেয়ে পেট হালকা। সাধারনের সব শুধু হালকাই হচ্ছে আর ক্ষমতাবানদের পকেট হচ্ছে ভারী। ধনী গরিবের ব্যাবধান এতো বেশি যে দেশের প্রকৃত অবস্থা বুঝা খুব কঠিন হয়ে গেছে। ক্ষমতার শিখর থেকে চোরকে দেশপ্রেমিক উপাধি দেয়া হচ্ছে, আর প্রকৃত দেশপ্রেমিকদের বলা হচ্ছে দেশদ্রোহী। ক্ষমতার পালাবদলে অনেকেই অঙ্গুল ফুলে কলাগাছ আর আমজনতাকে এখনও অন্ন, বস্ত্র আর বাসস্থানের চিন্তায় চুবিয়ে রাখা হয়েছে, ক্ষমতার তেরেকেছে মার্কা হিসাব তদের মাথায় ঢুকে না বা ঢুকতে দেয়া হয় না। আর সুশীল সমাজ তারাত আদর্শের মারপ্যাঁচে এখনও দ্বিধাবিভক্ত। চারদিকে তাকালে শুধু নিকশ কালো আধার, মনে হয় যেন রাষ্ট্রের মাথায় পচন ধরেছে আর দেহটা ফর্মালিন দিয়ে তাজা রাখা হয়েছে যাতে দুর্বৃত্তরা খাবলে-খুবলে খেতে পারে বাংলা মাকে।

শুনেছি আল্লাহর কাছে কাজীদের মর্যাদা নাকি যেকোনও আমপাবলিকের থেকেও অনেক বেশি। কাজীরা দুনিয়াতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাতে উপরওয়ালার সরাসরি প্রতিনিধিত্বকারী। সমাজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে তাদের ভূমিকা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমদের দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি প্রত্যক্ষ করলে সহজে বুঝা যায়। কিন্তু তারা কি তাদের মর্যাদার দিকে একবারও খেয়াল রাখছেন? আমারত মনে হয় না! অখ্যাত কুখ্যাত আইনজীবীরা দলীয় কোটায় বিচারক হয়ে কি না করছেন! ট্রাফিক পুলিশকে কান ধরে উঠবস, বিদেশী রাষ্ট্রদূতের বাসার দেয়ালে মুত্র বিসর্জন আরও কত কি! একবার হাইকোর্টের এক বিচারপতির সাথে ঘণ্টা তিনেক আলাপচারিতা করার সুযোগ পেয়েছিলাম তাতে তাকে এলএলএম পাশ করা আইনজীবীর চেয়ে বেশি প্রজ্ঞাময় মনে হলনা। এক এক করে দুই ছেলেকেই বিলেত থেকে বার করানোর শেষ ধাপে আছেন! ভালো কথা, কিন্তু এত টাকা এল কোথা থেকে? হয়ত লোন করেছেন, কিন্তু ব্যাংক কোলেটারাল ছাড়াত লোন দেয়ার পাত্র না, তার ব্যাংক গ্যারান্টি কিসের মাধ্যমে হল? নাকি তিনি স্বীয়স্বত্তা বিক্রি করে দিয়েছেন? প্রশ্ন অনেক উত্তর নাই, তাই ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ার জোগাড়! বিচারিক হাকিমরা আরও এক কাঠি সরস তারা রীতিমত পয়সা দিয়ে পোস্টিং নেন যাতে উদরপূর্তি ঠিকমত হয়। ম্যাজেসস্ট্রেটদের কথা আর কি কহিব তারাত রীতিমত সরকারি দালাল, যে দল ক্ষমতায় যায় সে দলের দালালি তাদের পেশা, নিশিকুটুম্বদের দালালরাও এদের চেয়ে ঢের ভালো! আর আইন পেশার সাথে যুক্ত উকিল, মোক্তার, পেশকারদের সাথে বাতচিত করলে আপনার পেশাব ছুটে যেতে পারে। আপনি বহুমুত্র রোগের মুরিদ হলে ইয়েতে একটু গিট্টু মেরে যেতে পারেন ইজ্জত বাছানোর তাগিদে। নাইলে ফোয়ারার মত করে সবার মুখে ইয়ে করতে মন চাইতে পারে।

পুলিশকে নিয়ে আমাদের সুশীল সমাজের লোকদের মাথা ব্যাথার শেষ নেই, তাদের এন্তার আক্ষেপ, পুলিশকে হেন করলে তেন করত, কলা খাওয়ালে ডিম পারত আরও কত কি, পুলিশকে নিয়ে রঙ্গিন কৌটা ভর্তি যতসব ফুলিশ ভাবনা। গ্রামের দিকে কথা আছে, যার সাতে হয় না তার সাতাশেও হয়না! আরে কি হয় না হুজুর? মিয়াঁ ভাই খাইসলতের পরিবর্তন। শেষ আদমশুমারি হিসাবে দেশের লোকসংখ্যা ১৬ কোটির উপর, এখন আবাল, বৃদ্ধ, বনিতাসহ খোদ পুলিশকে যদি বলা হয় “পুলিশ জনগনের বন্ধু” তাইলে সবাই এমনভাবে হাসবে যে একখানা সুনামি দেশের উপর দিয়া চলে যেতে পারে এরুপ মনে করার বিন্দুমাত্র সন্দেহ কারও মনে থাকার কথা না। সার্ভে করলে প্রতি দশজন বাঙ্গালের মধ্যে কম করে হলেও তিন চার জন পাওয়া যাবে যারা ট্রাফিক কনস্টেবলকে রাস্তা থেকে দুই টাকার নোট নিতে দেখেছে। এত দিলাম রাস্তার উপরের হিসাব হাতে হাতের হিসাব দিলে এই কীর্তি দেখে নাই এমন লোক জাদুঘরেও পাওয়া যাবে কিনা বলা মুশকিল! ইকনো কলমের কালি যখন বেয়ে বেয়ে সাদা অফিস সার্টের পকেটে পড়ার পর শত চেষ্টায়ও তোলা যায় না তেমনি পুলিশের হরেক কালা কার্তুত চরিত্রের উপর এমন কালা কালি দিছে যে তা আর উঠবার নয়। শার্ট নষ্ট হলে কি করি রিকশাওয়ালাকে দিয়ে দেই আর এদের কি করবেন? ভাবুনত….. হ্যা পাওয়া গেছে এদের ধরে ধরে কৃষকদের কাছে দেয়া যায় তারা তাদের কাধে জোয়াল দিয়ে বলদ হিসেবে ব্যাবহার করতে পারবে, তেরিমেরি করলে অণ্ডকোষে হালুয়াপ্যান্টি (গরুকে গুতা দেয়ার রংপুরীয় লাঠি বিশেষ) দিয়ে গুতা দিতে পারে, কি বলেন?

আমরা আমজনতা সারাজীবন বসে বসে শুধু আমড়াই চুষে যাব। আমাদের মত হাভাতিদের শরীর থেকে হাড্ডি খুলে তার উপর ললিপপের মত আমড়া বসিয়ে আমাদের সম্মোহিত করে রাখা হবে, সুড়ুত সুড়ুত করে সেই ললিপপে জিহবা দিয়ে ডলা দিবো আর বলব কই সবত ঠিকই আছে। দেশের স্বার্থ হামেশাই আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়, দেশের ডাক আমাদের কর্ণ কোঠরে প্রবেশাধিকার পায়না। দেশ, সেটা আবার কি? এই দেশে জন্ম নিছি এইত দেশের জন্য পরম পাওয়া, দেশকে আবার দিতে টিতে হয় নাকি? দেশকি ব্রাহ্মণ পুত্র তাকে দিতে টিতে হবে? আমরা বাংলা মায়ের সন্তান, মায়ের কাছ থেকে শুধু নেয়া যায় দেয়ার প্রয়োজন হয়না! সবাই খুব স্বার্থপর, সবাই শুধু নিজের কথাই ভাবে, কেউই একসাথে চলার মন্ত্র জপতে পারেনা! নিজে বিপদে না পরলে অন্যের কাছে কেউ যেতে চায়না, সবাই চাচা আপন পরান বাঁচা টাইপের কৌশলে অভ্যস্ত। ভোটের সময় আসলে ভোট দিই, আবার কিছুদিন যেতে না যেতে সরকারি স্ট্রিমরোলারে পিষ্ট হয়ে পরবর্তী ভোটে তাদেরকে দেখে নেয়ার শপথ নেই। আহা কি মধুর ভোট সংস্কৃতি! প্রতি ৫ বছর অন্তর ৩০০ জন চোরকে যদি কালো বিড়াল খুঁজতে দায়িত্ব দেই তার ফলাফল আমরা সহজেই অনুমান করতে পারার কথা। বারবার ভুল করা কিন্তু ভুল না এটা অন্যায়, গর্হিত অন্যায়। আমাদের মত লেখাপড়া জানা লোকজন যদি ফেরবার ভুল করে চোর-ছেচ্ছরদের আকাশসম মর্যাদা দেই তাইলে গ্রাম্য আবাল বনিতারা কি আশায় লাঙ্গল ঠেলবে। আমরা এমন এক সমাজে বাস করে যেখানে আমি আমার জন্য সুন্দর লাল টকটকে জামা কিনে আনি আর আসহায় আত্বীয়র জন্য যাকাতের ম্যাড়ম্যাড়ে জীর্ণ কাপড়। অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া অন্যায় করার মত সমান অপরাধ। আমরা যারা একটু একটু করে সিস্টেমের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে চেষ্টা করছি তারাকি অপরাধের সমুদ্রে গা ভাসাচ্ছি না? আমাদের বিন্দু বিন্দু ভুল আর অন্যায় এখন সিন্ধু পরিমাণ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এখন অন্যায় করা থেকে শুধু বিরত থাকলেই কি চলবে? সেই সাথে কি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আর ন্যায়ের পক্ষে আওয়াজ তুলতে হবে না? আলবৎ তুলতে হবে, নাইলে একসময় নৈতিকতা নামক জিনিসটি জাদুঘরের আইটেম হিসেবে পরিনত হবে। সময় এসেছে নিজের দিকে ফিরে চাওয়ার সময় এসেছে নিজেকে বদলে দেয়ার।

সুনামগঞ্জ, আগস্ট ২২, ২০১২
[email protected]

২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মায়ের নতুন বাড়ি

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২২

নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×