এটি একটি সত্য ঘটনা। কোন কাল্পনিক কাহিনি নয়।
অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো ববের। এদিক ওদিক তাকিয়ে বুঝে ওঠার চেষ্টা করলো কোথায় আছে সে। পরিচিত ঘর, কিন্তু কেমন যেন অচেনা। বেডসাইড টেবিলটা উল্টোদিকে, ওয়ার্ডরোবটার পজিশন ঠিক নেই, দেয়ালে ঝুলানো আয়নাটা কোথায়? বিরক্তিকর অ্যালার্মটা বন্ধ করে আড়মোড়া ভাঙ্গে বব- আমি কি সত্যিই আমার রুমে!
তার চোখ যায় ঘড়ির দিকে, ঘড়িতে আটটা পঁয়তাল্লিশ। সর্বনাশ! ভুল সময়ে অ্যালার্ম বাজল কিভাবে! এই সময়ে তার থাকার কথা সাবওয়েতে, ট্রেন না ধরতে পারলে ঠিক সময়ে অফিসে পৌছানোর বারোটা বাজবে। লেট করা নিয়ে মিঃ জনসনের আধাঘণ্টার লেকচার শুনতে চায় না সে- নাহ, আজ মিঃ বরিসের গাড়িটা ধার করতেই হচ্ছে। দ্রুত বিছানা ছেড়ে পাঁচ মিনিটের একটা শাওয়ার নিয়ে নেয় বব। ফ্রিজে কি খাওয়ার মতো কিছু পাওয়া যাবে? একি, রান্নাঘরটা অপরিচিত লাগছে কেন? এখন এতকিছু ভাবার সময় নেই, রাস্তায় কিছু কিনে নেওয়া যাবে- এই ভেবে দ্রুতগতিতে এপার্টমেন্ট থেকে বের হয় বব।
হুড়মুড় করে অফিসের লিফটে ঢুকে থমকে দাঁড়ায় বব। লিফটভর্তি মানুষের মাঝে রিটাকে অন্যরকমভাবে আলাদা করা যাচ্ছে।
গুডমর্নিং বব। তোমার সাথে কিছু কথা আছে, তোমার সময় হবে একটু?
-মর্নিং। লিফটের মধ্যেই বলতে হবে?
-বব, তুমি তোমার স্মার্টনেস দেখানো বন্ধ করবে? অবশ্যই আমি ফ্লোরে নেমে কথা বলব।
শ্রাগ করলো বব, আমি আবার কি করলাম!
লিফট থেকে নামতেই রিটা বলল, দেখ বব, তুমি অনেক ভাল একজন মানুষ, কিন্তু আমি এখন কোন সিরিয়াস কিছুতে জড়াতে চাচ্ছি না।
বব অবাক হয়ে বলল, কিন্তু তুমি এসব কথা আমাকে বলছ কেন?
-তুমি অসম্ভব একটা মানুষ!- রিটা বিরক্তমুখে গটগট করে হেঁটে চলে যায়।
আজব, আমি কি করলাম- ভাবে বব। ওকি তাহলে প্রপোজ করেছে রিটাকে? কিভাবে সম্ভব! ববের ফিয়ন্সে আছে, দুইমাস পর বিয়ে। রিটার আজকে এসব বলার মানে কিছু ঘটলে সেটা গতকালের ঘটনা। কাল কি করেছে বব? আশ্চর্য! বব কিছুই মনে করতে পারছে না গতকালের স্মৃতি। যেন ওর মাথা থেকে সব স্মৃতি বাষ্প হয়ে উড়ে গেছে!
কাজের ফাঁকে ববের বস মিঃ ডানকান এসে উঁকি দিল ববের কিউবিকলে।
-বব, তুমি আমার রুমে এসো।
-সিওর, ডানকান।
দরজা খুলে ঢুকতেই ডানকান ইশারায় ববকে বসতে বলল।
বব, এটা বলার কোন সহজ উপায় নেই। তোমার গত কয়েকদিনের অফিস বিহেভিয়ারে আমরা খুব বিরক্ত।
বব স্তম্ভিত, তুমি কি বোঝাতে চাচ্ছ?
ডানকান নির্লিপ্ত গলায় বলল, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমার সার্ভিসের আমাদের আর দরকার নেই। তোমার জন্য শুভকামনা।
বব বলল, চমৎকার।
এসব কি হচ্ছে আমার সাথে?- নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে আসে বব। ক্রেডিটকার্ডের ব্যাল্যান্স চেক করে দেখে। কয়েকদিন চলার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু তাকে বুঝতে হবে আসলে কি হচ্ছে চারিদিকে। পুরো ব্যাপারটাই অবাস্তব। সে কি তাহলে স্বপ্ন দেখছে? নাহ, নিজের গায়ে চিমটি কাটে বব।
বাসার গলির সামনে আসতেই বব দেখে সেখানে প্রচণ্ড ভিড়। ওহ খোদা, ওটা কি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি? ববের ভয় সত্যি হয়, তার এপার্টমেন্ট থেকে আগুনের হল্কা বের হচ্ছে- নিজের চোখকে বিশ্বাস হয় না ববের। পুরো পৃথিবীতে এতো মানুষ থাকতে তার সাথেই কেন একের পর এক নিষ্ঠুর ব্যাপারগুলো হচ্ছে? কোন দিশা পায় না বব, ছুটতে থাকে ভয়ে, অনিশ্চয়তায়, অনিরাপত্তাবোধে। একটু দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরিয়ে নেয়। কিন্তু নিকোটিনের স্পর্শ স্নায়ু শান্ত করতে পারে না। ছুটতে ছুটতে রাস্তার একজায়গায় হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় বব। ড্যাম ইট! এটা কোন জীবন হতে পারেনা- পরিস্কার চিন্তা করতে পারছে না বব। টলতে টলতে উঠে দাঁড়ায়। না, অবিশ্বাস্য- চোখ কোটর থেকে ঠিকরে বের হয়ে আসতে চায় ববের, দ্রুতগতিতে একটা পিকআপ ভ্যান ছুটে আসছে, গতিপথ থেকে সরে যাওয়ার শক্তি নেই ববের। বিস্ফোরিত চোখে বব ভ্যানটাকে নিজেকে আঘাত করতে দেখল। অসহনীয় যন্ত্রণা, তারপর অন্ধকার।
শুরুর কথাটি মিথ্যা। এটি একটি মিথ্যা গল্প, কাল্পনিক কাহিনি। তবে দেশের নীতিনির্ধারকদের কার্যকলাপে মিথ্যা গল্প সত্য বলে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে। আমরা সবাই ববের মতো। কেউ কম, কেউ বেশি। পৃথিবী ধীরে ধীরে অচেনা হয়ে যাচ্ছে, আমরা এমনকি বুঝতেও পারছিনা আমাদের দোষটা কোথায়। অভিনন্দন দেশের নীতিবান নীতিনির্ধারকগণকে, মেডিক্যালে ভর্তি বিষয়ক পিকআপ ভ্যান ধরনের ডিসিশন আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার জন্য!!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১২ ভোর ৪:৫৬