somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পদ্মকথন আর্টিস্টের ভাষায়...

১২ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিষন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলাম পদ্মদুটোর দিকে! কি আছন্ন মহিমায় একে অপরকে জড়িয়ে আছে ঐ দুটি প্রান। পদ্ম-সমাজে এদের পাওয়া যায়না অতি অনাহুতের মত, এরা রাজকীয়তার স্বকীয়তাকে আলিঙ্গন করে আসে পৃথিবীতে! সবার মাঝে উঠে দাড়াবার জন্য এদের পরিশ্রান্ত হতে হয়না, অন্যরাই এদের আসন তৈরি করে দেয়। অনেকের মাঝে অনন্য হয়ে কিছুদিন শেষে ঝরে পরে যায় এরা, তবুও, রাজপুত্র-রাজকন্যাদের আসন্ন মৃত্যু জেনেও চারপাশের সকলে নুইয়ে পরে শ্রদ্ধায়! আপন সমাজে এমন স্থান যার আছে, তার কত আনন্দই না থাকে বিস্তৃত, তবে আজ এই আনন্দের মাঝে বিষাদসুতো দিয়ে একটা ছোট্ট জাল বুনব, যে জাল বুনতেই পথটা ঘুরে রহস্যের স্পর্শে একটা নতুন অধ্যায় তৈরি করবে! ওদের মত আমারও কিছু স্মৃতি ছিল, সেগুলো কিছুক্ষন তুলে নিয়ে ভাবব আজকে,।

অনেকদিন ধরে এমন অদ্ভুতুরে স্বভাব পেয়েছে আমাকে, কেন যেনো রাত জেগে ছবি আঁকাটা বেশ অদ্ভুত লাগছে, তবে আঁকা নেই থেমে। ঠিক আঁকা নয় সবসময়, তবুও একি কথার দুই অর্থ! রং নিয়ে খেলাও চলছে, আপনমনে, একাকী, কখন জোসনা মাঝে আত্মহারা হয়ে, কখন চোখের পিছনে পেতে রাখা লাইটের সামনে বসে, অচেতন, কখন সচেতন হয়ে।একটা সময় ছিল যখন তন্ময় নামের একটা প্রান তন্ময় হয়েই আমার পাগলামি দেখত, এখন রাত নিজের কালোর মাঝে আমার খেলা দেখে, আর কেউ নেই! যাইহোক, রং এমন এক বস্তু, যার ছোয়ায় ছবি হতে পারে অনেক বেশি প্রাজ্জল, যার ব্যবহারে হতেও পারে চিত্রকলা অনেক বেশি মনোহারি। রং নিয়ে খেলতে ভালোবাসাটা আর্টিস্টের গর্বের কাজ, একটা উপায় পেলাম নিজেকে আর্টিস্ট হিসেবে প্রমান করার জন্য। ছবি আঁকা অনেক কষ্টের নয়, যদিও তা অনেকেরই মনে হয়! অনেক ভালবাসার কাজ সে! তন্ময় একবার জিজ্ঞেসা করেছিল, আর্টিস্টের ভাষায় রোম্যান্স কি। আজ পাই উত্তর, সে রংএর সাথে রংএর ভাব বিনিময়ের ক্ষন। বারবার যে ওকে কেন ভাবি? একজন মানুষের কাছে তার মাস্টারপিসের মুল্য অনেক বেশি হয়ে যায় তখন, সবকিছুর বিনিময়ে ওগুলোকে বাচিয়ে রাখার লড়াই করে যায় সে। নিঃসঙ্গতার সঙ্গী হয়ে যায় ছবিগুলো! এই যুদ্ধে হার মেনে নেয়া যায়না, আমিও এখন তাই করি। খুব স্বার্থপর আমি, আমার কেউ নেই, কিছু নেই, একটা সময় চলছিল এমন তন্ময়কে হারিয়ে। এখন অনেকগুলো আঁকা ছবি আছে, সেগুলোকে আমি আগলে রাখি, কেউ ওদের ছুতে পারেনা, কাউকে দেইনা। শুধু কিছু আঁকা ছবি, অন্য কারোর জন্য একে থাকলে দেই, নতুবা ওদের আমার সঙ্গী বানিয়ে নেই নির্নিমেষ মুহুর্তেই ! ওরা আমার পাশে থাকে সগর্বে! অনেক ভালো লাগে ওদেরকে দেখতে, প্রতিবারই নতুন করে দেখা হয় যেনো।


ও হ্যা, যা বলছিলাম হয়ত, কবিতা লিখতে গেলে যেমন কবি লেখার সময় ছন্দ, মিল, অনুভাবের বহুপ্রকাশ ভেবে নেয়, তেমনি ছবি আঁকার সময় সমঞ্জস্যতা ফুটিয়ে তুলতে হয়। তবে ছবি আঁকার মুলমন্ত্র হল, আঁকা সুন্দর হোক, অসুন্দর হোক, তা পরে বিবেচ্য, আগে জানতে হবে যা আঁকতে চাওয়া হয়েছে তার প্রকাশ সঠিক হয়েছে নাকি! আমার আঁকার জন্য মনোনীত হয়েছে আজ শেতপদ্ম! পদ্মদুটো আমার সামনে, আমি একটা পুকুরের পাশে দাড়িয়ে আছি এখন! পদ্মদুটোর মধ্যে অদ্ভুত একটা সম্পর্ক আছে। দুটো জড়িয়ে আছে, এবং তা প্রাকৃতিক ভাবেই! এখন আমার ভাবনা হচ্ছে, এই বিরল দৃশ্যটাকে নষ্ট করে দুটো পদ্ম তুলে ঘরে নিয়ে ছবি আঁকব, নাকি রংতুলি সমেত এখানেই বসেই আঁকি! যদিও এখন বাইরে তুলনাহীন জোসনা, সব কিছু স্ফটিকসচ্ছ, কিন্তু ফুলদুটো আপন মুঠোয় ধরতে তীব্র ইচ্ছা হচ্ছে! আর ইচ্ছে পুরন করার মধ্যবর্তি সকল সুখ আপন সাধ্যে আনতে চাইছে মন! তন্ময় থাকলে বলত, প্রকৃতিকে তার মত থাকতে দাও।


ওসব ভাবনারা অধৈর্য হয়ে উঠতেই আমি সচল হয়ে গেলাম। ধীরে ধীরে পুকুরে নেমে গেলাম, সাতরে। আমার হাতে একটা ছুরি, মনে হচ্ছে খুন করতে যাচ্ছি কোন অচিনপুরের রাজপুত্র আর রাজকন্যাকে, অদুরে তারা ভয়ে ত্রস্ত হয়ে দাড়িয়ে! একটা দৃড় অপরাধবোধে আচ্ছন্ন হয়েই কেটে ফেললাম লতা, ফুলদুটো মনে হল আছড়ে পড়ল আমার হাতে। সযত্নে হাতে নিলাম দুটো পদ্ম, ওদের মসৃন পাপড়ি ছুয়ে অদৃশ্য এক ভালোলাগা তৈরি হল! কবি নই বটে, তবে কাব্য করেই বলতে পারি, ওদের বিরহকে আর ঘন করে তুললাম না আমি। ঘরে ফিরে আসলাম!


ফুলদুটোকে হাতে রেখেই আঁকতে শুরু করলাম, চারপাশে মৃদু বিরহের ধ্বনি, বেজে উঠল, হয়ত আমার মস্তিস্কের সচল অংশটিথেকেই আসছে, অত ভাবতে ইচ্ছা হচ্ছেনা, তাই সেখানেই ভাবনা সমাপ্ত! প্রথমে ভাবলাম, চমকে দেবার জন্য, ছবির পিছনে একটা ছায়া আঁকব, কেউ একজনের, আর একটা হাত ফুলগুলো ধরে রাখবে, ফুলগুলো থেকে রক্ত ঝরবে, রক্ত! আঁকা হলনা, পিছনটা শুন্যই থেকে গেলো! শুধু সামনে একটা হাত, ফুলদুটো আকড়ে, রক্ত ঝরছে! তন্ময় থাকলে বলত পিছনের কেউ হবে ও, ওকে ভোলার জন্যই পিছনটা শুন্য রেখে দিলাম।


এ ছবিটায়, দুটো হাত এক হয়ে একটা ফুটন্ত শ্বেতপদ্ম তুলে ধরেছে, পদ্মের উদ্ভাসিত পাপড়িতে আছে স্পর্শ, দুটো হাতের মিলনের স্পর্শ! তার শেষে কিছু নেই, কিন্তু কখন কখন সমাপ্তি এমন নিভৃতেই হতে হয়!


শেষ ছবিটাতে আছে, একটা লালপদ্ম, পিছনে কিছু ইতিহাস, অঙ্কনের ধরনে প্রস্ফুটিত কিছু অব্যক্ত কথা! অনেক আগে আঁকা একটা ছবি। তন্ময়ের বর্তমানে একেছিলাম, এখন দেখলাম আবারো।

তবে হোক আসা, কিংবা ফিরে যাওয়া, যেখানে থেকে শুরু, সমাপ্তি সেখানেই হোক, অতৃপ্তির তৃপ্ত আখ্যান আজ তবে, এখনি করি সমাপ্ত। বিষন্নতার রেশটুকু শেষ হয়েও হলোনা শেষ!
(সমাপ্ত)
ছবিগুলো আমার আঁকা, প্রথমদুটো পেন্সিল আর প্রিসমাকালারে, শেষটা ওয়েল প্যাস্টেলে করা। কিছু গল্প ভুল হলেই ভালো, সত্য হলে অবর্ণনীয় কষ্ট জাগে মনে! যাইহোক, আপনারা সবাই ভালো থাকুন!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ ভোর ৫:১১
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×