somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যা চলে তাই গাড়ি – তারাপদ রায়

০৭ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক ড্রাইভার তার দেশোয়ালি ভাইদের সঙ্গে এক ছুটির দিনে যাদুঘর দেখতে গেছে। যাদুঘরে হাজার রকম দেখার জিনিস, দেখতে দেখতে সে তার বন্ধুদের নিয়ে এসেছে ম্যমির ওখানে। ম্যমিটি যে একটা মৃতদেহ সেটা সে বুঝতে পেরেছে কিন্তু ম্যমিটি একটু দেখেই ম্যমির গায়ে কি একটা কথা পড়ে সে দৌড়ে যাদুঘর থেকে বেরিয়ে যায়। তারপর এক দৌড়ে সোজা নিজের আস্তানায়। দেশোয়ালি ভাইয়েরা পরে তাকে এসে ধরলো, ‘তুমি ঐ রকম দৌড়ে পালিয়ে এলে কেন?’ সে বললো, ‘আরে সর্বনাশ, মরাটার গায়ে আমার গাড়ির নম্বর দেখলে না! ঐ লোকটাকেই তো পরশুদিন আমি চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছি। গাড়ির নম্বর যখন পেয়েছে এবার পুলিস নিশ্চয় আমাকে ধরবে।’ বলে লোকটি বাক্স-বিছানা নিয়ে কোথায় পালালো কে জানে? ড্রাইভারটি যে গাড়ি চালাতো তার নম্বর ছিলো ডব্লিউ বি সি ৫৪০ আর ম্যমিটির গায়ে লেখা ছিল বি সি ৫৪০, মানে খ্রীষ্টপূর্ব ৫৪০ অব্দের। এটাই তার ভয় পাওয়ার কারণ।
(অত্যধিক কৌতূহলী পাঠকের কাছে বিনীত নিবেদন, এ নিয়ে বেশি খোঁজখবর করবেন না, গাড়ির নম্বর ও ম্যমির অব্দ অন্যও হতে পারে, তবে দুটোই এক ছিলো)।
এই মুহূর্তে যে দ্বিতীয় গল্পটি কলমের নিবের নিচে সুড়সুড় করে এসে লাইন দিয়েছে সেটাও গাড়ি চাপা নিয়ে। আমার এক বন্ধু খুব বেআইনি গাড়ি চালাতেন, একবার এক মোটর সাইকেল আরোহী সার্জেন্ট অনেক চেঁচামেচি করে তাড়া করে এসে তাঁকে ধরে ফেলেন, ‘আমি যে এত চেঁচাচ্ছি পিছনে পিছনে, আপনি শুনতে পাননি?’ সার্জেন্টসাহেব প্রথমেই উত্তেজিত হয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন। অস্বীকার করার উপায় ছিলো না, বন্ধুবর ঢোঁক গিলে বললেন, ‘হ্যাঁ, শুনেছি।’ সার্জেন্টসাহেব আরও ক্ষিপ্ত হলেন, ‘তাহলে দাঁড়ালেন না কেন?’ বন্ধুটি অকপটে বললেন, ‘আমি ভেবেছি আমি বুঝি কাউকে চাপা দিয়েছি, সে-ই চেঁচাচ্ছে। চেঁচাতে চেঁচাতে পিছনে ছুটছে।’
তবে গাড়ি বিষয়ে সবচেয়ে মর্মান্তিক গল্পগুলো এই শহরেরই এক সওদাগরি অফিসের বড়োসাহেবের লোকান্তরিতা বেগমসাহেবাকে নিয়ে। বলা বাহুল্য, তিনি লোকান্তরিতা হয়েছেন ঐ গাড়িরই কল্যাণে।
বেগমসাহেবাকে আমি জানতাম একাধিক সূত্রে। কতবার কত জায়গা থেকে, নিমন্ত্রণ-পার্টির শেষে ভদ্রমহিলা আমাকে লিফট দিতে চেয়েছেন, একবারই সুযোগ গ্রহণ করেছিলাম। ড্রাইভার ও স্বামীকে পিছনের সিটে বসিয়ে আমাকে পাশে নিয়ে ঈষৎ মত্ত বেগমসাহেবার প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে কি ভীষণ গতিতে গাড়ি চালনা! বেশি বৃষ্টি বলেই আমি বাধ্য হয়ে লিফট নিয়েছিলাম। কিন্তু যা হয়েছিলো তা অবর্ণনীয়। গাড়ির সামনের উইন্ডস্ক্রিনের ওয়াইপার কাজ করছে না, বৃষ্টির স্রোতে পুরো কাচ ঝাপসা হয়ে গেছে। জগৎ সংসারে কিছুই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। একটা মোড়ে গাড়িটা একটু দাঁড়াতে সন্ত্রস্ত হয়ে আমি বললাম, ‘বেগমসাহেবা, গাড়িটা একটু দাঁড় করান, আমি রুমাল দিয়ে সামনের কাচটা মুছে দিয়ে আসি।’ বেগমসাহেবা আমার হাত ধরে বাধা দিয়ে বললেন, ‘কেন মিছিমিছি বৃষ্টিতে ভিজতে যাচ্ছেন। সামনের কাচ মুছে কি লাভ হবে?’ আমি অবাক হয়ে তাকাতে বেগমসাহেবা বললেন, ‘আমার তো মাইনাস চার চশমা, পার্টিতে আসবো বলে সেটা চোখে দিয়ে আসিনি।’
আরেকবার, সে ঘটনার সঙ্গী অবশ্য আমি নই, অন্য এক বন্ধুর মুখে শুনেছি। একদা প্রভাতকালে আমার সেই বন্ধুটি বেগমসাহেবা এবং তার স্বামীর সঙ্গে গ্রামাঞ্চলের দিকে যাচ্ছিলেন। যথারীতি বেগমসাহেবা গাড়ি চালাচ্ছিলেন। বিদ্যুৎ গতিতে গাড়ি ছুটছে, সকালবেলার মফস্বল এলাকার ফাঁকা রাস্তা। কোনো গাড়িঘোড়া নেই, লোকজনও নেই। গাড়ির উদ্দাম বেগ দেখে রাস্তার আশপাশ থেকে গরু, ছাগল, কুকুর ছুটে পাশের মাঠে নেমে যাচ্ছে। পথের একপ্রান্তে ইলেকট্রিক পোলের উপর উঠে দুজন তার-চোর বিদ্যুতের তার কাটছিলো। বেগমসাহেবা তাদের দেখে ভাবলেন যে বোধ হয় তাঁর গাড়ি চালানোয় ভয় পেয়ে পোলের উপর উঠে বসেছে। তিনি উত্তেজিত হয়ে গাড়ি থামিয়ে যেই জানতে গেছেন, ‘তোমাদের এত ভয় কিসের?’ চোর দুটো একলাফে আঠারো ফুট নিচে পড়ে ধানক্ষেতের মধ্য দিয়ে বাঁই-বাঁই করে দৌড় দিলো। বেগমসাহেবা এবং তাঁর সঙ্গীরা বিস্মিত হয়ে তাদের পলায়ন দেখলেন।
মৃতা মহিলার সম্পর্কে বেশি দুঃখজনক স্মৃতিকথায় না গিয়ে তাঁর একটি বিখ্যাত উক্তির উল্লেখ করছি। তিনি এক সন্ধ্যায় একটা গাড়িকে গুঁতো মেরেই লাফিয়ে রাস্তায় নেমে এসে সেই গাড়ির ড্রাইভারকে চেপে ধরলেন, ‘আমি জানতে চাই, এসব কি হচ্ছে? এই এক সন্ধ্যায় দেড় ঘণ্টার মধ্যে পরপর ছটা গাড়ির সঙ্গে আমার গুঁতো লাগলো, আমি জানতে চাই কলকাতার ড্রাইভাররা সব হয়েছে-টা কি?’

তারাপদ রায়: পশ্চিমবঙ্গের রম্যলেখক। জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৭ নভেম্বর টাঙ্গাইলে। মৃত্যু ২৫ আগস্ট ২০০৭।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×