somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাত্রী চাই।

১৮ ই আগস্ট, ২০১২ সকাল ৮:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বলা বাহুল্য, প্রত্যেক সন্তানই মাকে ভালবাসে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। মা, সষ্ট্রার সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। আবার মায়ের উপহারের তুলনা হয় না। তা যদি হয় ঈদে তবে সোনায় সোহাগা। তবে সন্তানকে যদি সে উপহার প্রত্যাখান করতে হয় তবে দুঃখবোধের সীমা থাকেনা। আমি তেমনই একজন। বিগত দু’বছর যাবত প্রতি ঈদে মা আমার জন্য পাত্রী পছন্দ করে রাখেন। এটাকে ঈদ উপহার বলা যায় কিনা জানিনা। আপাততঃ আমি ঈদ উপহার বলছি। সাথে সাথে মেয়েদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

ঈদে ফেনীতে বাসায় আসলে মায়ের পছন্দ করা পাত্রী দেখার জন্য পীড়াপীড়ি করেন। আমার ভাল লাগেনা। দু’বছরে চার ঈদে মাত্র একবার মায়ের অনুরোধে পাত্রী দেখেছিলাম। মেয়েটির রূপের কমতি ছিলনা। গুণের কথাও শুনেছিলাম সবার মুখে। আমার পরিবারের সবাই তাকে পছন্দ করেছিলো। মেয়েটিও নিজেকে আমার কাছে উপস্থাপনের প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছিল। তার সে চেষ্টা আমার কাছে কখনো কখনো পাগলামো বা অপরিপক্কতা বলে মনে হয়েছে। আমি তাকে সবিনয়ে না বলেছি।

ইত্যবসরে, আমি নিজে একটা মেয়ে (পাত্রী) দেখেছি। এক বড় বোনের ঐকান্তিক ইচ্ছায়। প্রথম প্রস্তাবে না করেছিলাম। বলেছিলাম, আপু কালো মেয়েটির কথা বলছেন! অনেকদিন তাকে অনুসরণ করলাম। আপুকে বললাম ভালই লাগে। আপু ২য় বার প্রস্তাব দিলেন। রাজী হলাম দেখতে ও কথা বলতে। যদিও আমি তাকে দেখেছি অনেকবার। দেখতে সে তেমন সুন্দরী নয়, কিন্তু মুখশ্রীটা আমার কাছে অনন্যসাধারণ মনে হয়েছে। এমন মুখশ্রী কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়েনা। সে খুব লম্বা নয়, তবে বেঁটে বলা যায় না। সে খুব কম হাসে, কিন্তু তার কাঠিন্যের হাসি নজর কাঁড়ে। সে নিজেকে উপস্থাপন করতে চায় না, কিন্তু উপস্থাপিত হয়ে যায়। তার কণ্ঠস্বর মিষ্টি না হলেও খুব স্পষ্ট। কেমন যেন মাদকতা আছে। চোখ দু’টি ভাসা ভাসা না হলেও চাহনিতে ঘায়েল করতে পারে। কালো হলেও তাকে ভালো লাগে। স্বভাবে সে অন্তর্মুখী হলেও, সে অসামাজিক নয়। বিধাতা তাকে সব কিছু পরিমিত পরিমানে দিয়েছেন। তানাহলে আমার চোখে তার সব কিছু পরিমিত। রুপে গুণে কোন কিছুতে বাড়াবাড়ী নাই, নাই কোন কমতি। সে এক পরিমিত সুন্দরী।

তবে এই পরিমিত সুন্দরীকে দেখে আমার মাঝে এক অপরিমিত পাগলামী শুরু হল। বিসর্জন দিলাম ব্যক্তিত্ব। আমার অপরিণত পাগলামী তাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলল। সে আমাকে অপরিপক্ক বলে প্রত্যাখান করল। এটা আমার জীবনের একটা শিক্ষা। আমি মায়ের দেখানো মেয়েটার কথা ভাবছি। মাকে ফোন করলাম। মেয়েটার খোঁজ নিলাম। শুনেছি সে বিয়ে করে সুখে আছে। মা আমাকে খুব করে বকলেন। কত করে বলেছিলাম, আমার কথা শুনলে না। হাতের লক্ষী পায়ে ঠেলে দিলে। বানরের গলায় মুক্তার হার শোভা পায় না। ইত্যাদি, ইত্যাদি। আমি শুধু চুপ ছিলাম।

আজ আবার ঈদে ফেনীর বাসায়। রীতিমতো উপহার। প্রতিবার মায়ের সহযোগী ছিল আমার ছোট বোনটি। এবার সে বিয়ে করে শ্বশুড় বাড়ীতে। আর বড়ভাবি ছিলেন মায়ের সহকারী। এবার বোনটি না থাকায় ভাবির পদোন্নতি হয়েছে। সহযোগীর পদটি এখন ভাবীর দখলে। তবে এবার সহকারীর পদটি শুন্য আছে। এই যা ভরসা। ফেনীতে আসার ২য় দিনে রাতে টিভিতে নাটক দেখছি। এমন সময় বড়ভাবি আসলেন। আমার ভাতিজিটি আমার পাশে ছিল। ভাবি তাকে ধমকিয়ে পড়ার টেবিলে পাঠাল। সে কিন্তু ভাবির ষড়যন্ত্র আঁচ করতে পেরছিল। বলল চাচ্চু, আম্মু তোমাকে কি যেন দেখাবে। তার চোখে মুখে দুষ্টমির হাসি। আমি কিছুই বুঝে উঠার আগে ভাবি আমার পাশে বসলেন। ইনিয়ে বিনিয়ে এটা সেটা বলছেন। আমি এবার মতলব বুঝতে পারলাম। ভাবি বলেন, নাটকের নায়িকা দেখে কি লাভ বাস্তবের নায়িকা দেখ। দেখতো মেয়েটা কেমন।

ভাবি বলল, কেমন দেখলে? আমি বলি ভাল। ভাবি আবার বললেন, শুধু কি ভাল? আমি বলি, না খুব ভাল। তবে পটের নায়িকা বাস্তবে সাইড নায়িকা হয়। ভাবি বললেন তুমি খুব বেশী বুঝ, তাই তোমার বিয়ে হচ্ছে না। সহযোগীর ব্যর্থতায় আসল পারিকল্পনাকারীর উদয় হল। মা এসে উপস্থিত। বললেন, সব কিছুতে খুঁত ধরা তোমার অভ্যেস। নিজেতো কোন একটা মেয়ে পছন্দ করে আনতে পার। বলতে ইচ্ছে করছিল, মেয়েতো পছন্দ করেছিলাম। কিন্তু সে তো আমার সাথে তোমার কাছে আসতে চায়নি। কিন্তু বলা হয়নি। মা আমাকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন। হয় এবার তার পছন্দ করা পাত্রীকে বিয়ে করতে হবে নতুবা পরেরবার বাড়ি আসতে বউ নিয়ে আসতে হবে। এটাই বোধহয় হায়দার হোসেনের মাইনকাছিপা।

তবে মেয়ে দেখাদেখিটা আমার একেবারে অপছন্দ। আমি এটাকে ছেলে মেয়ে দেখা দেখি বলি। অনেকদিনের দেখায় একটা মেয়েকে চিনতে পারলাম না। ক্ষণেকের দেখায় কি করে চিনবো। বোন, ভাবি, বান্ধবী, মেয়ে সহকর্মী, সহপাঠিনীদের দেখে আমার একটা জিনিস বুঝতে বাকী নাই যে, বাংগালী মেয়েরা কনফিউজিং কারেক্টার। এরা কি চায় নিজেরাই জানেনা। আবার যা চায় তা অর্জন করতে জানেনা, আবার নিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ণ করতে পারেনা। এরা বছরের পর বছর সংসার করে কিন্তু ভালবাসা পেয়েছে কিনা জানেনা। এরা নিরুদ্যম। এরা উদ্যমতার সাথে ভালবাসতে জানেনা। এটা আমার ব্যক্তিগত মূল্যায়ণ। ভুল হতে পারে। আমি কানাডাতেও কিছু মেয়ের সাথে চলেছি কিন্তু তাদেরকে এমন মনে হয়নি। এমন হওয়ার পিছনে আমাদের সমাজব্যবস্থা দায়ী। আমার মত আর্বাচীনের কথা বালখিল্য মনে হতে পারে। কিন্তু সত্য বটে।

যাহোক, এবার মায়ের পছন্দ করা মেয়েটি যদি আমাকে দেখে কেমন কেমন করে এবং একটু আধটু পাগলামী করে তবে ছাদনাতলায় বসে যাব। কারণ আমি নিজেও একটু পাগল কিছিমের। হাল্কা পাগলামী আমার ভালই লাগে। নিজেও করি। কারণ পাগলের ভিতর বাহির একরকম। ভন্ডামী এরা জানেনা। কারো নিকট সত্য শুনতে চাইলে তাকে হয় বিরক্ত করুন নয় মাতাল করুন। বিরক্ত করলে মানুষ রাগে মাতাল হয়। আর মাতাল সব সময় সত্য বলে। লালনের গানটি আমি খুব ভালবাসি।।আমি পাগল হবো, পাগল রবো, ............।

একটা পাগলামোর গল্প। প্রায় ভুলে যাওয়া একটা গল্প দিয়ে ক্যাঁচাল শেষ করতে চাই। বহুদিন আগে পত্রিকায় গল্পটি পড়েছিলাম। পুরোটা মনে নাই। তবুও বলছি। চীনদেশের কোন এক প্রদেশে বিবাহ যোগ্য পাত্র-পাত্রীকে একটি প্রাসাদে ঢুকিয়ে দেয়া হত। যতদিন তারা সিদ্ধান্ত নিতে না পারত ততদিন তারা ঐ প্রাসাদে অবস্থান করতো। অতঃপর তারা যদি একে অপরের হাত ধরে একই দরজা দিয়ে বের হতো তবে তাদের মধ্যে বিবাহ কার্যসম্পাদিত হত। অন্যথায় তারা দু’দরজা দিয়ে দু’জনে বেরিয়ে আসত। সনাতন হলেও এই ব্যবস্থাটা মন্দ ছিল না।
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×