somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন হুমায়ুন আজাদ

১২ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ১১ই আগস্ট। আজ হুমায়ুন আজাদের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৪ সালের এইদিনে জার্মানির মিউনিখে তার মৃত্যু হয়। সেটা মৃত্যু নাকি হত্যা এখনো আমরা তদন্ত প্রতিবেদন আমরা কেউ দেখি নি। হুমায়ুন আজাদ বাংলা সাহিত্য আর মুক্তমনা জগতে এক পরিচিত নাম। প্রথা-ধর্ম-সেনাশাসনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে অনেক আলোচিত হয়েছিলেন। এখনো প্রথা-ধর্মবিরোধীদের কাছে তিনি আর তার লেখা সমান গুরুত্বপূর্ণ।


তার জন্ম ঢাকার অদুরে মুন্সিগঞ্জে ১৯৪৭ সালে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাঙলায় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করে একই বিভাগে শিক্ষকতা করেন। পরে তিনি ভাষাবিজ্ঞানে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। আশি এবং নব্বইএর দশকে তিনি কলাম লেখতেন পত্রিকায় কিন্তু পরে ‘নারী’ বইটি ১৯৯২ সালে বের হলে বইটি পড়ুয়া মহলে সমাদৃত হয়। পরে ১৯৯৫ সালে বইটি নিষিদ্ধ হলেও ২০০০ সালে হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। তার “পাকসার জামিন সাদবাদ” বইয়ের জন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ বইমেলার কাছে টিএসসিতে তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়। এর আগে জামাতের দেলোয়ার হোসেন সাঈদী বইটি নিষিদ্ধ করার জন্য সংসদে চেষ্টা করে। বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক দল জামায়েতে ইসলামি তাকে হত্যার প্রচেষ্টা করে বলে তিনি বিবৃতি দেন।

তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, কলামিস্ট এবং প্রাবন্ধিক ছিলেন। মূলত ১৯৯৪ সালে তিনি ঔপন্যাসিক হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেন প্রথম উপন্যাস ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইলের মধ্যে দিয়ে। ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয় সব কিছু ভেঙ্গে পড়ে। আর এই বইয়ের জন্য তিনি বাংলা একাডেমীর পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০২ সালে ১০০০০ এবং আরও একটি ধর্ষণ, ২০০৩ সালে একটি খুনের স্বপ্ন এবং ২০০৪ সালে প্রকাশিত পাক সার জমিন সাদ বাদ-এর মতো একটি অসাধারণ নতুন মাত্রার উপন্যাস। তিনি এইবছর (২০১২) মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন। তার উল্লেখযোগ্য কবিতা সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে (১৯৮৫), হুমায়ুন আজাদের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৯৩), আধুনিক বাংলা কবিতা (১৯৯৪)। হুমায়ুন আজাদের প্রবচনগুচ্ছ (১৯৯২) তার অন্যতম মুল্যবান কীর্তি। ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল (১৯৯৪), সব কিছু ভেঙে পড়ে (১৯৯৫), মানুষ হিশেবে আমার অপরাধসমূহ(১৯৯৬), যাদুকরের মৃত্যু (১৯৯৬), শুভব্রত, তার সম্পর্কিত সুসমাচার (১৯৯৭), রাজনীতিবিদগণ (১৯৯৮), কবি অথবা দন্ডিত অপুরুষ (১৯৯৯), নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু (২০০০), ফালি ফালি ক'রে কাটা চাঁদ (২০০১), শ্রাবণের বৃষ্টিতে রক্তজবা (২০০২), ১০,০০০, এবং আরো একটি ধর্ষণ (২০০৩), একটি খুনের স্বপ্ন (২০০৪), পাক সার জমিন সাদ বাদ (২০০৪) সব অনন্য কথা সাহিত্য। ভাষাবিজ্ঞানের উপর লেখা তার বাক্যতত্ত্ব (১৯৮৪), বাঙলা ভাষা (প্রথম খন্ড) (১৯৮৪), বাঙলা ভাষা (দ্বিতীয় খন্ড) (১৯৮৫), তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান (১৯৮৮) বইগুলো এখন বানান এবং ভাষারীতি শুদ্ধভাবে চর্চায় বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

ড. হুমায়ুন আজাদ ছিলেন স্বঘোষিত নাস্তিক। তিনি আস্তাকুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন সমস্ত প্রথাকে। নিজে হয়ে উঠেছিলেন প্রথাবিরোধী। তাঁর সমস্ত বই, প্রবন্ধ, কবিতা সৃষ্টি হয়েছে প্রথাকে অস্বীকার করে। তাঁর প্রবচনগুচ্ছ এদেশের পাঠক সমাজকে করে তুলেছে সচেতন, অপরদিকে ভণ্ডদের করে তুলেছে ক্রুদ্ধ। তিনি মৌলবাদকে লক্ষ্য করে আঘাত করে নিজেই মৌলবাদীদের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি কখনো ভন্ডামির সাথে আপোষ করেন নি। তাকে কিভাবে মুল্যায়ন করব জানি না। তাকে মুল্যায়নের যোগ্য আমি না। তার রেখে যাওয়া কীর্তি আমাকে উৎসাহ যোগায়। তার মৌলবাদবিরোধী চিন্তা আমাকে মুক্তমনা হতে উৎসাহ দেয়। তার মৃত্যু প্রথাবিরোধী মুক্তচিন্তা এবং সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য ধাক্কা ছিল। আর তার সাথে দেখা মনে পড়ে। আজ তাকে মনে পড়ে।

“আমাদের অঞ্চলে সৌন্দর্য অশ্লীল, অসৌন্দর্য শ্লীল। রুপসীর একটু নগ্ন বাহু দেখে ওরা হৈ চৈ করে, কিন্তু পথে পথে ভিখিরিনির উলঙ্গ দেহ দেখে ওরা একটুও বিচলিত হয় না।” ----হুমায়ুন আজাদ

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:০২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×