somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্প - মতিনের মন খারাপ

২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমস্যাটা কবে থেকে?
বেশিদিন না স্যার।
বেশিদিন না মানে কী?
দুই বছর হলো স্যার।
আপনি কি সিউর?
মানে?
মানে আপনি কি সিউর যে আপনার সমস্যাটা গত দুই বছর ধরে?
জি স্যার,সিউর।
কেউ কি জানে?
মানে?
আপনি এত মানে মানে করেন কেন,হ্যা?ডাক্তারের কাছে আসছেন,ডাক্তারকে সব কিছ খুলে বলতে হয়।
বললাম তো স্যার,দুই বছর ধরে এই সমস্যা হচ্ছে।
আমি আপনাকে জিজ্ঞাস করেছি আর কেউ কি জানে?আপনি বলছেন দুই বছর ধরে।কানেও কি সমস্যা আছে নাকি আপনার?
না স্যার,আমার কানে সমস্যা নাই।
তাহলে বলেন আর কেউ কি জানে?
না স্যার,আর কেউ জানেনা,আপনাকেই প্রথম বললাম।
হুম,ঠিক আছে,ঔষধগুলো ঠিকভাবে খাবেন।দুই মাস পরে আবার আসবেন।
মতিন প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে আসে।
***
বাসা থেকে সকালে বের হয়েছে মতিন।অফিস শেষ করে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করে তারপর বাসায় আসবে।বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মতিনের স্ত্রী মুন্নী একটা টুথ ব্রাশ নিয়ে আসতে বলেছিল।মতিন ভুলে গেছে।বাসার ঢোকার পর মুন্নীর চেহারা দেখে টুথব্রাশের কথা মনে পড়ল।মুন্নী কিছু বলার আগেই মতিন দরজা খুলে বাইরে বের হয়।
কোথায় যাও?এই না মাত্র আসলা?
মতিন বলল,টুথব্রাশের কথা ভুলে গেছি।টুথব্রাশ নিয়ে আসি।
ভুলে যাওয়ার এই রোগ তোমার কী আর যাবে না,নাকি?
মতিন মুন্নীর এমন উগ্র আচরণে গম্ভির হয়ে যায়।কথা বাড়ায় না।মতিন জানে এখন কথা বাড়ালে বাড়তেই থাকবে।তর্কে মুন্নীর সাথে মতিন কখনো জিততে পারে না।আগে হলে চেষ্টা করে দেখত।এখন আর সেই চেষ্টা করতেও মতিনের ভালো লাগে না।ঝগরা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।বিয়ের পর প্রথম প্রথম মতিন মুন্নীর সাথে বেশ আগ্রহ নিয়েই ঝগরা করত।ঝগরা করে কেমন যেনো শান্তি পেতো।রাতে ভালো ঘুম হতো।
এখন আর সেই দিন নাই।বিয়ে করেছে গত জুলাই মাসে দশ বছর হয়ে গেলো।বিয়ের প্রথম বছর আর দশম বছর এক না,মতিন বুঝতে পারে।মেয়েদের সঙ্গে তর্ক করে জেতার চেষ্টা করা আর একটা ইট হাতে নিয়ে নিজের মাথায় নিজে বাড়ি মারা একই কথ।মতিন একটা বইতে পড়েছে।ঝগরার আগ্রহ হারিয়ে ফেলার আরো একটা কারণ আছে।গত দুই বছর ধরে সব সময় মতিনের মন খারাপ থাকে।এমন কোনো কারণ নেই যে কারণে মতিনের মন ভালো হতে পারে।সব সময় মন খারাপ থাকতে থাকতে এখন মন ভালো কী জিনিস সেটাই মতিন ভুলে গেছে।
***
অফিসের এক কলিগের কাছ থেকে মতিন ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ পেয়েছে।কলিগের নাম জাফর।জাফরকে তার কলিগরা মিরজাফর বলে ক্ষেপায়।শুধু মতিন ছাড়া।অথচ মিরজাফরের চরিত্র আর জাফরের চরিত্র এক নয়।তবুও কলিগরা তাঁকে মিরজাফর বলে।একদিন অফিসে জাফরের এক বন্ধু আসে দেখা করতে।জাফর আসতে বলেছিল।বন্ধুটি বেকার।বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করেছে অনেকদিন আগে।একটাও চাকরী পায় নি।কিছুদিন একটা কলেজে পড়িয়েছিল।ভালো লাগেনা বলে সেটাও ছেড়ে দিয়েছে।এরপর থেকে একদম বেকার।কোথাও কোনো চাকরী পায়না।জাফরকে প্রায়ই ফোন করে একটা চাকরী চায়।জাফর বলেছিল চাকরী দেয়ার মতো ক্ষমতা আমার নাই।তবে আমার বসের সাথে একদিন তোর পরিচয় করিয়ে দেবো।তুই সময় করে আমার অফিসে আসিস।একজন কলিগ আজ সেই বন্ধুটিকে বলেছে আমরা তো ওনাকে মিরজাফর নামে চিনি।বন্ধুটি জাফরকে বলেছে।জাফর রাগ করেনি।ওরা মিরজাফর বলে জাফরকে এমনি এমনি ক্ষেপাতে চায়।জাফর সেটা বোঝে।একদিন মতিনকে চা খেতে খেতে জাফর বলল,প্রায়ই দেখি তুমি চুপচাপ থাকো।তোমার কি মন খারাপ নাকি?মতিন জাফরকে সব কিছু খুলে বলল।জাফর নিজ থেকে মতিনকে পরামর্শ দিলো মন রোগের ডাক্তার দেখানোর।একদিন পর ডাক্তারের নাম এবং চেম্বারের ঠিকানাও যোগার করে দিলো মতিনকে।
***
টুথব্রাশ হাতে নিয়ে মুন্নী চোখ গরম করে মতিনের দিকে তাকালো।বলল,এইটা কী আনছো?
ক্যান,কী হইছে?
কী হইছে মানে?তুমি বোঝনা কী হইছে?
তুমি বুঝাইয়া বললেই তো হয়,এরকম চিৎকার করছো কেনো?
কী বুঝাইয়া বলব,তুমি কি ছোট বাচ্চা নাকি?বাচ্চাদের মতো একটা টুথব্রাশ নিয়ে আসলা যে?
এটা কি বাচ্চাদের টুথব্রাশ নাকি?বাচ্চাদের গুলা তো আরো ছোট হয়।
বাচ্চাদেরইতো,রঙ দেইখা বোঝ না?বেগুনী কালারের টুথব্রাশ কী বড়দের হয় নাকি?দেখছো কোনোদিন?
মতিন এবার বুঝতে পারে মুন্নির রাগের কারণটা কী।টুথব্রাশের রঙ পছন্দ হয়নি।অথচ মতিন অনেকগুলোর মধ্য থেকে এই টুথব্রাশটা মুন্নীর জন্য নিয়েছে বেগুনী কালার দেখেই।মতিন ভাবতেও পারেনি যে মুন্নী টুথব্রাশের রঙ নিয়েও ঝামেলা করবে।বিয়ের দশ বছর পর এসে কোনো স্ত্রী তাঁর স্বামীর সাথে টুথব্রাশের রঙ নিয়ে ঝগরা করেছে,মতিন এমনটা এর আগে দেখেনি,শোনেওনি।তবুও মতিন বলল,সকালে দিও,পাল্টিয়ে নিয়ে আসব।কোন রঙের আনব?
কোন রঙের মানে?তুমি জানোনা আমার কোন রঙ পছন্দ?
এবার মতিন বিপদে পড়ে যায়।কোন রঙটা যেনো মুন্নীর পছন্দ কিছুতেই মনে করতে পারে না।মতিন ভাবে,বিয়ের পর থেকে কি রঙ নিয়ে মুন্নীর সাথে কোনোদিন কথা হয়েছিল।কিছুতেই মনে করতে পারে না।তবু আন্দাজেই বলে বসে,জানি তো,গোলাপী রঙ তোমার প্রিয়।
এমা,তোমার সত্যি মনে আছে?
থাকবে না কেনো?বিয়ের পর বাসর রাতেই তো তুমি আমাকে বলেছিলে,তোমার প্রিয় রঙ গোলাপী।আমার সব মনে আছে।মুন্নী খুব খুশি হয়।বিয়ের দশ বছর পরেও তাঁর প্রিয় রঙের কথা স্বামী মনে রেখেছে।ভাবতেই তাঁর ভালো লাগছে।মতিনের দিকে তাকিয়ে বলল,থ্যান্ক ইউ।তুমি আসলে অনেক ভালো।
***
ডাক্তারের দেয়া কোনো ঔষধ মতিন খায়নি।খাওয়া তো পড়ের কথা কেনেও নি।আসলে ডাক্তারের আচারণটা মতিনের ভালো লাগেনি।চেম্বার থেকে বেড়িয়ে রাস্তায় নেমেই মতিন প্রেসক্রিপশনটা ছিড়ে ফেলেছিল।মতিন ভাবে,একজন মন রোগের ডাক্তারের কথাবার্তা আরো সুন্দর হওয়া উচিৎ।পৃথিবীর সব মন রোগের ডাক্তাররাই বুঝি এরকম, খচ্চরের মতো কথা বলে।আবার ভাবে, না,সব মানুষ সমান না।হাতের পাঁচ আঙ্গুল যেমন সমান না,তেমনি সব ডাক্তারের আচরণও সমান না।এই ডাক্তারটা নিজেই মানসিক রোগী।তাঁর চিকিৎসা হওয়া প্রয়োজন।
দুই মাস পরে তো ভালো,এই জীবনে কোনোদিন আর ঐ ডাক্তারের কাছে যাবে না মতিন।এই মর্মে সিদ্ধান্ত নেয়।সারাজীবন মন খারাপ থাকলেও না।ডাক্তার তো নয় যেনো কোনো দারোগা বাবু।যেনো আমাকে এ্যারেষ্ট করেছিল।তারপর জেরা করছিল।ফালতু ডাক্তার একটা।মতিন ডাক্তারের কথা মনে করে ভিতরে ভিতরে রেগে যায়।
জাফরকে বলতে হবে,এ ডাক্তার দিয়ে হবে না।অন্য ডাক্তারের ঠিকানা দাও।
বললও জাফরকে।জাফর বলল,এই রোগের জন্য এর চেয়ে ভালো ডাক্তার বাংলাদেশে নাই।তুমি এইটা কী বলতেছো মতিন?
না,আমি আর এই ডাক্তারের কাছে যাবনা।তুমি অন্য ডাক্তারের ঠিকানা বলো।
জাফর মতিনকে আর কিছু বলার খুঁজে পায় না।তবুও মতিনকে আবার বোঝানোর চেষ্টা করে।শোনো মতিন,মাথা ঠান্ডা করো।আমার কথা শোনো।
মতিনের একই কথা।না,আমি যাবো না।সে আমাকে বয়রা বলেছে।বলেছে কানেও কম শোনেন নাকি আপনে?সে কি কানের ডাক্তারীও করে নাকি?সে একটা ফালতু ডাক্তার।
জাফর বলল,আচ্ছা তোমার সমস্যাটা কী?আমাকে খুলে বলোতো,শুনি।নাকি বলতে অসুবিধা আছে?
মতিন বলল,না,কোনো অসুবিধা নাই,তুমি তো আর মিরজাফর না,তুমি জাফর,তোমাকে বলতে অসুবিধা কী?
জাফর বলল,তোমার যে বাচ্চা হয়না এজন্য কোনো ডাক্তার দেখাইছিলা?
দেখাইছিলাম,অনেক ডাক্তার দেখাইছিলাম।কাজ হয় নাই।
শেষ কবে দেখাইছিলা?
দুই বছর আগে।
ডাক্তার কী বলেছিল?
বলেছিল কাজ হবে না।
বলতে বলতে মতিনের চোখ ভিজে যায়।টপ টপ করে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে তাঁর গাল বেয়ে।জাফর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মতিনের দিকে।কী পরামর্শ দেওয়া যায় তাকে,জাফর ভেবে পায় না।

(সমাপ্ত)
২১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×