somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাকমা জাতির ইতিহাস : চম্পক নগর হতে বাঙ্গালা (৩য় পর্ব )

১৮ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[৩য় পর্বটি কিছুটা গল্প আকারে লেখলাম।নব্য ব্লগারের দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা।ভাল লাগলে জানাবেন। খারাপ লাগলেও জানাবেন]
(১)
১৪১৮ খ্রিঃ। চাকমা জাতির ভরসার শেষ প্রতীক রাজা মানেকগিরি (মায়ানমারের ইতিহাসে রাজা মারেক্যাস নামে পরিচিত) বিগত এক শতাব্দী চাকমা জাতি ব্রহ্মদেশের বিভিন্ন আংশে ছড়িয়ে পড়লেও মূল স্রোতের নের্তৃত্ব দিচ্ছেন রাজা মানেকগিরি।রাজ্যহীন রাজা। রাজা কিছুদিন পুর্বে বঙ্গদেশে গোপনে দূত প্রেরণ করেছিলেন। বঙ্গদেশের সুলতানের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে তার দূত প্রেরণ। দূত সুস্ংবাদ নিয়ে ফিরে এসেছে। সুলতান জালালুদ্দীন মোহাম্মদ শাহ আশ্রয় প্রদানে সম্মত হয়েছেন। রাজা অনেক ভেবে চিন্তে ব্রহ্মরাজ্য ত্যাগের সি্দ্বান্ত নিয়েছেন। মগ সৈন্য ও রাজকর্মচারীর অত্যচার থেকে বাচার জন্য ব্রহ্মরাজ্য ত্যাগের বিকল্প নেই। এছাড়াও চাকমা জাতিকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে পারলে ধিরে ধিরে শক্তি অর্জন করে ভবিষ্যতে হয়ত হারানো রাজ্য উদ্বার করা যাবে অথবা নতুন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা যাবে। হয়ত মানেকগিরি তার জী্বদ্দশায় সেই সূদিনটি দেখে যেতে পারবে।

(২)
রাজবাড়ীতে রাজা মানেকগিরি অতি বিশ্বস্ত কয়েকজন চাকমা নেতা নিয়ে গোপন বৈঠক করছেন। বৈঠকে মন্ত্রী থৈন সুরেস্বরী সবাইকে ব্রহ্মরাজ্য ত্যাগ ও চট্টগ্রামে বসতি স্থাপনের গুরুত্ব বর্ণনা করছেন। থৈন সুরেস্বরী সুবক্তা ও সুচতুর বুদ্ধির অধিকারি। রাজার অতি প্রিয় ও আস্থাভাজন। রাজা থৈন সুরেস্বরীকে দূত হিসবে বঙ্গদশে পাঠিয়েছিলন। রাজাকে নিরাশ হতে হয়নি। সে নবাবের নিকট হতে দক্ষিন চট্টগ্রামে বসতি স্থাপনের অনুমতি নিয়ে এসেছে। বৈঠকে চট্টগ্রামে বসতি স্থাপনে সবাইকে রাজি করাতে সুরেস্বরীর খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। চাকমা জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় যে দেশ ত্যাগের পরিকল্পনা তা সবাই উপলব্দি করতে পারছে। কিন্তু ব্রহ্মরাজের নিয়ন্ত্রনাধীন আরাকান রাজা কি তাদেরকে দেশ ত্যগের সুযোগ দিবে? সবাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিল প্রথমে রাজা, রাজার দুই ভাই এবং নেত্রিত্বাস্থানীয় ব্যক্তিরা আরাকান ত্যাগ করবে। পরবর্তীতে অন্যেরা পর্যায়ক্রমে তাদের অনুসরণ করবে। সুরেস্বরী প্রত্যেককে আলাদা ভাবে তাদের করনীয় বুঝিয়ে দিলেন।
(৩)
রাজা মানিকগিরি চাকমা প্রধানদের সাথে আবারো আলোচনায় বসেছেন। রাজা ধির-স্থির ও শান্ত স্বভাবের হলেও আজ তাকে কিছুটা বিচলিত দেখাচ্ছে। গুপ্তচর মারফত তিনি জানতে পেরেছেন আরাকান রাজসৈন্যরা এগিয়ে আসছে।তাদের আরাকান ত্যাগের পরিকল্পনা আরাকান রাজা জানতে পেরেছে্ন।তাদের পলায়নে বাধা দেওয়ার জন্য আরাকান রাজার সৈন্য প্রেরণ । রাজা মানিকগিরির দুই ভাই রাজাকে পালিয়ে যাবার প্রস্তাব দিলেন। রাজার পলায়ন নিশ্চিত করতে দুই রাজকুমার আরাকান সৈন্যদের বিরুদ্বে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। পরে তারাও রাজাকে অনুসরন করে চট্টগ্রামে পৌছবে। দুই ভাইকে বিপদের মুখে ফেলে পালিয়ে যেতে রাজা কিছুতে রাজি হল না। মন্ত্রী ও সর্দারদের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত রাজা পালাতে রাজি হলেন। চাকমা জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় তাকে পালাতে হবে। রাজা কয়েকজন সর্দার ও অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। মন্ত্রী, অধিকাংশ সর্দার ও সৈন্যগন রাজকুমারদের সাথে রয়ে গেল।
চাকমারা আরাকান সৈন্যদের সাথে বীরের মত যুদ্ধ করল। যুদ্ধের পাশাপাশি তারা চট্টগ্রামের অভীমূখে অগ্রসর হতে লাগল। যুদ্ধে রাজার ভাই রদংমা ও বহু চাকমা সৈন্য বীরত্বের সাথে লড়াই করে মৃত্যু বরন করলেন। রাজার ছোট ভাই কদমগিরি ও মন্ত্রী অবশিষ্ট সৈন্য, সর্দার ও অনুচরসহ চট্টগ্রামে সুলতানের রাজ্যে প্রবেশ করেন। রাজা মানিকগিরি ইতিপূর্বেই সেখানে নিরাপদে পৌছেছে। রাজা ভাইকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। রাজা, রাজকুমার, মন্ত্রী, সর্দার, সৈন্য সকলের চোখেই অশ্রু। এ অশ্রু আনন্দের, এ অশ্রু বেদনার।
(৪)
দক্ষিন চট্টগ্রামে অরণ্যঘেরা জনমানবহীন বিস্তৃর্ণ অঞল। বঙ্গদেশের সুলতান চাকমাদের এখানে বসতি স্থাপনের অনুমতি দিয়েছেন। প্রবল উৎসাহে চাকমারা জঙ্গল কেটে চলছেন। এখানেই তারা গড়ে তুলবে নতুন জনপদ। নতুন চাকমা রাজ্যের ভিত্তি।
রাজা মানিকগিরি ক্ষুদ্র চাকমা রাজ্যের জন্য শাসন ব্যবস্থা দাড় করালেন। তিনি রাজ্যকে বারটি গ্রামে বিভক্ত করেন। প্রত্যেক গ্রামের জন্য একজন দলপতি নির্বাচন করেন। গ্রাম দলপতির পদবী হল রোয়াযা। রাজ্য পরিচালনার জন্য রাজা একটি মন্ত্রণা সভা গঠন করেন। মন্ত্রণা সভার সদস্যদের পদবী চেগে (মন্ত্রী)।- সেনাপতির পদবী সর্দার এবং সৈন্যদের পদবী লস্কর। রাজস্ব আদায়ের জন্য রোয়াযা, আমু, খীসা, রোয়াসই, সইসুখ ইত্যাদি পদবিধারি রাজকর্মচারী তৈরি করলেন। রোয়াযা রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি বিচারকার্যও পরিচালনা করবেন।
শিশু রাজ্যের অস্তিত্ব রক্ষা ও সমৃদ্ধ্বি অর্জনের জন্য সকলেই সচেষ্ট হলেন। শতাব্দীকাল নিপীড়িত, লাঞ্জিত জাতি নতুন করে স্বপ্ন দেখছে। অতীতেও নিম্ন আরাকান হতে বিতাড়িত হয়ে উত্তর ব্রহ্মে তারা সমৃদ্ধ রাজ্য গড়ে তুলেছিল। হারানো গৌরব ফিরে পেতে সকল চাকমাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
[চাকমা জনগষ্ঠির একটি বড় অংশই ব্রহ্মদেশে রয়ে যায়। অনেকেই মায়ানমারের মূল জনগোষ্ঠির সাথে মিশে গেছে। মায়ানমারে বর্তমানে দৈননাক চাকমা, রোয়াং চাকমা ইত্যাদি চাকমা জাতি দেখা যায়। আর চট্টগ্রামে বসতি স্থাপনকারি চাকমা জাতি --------
৪র্থ পর্বে বিস্তারিত]
তথ্যসূত্রঃ
১।- চাকমা জাতির ইতিবৃত্ত – বিরাজ মোহন দেওয়ান।
২।- চাকমা রাজ বংশের ইতিহাস – রাজা ভূবন মোহন রায়।
৩।-চাকমা জাতি – সতীশ চন্দ্র ঘোষ।
৪।-চট্টগ্রামের ইতিহাস – মাহাবুব – উল - আলম।
২য় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:২৫
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×