somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবিতকালে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নোবেল না পাওয়াটা রীতিমত দু:খজনক : কেটারলি

০৭ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত ৪ জুলাই জেনেভায় সার্নের গবেষকেরা ঈশ্বর কণার অস্তিত্বের জানান দিলেন। যে কণার নাম হিগস-বোস, গড পার্টিকেল বা ঈশ্বর কণা। দীর্ঘ যুগ অপেক্ষা পরা ঈশ্বর কণার অস্তিত্বের সংবাদে রোমাঞ্চিত বিশ্ববাসী। ৮৮ বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের তরুণ বাঙালি শিক্ষক-বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু যে তত্ত্ব-কল্পনা আর গবেষণার বীজ বুনেছিলেন; পরবর্তী সময়ে যে গবেষণা ‘বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান’ নামে বিশ্বজয় করেছিল, সার্নে আবিষ্কৃত কণাটি সেই গণনার নীতিই মেনে চলে। এ কারণেই হিগস কণাটি সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নামে বসু কণা বা বোসন বলে পদার্থকিজ্ঞানে বিগত ৪৫ বছর ধরে পরিচিত। ঈশ্বর কনা বা হিবস বোসন কণা আবিস্কারের পর সত্যেন্দ্রনাথ বোসকে নতুন করে মূল্যায়ন শুরু হয়েছে। এজন্য বোসের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে নানা আবিস্কারে মানুষের কৌতুহল বেড়েছে।
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জগদ্বিখ্যাত পেপারের সুত্রে আইনস্টাইন অনুমান করেছিলেন পদার্থের বিচিত্র এক চেহারা। ল্যাবরেটরিতে তার অস্তিত্ব প্রমান করে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানি হোলফাগাং কেটারলি। তার সঙ্গে আনন্দবাজারের এক সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ । সাক্ষাতকারটি সরাসরি তুলে ধরা হল।

আমেরিকায় গবেষণা শুরুর পাঁচ বছরের মধ্যেই আপনি যে কাজ করলেন, তা অর্জন করল নোবেল পুরস্কার। ঠিক এই কাজটি করলেন বলে মনস্থ করলেন কেন?
যে কাজটির কথা আপনি বলছেন, তার পোশাকি নাম বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেশন। সত্যেন্দ্রনাথ বোস ১৯২৪ সালে আলোর কণা বিষয়ে একটা পেপার লেখেন। অনেক আশা ভরে সেটি পাঠান বিখ্যাত বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ফিলোসফিকাল ম্যাগাজিনে। অপেক্ষা করেও কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে বোস সেটি পাঠান জার্মানিতে আইনস্টাইনের কাছে। অনুরোধ করেন পেপারটি পড়ে ভালো লাগলে তিনি যেন কোন জার্নালে ছাপার ব্যবস্থা করেন। পেপারটি আইনস্টাইনের এতটাই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল যে, তিনি সেটি ইংরাজি থেকে জার্মানিতে অনুবাদ করেন এবং পাঠান জাইৎশ্রিফট পত্রিকায়। একে তো মূল্যবান পেপার,তার ওপর আইনস্টাইনের সুপারিশ। জাইৎশ্রিফট তা দ্রুত ছাপে।


বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেশন তো ওই পেপারটির উপজীব্য নয় ?
না তা নয়। বোসের প্রবন্ধটি ছিল ভরহীন আলোর কণা ফোটন এর বিষয়ে। জাইৎশ্রিফট এ এটি পাঠানোর সময় আইনস্টাইন তার মন্তব্যে লেখেন যে, ওই প্রবন্ধের সুত্র ধরে ভরযুক্ত পদার্থ কণার ক্ষেত্রে বোসের তত্ত্বকে প্রয়োগ করে শিগগিরিই তিনি পেপার লিখবেন।
১৯২৪ সালে এবং ১৯২৫ সালে প্রুসিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্স এর জার্নালে দুটি পেপার লেখেন তিনি। সেই লেখাটির উপজীব্য ছিল বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেশন। যৌবনে বোস এবং আইনস্টাইনের পেপারগুলি পড়ে আমি খুব রোমাঞ্চিত হতাম। বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেশন ব্যাপারটা এতটাই অবিশ্বাস্য যে, বাস্তবে ও রকম কিছু ঘটা সম্ভব বলে মনে হয় না। তবে কিনা অবিশ্বাস্য জিনিষের প্রতি কৌতুহল তো আমাদের সকলের।

ব্যাপারটা আইনস্টাইন অনুমান করেছিলেন সেই ১৯২৫ সালে। আর সেটা যে বাস্তবে ঘটতে পারে, সেটা এমআইটি তে আপনি এবং কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ে এরিক কর্ণেল ও কার্ল ওয়াইম্যান প্রমান করলেন ১৯৯৫ সালে। ৭০ বছর লাগল কেন ব্যাপারটার অস্তিত্ব প্রমানে ?
বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেশন ঘটাতে পারলে যা মেলে, তাকে বলে বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট বা বিইসি। ওটা পদার্থের এমন বিচিত্র দশা যে, তা ব্রহ্মান্ডের কোথাও নেই। আলাদ ভাবে তৈরি করতে হয়। বিইসি যে কোনও দিন তৈরি করা যাবে, এটা বোধহয় গবেষকরা বিশ্বাস করেন নি। তা ছাড়া প্রযুক্তিগত বাধাও ছিল।
কি রকম বাধা ?
ভী ষ ণ কম উষ্ণতায় পৌঁছানো। সাধারণ মানুষ শূণ্য ডিগ্রি বলতে বোঝে জিরো ডিগ্রী সেলসিয়েস। বিজ্ঞানের হিসাবে সবচেয়ে কম যে তাপমাত্রা সম্ভব, তা হল জিরো ডিগ্রী কেলভিন। সেলসিয়েসে মাপলে দাঁড়ায় তার জিরো থেকে ২৭৩.১৫ ডিগ্রী নীচে। অর্থাৎ মাইনাস ২৭৩.১৫ ডিগ্রী সেলসিয়েস। সুতরাং ১ কেলভিন মানে মাইনাস ২৭২.১৫ ডিগ্রী সেলসিয়েস। বিইসি দশায় পদার্থকে নিয়ে যেতে হলে তার উষ্ণতা কমিয়ে আনতে হয় জিরো ডিগ্রী কেলভিনের খুব কাছে। কাজটা খুব কঠিন।
কেন ?
কোন কিছুর উষ্ণতা হল তা যে কণা দিয়ে তৈরি তাদের ছোটাছুটির পরিমাণ। বরফে পানির অণু কম ছোটাছুটি করে আর তরল পানিতে ওই অণু খুব বেগে ছোটাছুটি করে। জলীয় বাস্পে অণুগুলো আরও বেশি বেগে ছোটাছুটি করে বলে তার উষ্ণতা বেশি। জিরো ডিগ্রী কেলভিন মানে, যে অবস্থায় পদার্থের কণারা একেবারে নিশ্চল, স্তব্ধ। অণু পরমাণুর গতি পুরোপুরি থামানো যায় না। কিন্তু তাদের গতি ভীষণ কমিয়ে প্রায় স্তব্ধ করে তোলা যায়। যাতে উষ্ণতা পৌঁছাতে পারে জিরো কেলভিনের নাগালে। সেটি বড় শক্ত কাজ। তা সমাধা করার নানা কৌশল গত শতাব্দীর শেষে আবিস্কৃত না হলে বিইসি তৈরি সম্ভব হত না।
আপনি তো বিইসি তৈরি করেছেন সোডিয়াম পরমাণু দিয়ে। কোন উষ্ণতায় নামিয়ে এনেছিলেন ওদের ?



এক কেলভিনের ২০০ কোটি ভাগের এক ভাগ উষ্ণতায়। অর্থাৎ জিরো কেলভিন থেকে মাত্র ওইটুকু ফারাক ছিল সোডিয়াম পরমাণু গুলোর।
কীভাবে ঠান্ডা করলেন পরমাণু গুলোকে ?

খুব অল্প কথায় বললে, দুটো প্রক্রিয়ায়। লেজার রশ্মির আলো ফেলা হয়েছিল ওদের ওপর। হাতে আলো পড়লে হাত গরম হয়, কারণ হাত আলো শুষে নেয়। আবার তেমন কায়দায় লেজার আলো ফেলতে পারলে সেই আলো ফেরত আসে। শুধু তাই নয়, আসার সময় পরমাণু গুলো থেকে কিছুটা তাপ কেড়ে নিয়ে আসে। ফলে তাদের উষ্ণতা কমে যায়। এ ছাড়া আরও একটা পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলাম। যার তুলনা চলতে পারে ধূমায়মান চায়ের পেয়ালার সঙ্গে। ধোঁয়ার সঙ্গে চায়ের কাপ থেকে বেশি উষ্ণ পদার্থ বেরিয়ে যায় বলেই যা ধীরে ধীরে চা ঠান্ডা হয়। সোডিয়াম পরমাণুর গুচ্ছ থেকে আমিও উষ্ণ কণাগুলোকে সরিয়ে ফেলেছিলাম। এভাবেই ক্রমশ ঠান্ডা হয়ে এসেছিল পড়ে থাকা পরমাণু গুলো।

শেষমেশ কী ওই পরমাণু গুলো মিশে তৈরি হয়েছিল একটা মাত্র সুপার এটম ?
না, জনপ্রিয় বিজ্ঞান রচনায় ওরকম সুপার এটমের কথা বলা হলেও বিইসি জিনিষটা ঠিক তা নয়। সব পরমাণু মিশে একটি মহাপরমাণু বনে যায় কীভাবে? ব্যাপারটা শহরের ট্রাফিকের উদাহরণে বোঝানো যেতে পারে। মানুষজন যে যার মতো এদিক সেদিক হাঁটছে। এটা হল পদার্থের সাধারণ অবস্থা। ধরা যাক, হঠাৎ কোনও কারণে পথচারীরা হয়ে পড়লেন দারুন সুশৃঙ্খল। সবাই জোয়ানদের মত হাতে হাত ধরে মার্চপাস্ট করছেন একই দিকে। তা হলে যা দাঁড়াবে, তাই হল বিইসি দশা।

পদার্থের নতুন দশা তৈরি করে কী লাভ ?
প্রযুক্তিগত সুফলের কথা এক্ষুণি বিশদে কিছু বলা যাবে না। তবে সুপারকনডাক্টিভিটি- মানে প্রায় রোধহীন বিদ্যুৎ পরিবহন গবেষণায় নতুন আলো ফেলতে পারে বিইসি। পদার্থ কণার নানা বিচিত্র ধর্ম পরীক্ষায় বিইসি চমৎকার হাতিয়ার হতে পারে। তবে তাত্ত্বিক পদার্থ বিদ্যার দৃষ্টিতেও কিন্তু বিইসি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ভাবুনতো দুজন বিজ্ঞানির চিন্তা থেকে বেরুল এমন একটা অনুমান, যা একেবাবে অবিশ্বাস্য। অথচ বাস্তবে দেখা গেল কোন ভুল নেই সেই কল্পনায়।

বেঁচে থাকলে বিইসি তৈরির সাফল্যের পর আইনস্টাইন এবং সত্যেন্দ্রনাথ কি নোবেল পুরস্কার পেতেন ?
অবশ্যই। তবে আইনস্টাইন আগেও পুরস্কৃত। আর নোবেল প্রাইজের জন্য সত্যেন্দ্রনাথকে বিইসি তৈরি পযর্ন্ত অপেক্ষা করতে হবে কেন। জীবিতকালে তার নোবেল না পাওয়াটা রীতিমত দু:খজনক। ###
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:০৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×