ভোরওয়ালা
ছোটো বেলায় আমার একজন ফেরিওয়ালা ছিলো
দ্বারে দ্বারে ভোর ফেরী করতো
আমি রোজ ওর কাছ থেকে
একটা করে করে ভোর কিনতাম।
দাম কি দিতে হত জান?
আমার ভোর রাতের এক টুকরো স্বপ্ন!
ফেরিওয়ালার একটা রঙ্গিন ঝোলা ছিল
স্বপ্ন সব তাতে ভরে রাখতো।
আর আমার হাতে সুতো দিয়ে একটা
টাটকা সূর্য বেঁধে দিত
আমি রোজ সকালে সূর্য উড়িয়ে
একটা করে সকাল কিনতাম।
এখন আমি বড় হয়ে গেছি
আমার স্বপ্নগুলোও বুঝি ফুরিয়ে গেছে
কত যুগ পার হল আমি একটা সূর্য উড়াই না
কত রাত আমার সকাল ছোঁয় না
রঙ্গিন স্বপ্নে কেনা একটা অরুণ ভোর
পা মুড়িয়ে শিশির সকাল ঘাস ভোর
হেঁটে যাই হাতে লাটাই সুর্যটা বাঁধা
উড়িয়ে দেই ভাসিয়ে দেই
ডানা মেলে সুর্যটা উড়ে যায়
মায়া রোদে ভাসিয়ে দেয়
আমার একটা সকাল, একটা ভোর
নগদ কড়িতে, সজীব স্বপ্নে
কেনা একটা ভোর...
ওগো ভোরওয়ালা,আমার স্বপ্নকিনি ফেরীওয়ালা
অনেক তো স্বপ্ন কিনলে
এখন একটু কষ্ট কেন, হতাশা কেন
পাপ কেন, ভুল কেন, ক্লেদ কেন,
লোভ কেন, হিংসা কেন, নষ্ট আত্মা কেন,
পঁচা গলা সত্য কেন,
চোখের কোণের অশ্রু টাও কেন...
তুমি বলেছিলে,
স্বপ্নগুলো সব জমা রাখলাম ছোটো সোনা
তুমি যখন সকাল কিনতে কিনতে
অনেক বড় হয়ে যাবে
ভুলে ছেয়ে যাবে
পাপে নুয়ে যাবে
গ্লানিতে মুড়ে যাবে
যখন মধ্যাহ্ন, যখন খরতাপ
যখন উদ্ভ্রান্ত, যখন অস্থির,
যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে
তালুতে কড়া আর পায়ের নিচে পিঁপড়া বাসা বাঁধবে
তখনও অপেক্ষায় থেক,
আষাঢ়ে একটা চাঁদ উঠবে
তুমি ঘুমিয়ে যেওনা ভুলেও...
লোভী সম্রাটের পাঁজরের বাঁশিতে
শয়তান তুলবে ঘুম পাড়ানি সুর
দেবকুলের ভাড়াটে বনিতা মেনকা নাচবে
স্বার্থপর একটা বিছানা সাজিয়ে
তুই কিন্তু তখনও জেগে থাকিস ছোট সোনা...
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৪:৪৩