somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৃষকের ঈদ আনন্দ

১৯ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৩:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঈদে শহরের মানুষের জন্য হাজারো আয়োজন। এখন নগরায়ণের প্রভাবে গ্রামীন সংস্কৃতিতেও পরিবর্তন এসেছে। গ্রামীন ঐতিহ্য সেখানে দিনের পর দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। নগর সংস্কৃতির প্রভাব ডিঙিয়ে গ্রামীন সংস্কৃতির আর সামনে আসার সুযোগ নেই। শহরের ফ্যাশন চলে যাচ্ছে গ্রামে। গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে একসময় ঈদে একেবারে মাটির গন্ধে ভরপুর যেসব আয়োজন ছিল, এখন তার জায়গায় এসে পড়ছে টেলিভিশন, ডিভিডি, মোবাইল, হাল ফ্যাশনের পোশাক আশাকসহ বিনোদনের কত শত উপকরণ। দেশ বিদেশের শহুরে বিনোদনে ভরপুর অসংখ্য টেলিভিশন চ্যানেলের রিমোর্ট কন্ট্রোল এখন প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের হাতে। চাপ দিলেই হাল ফ্যাশন, শহরের নাচ-গান, খবর, বাহারি বিজ্ঞাপন আর কথার ওপর কথা। এখন গ্রামের মানুষই ভুলে যেতে বসেছে পুরনো দিনগুলো। গ্রামীন জীবনের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করার মতো ভাতৃত্বের বন্ধনও যেন বিদায় নিয়েছে বহু আগে। এই যখন অবস্থা তখন গ্রামীন জীবনের আনন্দ-বিনোদনকে শহরের জীবনের সঙ্গে মিশিয়ে দেয়ার একটি মাত্র বাতিই জ্বলছে। সেটিই হচ্ছে কৃষকের ঈদ আনন্দ। শাইখ সিরাজের পরিকল্পনা, উপস্থাপনা ও পরিচালনায় গত সাত বছর ধরে চ্যানেল আই’র ঈদ আয়োজন হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে এই অনুষ্ঠান। এবারও ঈদের তৃতীয় দিন বিকেল তিনটা পাঁচ মিনিটে প্রচারিত হবে কৃষকদের অংশগ্রহণে ব্যতিক্রমী আনন্দ আয়োজন।
কৃষকের ঈদ আনন্দের ভেতর দিয়ে প্রতিবছরই উঠে আসে দেশের একেকটি পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠির ঐতিহ্য, জীবন-জীবিকা ও সংস্কৃতির নানা গল্প। এবার সেখানে এসেছে দেশের হাওর অঞ্চল। ভাটি অঞ্চলের গান, ধান আর মাছকে ঘিরে বছরের অর্ধেক পানির নীচে আর অর্ধেক ডাঙ্গার যে সংস্কৃতি তা এবার উঠে এসেছে কৃষকের ঈদ আনন্দে। প্রতিবারের মতই আয়োজন রয়েছে চিত্তাকর্ষক গ্রামীণ খেলাধূলা। হাওরাঞ্চলের নারী-পুরুষের জীবনের দুঃখ-কষ্ট ও সংগ্রামের সঙ্গে একটি মালা গাঁথা হয়েছে।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার খুরশীমুলে ধারণ করা হয় এবারের ঈদ আনন্দের মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠানটি। হাওর অঞ্চলের মানুষের জীবন যে জায়গাগুলোতে আটকে আছে, তা খুটিয়ে খুটিয়ে তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েছেন শাইখ সিরাজ। তিনি বলেন, জাতীয় অর্থনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হাওর। প্রতি বছর গোটা জাতির জন্য যোগান দিচ্ছে বিপুল পরিমাণ বোরো ধান, স্বাদু পানির মাছ, রবিশস্য। অন্যদিকে জারি, সারি, ভাটিয়ালি, বাউল, কিস্সা, গীত, পালা, কীর্তনসহ লোকায়ত শিল্পের এক জীবন্ত জাদুঘর হাওর জনপদ। কিন্তু প্রান্তিক মানুষের দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন ইত্যাদির ভেতর দিয়ে অনেক কিছুই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে হাওরের মাছ ও বিভিন্ন প্রজাতির ধান। হাওরের সম্পদ এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রভাবশালীদের দখলে। জাল যার জলা তার এই নীতিও দিনের পর দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বঞ্চিত ও শোষিত হাওরবাসী এখন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রেই পোহাচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। এই চিত্রগুলো এবার উঠে এসছে কৃষকের বিভিন্ন আনন্দময় খেলাধূলার মধ্য দিয়ে। এবার ঈদ আনন্দের খেলাধূলার মধ্যে থাকছে বালিশ লড়াই, তৈলাক্ত কলাগাছে আরোহণ, নানা-নাতি দৌড়, ঝুলে ঝুলে বাঁশ অতিক্রম, বউ সাজানো, হাওরে হাঁস ধরা, শিশুদের দৌড়, বিপরীতমুখী দৌড় ইত্যাদি।
কৃষকের ঈদ আনন্দ আয়োজনে এ আগে দেশের বিভিন্ন চরাঞ্চলের দুঃখ দুর্দশার কথা উঠে এসেছে। এসেছে আইলা বিধ্বস্ত দক্ষিণ উপকুলীয় জনপদ সাতক্ষীরার শ্যামনগর, সিডর কবলিত আরেক উপকুল বরগুনার পাথর ঘাটা, অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনপদ নওগাঁর আত্রাই উপজেলার চকশিমলার মানুষের পিছিয়ে থাকার গল্প। প্রতি বছর ঈদে কৃষকের ঈদ আনন্দ অনুষ্ঠানে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় উদ্যোগেই শুরু হয়েছে বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন। আবার নতুন করে উঠে আসছে ষাড়ের লড়াই, ঘোড়দৌড়, লাঠিখেলা থেকে শুরু করে আবহমান বাংলার প্রাচীন নানান খেলাধুলা। গ্রামের কৃষিজীবী জনগোষ্ঠি আবার অনুভব করছে তাদের জীবন-জীবিকার প্রয়োজনীয় শক্তি ধরে রাখতেই প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস। আর একসঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠার মধ্য দিয়েই অর্জিত হতে পারে সেই আত্মবিশ্বাস।
কৃষকের ঈদ আনন্দ অনুষ্ঠিত হয় মূলত গ্রামের সাধারণ অধিবাসীদের স্বতস্ফুর্ততায়। কাজগুলো অনেক বড়, কিন্তু গ্রামের মানুষের আন্তরিকতায় একেবারে ছোট হয়ে আসে। একেকটি অয়োজনকে ঘিরে কয়েকদিনের জন্য একেকটি গ্রাম যেন পরিণত হয় ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ গ্রামে’। সাজ সাজ পড়ে যায়, গ্রাম থেকে গ্রামে। যে গ্রামে আয়োজন সে গ্রামে ভীড় পড়ে যায় আত্মীয় মেহমানের। একটি দিন সবাই শরীক হতে চান কৃষকের এই আনন্দ আয়োজনে। ধারণপর্বের অদ্ভুত দিনটি উপভোগ করেন জীবনের অন্যরকম এক প্রাপ্তি হিসেবে। আবার যেদিন টেলিভিশনে এটি প্রচারিত হয় সেদিন সারাবিশ্বের বাংলা-ভাষাভাষী দর্শকের চেয়ে ওই গ্রামবাসীর গর্ব ও কৌতুহল থাকে ভিন্ন। নিজ এলাকায় আয়োজনের জন্য তারা যেমন গর্বিত হন, একইভাবে কৌতুহল নিয়ে অপেক্ষা করেন, তাদের কোন কোন সমস্যা তুলে ধরা হলো। এবার যেমন নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের হাওর এলাকার মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
কৃষকের ঈদ আনন্দ ইতোমধ্যে দৃষ্টি কেঁড়েছে দেশের বিশিষ্টজনদের। তাদের কাছে এই আয়োজনের স্বার্থকতা অন্যরকম। বিশিষ্ট আইনবিদ ব্যারিষ্টার রফিক উল হক বলেছেন, কৃষকের ঈদ আনন্দ এদেশের শহরের মানুষকে করেছে গ্রামমুখী। আর গ্রামের কৃষিজীবী মানুষগুলোর বহুদিনের হতাশ হৃদয়ে দিয়েছে স্বস্তি আর আত্মবিশ্বাস। তারা এখন বিশ্বাস করতে শিখেছে তারাও বঞ্চিত নয়। প্রচ- তাপদাহে, তুমুল বর্ষায় কিংবা মিষ্টি শীতের দিনে গ্রাম বাংলার একেকটি ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে যেতে ছুটেছে কৃষকের ঈদ আনন্দের আনন্দ-অভিযান। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততার কছে হার মেনেছে প্রকৃতির বৈরী আচরণও।


৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×