somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৌলবাদী অর্থনীতির হালচাল..

০৮ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শান্তিপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের কমিশনার মাওলানা রহমত উল্যাহ। তিনি তার মহল্লার মসজিদের ইমাম। আজীবন সমাজসেবী এই ধর্মভীরু মানুষটি তার মুসুল্লীদের পরকালীন মুক্তির পথ দেখানোর পাশাপাশি দুনিয়ায় কল্যাণ লাভের রাস্তাও বাতলান। তিনি নিজে একজন স্বল্প আয়ের মানুষ। মসজিদের ইমামতির পাশাপাশি নিজের সামান্য কিছু জমিনে চাষাবাদ করেই চলে তার সংসার। তবে আধুনিক মনমানসিকতার এই পরীশ্রমী লোকটি নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন কৃষি অফিসের মাঠকর্মীদের সাথে। আধুনিক প্রযুক্তি ও উপায় উপকরণ নিজের চাষাবাদেও প্রয়োগ করেন আর অন্যদেরও এ ব্যাপারে উৎসাহিত করেন।

প্রতিদিন আসরের পর মসজিদে এসব নিয়ে অন্যান্য কৃষকদের সাথে তার নিয়মিত আলাপ আলোচনা হয়। শুধু কৃষি বিষয়েই নয় এলাকার সকল মানুষের সুখ, দু:খের খোজ খবর নেন তিনি। গত সপ্তাহে খবর পেলেন উত্তর পাড়ার মহরম আলী গুরুতর অসুস্থ। বেচারা রিক্সা চালায়। এই মসজিদেরই নিয়মিত একজন মুসুল্লী। তিনি তৎক্ষণাৎ আরও দু’জনকে সাথে নিয়ে চলে যান মহরম আলীর বাড়ি। গিয়ে দেখেন তার রিক্সাটি ঘরের সামনে তালা দেয়া। এটি তারই উদ্দোগে এলাকার কয়েকজন অবস্থাসম্পন্ন মানুষ মহরম আলীকে কিনে দিয়েছিল। ভেতরে গিয়ে দেখেন মহরম আলী বিচানায় কাৎরাচ্ছে। খোজ নিয়ে জানলেন পেটে প্রচন্ড ব্যাথা। রমিজ মিয়াকে বল্লেন তাকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কম্প্লেক্সে নিয়ে যেতে। সেখানকার ডাক্তার অত্যন্ত ভালো মানুষ। ইনশআল্লাহ রহমত মিয়ার সুচিকিৎসা হবে।

মহরম আলীর স্ত্রীর একটি ছোট হাসের খামার আছে। গত বছর ইমাম সাহেব মসজিদের যাকাত ফান্ড হতে তাকে এ খামারটি করার জন্য এককালীন ৫ হাজার টাকা সাহায্য দিয়েছিলেন। হাসগুলো এখন ডিম পাড়ে। আপাতত মহরম মিয়া দু’ চারদিন অসুস্থ থাকলেও তার স্ত্রী কোন রকমে সংসার চালিয়ে নিতে পারবেন।

যাকাত ফান্ডও তার সমাজ সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি জানতেন প্রিয় নবী (স.) এবং সাহাবাগণ কীভাবে খরা পীড়িত আরবের জনগণকে দারিদ্রমুক্ত করেছিলেন। তাই তিনি যখন তার এলাকার দরীদ্র মানুষের দু:খ দেখতেন তখন অযথা হা হুতাশ করে কিম্বা না দেখার ভান করে এড়িয়ে না গিয়ে রাসূল (স.) প্রদর্শিত পদ্ধতিতেই সমাজের দূর্দশাগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করার পরিকল্পনা করেন। তিনি তার এলাকার ধনী ব্যক্তিদের বুঝিয়ে মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি যাকাত ফান্ড গঠন করেন। তারা পূর্বেও যাকাত দিতেন। কিন্তু অনেকেই সঠিক হিসেব করে দিতেন না আবার দিলেও বিচ্ছিন্ন ও অপরিকল্পিতভাবে দেয়ায় তাতে সমাজের দরীদ্র জনগোষ্ঠীর অবস্থার পরিবর্তন হতো না। গত বছরই প্রথম তারা এ ফান্ড গঠন করেন। এর রয়েছে একটি পরিচালনা কমিটি। এই কমিটির অনুসন্ধান ও পরিকল্পনার ভিত্তিতে কয়েকজন দরীদ্র ব্যক্তিকে উৎপাদনশীল খাতে সাহায্য প্রদান করা হয়। কমিটির পক্ষ হতে তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও অন্যান্য সহায়তাও প্রদান করা হয় যাতে তারা প্রাপ্ত সাহায্য কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারে। ইতিমধ্যই তাদের অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করেছে।

গ্রামের দরীদ্র ছাত্রদের তালিকা তৈরী করে এ ফান্ড হতে তাদের পড়াশোনার জন্যও সাহায্য প্রদান করা হয়।

তিনি গ্রামের অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কর্জে হাসানাহ বা সুদমুক্ত ঋণ দানের ফজিলত বুঝান। এতে উদ্ভুদ্ধ হয়ে অনেকেই প্রকাশ্যে ও গোপনে বিপদগ্রস্ত মানুষকে কর্জে হাসানাহ দিয়ে সাহয্য করছে। এতে করে বিভিন্ন এনজিও ও মহাজনদের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে বিপদে পড়া মানুষের সংখ্যাও তার এলাকা হতে কমছে।

তার ওয়ার্ডে কিছু অমুসলিমও আছেন। তারাও এসকল কল্যাণমূলক উদ্দোগ হতে সুবিধা লাভ করেন।

গত ইউপি নির্বাচনে তার ওয়ার্ডের মানুষ জোর করে মাওলানা সাহেবকে কমিশনার বানিয়ে দেন। স্বীয় পারিবারিক ও অন্যান্য কাজ করার পর এ কাজটি করা যদিও তার জন্য বেশ কঠিন তবুও তিনি এ দায়িত্বকে জনগনের আমানত মনে করে আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব হিসেবে মেনে নেন। আল্লাহর মেহেরবানীতে এলাকার মানুষের সাহায্য নিয়ে তার ওয়ার্ডকে তিনি একটি কল্যাণপূর্ণ, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত শান্তির ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তোলার কাজ করে যাচ্ছেন। তার জনগণ তাকে নিয়ে সন্তুষ্ট।

এটি আমার আজন্ম লালিত স্বপ্নের সমাজ। কেউ কি নেই এ স্বপ্নটি পূরণের?
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:০৪
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×