somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিনা যাবে কলেজে রাজু যাবে সাথে

১৬ ই আগস্ট, ২০১২ ভোর ৪:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিনা রাজু বড় হয়েছে । তারা এখন প্রসূতির যত্ন জানে, শিক্ষার গুরুত্ব বোঝে এবং স্যানিটেশন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখে ।

তারা দু'জনেই মেধাবী - হরলিক্স খেত না, কচুশাক খেত । ডিম কম থাকলে ভাগাভাগি করে পায় । মিনা একটু কুসুম বেশি পছন্দ করে তবুও রাজুকে দিয়ে দেয় । 'অপত্যস্নেহ' বলে যে একটা কঠিন শব্দ আছে সেটা মিঠু পর্যন্ত জানে ! মুরগি রান্না হোলে মিনার মা, মিনার বাবাকে একটা রান দিতেন । আর একটা মিনা বা রাজু খেত । রাজু যখন নারী অধিকার শব্দদ্বয় শোনে, তখন থেকেই এ ব্যাপারটা ধরে ফেলেছিল । তাই তার মাকে তার ভাগের রান অফার করতো । ব্যাপারটা ওদের বাবা বুঝে ফেলেন । এরপর থেকে রান ভাগাভাগিতে মিনা রাজুদের পরিবার আদর্শ হিশেবে গ্রামে নাম করেছিল ।

মিনা এখন সালোয়ার কামিজ পড়ে । হিজাব পরতো আগে । টেলিভিশন-এ হিজাব পড়া আত্মঘাতী বোমাবাজ দেখে স্বেচ্ছায় সে হিজাব ছেড়েছে । আশেপাশের অনেক কলেজেই এখন হিজাব নিষিদ্ধ । যেহেতু মিনা-রাজুরা ছোট থেকেই শিক্ষার আলো পাওয়া, পুষ্টিকর খাবার পেয়েছে, তাই হিজাব-তাড়ানো-এনজিও আসার আগেই তাদের পরিবার বস্তুবাদী হয়ে গেছে ।

মিনা-রাজু কোচিং-এ পড়েনি কখনো । কোচিং নিষিদ্ধ হওয়ার আগে থেকেই ওদের পরিবার কোচিং বিরোধী । মিনার বাবা মিনা আর রাজুকে নিয়মিত জাফর ইকবাল স্যারের লেখা বই উপহার দেন । মিনাদের স্কুলের একজন শিক্ষক গোপনে কিছু ছাত্রকে পড়াতো, মিনা-রাজু, মিঠুর সহায়তায় তাকে পুলিশে সোপর্দ করেছে ।
মিঠু সেই আগের মতোই আছে । বয়স বেড়েছে যা, এই আর কী । আগের মত চঞ্চলতা নেই তার ।

মিনার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া । ডাক্তার হয়ে গ্রামের লোকের সেবা করা । ভালো ছাত্রী সে, এসএসসি-এইচএসসি দুই পরীক্ষাতেই সোনালী পাঁচ ।
রাজু এবার এসএসসি দিলো । গ্রামের স্কুল থেকে । এবার কলেজে যাবে। ভবিষ্যতে কী করবে ঠিক করেনি । পাশের পাড়ার রুনার দিকে ইদানীং তার দৃষ্টি বারে বারে যাচ্ছে ।

মিনা খবর পেয়েছে, মেডিকেল কলেজগুলোতে এবার ভর্তি পরীক্ষা নেবে না । ফর্ম জমা পড়েছে। রেজাল্ট পত্রিকায় দেবে । অন্যান্য কলেজ-ভার্সিটির ভর্তি শেষ । তার রেজাল্ট ভালো, মহিলা কোটা আছে । মহিলা কোটার কথা বলে রাষ্ট্র তো নিজেই নারীর অপমান করছে - নারীরা কি আর মহলে থাকে নাকি ? চিন্তা করতে করতে মিনা রেগে ওঠে ।

২.
দৈনিক ইত্তেফাক-এ রেজাল্ট দেখে মিনা চমকে ওঠে । নেই ? না, সত্যিই নেই !

নিজের অ্যাপ্রন পরা ডাক্তার আপা রূপে কল্পিত ছবিটা ভেঙ্গে পড়লো । শিক দেওয়া জানালার বাইরে তাকালো সে । ঐ যে পাগলি - ওকে চিকিৎসা করতে চেয়েছিলো সে । চোখের জল মুছে সে মা-বাবার ঘরে গেলো । এরা দু'জন এবং দাদি - খুব কষ্ট পাবেন । মিঠুও বুঝেছে মনে হলো । চুপ করে আছে কেমন বেচারা টিয়াটা ।

৩.
মিনার মাধ্যমিক স্কুলের স্যার বিশ্বাস করতে পারছেন না । স্কুলের কাজে ঢাকা যেতে হবে তাই মিনার ব্যাপারটার কী রহস্য - জানবেন বলে ঠিক করলেন । ঢাকায় সচিবালয়ে তাঁর কিছু ছাত্র আছেন । পিজি-তেও কিছু অধ্যাপক ছাত্র আছে ।

তবে খোঁজ করতে যেয়ে গোপাল স্যার পরলেন বিপাকে । তাঁর ছাত্ররা একবার জনপ্রশাসণে পাঠায় আবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায় । সব মন্ত্রণালয়ে তো আর তাঁর ছাত্র নেই । তবে তাঁকে রেফার করলে ঐ আমলারা খাতিরই করে, গোপালবাবুর ভালো লাগলো । এখনও লোকজন তবে শিক্ষকদের সম্মান করে ! কে বলে আমলারা শুধু ঘুষই খায় আর এসি অফিসে বসে ঘুমায় ? মিথ্যা অপবাদ ।

গোপালবাবু খাতির পেলেন বটে, কিন্তু কাজ হলো না । কেউ বলতে পারলো না কীভাবে কে সুযোগ পাবে আর কে পাবেনা সেটা ঠিক করা হয়েছে । লটারি করা হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করায়, এক সাবেক ছাত্র না-সূচক মাথা নাড়লেন । তবে ফিসফিস করে এটাও বললেন যে, লটারিও আজকাল লটারি থাকে না । পিজির এক সহযোগী অধ্যাপক সাবেক ছাত্র স্যারের কানে কানে বললেন, ''স্যার । মানি ! মানি !'' এ ছাত্রটি আবার চিকিৎসক নেতা । এবার যা একটু বুঝলেন শিক্ষক । ভাবলেন, মিনা মানি পাবে কই ?

৪.
গোপাল স্যার ফিরে আসার দিনই পত্রিকায় আবার ভর্তি পরীক্ষা হবে মর্মে খবর বেরুলো । গোপাল স্যারও হতভম্ব হয়ে গেলেন। ব্যাপক সমালোচনার মুখে আর আদালতের ধাতানি খেয়ে কর্তৃপক্ষ ভর্তি পরীক্ষা নেওয়াটাকেই শ্রেয় মনে করছেন । আগের ফল বাতিল । নতুন করে ভর্তি-পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি করানো হবে ।

মিনা সিদ্ধান্ত নিলো, সে ভর্তি পরীক্ষাই দেবে না । যারা ভাত মুখে তোলার সহজ পথটা ছেড়ে মাথার পিছন ঘুরিয়ে খায়, তারা আধুনিক চিকিৎসার বদলে ওঝাগিরিই শেখাবে ! মিনার বাবা-মা-দাদি, এমনকি গোপালবাবুও যুক্তির অসারতা ধরতে পারলেন না । মিঠুও শুনে মাথা ঝাঁকালো । ঠিক । ঠিক ।


রাজশাহী

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১২ ভোর ৫:৪৭
২০টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×