somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অচেনা চীনে ৪

০৮ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অচেনা চীনে ৪

টিভিতে চ্যানেলের সংখ্যা কম নয়, তবে সবই চীনা ভাষায়। সারাদিন পরে রুমে এসেও ভাষার দুঃখে ভেসে যাবার অবস্থা। ঘোরাতে ঘোরাতে এক জায়গায় অলিম্পিক পেলাম। তবু বাঁচা গেল। বাসায় টিভি থাকে বউ বাচ্চাদের দখলে। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় জিটিভি বাংলার যন্ত্রনা।
ইন্ডিয়ানদের ব্যবসা বুদ্ধি ভাল। আজকাল প্রায় সব সিরসিয়ালেই কিছু বাংলাদেশি চরিত্র জুড়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের ছবি সেখানে ভাসে না ভাসুক, প্রাণ, অটবি, এপেক্স কোম্পানির বিজ্ঞাপন সেখানে ঠিকই যায়। এদিকে আমাপ সাধের অলিম্পিকেও সেই চাইনিজ। হয় টেবিল টেনিস, কিম্বা ব্যডমিন্টন। এসব খেলা কতক্ষন দেখা যায়। বসলাম ফেইসবুক ওপেন করতে। কাজ হল না। (পরে জেনেছি চায়নাতে ফেইস বুক খোলেনা, ইঊটিঊবও নিষিদ্ধ।)

ভেনের কাছে দু’টি চীনা শব্দ শিখেছিলাম, বায়হুয়ো আর সিসে (উচ্চারণ ঠিক মত হল কিনা জানিনা।) একটার মানে শপিং সেন্টার বা মার্কেট আর অন্যটির মানে ধন্যবাদ, আর একটি শব্দ তো আগেই জান তাম। নি হাঊ (শইল ডা ভালা?) এই তিনটি শব্দ সম্বল করে রাতের খাবারের খোঁজে বের হলাম।
আমাদের কাছের সুপার স্টোরটার নাম জিয়াউও বায়হুয়ো। চমৎকার শপিং মল। গ্রোসারিতে একটা বিদ্ঘুটে গন্ধ আছে বটে, তবে ক্ষুধার সময় অত কিছু বিবেচ্য নয়। সুপরিসর দোকান। খাবারের ক্কৌটা থেকে শুরু করে সব কিছুই মনে রাখার মত। লেখা জোকা সবই চাইনিজে। অনেক কিছু নিতে গিয়েও নিতে পারলাম না। মিউনিখের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। খুব পছন্দ করে একটা বিস্কুট কিনে ফিরে আসার পর সে যাত্রায় আমার রুম মেট এনায়েত হাসিতে গড়া গড়ি। আপনি কি মনে করে কুকুরের বিস্কুট কিনে নিয়ে এলেন?
চিনাদের কিছু জিগ্যেস করা মানে তো নিজে নিজে স্নায়ু চাপ নেওয়া। অগত্যা তিনটি আপেল, দুটি টমাটো আর এক বোতল পানি নিয়ে ঘরে ফিরে ভেনের ফোন পেলাম। কাল সকাল ৯টায় লবিতে থেকো। আমি তোমাকে নিতে আসবো।

সেনঝেন পুক্সিন টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেড।
ঠিক নয়টায় হাজির হল ভেন। কালকের ধ্যদ্ধেড়ে গাড়িটার বদলে আজ এনেছে একটা
মাইক্রোবাস।ড্রাইভারও বদলে গেছে। আজকের টি বয়সে তরুন। নাম মিঃ হ্যান। গাড়ি চালানো ছাড়া আর সবকিছুতেই গভীর মনযোগ। গাড়ি চালানো ছাড়া কেন বললাম সেটা ক্রমশঃ প্রকাশিতব্য।ভেন জিগ্যেস করলো রাতে কি খেয়েছি জানালাম আপেল আর টমাটো। - -সকালে?
- আপেল আর টমাটো
- দুই বেলায়ই আপেল আর টমাটো?
- তোমাদের এখানে আপেল গুলো বেশ রসাল। খেতে ভালো লাগে।
- ইজ ইত! ওকে আই উইল তেল মিঃ হং তু এরেঞ্জ সাম এপল ফ ইউ ফ লাঞ্চ।
আমি মনে মনে প্রমাদ গুনলাম, আবার আপেল টমাটো! মুখে বললাম নো, নো প্লিজ ডু নট টেইক দ্যাট ট্রাবোল, আ’ল এরেঞ্জ মাই লাঞ্চ। বাই দ্য ওয়ে মি হং লোকটা কে? উত্তর দিল হ্যান। দ্য ম্যন দ্রাইব কার তুমরো
আমাকে হা হয়ে যেতে দেখে ভেন বললো, হং কাল গাড়ি চালিয়েছিল ঠিকই। কিন্ত একচুয়ালি হি ইঝ দ্য কুকার।
পাঁচ মিনিটের দূরত্বে সেঞ্ঝেন পুক্সিন টেকনোলজি কোম্পানির হেড অফিস। হোটেলের পিছনের একটা ছোট রাস্তা দিয়ে যেতে হয় নর্থ জিয়াউ রোডে। সকাল বেলায় এই ছোট রাস্তায় হাটতে বেরিয়েছিলাম। অপরিসর রাস্তা, এক তলা, দেড়তালা বাড়ি, বারান্দায় মেলে দেওয়া চাদর,গ্রীলের ফাঁকে ঝুলতে থাকা আধ ময়লা কাপড়, তখন একটু হলেও মনে সাহস এনেদিয়ে ছিল।মনে হয়েছিল আমাদের ছোটবেলার যশোরের ঘোপ অথবা লোন অফিস পাড়ার মধ্যে দিয়ে হেটে যাচ্ছি। এক্ষনই যেন পরিচিত কারো সাথে দেখা হয়ে যাবে।
অন্যদের কেমন লাগে জানিনা সিঙ্গাপুরে যেয়ে আমি একটুও শান্তি পাইনি। রাস্তার মোরে মোড়ে ক্যামেরা, অভদ্রের মত একটু পরে পরে মনে করিয়ে দেওয়া যে তুমি ক্যমেরার নজরদারিতে আছো, আমাকে মোটেও স্বস্তি দেয়নি। সব সময় মনে হয়েছে আমি ভুল করে কোন আকা ছবির মধ্যে ঢুকে পড়েছি। মিউনিখে মানুষকে ট্রেনে, বাস্‌ দোকানে সব জায়গায় বইএর আড়ালে গুটিয়ে থাকতে দেখে মনে হয়েছে, পড়া নয় আমাকে এড়িয়ে যাবার জন্যেই এই বই পড়ার ছল। এই সব ভাবতে ভাবতে পৌছে গেলাম ৪৯ নর্থ জিয়াউ রোড। এখনেই মাসাজুদা হাই টেক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। আর তারই কোন এক বিল্ডিঙ্গের ১তলা আর দোতলা নিয়ে সেনঝেন পুক্সিন টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেডের হেড অফিস।
মাসাজুদা হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক অনেকটা বিসিক শিল্প এলাকার মত। অনেক ছোট বড় কোম্পানি এখানে। পুক্সিন টেকনোলজি কোম্পানি এখন বিশ্বের এক নম্বর বায়োগ্যাসের যন্ত্রপাতি নির্মাণের কোম্পানি। চীনে বায়োগ্যাসের প্রচলন মাওসেতুঙ্গের আমল থেকে। কিন্তু সরকারি পৃষ্ঠপোকতার অভাবে ৯০ দশকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত এদেশে তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি এ শিল্প। এখন গোটা চীনে ২০ মিলিয়ন বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট।( বাংলাদেশে ৯০ দশকের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট চালু করা হলেও তার মাত্র ১৫ শতাংশ এখন চালু আছে। নগদ নারায়নের আসায় বায়োগ্যাস প্রকল্পকে মাঝ রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে সরকারি ভাবে সৌর বিদ্যুতের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। অথচ সৌর বিদ্যুতের নিয়ে মৌলিক কোন কাজ এখনও শুরু হয়নি। প্রকৃত বিচারে যা হচ্ছে তাহল সৌর প্যানেলের মাধ্যমে আইপিএসএর ব্যটারি রক্ষার ব্যাবস্থা) চীনের গ্রামের প্রায় এক তৃতীয়াংশ চুলা জ্বলে বায়োগ্যাসে। এই শিল্পকে আধুনিক পর্যায়ে পৌছে দিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে পুক্সিন কোম্পানি। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত পৃথিবীর ৬০ টি দেশে তারা পৌছে দিয়েছে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট প্রস্তুতের নির্মাণ সামগ্রী। আর তাদের প্রযুক্তি পৌছে গেছে পূর্ব থেকে পশ্চিমে। অস্ট্রেলিয়া থেকে আমেরিকা, চায়না থেকে ঘানা পর্যন্ত। বাংলাদেশে আমি যে কোম্পানিতে কাজ করি (ইমারজেন্স বায়ো এনারজি ইনক) তারাও ২০০৯ সালে চীন থেকে আমদানী করেছিল বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট নির্মাণ সামগ্রী। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল গ্রামের মানুষের জন্যে বায়োগ্যাস থেকে বিদ্যুৎ বানানো। আমরা তিন বছর চেষ্টার পর এত দিনে মাত্র প্রস্তুত হয়েছি। আর চীনের গ্রাম পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা হয়ে যাওয়ায় তারা ছোট খাটো প্রযেক্ট নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে মাথা ঘামানো ছেড়ে দিয়ে বিয়ন্ড হরাইজোন তাকচ্ছে। তাদের লক্ষ ২০২১ সালের মধ্যে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট থেকে জাতীয় গ্রীডে ১মিলিয়ন মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগান দেওয়া।
গাড়ি থামতেই লাফ দিয়ে নেমে দরজা খুলে দিল ভেন। এবং এয়ারপোর্টের মতই হাসিমুখে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল ওয়েল কাম তু পুসিন।(অসমাপ্ত)
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যারিস্টার সুমন দায়মুক্ত , চু্ন্নু সাহেব কি করবনে ?

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ০৮ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৭


দেশে প্রথম কোন সংসদ সদস্য তার বরাদ্ধের ব্যাপারে Facebook এ পোষ্ট দিয়ে জানিয়ে থাকেন তিনি কি পেলেন এবং কোথায় সে টাকা খরচ করা হবে বা হচ্ছে মানুষ এসব বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×