somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী দেশে দেশে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে গর্ভবতী মেয়েরা

০৯ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নারী দেশে দেশে
স্কুল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে গর্ভবতী মেয়েরা

প্রতি বছর টিউনিশিয়ায় প্রায় ৮ হাজার কন্যাসন্তান স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়৷ এর প্রধান কারণ অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ৷ কিন্তু যেটা সবচেয়ে অবাক করে, সেটা হলো সেই সব গর্ভের পিতৃ পরিচয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষকরাই এখানে ভক্ষক!

শুধু টিউনিশিয়াই নয়, আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলের বহু দেশেই দেখা যায় এই একই চিত্র৷ চোখে পড়ে গর্ভের ভারে ভারাক্রান্ত ছোট ছোট অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের৷

নিজ শরীর সম্পর্কে এদের স্বচ্ছ কোনো ধারণা নেই, নেই গর্ভের সন্তানকে বড় করার ক্ষমতা৷ অথচ সমাজে পুরুষতন্ত্রের চাপটা আছে ঠিকই৷ আর সেই চাপের ফলেই তারা স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়, বাধ্য হয় গর্ভের জারজ সন্তানকে আড়াল করতে৷ অথচ ভবিষ্যতের হাতছানিই তাদের স্কুলের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছিল৷ তখন কি তারা ভেবেছিল ক্লাস ঘরের এই গমগমে আওয়াজেই একদিন তাদের কণ্ঠ রোধ হওয়ার উপক্রম হবে?

সোমবার সকাল৷ ৮টা বাজতে আর কয়েক মিনিট বাকি৷ আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে ইহানামিলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস৷ লাইন দিয়ে সারি সারি ছেলে-মেয়ে শ্রেণিকক্ষের দিকে এগোচ্ছে৷ সকলের পরনেই সাদা শার্ট, টাই৷ এছাড়া ছেলেরা পরেছে গাঢ় নীল রঙের প্যান্ট আর মেয়েরা ঐ একই রঙের স্কার্ট৷

প্রতি বছর টিউনিশিয়ায় প্রায় ৮ হাজার কন্যাসন্তান স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়

এস্টার'এর পরনেও এই একই পোশাক৷ দশম শ্রেণিতে পড়ছে এস্টার৷ কিন্তু তার ক্লাসের আর পাঁচ জনের মতো নিজের ওপর আর যেন বিশ্বাস নেই মাত্র ১৯ বছরের এই মেয়েটির৷ আর সেটা হবে নাই বা কেন? মাত্র এক বছর আগে যে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে এস্টার৷ তার কথায়, ‘‘গর্ভাবস্থায় আমি নিয়মিত স্কুলে আসতে পারি নি৷ কত ক্লাস যে আমায় কামাই করতে হয়েছে, পিছিয়ে পড়তে হয়েছে...শুধুমাত্র শারীরিক অসুস্থতার কারণে৷ পেটে বাচ্চা আসার পরে আমার সব কিছুই কেমন যেন বদলে গিয়েছিল৷ এখনও যার জের কাটেনি৷''

অবশ্য অন্যান্যদের তুলনায় এস্টার'এর ভাগ্য প্রসন্নই বলতে হবে৷ আর এ জন্য এস্টার'এর বাবা-মা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য৷ বাচ্চা পেটে আসা মানেই যে এস্টার'এর ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাওয়া – সেটা তাঁরা মেনে নেন নি৷ বরং তাঁরা সবটা সময় এস্টার'এর পাশে ছিলেন, এখনও আছেন৷

কিন্তু সবার গল্প তো সমান নয়৷ এস্টার'এর ক্লাসেই আরো চার জন মেয়ে রয়েছে, যারা এস্টার'এর মতোই বাচ্চা প্রসব করেছে স্কুলে থাকতেই৷ তারা আজ হিমশিম খাচ্ছে স্কুলের গণ্ডি পেরোতে৷ এরা ছাড়া আরো অসংখ্য অপ্রাপ্তবয়স্ক মা বাধ্য হয়েছে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে৷ তাদের বাচ্চাদের দেখাশোনা করার যে কেউ নেই৷ তাছাড়া, এত অল্প বয়সে মা হওয়া, শিশুর দেখাশোনা করা এবং পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া – এটা চাট্টিখানি কথা নয়৷ তার ওপর বেশিরভাগ মেয়েরা যেখানে থাকে সেখান থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার, যেটা তাদের পায়ে হেঁটেই পার করতে হয়৷ ফলে বাড়ি পৌঁছতে তাদের সন্ধ্যা হয়ে যায়৷

এস্টার জানায়, ‘‘স্কুল থেকে বাড়ি আসার পর আমি প্রায়ই খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ি৷ তখন মেয়ের দেখাশোনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে আমার জন্য৷ কিন্তু আমি মা৷ তাই ক্লান্তি সত্ত্বেও আমাকে তার পরিচর্যা করতে হয়৷ আমিই যে তাকে এ পৃথিবীতে নিয়ে এসেছি, এটা আমি কীভাবে ভুলে যাবো?''

কীভাবে এই মাতৃত্বের দায়িত্ব তার ছোট ছোট কাঁধে এসে পড়েছে – সে কথা কিছুতেই বলতে চায় না এস্টার৷ তবে টিউনিশিয়ার এ অঞ্চলে এস্টার'এর মতো বহু মেয়ে রয়েছে৷ আফ্রিকার আরেক রাষ্ট্র তানজানিয়ার গাইটা রাজ্যের পরিস্থিতিও তথৈবচ৷ সেখানকার ‘তানজানিয়া মিডিয়া উইমেন অ্যাসোসিয়েশন'-এর আনানিলিয়া নিকা বলেন, ‘‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক স্কুল শিক্ষকরাই মেয়েদের শ্লীলতাহানি করে থাকে৷ ক্লাসের অল্প বয়স্ক মেয়েদের তারা বলে, ‘আমার সঙ্গে না যৌন সম্পর্কে না গেলে আমি তোমাদের পরীক্ষায় পাশ করাবো না৷' বলা বাহুল্য, এটা ক্ষমতার একটা অপব্যবহার৷ এতে স্কুল থেকে বিতাড়িত হওয়ারও একটা ভয় কাজ করে মেয়েদের মধ্যে৷ অনেক কিছু, অনেক অনৈতিক ঘটনাই এভাবে চলতে থাকে স্কুলের চার গণ্ডির মধ্যে৷ এটা খুবই দুঃখজনক৷''

এ সমস্যার একটা বিধান হওয়া প্রয়োজন৷ এমনটাই আশা করেন আনানিলিয়া নিকা৷ কিন্তু টিউনিশিয়া বা তানজানিয়ায়, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এহেন ঘটনাকে বিশেষ পাত্তাই দেয় না৷ অনেক শিক্ষকই তাই অন্যায় করেও পার পেয়ে যায়৷ যদিও তানজানিয়ার শিক্ষামন্ত্রী শুকুরা কাভাম্বা' বক্তব্য, ‘‘যারা অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের জোর করে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছে, তাদের কঠোর শাস্তির বিধান আমরা করেছি৷ আগের তুলনায় আইনেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ তাই মেয়ের বাবা-মা যদি শিক্ষকটিকে চিনিয়ে দেন, তাহলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে৷''

কিন্তু সেখানেই যে আসল সমস্যা! সামাজিক চাপকে অগ্রাহ্য করে কোন বাবা-মা নিজের মেয়ের লজ্জার কথা জন-সমক্ষে প্রকাশ করার সাহস পাবেন? তাও আবার টিউনিশিয়া বা তানজানিয়ার মতো পিছিয়ে থাকা সমাজ ব্যবস্থায়? সূত্র: ডয়েচে ভেলে
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ড্রেনেই পাওয়া যাচ্ছে সংসারের তাবৎ জিনিস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫০



ঢাকার ড্রেইনে বা খালে কী পাওয়া যায়? এবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) একটি অভুতপূর্ব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তাতে ঢাকাবাসীদের রুচিবোধ অথবা পরিচ্ছন্নতাবোধ বড় বিষয় ছিল না। বড় বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×