somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিষাদ ও নিনিতের বিষাদের ঈদ

১৭ ই আগস্ট, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত বছরের ঈদের কথা। বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে নিউইয়র্কে চিকিসাধীন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। চিকিৎসকদের বারন সত্ত্বেও দুই পুত্র নিষাদ হুমায়ূন ও নিনিত হুমায়ূনকে সাথে ছুটলেন পাশের মসজিদে। আদায় করলেন ঈদের নামাজ। ঘরে ফিরে স্ত্রী মেহের আফরোজের রান্না বিভিন্ন পদ দিয়ে দুপুরের খাবারও খেলেন। অতিথি হয়ে ঘরে এসেছিলেন নোবেল বিজয়ী একমাত্র বাংলাদেশী মুহাম্মদ ইউনূস। তার সাথেও খাওয়া দাওয়া আর আড্ডায় কাটিয়েছিলেন অনেকখানি সময়। সবমিলিয়ে সুখী এক মানুষের মতো করেই ঈদের দিনটি কাটিয়েছিলেন হুমায়ূন।
বছর ঘুরে আবারো ঈদ সন্নিকটে। কাল চাঁদ দেখা গেলে পরশু পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। আবারো নতুন জামা পড়বে নিষাদ ও নিনিত। কিন্তু, নতুন জামা পড়ে খুদে আঙ্গুল ছুঁতে পারবে না প্রিয় বাবার হাত। কারণ, বাবা তো নেই। নিষাদের ভাষায়, তার বাবা এখন আউটার স্পেসে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ছোট এই দুই শিশুর জন্য আসছে বেদনার ঈদ। তাদের বাবা আউটার স্পেস থেকে আসতে পারবেন না। কারণ, তিনি তো সকল মায়া-বন্ধন ত্যাগ করে পাড়ি জমিয়েছেন ‘অচিন দেশে, অচিনে কোন গাঁয়ে’।
গত ১৯ জুলাই চিকিসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হুমায়ূন আহমেদ। এরপর ২৪ জুলাই তিনি নিজের গড়ে তোলা নন্দনকানন গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে চিরনিদ্রায় শায়িত হন। এবার ঈদের দিন সেখানেই বাবার কবর জিয়ারত করবে নিষাদ ও নিনিত। তারা কবর জিয়ারত বোঝে না। আর বোঝো না বিদায় তারা মাটি ছুঁয়ে আদর করে দেয় বাবাকে।
ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় শাওনের পরিবারের সদস্যদের সাথে নিষাদ ও নিনিত নুহাশপল্লী যাবে। সেখানেই তারা ঈদের নামাজ আদায় করবে বলে পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
হুমায়ুন আহমেদ কখনো একা ঈদ করা পছন্দ করতেন না। তিনি নিজের চারপাশে একটা বলয় গড়ে তুলেছিলেন। সেই বলয়ের মধ্যে থেকেই উদযাপন করতেন ঈদ। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ঈদের দিন আর দশটা বাবার মতোই সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল ছাড়তেন। এরপর একই রঙ ও নকশার পাঞ্জাবি পড়ে তিন বাপ-বেটা রওনা দিতেন কাছের ঈদগাহের উদ্দেশ্যে। অনেক সময় হুমায়ুন আহমেদের বড় ছেলে নুহাশ হুমায়ুনও সঙ্গী হতেন তাদের। চার জন এক পোশাক পড়ে নামাজ পড়তেন, ছবি তুলছেন। স্মৃতিতে আবদ্ধ হয়ে রয়ে আছে সেই বিষয়গুলো।
নামাজ পড়ে এসেই খাবারের টেবিলে বসে পড়তেন হুমায়ুন। ভোজন রসিক হিসেবে বেশ খ্যাতিই লাভ করেছিলেন তিনি। খাবারের টেবিলে সেমাই, মিষ্টি আর পায়েশের পাশাপাশি জায়গা করে নিতো পোলাও, মুরগির রোস্ট, গরুর মাংস, গরুর কলিজা। আর সাদা ভাত করা হলে নানা পদের ভর্তা দিয়েও বেশ মজা করে খেতেন হুমায়ুন।
ঈদের দিন হুমায়ুন ছুটে যেতেন পল্লবীতে ছোটভাই আহসান হাবীবের বাসায়। সেখানে গিয়ে মা আয়েশা ফয়েজের চরন ছুঁয়ে নিতেন আর্শিবাদ। মাও তার প্রিয় সন্তানকে প্রাণভরে আর্শিবাদ করতেন। দোয়া করতেন লম্বা আয়ুর জন্য। এবার আর তা করা হবে না। কারণ, তার নাড়ীছেঁড়া ধন তো হারিয়ে গেছে।
আহসান হাবীব যায়যায়দিনকে বলেন, ‘এবারের ঈদ আমাদের জন্য কেমন হবে, তা তো বুঝতেই পারছেন। আম্মা একদম ভেঙ্গে পড়েছেন। ইচ্ছা আছে দাদাভাইয়ের (হুমায়ুন আহমেদ) কবর জিয়ারত করতে যাওয়ার। নোভা, শীলা, বিপাশা ও নুহাশও যেতে পারে। তবে কবে যাবো এখনো সিদ্ধান্ত নেয় নি।’
‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’Ñ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এ গানের প্রতি লাইনে রয়েছে ঈদের অনাবিল আনন্দের বার্তা। কিন্তু আনন্দের এ বার্তা এবার বিষাদের সুর হয়ে বাজবে পাঁচ বছরের নিষাদ ও দুই বছরের নিনিতের কানে। ছোট হয়তো বুঝবে না, কিন্তু পাশে বসে থাকা মায়ের কান্নার ছায়া পড়বে তাদের নিষ্পাপ মুখে। ছুটে যেতে চাবে বাবার কাছে। বাবার কাছে যেতে পারবে। কিন্তু বাবা পরম মমতায় বুকে ঝরিয়ে ধরে বলতে পারবে নাÑ ‘আমার নিষাদ, আমার নিনিত’।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×