somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিম কার্ড অকেজো করে অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং - ব্যাঙ্ক জালিয়াতির নতুন কৌশল, গায়েব ৪ লক্ষ

১১ ই আগস্ট, ২০১২ সকাল ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডায়ালিসিসের জন্য নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন দেবাশিস দত্ত নামে এক বৃদ্ধ। সেই সময় হঠাৎই তাঁর মোবাইল ফোনটি অকেজো হয়ে যায়। দিন কয়েক পরে মোবাইল সারাতে গিয়ে দেবাশিসবাবু জানতে পারেন, ফোন চুরি গিয়েছে, এমন অভিযোগের ভিত্তিতেই নম্বরটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে ডুপ্লিকেট সিম কার্ডও দেওয়া হয়েছে বলে ওই সংস্থা জানায়। এর পরই তিনি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করতে গিয়ে জানতে পারেন, নার্সিংহোমে থাকার সময়েই তিনি অনলাইন ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে সঞ্জয় হাজরা নামে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে ৩ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন!
দেবাশিসবাবুর ভাই রক্তিম দত্ত জানান, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি অনলাইন ব্যাঙ্কিংকে টাকা লেনদেনের বিষয়টি জানার পরেই তাঁরা কলকাতা পুলিশের শরণাপন্ন হন। রক্তিমবাবুর কথায়, “আমরা কলকাতা পুলিশের তৎকালীন গোয়েন্দাপ্রধান দময়ন্তী সেনের সঙ্গে গিয়ে দেখা করি। তিনি বিষয়টি শুনে আমাদের গোয়েন্দা বিভাগের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার অফিসে পাঠিয়ে দেন।”
শুক্রবার কলকাতা পুলিশের ডিসিডিডি (স্পেশ্যাল) মুরলীধর শর্মা বলেন, “ওই ঘটনার সূত্র ধরেই বৃহস্পতিবার রাতে নবি মুম্বই থেকে ওকারা চিনেডু ফার্দিনান্দ ওরফে মাইক এবং চিনওকে কিংসলে ওরফে কিং নামে দুই নাইজিরীয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিন মুম্বইয়ের আদালতে তাদের হাজির করানো হলে ১৪ অগস্ট পর্যন্ত ট্রানজিট রিমান্ডের নির্দেশ মিলেছে।” পুলিশ জানিয়েছে, মাইক এবং কিং বহু দিন আগে ফুটবলার পরিচয় দিয়ে এ দেশে এসেছিল। ২০০৭ সালে তাদের ভিসার মেয়াদ ফুরিয়েছে। গত পাঁচ বছর তারা বেআইনি ভাবেই এ দেশে বাস করছিল। ধৃতদের কাছ থেকে প্রচুর মোবাইল ফোন, ডেটা কার্ড এবং কয়েকটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
মুরলীধর আরও জানান, দেবাশিসবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে এর আগেই সন্তোষ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিকাশ সাউ, বিপিন কুমার, দিলীপ তাঁতি এবং অরুণ মিশ্র নামে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের জেরা করেই ওই দুই নাইজেরীয়ের নাম জানা যায়। ধৃত দুই নাইজেরীয়-ই এই চক্রের মূল পাণ্ডা বলে পুলিশের দাবি।
পুলিশের এই সাফল্যের পরও কিছুটা আক্ষেপ রয়ে গিয়েছে দেবাশিসবাবুর পরিজনদের। কারণ, তদন্ত চলাকালীনই ১৪ এপ্রিল মারা যান দেবাশিসবাবু। রক্তিমবাবুর কথায়, “যে অপরাধীরা দাদার টাকা হাতিয়েছিল, তাদের গ্রেফতার দাদা দেখে যেতে পারলেন না!”
কী ভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল এই প্রতারকেরা? পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুই নাইজিরীয় স্টেট ব্যাঙ্কের (এই ব্যাঙ্কের বৈষ্ণবঘাটা-পাটুলি এলাকার শাখায় দেবাশিসবাবুর অ্যাকাউন্ট ছিল) নাম করে একটি ভুয়ো ই-মেল পাঠায়। কিন্তু সেটি আসল মনে করে ‘ক্লিক’ করেছিলেন ওই বৃদ্ধ। এই ধরনের ই-মেল মারফত ‘কি লগার’ বলে একটি প্রোগ্রাম কম্পিউটারে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
কী এই ‘কি লগার’? সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম। গ্রাহক যখন ইন্টারনেটে টাকা আদানপ্রদানের জন্য অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং পাসওয়ার্ড দিচ্ছেন, তখন এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে সেই তথ্য সঙ্গে সঙ্গে হ্যাকারের কাছে চলে যাচ্ছে। তা দিয়েই টাকা হাতানোর কাজ করে ওই অপরাধীরা। মূলত ভুয়ো ই-মেল মারফতই এই ধরনের প্রোগ্রাম ছড়ানো হয় বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, দেবাশিসবাবুর অভিযোগ শোনার পরই ইন্সপেক্টর সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার একটি দল ঘটনার তদন্তে নামে। প্রথমে সন্তোষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জেরা করে বাকিদের খোঁজ মেলে। এর পর গত ৪ অগস্ট লালবাজার থেকে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার চার জন তরুণ অফিসার মুম্বই রওনা দেন। কয়েক দিন ধরে ওৎ পেতে বসে থাকার পর বৃহস্পতিবার রাতে নবি মুম্বইয়ের একটি বহুতল থেকে ওই দুই বিদেশিকে পাকড়াও করা হয়।
ধৃতদের জেরা করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, দেবাশিসবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নানা গোপন তথ্য জেনে ফেলার পর মাইক এবং কিং তাদের কলকাতার এজেন্ট, সন্তোষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সন্তোষ তখন এসবিআইয়ের হাজরা শাখায় নাম ভাঁড়িয়ে সঞ্জয় হাজরা নামে একটি অ্যাকাউন্ট করে রেখেছিল। সেটাতেই দেবাশিসবাবুর টাকা সরিয়ে ফেলা হয়।
এর আগেই অবশ্য ‘সিম’টি বন্ধ করার ব্যবস্থা করেছিল ধৃতেরা। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ইন্টারনেটে টাকা লেনদেনের সময় ব্যাঙ্ক একটি কোড নম্বর (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) পাঠায়। সেটি ফের ইন্টারনেট মারফত ব্যাঙ্ককে না জানালে টাকা লেনদেন হয় না। এটি হাতে পাওয়ার জন্য সিম কার্ডটা প্রয়োজন। তাই মাইক ও কিং-এর সহযোগী বিপিন, অরুণরা দেবাশিসবাবুর নামে একটি মোবাইল চুরির ভুয়ো অভিযোগ দায়ের করে। ফলে নম্বরটি বন্ধ হয়ে যায়।
তার পরে দেবাশিসবাবুর নামেই ভুয়ো নথি বানিয়ে ডুপ্লিকেট সিম কার্ড তুলে নেয় তারা। সিম কার্ড হাতে পাওয়ার পরে কোড নম্বরটি জানতে আর কোনও অসুবিধাই হয়নি তাদের। তদন্তকারীদের দাবি, এর পর সহজেই টাকা সরিয়ে ফেলে মাইক-কিংরা। এমনকী, পরে টাকা লেনদেন সংক্রান্ত এসএমএস-ও পাননি দেবাশিসবাবু।
কী ভাবে এই টাকার লেনদেন হয়?
লালবাজারের কর্তারা জানিয়েছেন, এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত বিদেশিরা শহরেরই যুবকদের মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে এজেন্ট করে নেয়। তার পর তাদের দিয়েই জাল অ্যাকাউন্ট খোলায়। কোনও ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতানোর পরে ওই যুবকদের দিয়েই সেই টাকা তোলানো হয়। এর পরে একাধিক হাত ঘুরে সেই টাকা জমা পড়ে হ্যাকারদের অ্যাকাউন্টে। তদন্তকারীদের চোখে ধুলো দিতেই একাধিক এজেন্টের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করা হয় বলে পুলিশের একাংশের মত।
কিন্তু জাল নথি দিয়ে দেশের প্রথম সারির কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে এ ভাবে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে কী ভাবে?
সে প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে।
[First Page]
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি অজ্ঞ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৫২


ভাবতে পারো
৮০ টুকরো হতে হয়;
ভাবতে পারো
জ্বলে পুড়ে মরতে হয়!
ভাবতে পারো
কতটুকু লোভ লালসা
থাকলে পরে
এমন হবে বলো দেখি;
ভাবতে পারো
কেমন জন্ম মৃত্যুর খেলা;
জানি আমি
তুমি কিছু ভাবতে পারবে না
কারণ তুমি অজ্ঞ
মৃত্যুর পরে একা... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×