somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চশমা

১৬ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চশমা

আমি চশমা পড়ছি অনেকদিন হচ্ছে। আমার পাওয়ার মাইনাস ৫। মানে আমি দূরের জিনিস ঝাপসা দেখি। চশমা পড়তে ভালো লাগেনা মোটেও , কিন্তু কি করব পড়তে হয়। চশমা ছাড়া একদম অন্ধ আমি। তো বুঝতেই পারছেন চশমা ভাঙলে বেশ বিপদেই পড়তে হয় আমাকে। এই কথাটা যদি আমার ছোট বোন তিথি বুঝত। ওর দোষ দিয়েই বা কি হবে? একদম বাচ্চা আমার বোনটা। না বুঝেই চশমাটা ভেঙ্গে ফেলছে। নতুন চশমা কিনতে তাই দোকানে এসেছি।
একটার পর একটা চশমা দেখছি একটাও পছন্দ হচ্ছেনা। অবশ্য খুব ভালো যে দেখছি তাও না। ঝাপসা মত লাগে সব আয়নাতে।
-এটা না ওটা দেখান।
-কোনটা এই কালোটা?
-হু
-নেন।
আয়নার দিকে তাকালাম। খারাপ না। অনেকটা আঁতেল আঁতেল। ঐদিন ফেসবুকে একটা পেজে পড়লাম, “Nerd is the new sexy” । নিয়ে নিব নাকি ভাবছি।
-কত দাম?
-১২০০ টাকা।
-কি বলেন? এত দাম কেন? ৪০০ টাকার বেশি এক পয়সাও দিবনা।
-পারবনা। আচ্ছা যান। আপনার জন্য ৫০ টাকা অনার করলাম।
- বললাম তো ৪০০ টাকার বেশি এক টাকাও দিব না।
- ভাইয়া এই চশমাটা স্পেশাল। দামটাও তাই একটু বেশি। যান ৮০০ টাকা দিয়েন।
- কি স্পেশাল? একটু শুনি।
- বললে বিশ্বাস করবেন না। বাসায় নেন। পড়ে দেখেন। যান তখন না হয় বেশি দিয়েন। আপনাকে আমার ভালো লাগছে ভাই। আপনি মর্ম বুঝবেন।
কি বলে লোকটা মাথায় ছিট টিট আছে নাকি কে জানে। যাই হোক, চশমাটা আমারও মনে ধরেছে।
- আচ্ছা ঠিক আছে। নিন, আমার পাওয়ারটা নিন।
এ বলে আমার প্রেসক্রিপ্সানটা বাড়িয়ে দিই।লোকটা হাত বাড়িয়ে দেয়। হাতটাতে একটা কাটা দাগ। কেমন জানি, অদ্ভুত।
- কবে দিতে পারবেন। আর্জেন্ট লাগবে।
- আচ্ছা দুই ঘণ্টা পড়ে আসেন, পেয়ে যাবেন।
- হুম। একশ টাকা রাখেন এডভান্স।
- অসুবিধা নাই। একসাথেই দিয়েন।
আমি আরও অবাক হলাম। যাই হোক কিছু করার নেই দুই ঘণ্টা। চোখেও কিছু দেখবনা ভালো। একা আসা উচিৎ হয়নি। কাওকে নিয়ে আসা উচিৎ ছিল।দোকান থেকে বের হলাম।
এদিক সেদিক না গিয়ে একটা চায়ের দোকানে ঢুকে পড়লাম। চা অর্ডার দিয়ে বসে আছি।
চা এল। খেলাম। ঘড়ি দেখলাম। হ্যাঁ, এই মোবাইলের যুগেও আমি ঘড়ি পড়ি। যার যেটা কাজ। মাল্টিটাস্ক করে জিনিসগুলো আমার একদম ভালো লাগেনা।
না, বেশিক্ষণ যায়নি। সময় কাটছে না। কি করা যায়? কোথাও যাব? চোখেও তো ভালমত দেখছিনা। একটা পেপার কিনে সময় কাটিয়ে দেয়া যায় অবশ্য। হুম, এটাই করি।
পেপার কিনলাম। খেলার পাতা উল্টালাম। সবার আগে এটাই পড়ি। বাংলাদেশ জিতেছে। ভালো ব্যবধানে। এই একটা জিনিস ভালো আমাদের এখন। এত খারাপ জিনিসের মাঝে।
এভাবে পেপার পড়ে দু’ ঘণ্টা কাটিয়ে আবার দোকানটাতে ফিরে গেলাম।
-ভাই, চশমাটা হয়েছে?
- জ্বি, নেন পড়ে দেখেন।
পড়লাম। আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। নতুন চশমায় পাওয়ার টা সবসময় বেশিই লাগে।
- ধরুন, আপনার টাকাটা।
- ধন্যবাদ।
- পাওয়ার এ ঝামেলা লাগলে আবার আসব কিন্তু।
- অসুবিধা নাই। তবে আমার মনে হয় ঝামেলা হবেনা। বললাম না স্পেশাল চশমা। তবে, আপনি আবার আসবেন, কিন্তু অন্য কারণে।
উফ, আবার হেঁয়ালি।


বাসায় এসেছি কিছুক্ষণের মত হবে। পিসিটা অন করলাম। ফেসবুকে লগইন করলাম। একটা স্ট্যাটাস দেয়া দরকার। নতুন চশমা কিনেছি সবাইকে জানাতে হবে। অবশ্য কেউ কমেন্ট করবে বলে মনে হয়না। লাইক ও দিবেনা। সস্তা পেজ গুলোর এডমিন হলে হয়ত আগের আর এখনেরটার ছবি আপলোড করে বলতাম, নতুন চশমাটা পছন্দ হলে লাইক আর পুরানোটা ভালো লাগলে কমেন্ট করুন। এই ব্যাপারটা একটা জালিয়াতির মত। নিজের পছন্দটাকে সবাই লাইক করতে দেয়, আর যেটা কম পছন্দের সেটার জন্য কমেন্ট করতে বলে। লাইক করা কমেন্ট করার থেকে সোজা হয়ত এইজন্য।
তো কিছুক্ষণ ধরে এভাবে ফেসবুকে বসে ছিলাম হঠাৎ মাথাটা জানি কেমন করে উঠল। চশমাটা ঝাপসা হয়ে গেছে। কিছু দেখছিনা। চশমাটা খুললাম। একটু করে ভাপ দিয়ে মুছে নিলাম। আবার চোখে দিলাম। না, তাও ঝাপসা। হচ্ছেটা কি।
হঠাৎ দেখি চশমাটা পরিষ্কার হওয়া শুরু করল। কিন্তু একি ! চোখের সামনে আর ফেসবুক নেই। এটা কি? চোখের সামনে হঠাৎ করে টি ভি দেখতে পাচ্ছি কেন? হ্যাঁ টিভি ইতো। স্পষ্ঠ দেখছি। এটা কোন চ্যানেল। বারবার ক্যামেরার নড়াচাড়া দেখে তো মনে হচ্ছে হিন্দি কোন সিরিয়াল। এসব কি দেখছি? চশমাটা খুলে ফেললাম আবার। কিছুক্ষণ এদিকে ওদিকে তাকালাম। কেউ কোন ফাজলামি করছে নাতো? আবার চোখে দিলাম চশমাটা। না, কোন কিছু নেই। আবার ফেসবুক। স্ট্যাটাসটা কি পাল্টে দিব? না, থাক। মানুষ জন ভাববে গাঁজা ধরেছি। কিন্তু আমি একশ ভাগ নিশ্চিত যা দেখেছি ঠিক দেখেছি।
অদ্ভুত। দোকানদারের কথা গুলো মনে পড়ল। আপনি আবার আসবেন, কিন্তু অন্য কারণে। এসবের মানে কি?
যাই, একটু নিচে যাই। সিগারেট খেতে হবে। মাথাটা এলোমেলো লাগছে।
সিঁড়ি দিয়ে নামছি। আবার মাথাটা কেমন জানি করে উঠল। চশমা আবার ঝাপসা। আবার ঘোলাটে সব কিছু। কি হচ্ছে কি? হঠাৎ আবার চশমাটা পরিষ্কার হয়ে গেল। কিন্তু একি, এ কি দেখছি। চারপাশে এত আলো কেন? এত গাড়ি দেখছি কেন? সাঁ সাঁ করে যেন কোথায় চলেছি। হচ্ছেটা কি? চশমাটা খুলে ফেললাম আবার। আবার সিঁড়িতে। আজ কি খেয়েছি আমি?
গলির মুখেই সিগারেটের দোকান। পরিচিত। রেগুলার কাস্টমার আমি।তাই কোন সিগারেট বলতে হয়না। সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
- ভাই, সিগারেট দেন।
সিগারেট বাড়িয়ে দিল। আমি নিলাম, ধরালাম। ভাবছি এতক্ষণ এগুলো কি দেখেছি আমি। সিগারেটটা শেষ করে বাসায় ফিরে আসলাম।
আর কিছু হয়নি মাঝখানে। একটু ঘুমানো দরকার। তাহলে হয়ত ভালো লাগবে।


ঘুমটা বেশ ভালই হয়েছে। এখন বাজে রাত দুটো। কিছু খাওয়া দরকার। বেশ খিদে পেয়েছে। কেউ রাতে খেতে ডাকেনি ভেবে অবাক হওয়ার কিছু নেই। প্রায় সময় আমি এভাবে ঘুমিয়ে যায়। কেউ খেতে ডাকে না। মা খাওয়ারটা ফ্রিজেই রেখে দে। আমি বের করে খেয়ে নিই। ঠাণ্ডা খেতে আমার ভালই লাগে। একটা জিনিস ভাবতে মজা লাগে। আচ্ছা ফ্রিজের লাইটটা কি রাতে খাওয়ার সুবিধার জন্য দেয়া? হতে পারে। খেতে বসেছি। ভাবছি কি সব দেখেছি। নিশ্চয় হেলুসিনেসন। এছাড়া আর কিইবা হবে?
আবারও মাথাটা কেমন জানি করে উঠল, সবকিছু ঘোলাটে। আস্তে আস্তে পরিষ্কার হচ্ছে আবার। এবার কি দেখব কে জানে? একটা পড়ার টেবিল। আলো জ্বলছে, একটা কাগজ কিছু দিয়ে চাপা রাখা হয়েছে। কাগজটা উল্টে গেছে। কি লেখা জানি, পড়তে পারছিনা। লাল কালিতে কিছু একটা। কি এটা, সাবধান ই তো মনে হচ্ছে। মানে কি? উফ, আর পারছিনা।
আবার চশমাটা খুলে ফেললাম। না এটা আর আজকে পড়ব না।
দুঘণ্টা চুপ চাপ বসে আছি। চশমাটা পড়িনি। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। সকালে একবার যাব ভাবছি দোকানটাতে।
আচ্ছা আরেকবার পড়ে দেখি চশমাটা। হুম, এখন সব ঠিক আছে। কোন সমস্যা দেখতে পাচ্ছিনা। যাই পিসিতে গিয়ে বসি। গুগল সার্চ দিতে হবে। এরকম আর কখনও হয়েছে নাকি কারো?
কি লিখব সার্চে? বুঝতে পারছিনা। Glass blur problems? এসব কি আসছে? Bristol Glass. Windows xp theme. এই জাতীয় কিছু।
আবার মাথা ঘুরোচ্ছে, চশমা ঘোলাটে। আস্তে আস্তে পরিষ্কার। এটা কি দেখতে পাচ্ছি? আমার সামনে নাইলনের মোটা দড়ি। এবার একটা হাত দেখতে পেলাম। হাতটাতে একটা কাটা দাগ। আরে দাগটা কেমন জানি পরিচিত লাগছে। কোথায় দেখেছি মনে করতে পারছিনা। কিন্তু আমি নিশ্চিত এটা কোথাও দেখেছি। ও, মনে পড়েছে। আজকে সকালেই তো দেখেছি। চশমা দোকানদারের হাতে। এসবের মানে কি? হাতটা দড়িটাতে প্যাঁচ দিচ্ছে।
হঠাৎ কেন জানি মনে হল, কে জানি আমার গলা চেপে ধরেছে। নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা। দম বন্ধ হয়ে আসছে। কিছু করতে হবে। তাড়াতাড়ি। আমার হাতে বেশি সময় নেই, বুঝতে পারছি।
কি মনে করে চশমাটা খুলে ফেললাম। মাটিতে ফেলে পাড়া দিয়ে চশমাটা ভেঙ্গে ফেলেছি। আবার সব নরমাল। কি হয়েছে এগুলো এতক্ষণ? জানিনা। শুধু জানি নতুন একটা চশমা কিনতে হবে আবার।
কিন্তু এবার অন্য দোকান থেকেই কিনব।

৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×