somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি গল্প [রাতে পড়ার জন্য]

২১ শে আগস্ট, ২০১২ ভোর ৬:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অমিতার আজ একটু টেনশন হচ্ছে। অবশ্য হওয়ারই কথা। আজ আইনজীবি হিসেবে প্রথম দিন। এর আগে কয়েকজন এর অধীনে থেকে কাজ করেছে । তবে নিজের একটা কেস প্রথম করাটা সত্যিই অনেক রোমাঞ্চকর। আসলে খুব একটা ইচ্ছে ছিল না প্রাকটিস করার। ভার্সিটির একজন লেকচারার হিসেবেই হয়তো ভালো করতো। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা দরকার আছে বলেই কিছুদিন কাজটা করে দেখতে চায়।

চেয়ারে বসে মনের অজান্তেই একটু ঘুম ঘুম ভাব চলে এসেছিল। হঠাৎ দরজায় কার যেন কাশির আওয়াজ শুনলো। খুক খুক কাশি। ।অনেকদিন ধরে যক্ষায় ভুগলে যেমন কাশি হয় খানিকটা সেই রকম।কোন অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন বোধ করছে বলে তো মনে হলো না। সোজা ঘরের ভিতর এসে পড়েছে লোকটি। হয়তো জানেই না যে কারো রুম এ যাওয়ার আগে তার অনুমতি নিতে হয়। মনে মনে একটু রাগ করলেও অমিতা তাকে বসতে বললো।
‘‘ও আপনাকেই তাহলে স্যার আসতে বলেছিল?’’ লোকটির দিকে তাকিয়ে বললো অমিতা। আজ এই তার প্রথম ক্লায়েন্ট। স্যার কালকেই বলেছিল কিছু সহজ কেস আমি তোমাকে দিব। সেগুলো সমাধান করার চেষ্টা করো। আসলে তার উপর স্যার এর অনেক ভরসা। তাই সে তা নষ্ট করতে দিতে চায় না। ইতিমধ্যে কোর্ট এর প্রায় সবার নজর কেরেছে অমিতা। সাবলীল কথা বলা আর স্মার্টনেস তাকে অনেকের থেকেই আলাদা করে তুলেছে। তাই এই কেসটা নিয়ে সে অনেকটা সিরিয়াস। কিন্তু লোকটা কথা বলে না কেন?
‘‘এই যে শুনছেন?’’ একটু বিরক্ত হয় অমিতা ।
‘‘হা বলেন’’ কোনমতে একটু মুখ তুলে তাকায় লোকটি। যেন খুব কাহিল হয়ে গেছে সে। হতেও পারে বাইরে যা গরম আজকাল।
‘‘কি নাম আপনার?’’
‘‘নাম .. নাম..আমার মেয়ের নাম দীপা’’
‘‘আচ্ছা কি হয়েছে তার?’’ বুঝে ফেলে অমিতা কেসটা তার মেয়েকে নিয়ে। তার মাথার ভিতর মেয়ের কথা ঘুরছে তাই হঠাৎ করে এটাই বলে ফেলছে। লোকটা একটু স্বাভাবিক হোক, তারপর না হয় নামটা জানা যাবে। মনে মনে ভাবে সে।
‘‘কি হয়েছে তার?’’
‘‘ফাইল এ তো সব লিখা আছে।’’
‘‘কোন ফাইল?’’ অমিতা এবার অবাক হয়। তার কাছে তো কোন ফাইল নেই। স্যার কি তবে ফাইল বানিয়ে কেসটা অনেকটা আগিয়ে রেখেছেন!
‘‘লাল কাগজের মলাট দেয়া ফাইল। আমি এর আগেও ওটাকে এই রুমেই দেখেছি’’ শান্তভাবে বলে লোকটি।
‘‘আচ্ছা আচ্ছা আমি খুঁজে দেখছি’’ এবার নিশ্চিত হয় যে এই কেসটা নিয়ে আগেও কাজ হয়েছে। ঘরে একটা পুরাতন কাঠের আলমারী আছে অবশ্য। তার ভিতর থাকবে হয়তো। অমিতা উঠে দাড়ায়। ধুলোয় ঢাকা ফাইলটি খুজে পায় অনেকক্ষণ খোঁজার পর। মুখ উজ্বল হয়ে উঠে অমিতার। কাজ অনেকটা তাহলে এগিয়ে আছে।
‘‘হাঁ পেয়েছি আপনার ফাইলটা। ’’
লোকটির মাঝে কোন ভাবান্তর নেই। সেভাবেই বসে আছে। আসলে এই লোকগুলো আদালত পাড়ায় ঘুরতে ঘুরতে একসময় খুব হতাশ হয়ে পড়ে। এই লোকটির ও তাই হয়েছে।
‘‘ম্যাডাম আমি তাহলে যাই এখন?’’
‘‘আমি তো আপনার সাথে কোন কথাই বললাম না! এর মাঝেই চলে গেলে কিভাবে হবে? আমার তো কিছুই জানা হলো না।’’ এবার সত্যিই অবাক হয় অমিতা।
‘‘ম্যাডাম ওই ফাইলে সব লিখা আছে। প্রতিটা বর্ণনা দেয়া আছে। এই লাল ফাইলটা নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে আমার এতগুলো বছর কেটে গেল। তবু বিচার পেলাম না।’’
‘‘পাবেন পাবেন । আপনার জন্য আমি যতটুকু পারি চেষ্টা করবো।’’
‘‘ম্যাডাম কেসটা রেখে চলে যাবেন না তো?’’ লোকটির চোখে প্রশ্ন। ‘‘এর আগে অনেককেই বলেছি কেউ কিছুই করতে পারে নি।’
‘‘আপনার কেসটা হয়তো শক্ত। হয়তো আপনার জেতার সম্ভাবনা কম। তাই কেউ কিছু করতে পারে নি।’’
লোকটির শ্বাস ভারী হয়ে আসে। বোঝা যায় সে রেগে গেছে। ‘‘আমি তো বিচার পাইনা। আমাকে তো বিচার এর কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে তবে না আমি সব কিছু বলে দিতে পারবো! আমি তো সব দেখেছি। আমার চোখের সামনে।’’ আরও কিছু বলতে থাকে লোকটি বিড়বিড় করে। অমিতা তা বুঝতে পারে না।
‘‘আপনি তো এইটা নামকরা আমাদের কোন স্যারকে দিয়ে করাতে পারতেন। আমি তো একেবারেই নতুন।’’
‘‘সবাইকেই দেখেছি। ওরা শুধু টাকা চেনে। আমি তো টাকা দিতেও রাজি। কিন্তু ওরা সব নষ্ট হয়ে গেছে। কেউ আর ভালো মানুষ নয়।’’
এবার সত্যি সত্যি অমিতার রাগ হয়। ঢালাওভাবে এভাবে বলা তো ঠিক না। মিজান স্যার এর মত কত ভালো ভালো মানুষ এই লাইনে আছে। এই গেয়ো লোকটি তা কিভাবে বুঝবে!! তবু লোকটির মানসিক অবস্থা খারাপ বুঝতে পেরে আর কিছু বলে না সে।
লোকটি বলতেই থাকে ‘‘ তাই যখন আপনার মত নতুন কেউ আসে আমি তার কাছে আমার ফাইল নিয়ে হাজির হই। দেখি কেউ না কেউ তো আমার এই কাজ করে দিবে একদিন।’’
‘‘আচ্ছা আমি চেষ্টা করবো। আমি ফাইলটা পড়ে দেখি। তারপর আপনার সাথে এই নিয়ে কথা বলবো।’’
‘‘আচ্ছা। আমি আবার আসবো’’ বলেই কোনদিকে না তাকিয়ে লোকটা বের হয়ে যায়। তার যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে থাকে অমিতা। এই লাইনে যে কত অদ্ভুত লোকের সাথেই যে দেখা হবে কে জানে!


বাসায় এসে তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে নেয়। বাবা আর বড় ভাই বসে বসে খেলা দেখছে। এইসব খেলার ভিতর যে কি আছে! মাকে বলে ভাত দিতে। খেয়ে দেয়ে একটা ঘুম দেয়া দরকার। বিকালে আবার সজীব এর সাথে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার প্লান আছে। ব্যাগটা রাখতে যেয়েই ফাইলটার কথা মনে পড়ে। শান্তভাবে পড়ার জন্য ফাইলটা বাসায় নিয়ে এসেছে। কেসটা নিয়ে ওর অনেক আগ্রহ। তাই খুলে পড়তে বসে যায়। ময়লা কিছু কাগজ আছে। যে লোক তার আবার পরিস্কার ফাইল হবে কিভাবে! মনে মনে বলে অমিতা।একটা ছবি আছে। বাবা আর মেয়ের। মেয়েটি বাবার গলা পিছন থেকে ধরে আছে। মুখে হাসি। সাদাকালো ছবি।সাদাকালো ছবি দেখেই নষ্ট হয়ে যায় নি এখনও। মুখের হাসিটা স্পষ্ট বোঝা যায়। মেয়েটির স্কুলের সার্টিফিকেট। বয়স প্রমান করার জন্য। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট। রিপোর্টটি পড়তে যেয়ে বার কয়েক ঢোক গিলতে হয়। মানুষ এত নিষ্ঠুর কিভাবে হয়!! মেয়েটিকে ধর্ষণ করার পর মেরে ফেলা হয়। এর পর লাশ টুকরো টুকরো করে নদীতে ফেলে দেয়া হয়। অমিতার মনে পড়ে লোকটি তাকে বলেছিল সে সব দেখেছে। তাহলে কি তার সামনেই... না এখন আর পড়তে পারে না সে। এই কেসটা সে জীবন দিয়ে লড়বে। তাকে জিততেই হবে। জীবনের প্রথম কেস সে হারবে না।


‘‘স্যার আসতে পারি?’’ অমিতা একটু হাসি হাসি মুখে বলে।
‘‘এসো এসো, তোমাকে আবার অনুমতি নিতে হবে নাকি...মিজান স্যার এর মুখেও একটু হাসির রেখা দেখা যায়। ‘‘বসো’’ বলেই চেম্বার এ থাকা লোকটির সাথে কথা বলতে শুরু করে।
অমিতা ফাইলটি ব্যাগ থেকে বের করে। আজ অবশ্যই এই কেসটা নিয়ে কথা বলতে হবে। লোকটার প্রতি খুব মায়া বোধ করে অমিতা। অমিতার মত যত নতুন লোক আসে সবার কাছে সে নাকি বিচার চাইতে যায়। যাবেই তো। একজন বাবার জীবনে এর চেয়ে আর কষ্টের কি হতে পারে।
‘‘অমিতা, ইনার সাথে পরিচিত হও। ইনি তোমার সাথে তার কেসটি নিয়ে কথা বলবে। আমি কালকেই আসতে বলেছিলাম কিন্তু একটু সমস্যা থাকাই আসতে পারেন নি। আজ সবকিছু ঠিক করে নাও’’
‘‘স্যার কাল তো একজন এসেছিলেন।’’
‘‘কি বলছো। কাল কেন আসবে। উনি তো তোমার চোখের সামনেই বসে আছেন।’’
তর্কে যাওয়া ঠিক না তাই চুপ করে থাকে সে। লোকটি তাহলে কি স্যার এর এ্যপয়েন্টমেন্ট নিয়ে আসেনি! হতেই পারে। তবু ফাইলটা স্যারকে দেখাতে হবে। স্যার এর টেবিল এ ফাইলটা এগিয়ে দেয়।
‘‘এই ফাইল কেন বের করেছো?’’ স্যার এর কন্ঠে এবার রাগ এর চিহ্ন। আমি বলেছি তোমাকে কেস ষ্টাডি করতে কিন্তু তাই বলে ৫০ বছর আগের কেস স্টাডি করতে হবে। এত এত ফাইল পড়ে আছে কারেন্ট কেস এর।’’
‘‘স্যার এই ফাইলতো . . . . .’’
‘‘থামো’’ অমিতাকে থামিয়ে দেয় মিজান স্যার। ‘‘কেস হিসেবে খুব ইন্টারেষ্টিং তবে খুব স্যাড। এক মেয়েকে রেপ করে মেরে ফেলে কিছু চিহ্নিত লোক। তার পর রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা বলে পার পেয়ে যায়। লোকটি আমার কাছে এসেছিল। তখনই ফাইলটা তৈরি করা হয়।কিন্তু মামলা এর রায় অনুকূলে আসবে না বুঝতে পেরে লোকটি আত্মহত্যা করে।’’

অমিতার খুব পিপাসা লেগেছে। কিন্তু ব্যাগের বোতলটি বের করতে পারছে না সে।লোকটির শেষ কথাটি খুব মনে পড়ছে ‘‘আমি আবার আসবো’’ ।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×