somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বঙ্গোপসাগরের অতলান্ত গহবরের রহস্যময় “বরিশাল কামান” সম্পর্কে প্রখ্যাত ভূতত্ত্ববিদ গড-উইন অষ্টিনের শতবর্ষী চিঠি!

১৩ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




অষ্টাদশ শতাব্দীতে (প্রথম লিপিবদ্ধ ১৮৪০ সালের বৃটিশ ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ারে মুদ্রিত!) জানা যায় যে প্রতিবছর এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে দক্ষিন বঙ্গের সাগর সঙ্গমে পূর্ব প্রান্তে বিশাল তেঁতুলিয়া ও ইলিশা নদী ও পশ্চিমে সুন্দরবনের মোহনার হরিন ঘাটা ও হিরন পয়েন্টের দিক থেকে কখনও কখনও গুরুগম্ভীর কামান গর্জনের মতো শব্দ শোনা যেত! শব্দগুলো এতো বেশী জোরদার ছিল যে তা খোদ কোলকাতা থেকেও শোনা যেত, বিশেষ করে ভরা বর্ষাকালে!

হিন্দুদের কেউ কেউ এই কিংবদন্তিতে বিশ্বাস করতেন যে সেটা স্বর্ণলংকা নগরীর সিংহ দ্বারে “অবতার শ্রীরামচন্দ্রের” আঘাতের শব্দ!
তখনকার বিজ্ঞানমনস্কঃ পন্ডিত ও উচ্চ শিক্ষিত ব্যাক্তিরা অনেকে ভাবতেন যে বঙ্গোপসাগরের মহী-সোপানে যে “অতলান্ত গহবর (Swatch of No Ground)” রয়েছে তাতে গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনা-যমুনা মোহনার ভরা বর্ষার বিপুল পানি যখন আছড়ে পড়ে তখন এই শব্দ বা গর্জনের সৃষ্টি হতে পারে!

বলা হয়ে থাকে যে পরবর্তী শত বতসরে এই গর্জনের ব্যাপকতা ধীরে ধীরে কমে আসে এবং বর্তমানে শুধুমাত্র উপকূলীয় এলাকাতে তা মাঝে মধ্যে শোনা যায়! এই রহস্যময় গর্জন তখন “বেঙ্গল ক্যানন”, “বরিশাল কামান” অথবা “বরিশাল ড্রাম” নামে শিক্ষিত মহলে, বিশেষ করে জিও-ফিজিসিষ্টদের ভেতর খ্যাতি লাভ করে!

এই বিষয়টিতে বিখ্যাত ভূতত্ত্ববিদ জনাব গড-উইন অষ্টিন (যিনি পশ্চিম প্রান্ত সীমায় কারাকোরাম-সুলেমানকি এলাকায় হিমালয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কে-২ আবিস্কার করেন এবং যার নামে শৃঙ্গটির নামকরন হয় “গড-উইন অষ্টিন”!) ১৮৯৬ সালের ১৬ ই জানুয়ারী ততকালীন সুবিখ্যাত সাময়িকী “ন্যাচার” এর সম্পাদককে একটি চিঠি লেখেন!

চিঠিটি নিচে হুবহু অনূদিত হলোঃ

Nature 53, 247-248 (16 January 1896) | doi:10.1038/053247b0
১৮৯৬ সালের ১৬ ই জানুয়ারী
বরিশাল কামান ও সংশ্লিষ্ট শব্দের বিষয়
এইচ এইচ গড-উইন অষ্টিন


প্রিয় সম্পাদক,
উল্লিখিত বিষয়ে আপনার সুবিখ্যাত “ন্যাচার” পত্রিকার গত সংখ্যায় ছাপা হওয়া ভারতীয় সার্ভে দপ্তরের মিঃ জি বি স্কট মহোদোয়ের লেখাটি আমি গভীর আগ্রহের সাথে পড়েছি! এ ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন, আমরা ভারতে এ ধরনের কমপক্ষে দুইটি অতি বিচ্ছিন ঘটনা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি কিনা? এই গর্জন কি গভীর ও ভারী কামানের গর্জনের শব্দের মতো যার একটি পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে, গারো এবং খাসিয়া পার্বত্য রেঞ্জের নিম্ন জনপদে শ্রুত হয়, যা আবার সেই বহুল আলোচিত “বরিশাল কামানের” গর্জনের প্রায় অনূরূপ? মিঃ স্কট এর বর্ণণায় তিনি তা শুনেছেন যখন স্টীমারে তিনি বঙ্গোপসাগরের উপকুলবর্তী ক্ষুদ্র চ্যানেল অতিক্রম করছিলেন, সম্ভবতঃ সামূদ্রিক ঢেউ এর সাথে সম্পর্কিত কোন কারন যার সাথে সংশ্লিষ্ট!
এই গর্জন তিনি কখনও কামান গর্জনের মতোই গভীর শুনেছেন, কখনও একবার শুনেছেন, কখনও একাধিকবার, কখনও দূরে, কখনও কাছে, কখনও মনে হয়েছে যে দুই প্রতিদন্ধী দলের গোলা বর্ষনের শব্দ! কিন্তু তা সব ই যেন তার কাছে মনে হয়েছে দক্ষিন দিকে থেকে ভেসে আসা, অর্থাৎ সাগরের দিক থেকে!

আমার মনে হয়েছে এই শব্দ কোন নির্জন ভরা বর্ষার রাতে হতেই পারে, যখন বঙ্গোপসাগরের উত্তাল জোয়ারে পূর্ব ও পশ্চিমে বহু শত মাইল পর্যন্ত সামূদ্রিক পানি বিশাল শব্দের সাথে আছড়ে পড়ে!

আমি দুবার ষ্টীমারে এবং একবার দেশীয় নৌকাতে বরিশালে গিয়েছিলাম, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশঃত এই শব্দ বা গর্জন শুনতে ব্যার্থ হয়েছি!
আশা করি ভবিষ্যতে আমরা একেবারে সঠিক কারন টি বুঝতে পারবো!

আপনার বিশ্বস্ত
গড-উইন অষ্টিন

References:
1. Vide P. A. S. Bengal. Mr. La Touche, of the Geological Survey, p. 201, in “Report on Barisal Guns.”
2. Vide same Report. Letter by Mr. A. Manson, p. 208.
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১২:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×