somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে কারনে শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগ সেক্যুলার!

১২ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“One nation under God” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নামক সেক্যুলার রাষ্ট্রের রাষ্ট্রিয় শপথনামার বাক্যাংশ। এই শপথনামা যুক্তরাষ্ট্রের সংসদীয় অধিবেশন, তাবৎ সরকারি ও বেসরকারি সভা, বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাসের শুরুতে এই শপথনামা পাঠ করা হয়। বাক্যাংশটা বিখ্যাত। আমেরিকার বহু পোস্টার, বক্তৃতা, স্লোগান, ব্যানার ইত্যাদিতেও এই ব্যাক্যাংশটা ব্যাবহার করা হয়, “One nation under God”। বাক্যাংশটা বাঙলায় হইলে হয়তো লেখা হইতো “খোদার আরশএর নিচে এক জাতি”


এই বাক্যাংশটা স্মরণ করলাম কারন আমার আশেপাশের বেশ কয়েকজন ভাই বেরাদার আওয়ামীলীগ নামক রাজনৈতিক দলএর চর্চায় সেকুলারিজমএর ভন্ড চেহারা নিয়া বিশেষ আক্ষেপ প্রকাশ করছেন গত কয়েকদিন যাবৎ, তার বিপরীতে দেখলাম কেউ কেউ আমেরিকার উদাহরণ টাইনা আওয়ামীলীগএর ইসলামী সেকুলারিজমরে জায়েয করার চেষ্টাও করছেন। আমেরিকারে হিসাব করলে আওয়ামীলীগ অবশ্যই একটু সেক্যুলার রাজনৈতিক দল, এবং বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম উল্লেখ থাকার পরও বাংলাদেশ একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র বিবেচিত হবে এই আওয়ামী দাবি সত্য।

সেইসাথে সেক্যুলার বাংলাদেশএর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একজন প্রকৃত সেক্যুলার প্রধানমন্ত্রী। জর্জ বুশ ১১ সেপ্টেম্বরএর ঘটনার পরে ‘ক্রুসেড’ ঘোষনা করার পরেও যদি একটা সেক্যুলার রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকতে পারেন তাইলে নির্বাচনের আগে ভোট ভিক্ষা করার লাইগা মাথায় পট্টি বাইন্ধাও শেখ হাসিনা একজন সেক্যুলার রাজনীতিবীদ হইতে পারেন।


আমেরিকা এবং বাংলাদেশের মতো দুনিয়ার অধিকাংশ সেক্যুলার রাষ্ট্রকে বিবেচনায় আনলে ‘রাষ্ট্রিয় সেক্যুলারিজম’ জিনিসটারে একজন ‘সেক্যুলার ব্যক্তি’র কাছে কাঠালের আমসত্ত্ব মনে হইতে পারে। কিন্তু জিনিসটা আসলে তা না। ‘রাষ্ট্রিয় সেক্যুলারিজম’ চর্চাগত দিকথেকে অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক একটি জিনিস। এই জিনিসএর নিচে সযত্নে ঢাকা থাকে রাষ্ট্রের প্রকৃত ধর্ম চরিত্র। রাষ্ট্রের এই ধর্ম তার শাসক শ্রেণীর ধর্ম।

যুক্তরাষ্ট্রের সেকুলারিজমএর তলে এই রাষ্ট্রের যেই ধর্ম সেই ধর্ম হইলো ‘সম্রাট’এর ধর্ম, সাম্রাজ্যের ধর্ম। এইটা তারা বিভিন্ন ভাবে প্রমান করেছে। রোম সাম্রাজ্যের পতনএর পরে ইউরোপে শুরুতে ফ্রান্সের শার্লেমেইন এবং পরে জার্মানির ফ্রেডরিক বারবারোসা হোলি রোমান সাম্রাজ্য নামে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন নিজেদের সাম্রাজ্যের ঐশ্বরিক বৈধতার দাবিতে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রিয় শপথ ছিল ‘আমি রানী ও তার বংশধরের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করছি, আল্লাহ আমারে সহায়তা করো’ অনেকটা এইরকম। আধুনিক ব্রিটেনের রাষ্ট্রিয় শপথ পরিবর্তিত হইয়া হইছে ‘আমি আল্লাহর ওয়াস্তে রানী ও তার বংশধরদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করছি’ এইরকম। তবে কট্টর সেক্যুলার যারা আল্লাহর ওয়াস্তে শপথ করতে চায়না তারা ‘আল্লাহর ওয়াস্তে’ কথার বদলে ‘আনুষ্ঠানিকভাব, আন্তরিকভাবে এবং সত্য সত্যই’ কথাটা ব্যাবহার করতে পারেন ১৯৭৮ সাল থেইকা।

যা বলছিলাম তা হোল যে যুক্তরাষ্ট্রের শাসক শ্রেণী বর্তমান দুনিয়ায় সম্রাটের জাত, তাদের ধর্মও সম্রাটের ধর্ম। আগের ফ্রেঞ্চ, জার্মান এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ঐশ্বরিক বৈধতার দাবির উদাহরণ টানছি মার্কিন সাম্রাজ্যের ঐশ্বরিক দাবির প্রেক্ষিত বুঝাইতেই। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রিয় শপথে মার্কিন জাতিরে ‘খোদার আরশের নিচের জাতি’ বলে দাবি করা শুরু হইছে ১৯৫৪ সালের পরে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে খাতা কলমে মার্কিন জাতির শাসক শ্রেণীর দুনিয়ার সম্রাট হিসাবে অভিষিক্ত হওয়ার কিছুদিন পরেই তারা এই সাম্রাজ্যরে ‘খোদার আরশের নিচের জাতি’র সাম্রাজ্য ঘোষনা দিয়া এই সাম্রাজ্যের খোদায়ি বৈধতা দাবি করেছেন। এককালে খ্রীষ্টানদের প্রধান পোপ অথবা জার্মানির হোলি রোমান সম্রাট কিংবা ব্রিটিনের আল্লাহর ওয়াস্তে মানুষএর শাসক রাজা ক্রুসেড ঘোষনা দিতেন, এখন দেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। কিন্তু আমেরিকা একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র, এই রাষ্ট্রের সেক্যুলারিজম সম্রাটদের সেক্যুলারিজম।

বাংলাদেশও একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র। তবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রিয় সেক্যুলারিজমএর তলে এই রাষ্ট্রের শাসক শ্রেণীর যেই ধর্ম তা মোটেও সম্রাটের ধর্ম না। বাংলাদেশের শাসক শ্রেণীর ধর্ম ফকির, দালাল এবং বাটপারের ধর্ম। এই রাষ্ট্রের সেক্যুলারিজমও ভিক্ষাবৃত্তি, দালালি এবং বাটপারির সেক্যুলারিজম। বঙ্গবন্ধু সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতা রাখতে সম্মত ছিলেন কারন তিনি বামদের খুশি করে সোভিয়েত ইউনিয়নএর আনুগ্রহে থাকতে চাইছেন। আবার তিনি বাংলাদেশকে ওআইসিভুক্ত করার জন্যে জানপ্রাণ ঢাইলা দিছেন কারন তিনি আরব দেশগুলার ভিক্ষার দিকেও চাইয়া ছিলেন। আমেরিকার ভিক্ষাও দরকার ছিল, তাই তিনি পাকি এবং মার্কিন দালাল খন্দকার মোস্তাকদের বুদ্ধি মোতাবেক নানান পদক্ষেপও নিছেন। এ হইলো ফকিরের সেক্যুলারিজমএর রূপ। এই ফকিরি সেক্যুলারিজম অবশ্য শাসক শ্রেণীর জন্যে সর্বদাই নিরাপদ না, সেইটা ইতিহাস প্রমান করে, কেননা খন্দকার মোস্তাকরা পরে বঙ্গবন্ধুরে ঠুকে দিছে।

ভিক্ষাবৃত্তি, দালালি এবং বাটপারির স্বার্থে সেক্যুলারিজমএর খেতার তলে বাংলাদেশের শাসকশ্রেণী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিনোদনমূলক কাজকাম করে থাকে। যেমন শেখ হাসিনা মাথায় পট্টি বেধে সেক্যুলারিজমএর জন্যে লড়াই করেন এবং খালেদা জিয়া ভুরু প্লাক করে ইসলামের জন্যে জিহাদ করেন এবং জামাত ইসলামীকে সাথে নিয়ে নিজেদের অসাম্প্রদায়িক বলে দাবি করেন। এই শাসক শ্রেণী ইউরুপ আম্রিকা গিয়ে কেতা দুরস্ত সাহেব হয়ে ইংলিশে সাক্ষাৎকার দিয়ে বাংলাদেশে মৌলবাদী নিধনএর বিরত্বগাথা শোনায় আবার সৌদি গিয়ে মাথায় পট্টি বেধে মাদ্রাসা শিক্ষার সাফল্যের বয়ান করে। যেখানে যেইরকম দালালি করলে ভিক্ষা ভালো পাওয়া যায় সেটা তারা করে, এবং ধর্ম ও অ্ধর্ম বিষয়ে নানান বাটপারির মাধ্যমে জনগণরে ভোদাই বানায় এবং তাদের ভোট কামায়।


সুতরাং আওয়ামীলীগ একটি সেক্যুলার রাজনৈতিক দল, শেখ হাসিনা একজন সেক্যুলার প্রধানমন্ত্রী এবং জামাত ইসলামীর বিরুদ্ধে ‘ধর্মের নামে রাজনীতি’র অভিযোগ তুলে যেইসব বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা ব্লগে ফেসবুকে তিরমিজী'র আয়াত উল্লেখ করে জামাত ইসলামীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে নামেন তারাও সেক্যুলার। এইটা প্রমানিত ঠিক যেইরকম ২+২=৪ সেইরকম।

সুতরাং, এরা সেক্যুলার নাকি সেক্যুলার না সেটা নিয়া হিসাব না করে এই ফকির, দালাল এবং বাটপারদের আপনেরা আর কয়দিন ভোট দিয়া ক্ষমতায় বসাইতে চান সেইটা হিসাব করেন। বাংলাদেশকে একটা ফকির, দালাল এবং বাটপারদের রাষ্ট্র হিসাবে এই দুনিয়ায় টিকায়া রাখতে চান না কি সত্যি সত্যিই একটা স্বাধীন, স্বার্বভৌম, গর্বিত জাতির রাষ্ট্র বানাইতে চান সেই হিসাব করেন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:০১
১২টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×