somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবাস্তব বাস্তবতা

১৭ ই আগস্ট, ২০১২ ভোর ৪:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এটি একটি সত্য ঘটনা। কোন কাল্পনিক কাহিনি নয়।

অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো ববের। এদিক ওদিক তাকিয়ে বুঝে ওঠার চেষ্টা করলো কোথায় আছে সে। পরিচিত ঘর, কিন্তু কেমন যেন অচেনা। বেডসাইড টেবিলটা উল্টোদিকে, ওয়ার্ডরোবটার পজিশন ঠিক নেই, দেয়ালে ঝুলানো আয়নাটা কোথায়? বিরক্তিকর অ্যালার্মটা বন্ধ করে আড়মোড়া ভাঙ্গে বব- আমি কি সত্যিই আমার রুমে!

তার চোখ যায় ঘড়ির দিকে, ঘড়িতে আটটা পঁয়তাল্লিশ। সর্বনাশ! ভুল সময়ে অ্যালার্ম বাজল কিভাবে! এই সময়ে তার থাকার কথা সাবওয়েতে, ট্রেন না ধরতে পারলে ঠিক সময়ে অফিসে পৌছানোর বারোটা বাজবে। লেট করা নিয়ে মিঃ জনসনের আধাঘণ্টার লেকচার শুনতে চায় না সে- নাহ, আজ মিঃ বরিসের গাড়িটা ধার করতেই হচ্ছে। দ্রুত বিছানা ছেড়ে পাঁচ মিনিটের একটা শাওয়ার নিয়ে নেয় বব। ফ্রিজে কি খাওয়ার মতো কিছু পাওয়া যাবে? একি, রান্নাঘরটা অপরিচিত লাগছে কেন? এখন এতকিছু ভাবার সময় নেই, রাস্তায় কিছু কিনে নেওয়া যাবে- এই ভেবে দ্রুতগতিতে এপার্টমেন্ট থেকে বের হয় বব।

হুড়মুড় করে অফিসের লিফটে ঢুকে থমকে দাঁড়ায় বব। লিফটভর্তি মানুষের মাঝে রিটাকে অন্যরকমভাবে আলাদা করা যাচ্ছে।
গুডমর্নিং বব। তোমার সাথে কিছু কথা আছে, তোমার সময় হবে একটু?
-মর্নিং। লিফটের মধ্যেই বলতে হবে?
-বব, তুমি তোমার স্মার্টনেস দেখানো বন্ধ করবে? অবশ্যই আমি ফ্লোরে নেমে কথা বলব।
শ্রাগ করলো বব, আমি আবার কি করলাম!
লিফট থেকে নামতেই রিটা বলল, দেখ বব, তুমি অনেক ভাল একজন মানুষ, কিন্তু আমি এখন কোন সিরিয়াস কিছুতে জড়াতে চাচ্ছি না।
বব অবাক হয়ে বলল, কিন্তু তুমি এসব কথা আমাকে বলছ কেন?
-তুমি অসম্ভব একটা মানুষ!- রিটা বিরক্তমুখে গটগট করে হেঁটে চলে যায়।
আজব, আমি কি করলাম- ভাবে বব। ওকি তাহলে প্রপোজ করেছে রিটাকে? কিভাবে সম্ভব! ববের ফিয়ন্সে আছে, দুইমাস পর বিয়ে। রিটার আজকে এসব বলার মানে কিছু ঘটলে সেটা গতকালের ঘটনা। কাল কি করেছে বব? আশ্চর্য! বব কিছুই মনে করতে পারছে না গতকালের স্মৃতি। যেন ওর মাথা থেকে সব স্মৃতি বাষ্প হয়ে উড়ে গেছে!

কাজের ফাঁকে ববের বস মিঃ ডানকান এসে উঁকি দিল ববের কিউবিকলে।
-বব, তুমি আমার রুমে এসো।
-সিওর, ডানকান।
দরজা খুলে ঢুকতেই ডানকান ইশারায় ববকে বসতে বলল।
বব, এটা বলার কোন সহজ উপায় নেই। তোমার গত কয়েকদিনের অফিস বিহেভিয়ারে আমরা খুব বিরক্ত।
বব স্তম্ভিত, তুমি কি বোঝাতে চাচ্ছ?
ডানকান নির্লিপ্ত গলায় বলল, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমার সার্ভিসের আমাদের আর দরকার নেই। তোমার জন্য শুভকামনা।
বব বলল, চমৎকার।
এসব কি হচ্ছে আমার সাথে?- নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে আসে বব। ক্রেডিটকার্ডের ব্যাল্যান্স চেক করে দেখে। কয়েকদিন চলার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু তাকে বুঝতে হবে আসলে কি হচ্ছে চারিদিকে। পুরো ব্যাপারটাই অবাস্তব। সে কি তাহলে স্বপ্ন দেখছে? নাহ, নিজের গায়ে চিমটি কাটে বব।

বাসার গলির সামনে আসতেই বব দেখে সেখানে প্রচণ্ড ভিড়। ওহ খোদা, ওটা কি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি? ববের ভয় সত্যি হয়, তার এপার্টমেন্ট থেকে আগুনের হল্কা বের হচ্ছে- নিজের চোখকে বিশ্বাস হয় না ববের। পুরো পৃথিবীতে এতো মানুষ থাকতে তার সাথেই কেন একের পর এক নিষ্ঠুর ব্যাপারগুলো হচ্ছে? কোন দিশা পায় না বব, ছুটতে থাকে ভয়ে, অনিশ্চয়তায়, অনিরাপত্তাবোধে। একটু দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরিয়ে নেয়। কিন্তু নিকোটিনের স্পর্শ স্নায়ু শান্ত করতে পারে না। ছুটতে ছুটতে রাস্তার একজায়গায় হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় বব। ড্যাম ইট! এটা কোন জীবন হতে পারেনা- পরিস্কার চিন্তা করতে পারছে না বব। টলতে টলতে উঠে দাঁড়ায়। না, অবিশ্বাস্য- চোখ কোটর থেকে ঠিকরে বের হয়ে আসতে চায় ববের, দ্রুতগতিতে একটা পিকআপ ভ্যান ছুটে আসছে, গতিপথ থেকে সরে যাওয়ার শক্তি নেই ববের। বিস্ফোরিত চোখে বব ভ্যানটাকে নিজেকে আঘাত করতে দেখল। অসহনীয় যন্ত্রণা, তারপর অন্ধকার।

শুরুর কথাটি মিথ্যা। এটি একটি মিথ্যা গল্প, কাল্পনিক কাহিনি। তবে দেশের নীতিনির্ধারকদের কার্যকলাপে মিথ্যা গল্প সত্য বলে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে। আমরা সবাই ববের মতো। কেউ কম, কেউ বেশি। পৃথিবী ধীরে ধীরে অচেনা হয়ে যাচ্ছে, আমরা এমনকি বুঝতেও পারছিনা আমাদের দোষটা কোথায়। অভিনন্দন দেশের নীতিবান নীতিনির্ধারকগণকে, মেডিক্যালে ভর্তি বিষয়ক পিকআপ ভ্যান ধরনের ডিসিশন আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার জন্য!!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১২ ভোর ৪:৫৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×