somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বালুঘড়ির জুয়া

১৮ ই জুন, ২০১৩ ভোর ৬:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্যালেন্ডারের সাথে বালুঘড়ির সুন্দর একটা মিল আছে।একটু কষ্ট করতে হয় বটে...
কলম দিয়ে জাস্ট দাগ কেটে যাওয়া...ব্যাস।
সময়ের মতো সময় ফুরায়,কালিগুলো হারিয়ে যায় দিন গণনার আড়ম্বরে...
সময় ধরার একটা কারেন্ট জাল তৈরি করতে পারলে ঘটনাটা খুব একটা খারাপ হতো না।কি কারণে যেন প্রকৃতির এই নিয়মকে বাঁধার কোনো উদ্যোগ-ই নেয়া হয়নি...হয়তোবা হয়েছে।
সাথে কালের পিচ্ছিল তলানিতে ইতিহাস হয়ে গিয়েছে সম্পৃক্ত কলাকুশলিরা সবাই...


বাবা কি করো?
(ডাক্তারের সম্বোধনে বাবা উচ্চারণ-টা খুব একটা সুবিধার ঠেকছে না।তবে চেম্বারটা অনেক অদ্ভুত করে সাজানো।ঘরে হাল্কা আলো।তবে পেইন্টিং গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখে একটা কিসের যেনো ঝলকানি লাগে।এই ভদ্রলোগ আবার সখ করে নিজের চেম্বারে বোলতার চাক বানিয়েছেন।সহজে বোঝা যায় না।মনে হয় যেন শৈল্পিক একটা ভাস্কর্য।)
-পরাশুনা শেষ।স্বেচ্ছা বেকার জীবন বলতে পারেন।অবশ্য গাঁজার টাকা ফুরিয়ে গেলে একটু আকটু ফ্রিল্যান্সিং করতে হয়।
নেশা করছো কতদিন হলো?
-ভার্সিটির শুরুর দিক থেকেই।আপনি কি রিপোর্টটা দেখেছেন?
হুম,দেখেছি।এখানে তোমার অভিভাবক কে আছেন?
-অভিভাবক আছে।তবে আপনি যা বলার আমাকেই বলতে পারেন।
কাওকে ভালোবাসো?
ধুরো!ডাক্তার শালা হাত দিলো একদম আসল যায়গায়!ব্যাটার সমস্যা কি?
-প্রশ্নটা ব্যক্তিগত হয়ে গেলো না?রিপোর্টের ব্যাপারে কথা বলাটাই কি বেটার না?
তা বটে।কিন্তু বাবা তুমি আসতে অনেক দেরি করে ফেলেছ।তবে ব্যাপারটা তোমার জানা উচিত।
-ভূমিকা ছাড়া আসল কথাটা বললে খুশি হতাম।
মেডিকেল সায়েন্স এটাকে বলে Tardive Dyskinesia
-ও।
তুমি আর বড়জোর তিন মাস বাঁচতে পারো।
-ওঁ।
তোমার কি কিছুই জানতে ইচ্ছে হচ্ছে না???
-হুম...ঐযে দুঃখী কিন্তু সাহসি চোখের ঐ পোট্রেটটা কার?
(ডাক্তার চেহারায় এমন একটা মুর্তি তৈরি হলো যেন চোখের সামনে সাক্ষাত উজবুক দেখছেন)
তোমার এই রোগ নিয়ে কি কোনোই মাথা ব্যাথা নেই??তুমি কি শুনেছ যে তুমি আর তিন মাস বাঁচবে?
-হুম।সত্যি কথা হলো তিন মাস পর আমি মারা যাচ্ছি।কিছুটা স্বেচ্ছা মৃত্যুর মতো।আমি সবাইকে বলে দেব আর তিন দিন পর আমি মারা যাচ্ছি।ঘটবেও তাই।লোকে বলবে মানুষটা অনেক ভালো ছিলো।স্রষ্ঠা ওনাকে স্বেচ্ছামৃত্যু দিয়েছেন।কপাল মন্দ হলে লালসালু ওয়ালা আমার একটা মাজারও হয়ে যেতে পারে!সেখানে পাশেই খাদেমের একটা দোকান থাকবে।সেখান থেকে সবাই কোরআন মানত করে আমার মাজারে দিবে,আর সেই কোরআন আবার খাদেমের দোকানে বিক্রি হবে।রিসাইক্লিং প্রসেস,ঐদিকে একই সাথে আমার ডেডবডি রিসাইকেল্ড হয়ে জৈব সার হবে।ভালো না?হা হা হা...
(ডাক্তার কথা গুলো এক দমে গিললেন।তার মুখ দিয়ে খুব কষ্টে বের হচ্ছে।ঢক ঢক করে এক গ্লাস পানি একেবারে সাবাড় করে দিলেন)
-তুমি যে মারা যাচ্ছো এতে তোমার কোনো আফসোস নেই???
আফসোস হবে কেন?আমি নিজে নিজের মৃত্যুদিবস যেনে মরতে যাচ্ছি।এই সৌভাগ্য কয়জনে পায়।আর তাছাড়া একদিন তো মরতে হবেই!


ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে দুনিয়াটা কেমন যেন HD লাগছে।চারিদিক পুর ক্রিস্টাল ক্লিয়ার!তবে ডাক্তারকে সাইকোলজিক্যাল ম্যাজে ফেলে দিয়ে পৈশাচিক আনন্দ লাগছে! রিক্সার চাকার প্রতিটি ঘূর্ণন বুঝা যাচ্ছে,ড্রেনের কালো ঐ ব্যাক্টেরিয়ার উত্তাল নড়াচরাও পরিষ্কার!
সবই থাকবে,সময় চলবে সময়ের মতো...আমি কেবল হারিয়ে যাবো সময়ের কাস্টমার কাম অতীত উনমানুষ হয়ে...

টিপটাপ বৃষ্টি।

পার্কে একদমই লোকজন নেই বলা চলে।
ইশ!ছাতাটা ভালো করে ধর না!ভিজে যাচ্ছি তো!
-বৃষ্টির জলে ভেজা তোর অগোছালো চুলগুলো অনেক সুন্দর লাগে যে রে...
তোকে নিয়ে আর পারিনা!আজকেও ক্লিপ খুলে নিয়েছিস???কাব্য কপচানো বাদ দিয়ে বল চাকরি শুরু করবি কবে?বাবা তো আর আমাকে তোর জন্য ঘরে বসিয়ে রাখবে না!
-চাকরির সন্ধি বিচ্ছেদ জানিস?চাকর+ই!তুই কি আমাকে অন্যের চাকর হয়ে থাকতে চাস?তবে তুই তো হবি চাকরানি!
ধ্রুব!তুই কি কখনো সিরিয়াস হবি না???এত্তগুলো চাকরি সবাই অফার করে বসে আছে আর তুই কিনা সারাদিন ঘরে গাঁজা খেয়ে পড়ে থাকিস আর আজব সব কবিতা লিখিস!
-ওরে আমার লজ্জাবতী,ওগুলো আজব কবিতা না রে...ওগুলো জীবনের মাইলস্টোন...প্রত্যেকতা যতি চিহ্নতে ইতিহাসের না জানা ক্ষত।
ঐযে!আবার শুরু হইসে!
-তোর জন্য একটা গিফট আছে।চোখ বন্ধ করলে দিব...
কি গিফট?আমি না বলছি চাকরি পেয়ে টাকা রোজগারের আগে আমাকে কোনো গিফট দিবি না?
-আরে একটু বন্ধ করনা চোখটা!
(অল্পনার চোখটা অল্প অল্প করে বুজে যায়)
অসভ্য!কি করিস এগুলা???আমি না বলছি বিয়ের আগে এসব না করতে???
-আরে!একটা স্মোকি ফ্লেভারের চুমুই তো দিয়েছি!চুমু খেলে নিশ্চই তুই প্রেগন্যান্ট হচ্ছিস না???
ভাল্লাগেনা এসব!তুই চাকরি নিলেই তো বাবা আমাকে তোর হাতে তুলে দেয়!তখন তো আর বাঁধা দেব না!
-তখন তো আর লুকিয়ে প্রেম করতে পারবো না!আর তুই অসভ্যও বলবি না...
নাহ!তোকে আর মানুষ করতে পারলাম না!আচ্ছা,ডাক্তার তোর রিপোর্ট দেখে কি বললো?
(এই প্রথম বুকটার প্রত্যেকটা কোনা জুড়ে ফাঁকা লাগছে।শরীরের প্রত্যেকটা কোষ ম্যাচ ফিক্সিং অমান্য করে সত্য উগড়ে দিতে চাইছে)
-ডাক্তার তো সব দেখে পজিটিভ-ই বললো।
আচ্ছা,তুই ঠিকভাবে চললে কি হয়?ঠিক মতো খাস না,ঘুমাস না,গা দিয়ে গন্ধ আসছে!ঠিক মতো গোসলও করিস না!তুই মানুষ হবি কবে??
-তোর ঝাড়ি খেতে যে খুব ভাল্লাগে রে...আর এতই যখন অভিযোগ তো আমার সাথে থাকিস ক্যান?
কিভাবে ছাড়বো তোকে?এই অসভ্যটাই যে আমার অক্সিজেন সেটা আমি বুঝলেও তুই তো বুঝিস না...
আবার কি করে!ধ্রুব ভালো হবে না কিন্তু!অসভ্য...উমমমমম!


প্রতিদিন হেঁটে যেতে যেতে রাস্তাটা পুরো মুখস্ত হয়ে গিয়েছে।আজ কেমন যেন রাস্তার পাশের ডাস্টবিনের গন্ধটাও খুব অবাক করা সুন্দর লাগছে!
পেপারে আজ পড়লাম A+ পায়নি বলে এক এসএসসি পরিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
ইস!কত সহজেই নিজের প্রাণ-টা দিয়ে দিলো।আগে জানলে সময় বুঝে ঐ ছেলেটার সাথে সময় অদলবদল করে নিতাম।
কি আর ক্ষতি হতো?
নিজের পাওয়া A+ টাই না হয় ওকে দিয়ে দিতাম...
হঠাত করে জীবনটাকে অনেক দামী মনে হচ্ছে।
গতকালও স্বপ্ন দেখেছি অল্পনাকে নিয়ে ঘর বাঁধবো বলে,বেশী আশাও ছিলো না।ছোট্ট একটা ঘর থাকবে,থাকবে না প্রাচুর্য্য।
তবে ঘরভর্তি ভালোবাসা চাই-ই চাই!এই অবুঝ মেয়েটার পাশে থাকতে কয়েক জনম চোখের পলকেই কেটে যাবে,সেখানে তিন মাসের বাজেট বড়ই অপ্রতুল।


ঠিক করেছি খোলা মাঠে বৃষ্টির সময় একা যাবো।বৃষ্টির পানি বেয়ে একদম সৃষ্টিকর্তার কানের ফুটোর কাছে গিয়ে সব শক্তি দিয়ে বলবো..."ও মাস্টার,পুতুল খেলার সময় আমাকে ডামি বানালে ঠিক আছে,খেলা শেষের আগে সেই তনুতে ভালোবাসা এঁটে দিলে কেনো???আমি তো নিছকই একটা আনাড়ি কাঠের টুকরো ছিলাম।আমায় নিয়ে যখন খেললেই এক্সট্রা টাইমটা একটু বাড়িয়ে দেয়া যায় না??"


নাহ,উনি শুনবেন নাহ!
ওনারই বা কি দোষ?
কানে ময়লা জমে তো কান বন্ধ!একের পর এক শো চলে...সময় ফুরায় সময়ের তালে...

আমি দিন গুনি আমার স্বেচ্ছামৃত্যুর ছুতোয়...
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×