somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই শুয়োরের যুদ্ধকে যদি গনতন্ত্র বলা হয়, তাহলে আমি সেই গনতন্ত্র চাই না।

২০ শে আগস্ট, ২০১২ সকাল ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি কোন তন্ত্র বুঝি না। তন্ত্রের কোন কাজ আমি বাংলাদেশে দেখিনি। বাংলাদেশের জন্য ঠিক কোন তন্ত্র প্রযোজ্য আমি শিওর না। বাংলাদেশে গত ৪২ বছরে শাসক বদল হয়েছে ৭ বারের মতো। কিন্তু চরিত্র কি বদলেছে? সামরিক বেসামরিক সব আমলেই কমবেশী অবিচার হয়েছে। প্রকৃত গনতন্ত্র বাংলাদেশে কোনদিনই ছিল না।



স্বাধীনতার পর পর দেশের অবস্থা খুব নাজুক হয়ে পড়ে বিভিন্ন আর্থ সামাজিক সমস্যার কারনে। একে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ তার উপর সুযোগ সন্ধানীরা যে যেদিকে পারছে লুটপাট করছিল। শেখ মুজিব সেই পরিস্থিতির সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। তার উপর রাজনৈতিক কোন্দলে ঘর ভাঙ্গলো। জাসদের জন্ম হলো। জাতীয় ঐক্যের বদলে অনৈক্য আর নৈরাজ্যই প্রাধান্য পেতে লাগলো। বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট বাংলাদেশেও এসে লাগলো। সাধারন মানুষ যখন না খেয়ে মরছে, তখন আওয়ামীলীগের অনেক নেতা মৌজ করছে আর টাকার পাহাড় বানাচ্ছে। তার উপর রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার মানুষের মধ্যে তীব্র ঘৃনার সুত্রপাত করে এবং নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তার সুচক দ্রুত নেমে যায়। তারপর দেশী-বিদেশী যৌথ ষড়যন্ত্রে সফল হলো ১৫ আগষ্টের শেখ মুজিবের নির্মম হত্যাকান্ড। জাতি নিপতিত হলো এক অন্ধকার যুগে।



১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব হত্যার পর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর নানান ক্রিয়া বিক্রিয়ার ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্রের ক্ষমতা লাভ করে। দুই বছরের মধ্যে সেনাবাহিনীতে শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে সাধারন মানুষের মধ্যেও জনপ্রিয় নেতা হিসেবে গড়ে উঠতে থাকে। তবে শৃংখলা আনতে গিয়ে সেনাবাহিনীকে প্রায় বধ্যভুমি বানিয়ে ফেলতে হয়। শত শত মুক্তিযোদ্ধা অফিসার নিধন করা হয়। বিদ্রোহ আর ষড়যন্ত্রের খোয়াড় হয়ে উঠে সেনানিবাসগুলো। কিন্তু জনগনের কাছে এসব খবর পৌছায় না। সবাই দেখে জিয়া খাল কাটে ছেড়া গেন্জী গায়ে। মুগ্ধ হয় তারা। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে জিয়ার ক্যারিশমা। তবে জিয়ার দেশ গড়ার একটা স্বপ্ন ছিল। নিজের মতো করে কিছু করতে চেয়েছিল। ক্ষমতার মোহটাও একটা কারন হতে পারে। ক্ষমতাকে নিরংকুশ রাখার জন্য অনেক সেনা অফিসারের প্রান নেয়া হয় আর এরশাদের মতো মেরুদন্ডহীন লম্পটকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। যার প্রতিদান অবশ্য এরশাদ দিয়েছিল ১৯৮১ সালের ৩০শে মে। মুক্তিযোদ্ধা-অমুক্তিযোদ্ধা অফিসারের দ্বন্দ্ব কাজে লাগিয়ে উদ্দেশ্য হাসিল করে এরশাদ।



১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল ছিল বাংলাদেশের রাজনীতির কালোযুগ। এরশাদ নামক নরকের কীট লম্পট দুরাচারের শাসনকাল।রাজনীতি থেকে 'নীতি' নামক বস্তুটা বিসর্জনের কাল। মহামান্য চামচা আর মহামান্য ভাঁড়েরা হয়ে ওঠে দেশ ও জাতি ভাগ্য নির্ধারক। সেই যুগের অবসান ঘটে যখন শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা আর জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়ার যৌথভাবে আন্দোলনে সামিল হয়।



১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশের গনতান্ত্রিক যুগের শুরু। কিন্তু কী গনতন্ত্র দেখলাম আমরা ২০ বছরে? নির্বাচন হয়, একদল জিতে, অন্যদল হারে। যে জিতে সে বলে খুব ভালো নির্বাচন, যে হারে সে বলে কারচুপি হয়েছে। জিতা পার্টি সংসদে যায় নিজেরা নিজেরা আমোদ করে, বিরোধী দল গেলে মাইক কেড়ে নেয়। তারপর বিরোধী দল বলে সংসদে যামু না। ওয়াক আউট দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। তারপর হরতাল, ভাংচুর, আন্দোলন। মানি না মানবো না, একদফা একদাবী সরকার তুই কবে যাবি। ক্ষমতার কাড়াকাড়ি। বোদ্ধারা বলে এটাই গনতন্ত্র। শিশু গনতন্ত্র তো, মারামারি করছে তাই।



১৯৯৬ সালে আবার সরকার বদল হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। কিছুদিন পর একই দৃশ্য। পরের চার বছর সংসদ বর্জন, হরতাল, ভাংচুর, আন্দোলন। মানিনা মানবো না। একদফা একদাবি। ক্ষমতার কাড়াকাড়ি। বোদ্ধারা বলে গনতন্ত্র এরকমই। বাড়ন্ত বয়স, মারামারি লাগাই স্বাভাবিক।



২০০১ আবার নির্বাচন হয়। সরকার বদল হয়। আবারও একই দৃশ্য। মানিনা মানবো না। সংসদ বর্জন, হরতাল, ভাংচুর, আন্দোলন। ক্ষমতার কাড়াকাড়ি। বোদ্ধারা বলে এইতো বেড়ে উঠছে গনতন্ত্র। কৈশোর পেরোচ্ছে তো, হাতাহাতি একটু হবেই।

২০০৯ সালে বহুত ঝক্কি ঝামেলার পর পুনরায় নির্বাচন। দিন বদলের অঙ্গীকার নিয়ে ডিজিটাল সরকার আসলো। কিন্তু পুনরায় একই দৃশ্যই আমরা দেখছি। বোদ্ধাদের মতে, ভরা যৌবন!! এটা হবেই।


সন্ত্রাস, দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্য এসবের কথা সচেতনভাবেই এড়িয়ে গেছি। এগুলো সব সরকারের আমলেই জনগনের প্রধান সমস্যা ছিল । কিন্তু একবারও এসবের জন্য একবারও আন্দোলন হয়নি। আন্দোলন, হরতাল সবকিছু হয়েছে ক্ষমতার কাড়াকাড়ি নিয়ে। তথাকথিত গনতন্ত্র নিয়ে।



অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষও ক্ষমতার এই অসভ্য কাড়াকাড়িকে বলে গনতন্ত্র। এর জন্য মায়াকান্না করে, প্রবন্ধ রচনা করে, ভাবগম্ভীর আলোচনায় অংশ নেয় টিভিতে।



এইসব কারনেই বাংলাদেশের গনতন্ত্র নামক প্রচলিত অরাজকতার প্রতি আমার বিশ্বাস নেই। বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামাত, জাতীয়পার্টিসহ যেসব দল অতীতে ক্ষমতার সাথে যুক্ত ছিল, তারা গনতন্ত্রের পরীক্ষিত শত্রু ।



দুই শুয়োরের যুদ্ধকে যদি গনতন্ত্র বলা হয়, তাহলে আমি সেই গনতন্ত্র চাই না।

দুই শুয়োরের যুদ্ধকে যদি গনতন্ত্র বলা না হয়, তাহলে আমি গনতন্ত্র দেখিনি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:২৫
১৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×