গুড় শারীরিক শক্তি ও পুষ্টির অন্যতম উত্স। রমজান মাস সিয়াম সাধনার মাস; সারাদিন অভুক্ত থাকার পর হালকা ও মুখরোচক খাবার গ্রহণে পরামর্শ দেয়া হয়। তাই রমজানের ইফতারে শরবত ও হালকা পানীয়ই প্রাথমিক ম্যানু। আবার অনেকে চিনির চেয়ে গুড়ের শরবতই বেশি পছন্দ করেন। কিন্তু বাজারে যে ধবধবে পরিষ্কার গুড় পাওয়া যায় তার অধিকাংশই ভেজাল ও অপদ্রব্য মিশ্রণ করেই তৈরি। সুতরাং গুড়ের শরবত ও মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে হতে হবে অত্যন্ত সতর্ক।
চিটাগুড় ও অপরিপক্ব আখের রসের সঙ্গে চিনি, ভুট্টার ছাতু, ময়দা মিশিয়ে হাইড্রোজ নামের ক্ষতিকর রাসায়নিক পরিশোধকসহ কৃত্রিম সুগন্ধি দিয়ে পরিশোধিত ধবধবে পরিষ্কার উত্পাদিত ভেজাল গুড় বিভিন্ন বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর মাড়াই মৌসুম শুরু হওয়ার অনেক আগেই মিলজোন এলাকায় এসব ক্ষতিকর গুড় তৈরি হচ্ছে ব্যাপকভাবে। ফলে অধিকাংশ চিনিকল মাড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপশি ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত গুড় ভোক্তা সাধারণের মাঝে সৃষ্টি করেছে উদ্বেগ ও সংশয়।
মুনাফালোভী অসত্ গুড় উত্পাদনকারী ও ব্যবসায়ীরা পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এ গুড় উত্পাদন ও বিপণনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় সবচেয়ে বেশি আখ উত্পাদিত হয়ে থাকে; ফলে এসব অঞ্চলে গুড় তৈরিও হয় বেশি। মাড়াই মৌসুমে এসব জেলায় চিনিকল জোনে দুই হাজারেরও বেশি যন্ত্রচালিত মাড়াই কলে, সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে, প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন গুড় উত্পাদিত হয়ে থাকে। বর্তমানে আখ অপরিপক্ব থাকায় গুড় আহরণের হার ও চিনির দাম গুড়ের চেয়ে কম হওয়ায়, মাড়াইকলে গুড় উত্পাদন না করে, ঐসব অপদ্রব্য মিশিয়ে গুড় উত্পাদন করা হচ্ছে।
অপরিপক্ব আখ থেকে গুড় আহরণের হার অনেক কম; শতকরা মাত্র ৬-৭ ভাগ। অর্থাত্ প্রতিমণ আখ মাড়াই করে মাত্র আড়াই-পৌনে তিন কেজি গুড় আহরিত হয়। অথচ পরিপক্ব আখের রস থেকে গুড় আহরণের হার ১১-১২%। অপরিপক্ব আখের রস থেকে গুড় তৈরি লাভজনক নয় বলে, অধিক মুনাফার জন্য গুড় তৈরিতে ভেজাল মেশানো হয়। এসব ভেজালযুক্ত গুড় তৈরিতে রাসায়নিক পরিশোধক ক্ষতিকারক দ্রব্য হাইড্রোজের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য তা চরম ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষাক্ত ও ক্ষতিকর হাইড্রোজ পৃথিবীর কোনো দেশেই খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহারের অনুমোদন নেই; আমাদের দেশে টেক্সটাইল ও গামের্ন্টস শিল্পে বিরঞ্জক হিসাবে আমদানি করা হলেও এর সিংহভাগই গুড়শিল্পে রাসায়নিক পরিশোধক হিসাবে ব্যবহূত হচ্ছে। অথচ ভেষজ পরিশোধক হিসাবে বনঢেড়স, ঘৃতকুমারী সহজেই ব্যবহার করা যায়, যা শরীরবান্ধব।