প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও ওয়েব মিডিয়া সম্পর্কে কম লেখালেখি হয় নি। তারপরও কিছু জিনিস না বলা থেকে যায়। আমরা বিশ্বের মিডিয়ার দিকে তাকালে দেখতে পাবো ১০০% নিরাপক্ষ এমন কোনো মিডিয়ার অস্তিত আছে কিনা সন্দেহ। বাংলাদেশের প্রিন্ট মিডিয়ার অবস্থা অনেক আগে থেকেই ভয়াভহ আকার ধারণ করেছে। পাঠক বোঝে কিন্তু বলার উপায় নেই, কোথায় বলবে? কার কাছে বলবে? কিসের মাধ্যমে বলবে? বললে তো সেই লেখা প্রিন্ট মিডিয়া প্রকাশ করবে না।
বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো দৈনিক ও সাপ্তাহিকের মালিকপক্ষ কোনো বড় গ্রুপ কোম্পানী ও কোনো না কোনো রাজনীতিবিদ। তাহলে আমরা কিভাবে নিরাপক্ষতা আশা করি? যাই হোক, প্রিন্ট মিডিয়াকে কিছু উপদেশ ও সাবধানতা অবলম্বন করতে বলছিঃ
১. প্রতিদিন প্রত্রিকার ফাস্ট হেডিংয়ে দেখি প্রধানমন্ত্রী, রাট্রপতি, কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান, মহাসচিব, মন্ত্রি, সংসদসদস্য কিংবা দল করেন না কিন্তু দলিয় তিলক গায়ে লেগে আছে এমন লোকের দেয়া ভাষ্য ছবিসহ ফলাও করে ছাপা হচ্ছে। আমি বলছি আজ যা বলছে তাকি স্থায়ী কোনো ভাষ্য? তা কি বাংলাদেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের ঠিল ছোড়ছুড়ির বাইরে? তা কি অনেক উপদেশ মূলক কিংবা নিশ্চিত তথ্যবহুল কিছু? তাহলে এ কথার মূল্য কতখানী? তাহলে দিনের পর দিন এই মিথ্যে ও ফালতু কথা শুনতে শুনতে দেশের মানুষও ফালতু হয়ে যাবে। প্রতিদিন বাংলাদেশের একেকটি পত্রিকায় একেক এলাকার হালচাল, দুর্ভোগ কিংবা কোনো বিশ্লেষন ধর্মী শিরনাম করা হয় তাহলে প্রশাসনের নজরে পরবে দেশে উন্নতি হবে।
২. বাংলাদেশের প্রভাবশালী ও পাঠক সংখ্যার দিক দিয়ে শীর্ষ দাবি করা কয়েকটি পত্রিকায় প্রায়ই দেখাযায় এদের মালিকেপক্ষের এমন নিউজ ছাপা হয় যা দেখলে পা চাটা কুত্তাও লজ্জায় লাল হয়ে যাবে। শুধু তোষামোদি নয় একটি পত্রিকা অন্য পত্রিকার সম্পর্ক সাপে-নেউলে। কেনো এমন করে পত্রিকা গুলো? এখনও সময় আছে ভালো হয়ে যান।
৩. কিছু কিছু পত্রিকাকে দেখা যায় হলুদ সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে চরম কিছু লিখছেন। কিন্তু জারা ভুক্তভুগি তারা জানেন বাংলাদেশের আটষট্টি হাজার গ্রাম ছেয়ে গেছে হলুদ সাংবাদিকতায়। এই সাংবাদিক (সাংবাদিক বলা ঠিক না রিপোটার হবে) গুলো ঘুষখোরের চেয়েও ঘুষখোর সাথে ব্লাকমেলিং তো আছেই।
৪. বেশীরভাগ পত্রিকার সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়তে মাঝে মাঝে যে পত্রিকা যে দলের সাপোর্টার তাদের তেল দেয়া ও বিরোধীকে আক্রমন করতে দেখা যায়। আমরা ভুলে যাই নি এরশাদের মতো বাংলাদেশের কোন সরকারই মিডিয়া এতো সুন্দর ভাবে কন্ট্রোল করতে পারে নি তার সুবাদে যার হবার কথা বড়জোর সংবাদপত্রের মালিক তারা হয়ে গেছে মন্ত্রী-মিনিস্টার। এই ভন্ডামি ছাড়ুন।
৫. তোষামদী, কথার বিকৃতি ও মিথ্যা কথার উপর কোনো নোবেল প্রাইজ থাকলে বাংলাদেশের কলামিস্টরা প্রতি বছর নোবেল পেতেন। বাংলাদেশে কি এমন কোনো কলামিস্ট আছে যে বুক ফুলিয়ে স্পষ্ট ভাবে সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে পরেন? নেই। সবাই জোচ্চোর।
৬. সাধারণ মানুষ যারা নিয়মিত পেপার পত্রিকা পড়েন সবার রুচিতো এক না। কেউ রাজনীতি , কেউ অর্থনীতি, কেউ বিনোদন, কেউ আন্তর্জাতিক সংবাদ, কেউ খেলার সংবাদ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের রুচিবোধ বিদ্যমান। কিন্তু দেখা যায় বিজ্ঞাপণ একজন পাঠকের প্রিয় বিভাগকে কেড়ে নিচ্ছে। আমি জানি ও মানি বিজ্ঞাপণ না থাকলে মিডিয়া ব্যবসা লাভজনক করা সম্ভব না। তাই বলে পুরো একটি বিভাগকে হাও করে দেওয়া ঠিক না। পুরো না পারেন অর্ধেক নিউজ দিন। আমি এমন মানুষকে দেখেছি শুধু রাশিফল অথবা শব্দজটের জন্যও আস্ত একটি সংবাদপত্র কিনেন।
৭. আমাদের প্রিন্ট মিডিয়া লেখেন অমুকখানে চোর ধরা পড়েছে, ডাকাত ধরা পড়েছে কিন্তু একটু ঘুরিয়ে যদি লেখেন “মানুষ/এলাকাবাসী চোর বলে সন্দেহ করছে ”। তাহলে আইনিভাবে প্রমাণ হওয়ার আগেই কোনো মানুষকে চোর, ডাকাত, খুনি হতে হবে না। সব মানুষেরই মান-ইজ্জত বলে কথা আছে। আজ যাকে ফলাও করে খুনি বলছেন কাল দেখা গেলো সে নির্দোষ তখন আপনাদের প্রচারনার কলঙ্কের বোঝা ঐ নিরিহ মানুষটিকেই বয়ে বেড়াতে হবে।
৮. মোবাইল অপারেটরদের দৌরত্ব ভুক্তভুগি সাধারণ মানুষ বোঝে। এই মোবাইল ফোন অপারেটরা অনেক সময় ইষ্ট ইন্ডিয়া কম্পানির চেয়েও খারাপ। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো প্রিন্ট মিডিয়াকে দেখলাম না এর স্পষ্ট সমালোচনা করতে। কিন্তু কেনো? বিজ্ঞাপণের আশায়। জনগনের জুলুম কারিদের প্রতি আপনাদের বেশি সেচ্চার হওয়া উচিৎ নাকি বিজ্ঞাপণের আশায় জুলুমকারির পক্ষে থাকা উচিৎ ভেবে দেখবেন।
৯. কিছু কিছু পত্রিকার সম্পাদকের বড় পরিচয় সাহিত্যিক কিংবা আঁতেল। তারা সম্পাদনার কি বোঝে? নাকি তাদের ইমেজ ও ফেইস ভ্যালু ইউজ করে ফায়দা লুটে নিচ্ছেন। সম্পাদকে হতে হবে সম্পুর্ণ প্রফেশনাল। অনেক সম্পাদক প্রতিদিন টেলিভিশন মিডিয়ায় হাজির হচ্ছেন। ওখানে যখন এতো গুরুত্বপূর্ণ সময় দিচ্ছেন তাহলে সম্পাদনা করেন কখন?
আরও অনেক কথা বলতে গিয়েও বললাম না। বুকে চাপা আছে চাপাই থাক। একটি কথা না বলে পারছি না। আমার মনে পড়ছে একটি ছোট্ট ঘটনায় সুমন্ত আসলাম ভাইকে পাঠার বলি হতে হয়েছে। এই ঘটনাটির জন্য সম্পাদক বাইতুল মোকাররমের খতিবের হাত ধরে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। ভুলটা ছিলো সম্পাদকের কারণ পত্রিকা প্রিন্ট হবার আগে তার সব বিষয় দেখার দ্বায়ীত্ব। ভুল করলেন সম্পাদক আর খেসারত দিলেন সুমন্ত আসলাম ভাই।
সলিল চৌধুরীর গান- “বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা, আজ জেগেছে এই জনতা”
না জনতা আজও জাগে নি, কিন্তু ছাই চাপা আগুন থেকে ধাউ ধাউ করা আগুনের মতো যখন মানুষ জেগে উঠবে তখন শুধু বিচারপতি কেনো কোনো সমাজপতিই সেই বাঁধ ভাঙা জাগরনের আগুন থেকে বাচঁতে পারবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১০:১৫