somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা চলচ্চিত্রের সালমান -মৌসুমি জুটির সব রসায়ন ।।

১৩ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


৯০ দশকের শুরুতে নাইম -শাবনাজ এর 'চাঁদনী' দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের নবাগত নায়ক নায়িকাদের যে উত্থান শুরু হয়েছিল তা ছিল আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য একটি নতুন যুগের শুভ সুচনাবার্তা। যার ফলে ধীরে ধীরে নতুন বেশ কিছু তরুন অভিনেতা - অভিনেত্রী আমরা পেয়েছিলাম যাদের অনেকে এখনও টিকে আছেন ,অনেকে জীবিত থেকেও অভিনয় ছেড়ে দিয়েছেন এবং অনেকে আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেছেন। আজ সেই ৯০ দশকের এমন দুজনের কথা আপনাদের সামনে পুরোটা একসাথে তুলে ধরলাম যাদের একজন গত ৯০ দশকেই আমাদের সবার মন জয় করে হুট করে আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেছেন ,অন্যজন এখনও দুর্দান্তভাবে জনপ্রিয়তা ধরে রেখে কাজ করে যাচ্ছেন । তাদের দুজনের শুরুটাও হয়েছিল একসাথে একই ছবি দিয়ে। যারা বাংলা চলচ্চিত্রের সর্বকালের সেরা কয়েকটি জনপ্রিয় জুটির একটি জুটি হিসেবে ঠাই করে নিয়েছেন। প্রিয় ব্লগার বন্ধুরা এতক্ষনে নিশ্চয় বুঝে গেছেন আমি কোন দুজন এর কথা বলছি? হ্যাঁ, আজ আপনাদের বাংলা চলচ্চিত্রের ৯০ দশকের আলোচিত ও জনপ্রিয় জুটি সালমান - মৌসুমি র সবগুলো ছবি নিয়ে কিছু জানাবো ।

১ ঃ সোহানুর রহমান সোহান এর কেয়ামত থেকে কেয়ামত -

১৯৯৩ সালের ঈদুল ফিতরের ছবিগুলোর মাঝে মুক্তি পায় সোহানুর রহমান সোহান এর রেকর্ড পরিমান ব্যবসাসফল ছবি ' কেয়ামত থেকে কেয়ামত' যা ছিল ভারতের আমির -জুহির 'কেয়ামত সে কেয়ামত' ছবির বাংলা সংস্করন বা রিমেক। যা পরিচালক ও প্রযোজক ভারত থেকে মুল ছবির প্রযোজক ও পরিচাকের অনুমতি নিয়েই ছবিটি তৈরি করেন। সোহান তখন ইন্ডাস্ট্রির নবীন একজন পরিচালক যিনি বাংলাদেশের ৮০র দশক থেকে ৯০ দশক এর সবচেয়ে সেরা পরিচালক এ জে মিন্টুর সহকারী পরিচালক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছিলেন এবং মিন্টুকেই যিনি 'গুরু' মানেন। ৯২ সালে 'বেনাম বাদশাহ' দিয়ে সোহান পরিচালকের খাতায় নাম লিখান যেটি ছিল সেই সময়ের অন্যতম ব্যবসাসফল ছবি। প্রথম ছবিতেই সোহান বুঝিয়ে দিয়েছিলেন গুরু মিন্টুর যোগ্য একজন ছাত্রই ছিলেন তিনি। সোহানের ছবি দিয়ে কাজ শুরু করলেও সালমান কে কখনও গুরু এ জে মিন্টুর ছবিতে পাওয়া যায়নি। যা সালমান এর নিজেরও একটা আক্ষেপ ছিল মিন্টুর ছবিতে কাজ না করার জন্য।

'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' ছবির প্রযোজনা সংস্থা 'আনন্দমেলা চলচ্চিত্র যার কর্ণধার ছিলেন প্রযোজক সুকুমার রঞ্জন ঘোষ যিনি ব্যক্তিগতভাবে মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। যিনি পরবর্তীতে একইভাবে 'সাজন' রুবেল, ইলিয়াস কাঞ্চন ও মৌসুমি এবং 'আমার ঘর আমার বেহেস্ত' শাকিল খান ও পপি কে নিয়ে ছবি তৈরি করেন যার পরিচালক এই সোহানুর রহমান সোহান। 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' ছবিতে সোহান নবাগত ২ তরুন তরুণীকে নিয়ে কাজ করে ১০০% সফল হয়েছিলেন। যে ছবিটি ছিল তজাম্মেল হক বকুল এর 'বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না' ছবির পর রেকর্ড করা ব্যবসা সফল ছবি যা দেখতে সারা বাংলার সব মানুষ হলে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। প্রথমবার যে সকল হলে ছবিটি মুক্তি পায় তাঁর অধিকাংশ হলেই পুরো ৪ সপ্তাহ হাউসফুল ব্যবসা করে অর্থাৎ সিনেমা হল মালিকরা ছবিটি পুরো ১ মাস প্রদর্শন করতে বাধ্য হয়। ছবির গান সবগুলো ছিল সুপারহিট। এই ছবির পর সালমান কে আর কখনও সোহানের ছবিতে পাওয়া যায়নি কিন্তু মৌসুমিকে একাধিকবার সোহানের ছবিতে কাজ করতে দেখা গেছে।

২ঃশিবলি সাদিক এর অন্তরে অন্তরেঃ

'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' ছবির সুপারহিট সালমান মৌসুমির ২য় সুপারহিট ছবি শিবলি সাদিক এর 'অন্তরে অন্তরে'। 'অন্তরে অন্তরে ' ছবির আলম খানের গানগুলো ছিল সেই সময়ের রেডিও ও টেলিভিশনের ছায়াছবির গানের মধ্য তুমুল জনপ্রিয় গান। ছবিটি পারিবারিক ও রোমান্টিক প্রেমের ছবি। শিবলি সাদিক মুলত সামাজিক অ্যাকশন ও পারিবারিক গল্পের ছবির এক নিপুন কারিগর। সেই সময় শিবলি সাদিক এর নামটা বক্স অফিসে আলাদা সমীহ জাগানিয়া একটি নাম। যে ছবির পরিচালকের নাম শিবলি সাদিক থাকে সেই ছবি প্রেক্ষাগৃহের মালিকরা চোখ বন্ধ করে নিয়ে যেতো। কারন শিবলির ছবির দর্শক তখনও ঘরে ঘরে ছিল। শিবলি সাদিক একবারে নতুন কিন্তু বক্স অফিসে তোলপাড় করা জুটি 'সালমান - মৌসুমি' কে নিয়ে এমন দুর্দান্ত একটি গল্পের ছবি বানালেন আর সাথে শিবলির বন্ধু সঙ্গীত পরিচালক আলম খানের মিষ্টি সুরের গান ছবিতে দিয়ে দিলেন যার ফলাফল সালমান - মৌসুমি জুটির টানা ২ য় সুপারহিট ছবি। প্রথম ছবির পিতা পুত্র অর্থাৎ রাজীব - সালমান এবার আলাদা রাজীব এই ছবিতে মৌসুমির পিতা যিনি একজন জমিদারের বিশ্বস্ত প্রজা ও গরীব জেলে। আর সালমান জমিদার বাড়ীর বিদেশ ফেরত নাতী।


রাজীব এই ছবিতে পজিটিভ চরিত্রের এক দুর্দান্ত অভিনেতা। শিবলি সাদিক কাহিনীকে এতো চমৎকার ভাবে গেথেছিলেন যে পুরো ছবিটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত দর্শক হল থেকে বের হয়নি।

সালমান এর পরেও আরও একাধিক ছবিতে শিবলি সাদিকের সাথে কাজ করেছিলেন যা আমাদের পরবর্তী পর্বে আপনাদের জানানো হবে। সালমান শাহ কে নিয়ে সেই সময়ের প্রবীণ ও তরুন পরিচালকরা সবাই আশা দেখতে শুরু করলেন যেখানে ছবি বানানোর হিড়িক পরে যায় যা পুরো ইন্ডাস্ট্রিকে বদলে দেয়। একদিকে প্রবীণ নায়ক নায়িকা যেমন- জসিম, আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, রুবেল শাবানা, চম্পা, দিতি ববিতা সবাই ব্যস্ত আবার সালমান, নাইম, শাবনাজ, ওমরসানী , মৌসুমিরাও ব্যস্ত । যার ফলে দর্শকরা দুর্দান্ত অনেক ছবি দেখার সুযোগ পায়।
৩) শফি বিক্রম্পুরি এর 'দেনমোহর' ঃ ১৯৯৫ সালের রোজার ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোর মধ্য অন্যতম ছবি ছিল শফি বিক্রম্পুরি পরিচালিত 'দেনমোহর' ছবিটি। যে ছবিতে ৩য়বার পর্দায় আগমন ঘটে জনপ্রিয় সালমান - মৌসুমি জুটি। ঈদের ৩য় দিন ছবিটি সিলেটের 'মনিকা' সিনেমা হলে দেখতে বন্ধুরা সহ ভিড় জমাই। যথারীতি চির পরিচিত দৃশ্য । সালমান মৌসুমির ছবি দেখতে সব শ্রেণীর দর্শকদের ভিড়।
শফি বিক্রমপুরি আমাদের দেশের প্রবীণ পরিচালকদের একজন। যিনি বাণিজ্যিকছবির একজন সফল পরিচালক হিসেবে পরিচিত। এর আগে একই পরিচালক 'লেডি স্মাগলার', 'লেডি কমান্ডো' লেডি ইন্সপেকটার' 'আজকের হাঙ্গামা' নামক লেডি অ্যাকশন ছবির সিরিজ পরিচালক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। পরিচালকের পূর্বের ছবিগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে অনুমান করেছিলাম ছবিটা বোধ হয় 'দেনমোহর' নামক রীতিনীতির বিরুদ্ধে মৌসুমির কোন প্রতিবাদী লেডি অ্যাকশন এর ছবি হবে । যাই হোক ছবি শুরু হওয়ার সাথে সাথে জেনে গেলাম এটি একটি বিদেশী ছায়াছবির নকল কিন্তু সেটা কোন দেশের ও কোন ছবির তা পরিচালক উল্লেখ করেননি। ছবি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরে বুঝলাম এটি বলিউড এর সালমান খান অভিনীত ৯০র শুরুর একটি ব্যবসাসফল হিন্দি ছবির নকল। বুঝে গেলাম যা ভেবে ঢুকেছিলাম সেটা নয়।

ছবির শুরুতেই মনোয়ার নামক জমিদার পুত্র সালমান কে দেখার সাথেই সাথেই দর্শকের হাততালি, যেখানে তরুন সালমান তাঁর চাচা ড্যানী সিডাক কে সাথে নিয়ে 'বাহাদুর' নামক এক তেজী ঘোড়াকে পোষ মানাতে ব্যস্ত। যথারীতি স্মার্ট সালমান এর চেষ্টা অনেক কষ্টে সফল এবং ঘোড়া সালমান কে নিয়ে অজানার উদ্দেশ্য ছুটতে থাকে। এর সাথেই সাথেই নায়িকা মৌসুমি র পর্দায় আগমন যেখানে সিলেটের জাফলং এলাকায় তিনি সখীদের সাথে নাচ ও গানে ব্যস্ত। বুঝে গেলাম যে পাগলা ঘোড়া সালমান কে নিয়ে ছুটতে ছুটতে জাফলং এসে গেছে। আমার লিখা পড়ে অনেকে ভাবতে পারেন আমি রিভিউ লিখতে বসেছি আসলে তা নয়। আমি শুধু পর্দায় কিভাবে সালমান কে উপস্থাপন করেছিল শুরুতেই প্রবীণ পরিচালক শফি বিক্রমপুরি সেটাই একটু তুলে ধরলাম। যার উদ্দেশ্য ছিল যে দর্শকদের কাছে সালমান কে পরিচালকরা সবসময় একটু অন্যভাবে স্মার্টলি তুলে ধরতেন যেটা অন্য সব নায়কদের ক্ষেত্রে খুব কম ঘটতো। সাধারনত পর্দায় নায়কদের চিরচেনা আগমন দৃশ্য ছিল নায়িকার চিৎকারে আকাশ থেকে উড়ে এসে পর্দায় প্রথম হাজির হতো নায়ক, অথবা কোন বস্তিতে চাঁদাবাজী, সন্ত্রাসীদের আক্রমন আর সেখানে অসহায় বস্তিবাসীর দোয়া '' হ্যাঁ আল্লাহ আমাদের এই জালিমদের হাত থেকে বাঁচাও' কবুল করতেই আকাশ থেকে উড়ে এসে নায়ক বস্তিবাসিকে রক্ষা করে নিজের আগমনী বার্তা দর্শকদের জানাতো। সেখানে সব পরিচালকরাই সালমান কে এসব চিরচেনা দৃশ্য দিয়ে পর্দায় দর্শকদের সামনে পরিচয় করিয়ে দিতেন না। সেখানে সালমান একটু ভিন্ন। হতে পারে তাঁরছবিগুলো হয়তো অ্যাকশনধর্মী ছিল না বলেই এইভাবে পরিচালকরা সালমান কে পর্দায় আনতেন অথবা হতে পারে সালমান এর স্মার্ট ক্রেজকে কাজে লাগিয়ে একটু ভিন্ন ভাবে পর্দায় আনতেন।
শফি বিক্রমপুরীর আগের ছবিগুলো থেকে এই ছবিটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আগে যেখানে শফির ছবিগুলো ছিল অ্যাকশনে ঠাসা সেখানে 'দেনমোহর' পুরোই বিপরীত। দুই জমিদার পুত্র কন্যার প্রেম ভালোবাসা, বিয়ে ও বিয়ের কাবীন নিয়ে দুই জমিদারের জেদ ও অহংকারের লড়াইয়ে সম্পর্কে ফাটল/ বিরহ এবং পরিশেষে ভুলবুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে দুই পরিবারের মিলন এই হলো 'দেনমোহর' ছবির কাহিনী সংক্ষেপ । আসলে ছবিটি ব্যবসাসফল হওয়ার পেছনে দুটি কারন - ১) সালমান -মৌসুমি জুটির প্রেম ও রাজীব - আহমেদ শরীফের শত্রুতা যেন 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' ছবির মতো একটি রসায়ন এর ভ্রান্ত ধারনা ২) খ্যাতিমান সঙ্গীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলীর সুরে গানগুলো। এই দুটি জিনিসকে পুজি করেই ছবিটি ঈদে মুক্তি পাওয়ায় সুপারহিট তকমা লাগিয়ে নেয়। উল্লেখ্য যে সালমান -মৌসুমির প্রথম ছবি যেটি ৯৩ এর রোজার ঈদে মুক্তি পেয়েছিল এবং যেখানে রাজীব - আহমেদ শরীফ এর শত্রুতার প্রতিশোধের জেদ ছিল ঠিক ২ বছর পর একই সময়ে একই মুক্তি পাওয়া ও মুল চরিত্র গুলো একই ধরনের হওয়াতে দর্শক ভেবেছিল হয়তো 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' ছবির মতোই কোন বিয়োগাত্মক প্রেম কাহিনী নির্ভর ছবি 'দেনমোহর'। এখানে গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে পরিচালকের কৌশলের প্রশংসা করতেই হয়। ছবির কাহিনীর ধরন, পাত্রপাত্রী নির্বাচন , মৌলিক গান , মুক্তির সময় ও বিজ্ঞাপনের ধরন সব ,মিলিয়ে পরিচালক একটি কৌশল অবলম্বন করেছেন । বাংলাদেশ বেতারে ছবির নিয়মিত ১০ মিনিটের বিজ্ঞাপনে পরিচালক বারবার সালমান - মৌসুমির প্রেম ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব কে উপস্থাপন এবং কাহিনীর সমাপ্তি সম্পর্কে দর্শকদের অন্ধকারে রাখার চেষ্টা পুরোটাই সফল।

এখানে সালমান জমিদারের পুত্র হিসেবে বেশ ভালো অভিনয় করেছেন যিনি জিদি, রাগী ও অহংকারী পিতার সন্তান হিসেবে পুরোটাই সফল। যে একদিকে পিতার দুটি গুন জিদ ও রাগ পেলেও অহংকারী স্বভাবটা পায়নি। সব কিছুতেই সফল হওয়ার জিদ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাথে সাথে গর্জে উঠা এবং মানুষকে সমানভাবে বিচার করে নিরহংকার ভাবে মেশা ব্যক্তিত্বসম্পূর্ণ এক বলিষ্ঠ যুবক। যার কারনে দর্শক ছবিটি পুরো শেষ করেই হল থেকে বেরিয়েছিল।
ছবিটির গানগুলো ছিল সেই সময়ে খুবই জনপ্রিয় গান । বিশেষ করে খালিদ হাসান মিলু ও সাবিনা ইয়াসমিন এর কণ্ঠের শুধু একবার শুধু একবার বলো ভালোবাসি '


গানটি ছিল চরম। এছাড়া মৌসুমি ও তাঁর সখিদের নিয়ে প্রথম গান, মৌসুমিকে দেখার পর প্রেম নিবেদনের গানটি ছিল অন্যতম।
ছবিটি ছিল 'যমুনা ফিল্মস' এর প্রযোজনায় ও 'বন্ধন বানীচিত্র'এর পরিবেশনায় নির্মিত ছবি। যার ব্যবসার দরুন পরপর একটানা তিনটি সুপারহিট ছবি উপহার দিলো 'সালমান - মৌসুমি' জুটি যা চলচ্চিত্রে তাঁদের আসন কে আরও সুসংগঠিত করে। ছবিতে কিছু সামান্য অসংগতি ও ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও পরিচালক শফি বিক্রমপুরী বেশ ভালভাবেই সফল ও সার্থক হয়েছেন এই কথা বিনা বাক্য মেনে নেয়া যায়। যারা ছবিটি দেখেননি তাঁরা ছবিটি দেখে নিতে পারেন অবসরের নির্মল বিনোদনের জন্য ।


৪) গাজী মাজহারুল আনোয়ার এর 'স্নেহ' - ৯৩ তে বাম্পারহিট কেয়ামত থেকে কেয়ামত ' ছবির সুপারহিট জুটি সালমান - মৌসুমির শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটির নাম 'স্নেহ'। ছবিটি ৯৫ সালে মুক্তি পায়। ছবিটির প্রযোজনা সংস্থা ও পরিচালক হলেন আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের বিখ্যাত ও জনপ্রিয় গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। সাল্মান -মৌসুমি জুটির অন্যসব ছবির গল্প ও ব্যবসার দিক দিয়ে এই ছবিটি ছিল একেবারেই আলাদা। অর্থাৎ সালমান -মৌসুমি জুটির যতগুলি ছবি এর আগে মুক্তি পেয়েছিল তাঁর সবগুলোই ছিল রোমান্টিক প্রেমের গল্পের ছবি যার সবগুলো ছিলে সুপার -ডুপারহিট। কিন্তু 'স্নেহ' ছবিটি ছিল পারিবারিক টানাপোড়ন বা 'ফ্যামিলি ড্রামা' নির্ভর ছবি যেখানে সাল্মান -মৌসুমির প্রেম এর কাহিনীটি মুখ্য নয় , মুখ্য ছিল একজন ডাক্তার (আলমগীর) এর জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ভুলবুঝাবুঝি ও সম্পর্কের বিচ্ছেদ এর গল্প যেখানে শাবানা একজন আদর্শবান ও আত্নসম্মান রক্ষাকারী বাঙ্গালী নারী যিনি তাঁর স্বামীর সংসার থেকে বিতারিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং একমাত্র সন্তানকে পিতার পরিচয় ছাড়াই মানুষ করতে চেয়েছেন। অর্থাৎ ছবির গল্প পুরোটাই আবর্তিত হয়েছিল আলমগীর - শাবানা কে কেন্দ্র করে যেখানে সাল্মান আলমগীর -শাবানার একমাত্র সন্তানের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ফলে দর্শক এখানে সাল্মান - মৌসুমির প্রেমের রসায়ন সেভাবে পায়নি যার কারনে সাল্মান - মৌসুমি জুটির অন্য সব ছবিরচেয়ে এটাকে ফ্লপ বলা যায় যা এই জুটির একমাত্র ফ্লপ ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল সেই সময়। ছবির গল্প সুন্দর, টানটান উত্তেজনা, চমৎকার কিছু গান থাকা সত্ত্বেও ছবিটি পূর্বের ছবিগুলোর মতো ব্যবসা করতে পারেনি। এই ছবির সবচেয়ে আকর্ষণীয় যেটি ছিল সেটা হলো সেই সময়ের দুর্দান্ত খলনায়ক হুমায়ূন ফরিদির খুব চমৎকার পজিটিভ অভিনয় যিনি শাবানার পিতার পরিবারের আমল থেকে শাবানাদের সংসারে আশ্রিত অবস্থায় আছেন এবং শাবানার দুর্দিনে শাবানার পাশে থেকেছিলেন যাকে ছবিতে সাল্মানের মামা চরিত্রে দর্শক দেখতে পায়। যিনি ছোটকাল থেকেই মা-বাবার স্নেহ বঞ্চিত সাল্মাঙ্কে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছিলেন এবং সাল্মান যাকে শুধু মামা নয় একজন প্রিয় বন্ধু হিসেবেই জানে ও মানে। আলমগীর - শাবানা, সাল্মান ,ফরিদির খুব চমৎকার অভিনয় সমৃদ্ধ ছবির নাম 'স্নেহ'। ছবির গানগুলো বেশ চমৎকার ছিল। সবগুলো গানের কথা লিখেছিলেন পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ার আর সুর করেছিলেন জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক আলী হোসেন। গানগুলোর মধ্য ফরিদি -সাল্মান এর মিলিত অভিনীত সুবীর নন্দী ও খুরশিদ আলম এর কণ্ঠের গানটি 'মামা ও মামা'



দর্শকরা বেশ উপভোগ করেছিলেন।
এরপর সালমান - মৌসুমি জুটি ও প্রয়াত খালিদ হাসান মিলু ও সালমা জাহান এর কণ্ঠের 'চিঠি লিখলাম তোমাকে এবং খালিদ হাসান মিলুর কণ্ঠে 'তুমি যেখানেই থাকো / ও আমার ভালোবাসা '

গান দুটি ছিল সেই সময়ের খুব জনপ্রিয় দুটি গান। আমার ব্যক্তিগত বেশী পছন্দ ছিল সুবীর নন্দী ও খুরশিদ আলমের 'মামা ও মামা আমি তোমার ভাগিনা ' এবং খালিদ হাসান মিলুর কণ্ঠের 'ও আমার ভালোবাসা 'গান দুটি। সবগুলো গানের কথা ,সুর ছিল খুবই চমৎকার। গানগুলো শুনলে মনে হবে কখনও কখনও বাংলা আধুনিক কোন গান। ছবিটি সেই সময় আমরা যারা দেখেছিলাম তাদের কারোরই খারাপ লাগেনি। কারন ছবির গল্পটি ছিল বেশ দ্বন্দ্বমুখর ও চমৎকার । কিন্তু সালমান -মৌসুমির রোমান্টিক প্রেমের ছবি হিসেবে যদি কেউ দেখতে চায় তাহলে তিনি বেশ বড় একটা ধাক্কা খাবেন। যা সেই সময় অনেকে এই ভেবেই ভুল করেছিল ফলে ছবিটি ব্যবসায়িক ভাবে সেই রকম সুপার ডুপার হিট হয়নি । তবে এর পেছনে শুধু পারিবারিক গল্পকে দায়ী করলে ভুল হবে। কারন ছবিটি মুক্তি পাওয়ার আগেই সালমান -মৌসুমি জুটির দূরত্ব বেড়ে যায় অনেক। ফলে ততদিনে সালমান - শাবনুর ও সানী - মৌসুমি জুটি দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বেশী পেয়েছিল। এই ছবির পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ার এই ছবি মুক্তির আগে রোজার ঈদে সানী -মৌসুমি জুটির 'ক্ষুধা' ছবিটি মুক্তি দিয়েছিলেন যেটি ব্যবসায়িক দিক দিয়ে 'স্নেহ' ছবির চেয়ে অনেক বেশী সাফল্য পেয়েছিল। 'ক্ষুধা' ছবিটি ঈদের সেরা কয়েকটি ব্যবসা সফল ছবির একটি ছিল। ফলে গাজীর এই ছবিটি সালমান - মৌসুমিকে দর্শক সেভাবে পায়নি।
এই ছবির মাধ্যমেই সমাপ্তি ঘটে বাংলা চলচ্চিত্রের খুব ক্ষণস্থায়ী সুপার ডুপার হিট ও জনপ্রিয় জুটি সালমান - মৌসুমি' জুটির যা সবসময় বাংলা চলচ্চিত্রের সেরা কয়েকটি জুটির অন্যতম হয়ে থাকবে।
*** বাংলা চলচ্চিত্রকে ভালোবাসুন এবং এই শিল্পকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসুন ***
এমন আরও অনেক কিছু জানতে সবসময় একটি শিক্ষিত রেডিও র সঙ্গে থাকুন ।।
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×