somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাটে হাঁড়ি ভাঙা

১৭ ই আগস্ট, ২০১২ সকাল ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসের মধ্যে হাঁড়ি ছিল এক সময় বহুল ব্যবহৃত। মিষ্টি-ম-া জাতীয় খাদ্য হাঁড়িতেই বহন করা হতো। রান্না, ধান-চাল সংরক্ষণ হাঁড়ির মধ্যেই করা হতো। অবশ্য এসব কাজে ব্যবহৃত হাঁড়ির আকার ছিল অনেক বড়। শুধু তাই নয়, টাকা-পয়সা অলঙ্কারসহ মূল্যবান সামগ্রী সংরক্ষণের জন্যও হাঁড়িই ছিল মূল ভরসা। হাঁড়ির মধ্যে এসব মূল্যবান সামগ্রী রেখে, হাঁড়ির মুখ ভালভাবে বন্ধ করে দিয়ে তারপর তা মাটির নিচে পুঁতে রাখা হতো, যেন চোর-ডাকাত এসবের সন্ধান না পায়। নিষিদ্ধ, গোপন জিনিস বহনের জন্যও হাঁড়ি ব্যবহার করা হতো। এর মস্ত বড় সুবিধা হচ্ছে, হাঁড়ির মধ্যে কোন কিছু রেখে যদি মুখ ঢেকে রাখা যায়, তাহলে অন্য কারও পক্ষে জানা, বোঝা বা ঠাহর করা সম্ভব নয়, ওই হাঁড়ির মধ্যে কী আছে। তবে সেই আমলে অসাবধানতায় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ভিড়ের চাপে মাঝে মধ্যে হাটে হাঁড়ি ভেঙে যেতো। হাটে হাঁড়ি ভাঙা মানে হচ্ছে গোপন জিনিস সব বের হয়ে যাওয়া এবং গ্রামের সব মানুষের মধ্যে তা জানাজানি হয়ে যাওয়া। সে জন্য হাটে যেন হাঁড়ি না ভাঙেÑ এ ব্যাপারে সব কালে সব হাঁড়িওয়ালাই সচেতনভাবে চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু তারপরও হাঁড়ির অখ-তা রক্ষা করা যায়নি। হাঁড়ির ভেতরের সব মালামালের খবর ঠিকই বেরিয়ে পড়েছে।
প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব এবং একান্ত একটা করে হাঁড়ি আছে। এ হাঁড়ির মধ্যে অনেক কলঙ্ক, গোপন, নিষিদ্ধ জিনিস লুকানো থাকে। কেউই চায় না তার এ নিজস্ব, একান্ত হাঁড়িটা ভেঙে যাক, হাঁড়ির ভেতরে সযতেœ লুকিয়ে রাখা গোপন জিনিসগুলো বেরিয়ে পড়–ক, জানাজানি হোক। সে জন্য হাঁড়ি নিয়ে সবার মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আছে। এক ধরনের চঞ্চলতা বা অস্থিরতা আছে। যাবতীয় পাপ আর কলঙ্ককে হাঁড়িতে বা অন্য কোনখানে লুকিয়ে রাখতে পারাটাই তো ভাবমূর্তি রক্ষা। আর ভাবমূর্তি রক্ষা করতে জগতে কে না চায়? তবে যে যত বেশি পাপী বা অপরাধী, যার জীবনে কলঙ্ক বা নষ্টামি যত বেশি সে তার গোপন হাঁড়ি নিয়ে তত বেশি চিন্তিত ও বিচলিত থাকে। কারণ পাপ, অপরাধ কিংবা কলঙ্কের কাহিনী প্রকাশিত হোক তা কেউই চায় না। সব দোষ হাঁড়িবন্দি রেখে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সবাই চায় বৈষয়িক উন্নতি। লোভ-লালসা, ভোগ-দখল চরিতার্থ করতে। এ জন্য কিছু পাপ করতেই হয়। আবার ভাবমূর্তি বা ইমেজ রক্ষার স্বার্থে সেসব পাপকে আড়াল করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টাও করতে হয়। হাঁড়ির মধ্যে সব কিছু লুকিয়ে রাখতে হয়।
তবে বাস্তবতা হলো, হাঁড়ি থাকলে তা ভাঙবেই। কারণ হাঁড়ি না ভাঙার জন্য যতটা সতর্কতা ও অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাওয়া যায় না। তাছাড়া আমাদের সমাজে কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের কাজই হলো অন্যের হাঁড়ি খুঁজে বেড়ানো, হাঁড়ির মধ্যে উঁকি দেয়া এবং সময়-সুযোগ বুঝে হাটে বা লোকালয়ে সে হাঁড়ি ভেঙে দেয়া।
যৌথ হাঁড়ির ক্ষেত্রে বিড়ম্বনা ও ঝুঁকি আরও বেশি। কোন কারণে বনিবনা না হলে অথবা স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দিলে মানুষ প্রথমেই চায় হাটের মধ্যে সে যৌথ হাঁড়িটা ভেঙে দিতে। যৌথ হাঁড়ি অক্ষত রাখতে পারাটা তাই দুর্নীতি কিংবা দারিদ্র্য দূরীকরণের চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের সমাজটা আসলে এ হাঁড়ি ভাঙা আর হাঁড়ি অক্ষত রাখার দ্বন্দ্বেই আবর্তিত হচ্ছে। একদল প্রাণপণে চেষ্টা করছেন তার নিজস্ব হাঁড়িটা রক্ষা করতে, অক্ষত রাখতে। আরেক দল চাচ্ছেন যেকোন মূল্যে তা ভেঙে দিতে। হাঁড়ি নিয়ে এ ঠোকাঠুকি চলছে তো চলছেই।
ইদানীং হাঁড়ি নিয়ে নতুন বিপদ দেখা দিয়েছে। কার হাঁড়িতে কী আছে তা নিয়ে রীতিমত দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এ বলছে, ওর হাঁড়িতে নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর সব জিনিস আছে। কিন্তু যার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ সে তা স্বীকার করছে না। উলটো সে প্রতিপক্ষের হাঁড়িতে ভয়ঙ্কর ও ততোধিক ক্ষতিকর সব জিনিস আছে বলে দাবি করছে। অনেক সময় নিজের হাঁড়ির সব গোপন জিনিসের কথা চেপে গিয়ে প্রতিপক্ষের হাঁড়িতে তা আছে বলে জোর গলায় প্রচার করা হচ্ছে। তবে কিছু জিনিস আছে যা হাঁড়ির মধ্যে চেপে রাখা যায় না। যেমন মরা মানুষ। যতই অস্বীকার করা হোক, গন্ধেই টের পাওয়া যাবে যে হাঁড়ির মধ্যে মানুষ পচে আছে। সাপও হাঁড়ির মধ্যে গোপন রাখা যায় না। ঢাকনা একটু খুললেই সে ফোঁস ফোঁস করে এবং মাথা তুলে নিজের অস্তিত্ব জানান দেবে।
যাক এসব কথা। বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারেরও অসংখ্য গোপন হাঁড়ি আছে। তার দু’একটা মাঝে মধ্যে ভাঙছেও। সরকার যদিও ভাঙা হাঁড়ির টুকরো এবং মালামাল দ্রুত সরিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে। মানুষ কিন্তু ঠিকই হাঁড়ির খবর টের পেয়ে যাচ্ছে। তবে সরকার নিজের হাঁড়ির সামাল দেয়ার চেয়ে পরের হাঁড়ি ভাঙার ব্যাপারেই বেশি আগ্রহী। এটা অবশ্য বাঙালির চরিত্র। নিজের চরকা কিংবা হাঁড়ির চেয়ে পরের চরকা ও হাঁড়ি নিয়ে মাথা ঘামিয়ে আনন্দ পাই বেশি। যাহোক, মহাজোট সরকার এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় হাঁড়িটি ভেঙেছেন ড. ইউনূসের। ভদ্রলোক দুনিয়াজুড়ে খ্যাতির হাঁড়ি নিয়ে বেশ ভালোই করে-কম্মে খাচ্ছিলেন। কিন্তু সরকার তার বেশ কয়েকটা গোপন হাঁড়ি হাটে ভেঙ্গে দিয়ে ভদ্রলোককে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছেন। অবশ্য তার পক্ষে দাঁড়িয়েছে স্বয়ং আমেরিকা। এখন দেখা যাক এই হাঁড়ি ভাঙ্গার খেলা কোথায় গড়ায়!
পরিশেষে নিবেদন, এই উৎসব-অনুষ্ঠানের দিনে সবাই হাঁড়ি সাবধান! কেউ কারো হাঁড়ি ভাঙ্গার চেষ্টা করবেন না। নিজের গোপন হাঁড়িগুলোও সাবধানে রাখবেন। কেউ যেন ওগুলোর খোঁজ না পায় এবং ভাঙ্গতে না পারে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×