somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

[ফিচার সিরিজ: ২]-রেজা ও ইকবাল: ভুলেও ভুলিনি

১১ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিলেট ক্যাডেট কলেজের স্টাফ লাউঞ্জে আমাদের একজন শিক্ষক বিষয়টা তুললেন।
‘ক্লাস সেভেনে পড়া ১১-১২ বছরের ক্যাডেটদের দিয়ে তিন টন ওজনের রোলার টানানো খুবই অমানবিক। যেকোনো সময় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। তা ছাড়া মাঠ সমান করার জন্য কর্মচারীই তো আছে।’
কিন্তু রোলার টানানোর সিদ্ধান্তটা এসেছে কলেজ অ্যাডজুটেন্টের কাছ থেকে। অতএব প্রিন্সিপালও বিষয়টা ‘শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ঠিকই আছে’ বলে মনে করলেন। উল্টো যিনি অনুযোগটি করের্ছিলেন সেই স্যারকেই অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে।
এ ঘটনার দু-তিন দিন পরই ১১ নভেম্বর ১৯৯৯-এর কুয়াশাচ্ছন্ন এক ভোরে সেই রোলারের নিচেই চাপা পড়ে সকল শৃঙ্খল ছিঁড়ে চলে গেল আমাদের প্রিয় দুই বন্ধু রেজা ও ইকবাল। শিশিরভেজা মাঠ ভিজল অপাপবিদ্ধ দুই কিশোরের রক্তে। সেই রক্ত ও সেই স্নৃতি আজও একাকার হয়ে আছে স্নৃতিতে। স্নৃতি বেদনার্ত হতে পারে, কিন্তু এই স্নৃতি কেবলই বেদনার নয়, তিক্ততার এবং ক্ষোভের। সুবিচার না হওয়ায় তা আমাদেরও অপরাধী করে দেয়। আমাদের মনে ওদের বয়স বাড়ে না, কিন্তু আমরা বেড়ে চলেছি। যতই বাড়ছি, ততই সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ওদের স্নৃতির ভার। ওদের মৃত্যুর শোক আমাদের তাই বর্তমানের আরো অনেক শোকার্ত ঘটনার দিকে টেনে নিয়ে যায়। আমরা দেখি, সেই গাফিলতি আজো ঘটে চলেছে অনেক জায়গায়।
আমরা তাই শৃঙ্খলা ভেঙে নেমেছিলাম আন্দোলনে। সমস্ত রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এই অমানবিক ঘটনার হোতাকারীদের শাস্তি চেয়েছিলাম। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়ে আমাদের শান্ত করলেন। কিন্তু অত্যন্ত বেদনাভরা চোখে আমরা দেখলাম, উল্টো আন্দোলনে থাকার অপরাধে অনেক সিনিয়র ক্যাডেটকেই বহিষ্ককার করা হলো। অথচ যাঁর বা যাঁদের খামখেয়ালে বেদনাদায়ক ঘটনাটি ঘটলো, তারা কিন্তু থাকলেন বহাল তবিয়তে। শাস্তি পেলেন শুধু একজন ননকমিশন্ড আর্মি স্টাফ। এমন একটা ঘটনা তো আমাদের জাতির দৈন্যকেই উন্েনাচিত করে।
প্রকৃত অর্থেই দারুণ মেধাবী ছিল ক্যাডেট রেজা ও ইকবাল। স্বপ্ন ছিল অনেক বড় হওয়ার। যেমন আরো অনেকেরই থাকে। কিন্তু অনেকে সেটা বাস্তবায়নের সুযোগ পায়; ওরা তা পায়নি। ওদের পরিবার দেখতে পারেনি ওদের পূর্ণ জীবনের পূর্ণ অবয়ব।
ইকবাল হয়তো একদিন বলল, বিজ্ঞানী হব, তো আরেক দিন বলল, না, ইঞ্জিনিয়ার হব। ‘বড় দাবাড়ু হব’−দাবার বোর্ডের সামনে বসে এমনই হয়তো হতো শপথ কিংবা কলেজ ম্যাগাজিনে যখন তার লেখা একটা সায়েন্স ফিকশন প্রকাশিত হলো, তখনই দেখে ফেলল সাহিত্যিক হওয়ার স্বপ্ন।
রেজার একসময় হয়তো মনে হলো, ‘আর্মি অফিসার হব, আবার আরেক সময় মনে হলো না, ডাক্তার হব। মানুষের সেবা করতে হবে না?’
দারুণ অ্যাথলেটও ছিল সে। স্বপ্নেরা সবে ডানা মেলতে শুরু করেছে, আর তখনই অপ্রত্যাশিত এক দুর্যোগ। আমরা শুধু প্রিয় দুজন বন্ধুকেই হারালাম না, এক ঝাঁক স্বপ্নেরও যে অপমৃত্যু হলো। স্বপ্নকে এমন কঠিন নির্মমতায় হত্যা করতে পারঙ্গম বলেই হয়তো জাতি হিসেবে আমরা আজও সামনের সারিতে দাঁড়াতে অক্ষম। এমন একেকটা ১১ নভেম্বরের সুষ্ঠু বিচার হয় না বলেই হয়তো আমাদের শুনতে হয়−শিক্ষকের আঘাতে প্রাইমারি ছাত্রের মৃত্যুর খবর। ক্ষমতার অপব্যবহারের এমন নজির বারবার সৃষ্টি হয় বলেই হয়তো পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যু হয় মেধাবী নিরপরাধ কলেজছাত্রের। মানসিকতার এমন দারিদ্র্যের জন্যই হয়তো অপমানিত হয় দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠের ছাত্ররা।
রেজা ও ইকবালের মৃত্যু ওদের মা-বাবাকে এখনো কতখানি কাঁদায়, তাঁদের সামনে দাঁড়ালে এর কিছুটা হয়তো বুঝতে পারি। এই মৃত্যু আমাদের হূদয়ে কতখানি ক্ষত সৃষ্টি করেছে তার কিছুটাও হয়তো আমাদের আশপাশের মানুষ বুঝতে পারে। শোকাহত আমরা সবাই-ই জানি, চাইলেও আর রেজা ও ইকবালকে ফিরে পাব না। তাই আমরা চাই কোনো কারণেই আর কোনো স্বপ্ন যেন অতলে হারিয়ে না যায়। পুরোনো ব্যর্থতার জাল থেকে বেরিয়ে জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য এই বদলটার যে বড়ই প্রয়োজন।
লেখক: সাবেক সভাপতি, রেজা-ইকবাল মেমোরিয়াল অর্গানাইজেশন
http://www.facebook.com/mohiuddin.kawsar.1
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে চিরতরে যুদ্ধ বন্ধের একটা সুযোগ এসেছিল!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩


মনে হয় শুধু মানুষের কল্পনাতেই এমন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন সম্ভব- যদি বাস্তবে হত তবে কেমন হত ভাবুন তো?
প্রত্যেকটি দেশের সমস্ত রকমের সৈন্যদল ভেঙে দেওয়া; সমস্ত অস্ত্র এবং সমর-সম্ভার, দুর্গ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

টুইস্টেড মাইন্ড অফ আ সিরিয়াল কিলারঃ কবি কালিদাস স্পেশাল

লিখেছেন এইচ তালুকদার, ২৭ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে আমার আগ্রহ শুরু হয় এই ব্লগেরই একজন অসাধারন ব্লগার ''ডক্টর এক্স'' এর লেখা পড়তে যেয়ে। বাংলা ভাষায় সাইকোলজির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেলফ হেল্প ধরনের অসাধারন কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিলিস্তিনে কী শান্তি সম্ভব!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৭ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:২১

এক.
প্রতিদিন ঘুমানোর আগে আলজাজিরা দেখি৷ গাজার যুদ্ধ দেখি৷ রক্ত দেখি৷ লাল লাল৷ ছোপ ছোপ৷ সদ্য জন্মানো শিশুর৷ নারীর৷ কিশোর কিশোরীর৷ বৃদ্ধের৷ সারি সারি লাশ৷ সাদা কাফনে মোড়ানো৷ ভবনে চাপা পড়া৷... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রাকৃতিক দূর্যোগে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫

আমার জীবনে আমি সরাসরি প্রাকৃতিক দূর্যোগের ভেতরে পড়েছি বলে আমার মনে পড়ে না । ২০১৯ সালের ঘটনা। ঘূর্ণিঝড়ের নাম সেবার ছিল সম্ভবত বুলবুল ! সেটা যখন আসছিল তখন আমি ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্কাই ডাইভিংয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার প্রচেষ্টায় সফল বাংলাদেশের আশিক চৌধুরী

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৬




দেশে এখন চলছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর তান্ডব। তার মধ্যেই সুখবর এলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে-

বিশ্ব রেকর্ড গড়তে ৪১ হাজার ফুট উঁচুতে উড়ে যাওয়া বিমান থেকে শূন্যে লাফ দিলেন বাংলাদেশের আশিক চৌধুরী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×