somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চীনের উপকথা- ঘণ্টাধ্বনি

০৬ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অনেক কাল আগে ইয়াং লো নামে এক রাজা চীনে রাজত্ব করতেন। তার সময় চিনের রাজধানি নানকিং থেকে পিকিং শহরে স্থানান্তরিত হয়। সেই সময় পিকিং শহরে অনেক বড় বড় বাড়ি তৈরি হয়েছিল, তার একটি হল ঘণ্টা-ঘর। ঘণ্টা ঘর তৈরি হলে রাজা বললেন, এখানে খুব বড় একটি ঘণ্টা বসাতে হবে।সে ঘণ্টা টি আকারে হবে সবচেয়ে বড়, তার চেয়ে বড় আর কোন ঘণ্টা গোটা দেশে কোথাও থাকবে না। ঘণ্টা টার শব্দ যেন সাড়া শহরে শোনা যায়।

কুয়ান ইয়ু নামে এক কারিগর ছিল, ঘণ্টা তৈরি করতে তার চেয়ে ওস্তাদ সারা দেশে আর কেউ ছিল না। রাজার হুকুম হল তাকেই ডেকে আনবার। কুয়ান ইয়ু তার বাছা বাছা কারিগর এনে তারাতারি ঘণ্টা তৈরির কাজে লেগে গেলো।
প্রথমে সবচেয়ে ভাল যে ধাতু তাই সংগ্রহ করা হল। তারপর তা গলিয়ে ঢালবার জন্য একটা বিরাট ছাঁচ তৈরি করা হল। যেদিন ঘণ্টাটা ছাচে ঢালাই হবে সেদিন রাজা নিজে এলো, খুব ঘটা করে ঢালাই হল। কিন্তু যখন ছাঁচ থেকে ঘণ্টাটা খুলে বের করা হল তখন দেখা গেলো তাতে একটা ফাটল। কুয়ান ইয়ুর এতদিন ধরে এত পরিশ্রম সবই বৃথা গেলো।
রাজা খুব হতাশ হল, তবু কারিগর কে ডেকে আবার নতুন করে ঢালাই করবার হুকুম দিলেন। কুয়ান ইয়ু নিজেও কম দুঃখিত হয় নি, কারন এর আগে তো কত ঘণ্টা সে ঢালাই করেছে, তার একটাও ফাটে নি। এটার আকার অবশ্য সবচেয়ে বড়। তবু ফাটবার কোন কারন ছিল না।

যাই হোক, আবার সে নতুন করে তোরজোড় করে কাজ শুরু করলেন এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আবার একটা মস্ত বড় ঘণ্টা ঢালাই করবার ছাঁচ তৈরি হল।
এবার আরও লোকের ভিড় হল। রাজা এলেন, পাত্র মিত্র এলো। সকলের উপস্থিতিতে আবার নতুন করে ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হল। আবার ছাঁচ থেকে ঘণ্টাটা খুলে বের করা হল। কুয়ান ইয়ু উৎকণ্ঠিত হয়ে দেখতে লাগলো,- না ঘণ্টাটা ফাটে নি কোথাও। কিন্তু এ কি হল? ঘণ্টাটার চারদিকে যেন মৌচাকের মত অসংখ্য ছোট ছোট গর্তে ভর্তি! ঘণ্টার ধারটাই যদি এমন ফাঁপা হয় তবে তো তা বাজালে গম্ভীর আওয়াজ উঠবে না! সারা শহর দূরে থাক, কাছাকাছি জারা থাকবে তারাও ভাল ভাবে শুনতে পাবে না।

রাজা তো ঘণ্টা দেখে রেগে আগুন হলেন। তিনি কুয়ান ইয়ু কে ডেকে গম্ভীর ভাবে বলল- তোমায় আরও একবার ঢালাই করবার সুযোগ দিলাম। কিন্তু এবার যদি ঘণ্টায় কোন দোষ ঘটে তবে তোমার শাস্তি হবে শিরচ্ছেদ।
কুয়ান ইয়ু রাজার আদেশ শুনে ভয় এ কাঁপতে কাঁপতে বাড়ি ফিরে গেলো। তারপর ঘণ্টা ঢালাই করবার যত পুথি পত্র ছিল সব আবার ভাল করে পড়ে দেখল, দেবতাদের কাছে প্রার্থনা করলো, তবু কিন্তু তার মনের ভয় দূর হল না। ফলে সে সর্বক্ষণ বিষণ্ণ হয়ে রইলো।

কুয়ান-ইয়ুর একটা পরমা সুন্দরি মেয়ে ছিল, তার নাম ছিল কো- আই। সে তার বাবার এই অবস্থা দেখে মনে বড় কষ্ট পাচ্ছিল। তার কারন, দেখতেই সে যে পরির মত ছিল তা নয়, তার মন টাও ছিল ভারি নরম। সে যেমন ছিল কর্তব্য পরায়ন, তেমনি সে তার বাবাকে ভীষণ ভালবাসত।
সেই গাঁয়ের পাশের পাহাড়ের গুহায় এক জাদুকর বাস করত। ক-আই একদিন তার কাছে গিয়ে তার বাবার এই বিপদের কথা সব বলল। জাদুকর যদি এই ব্যাপারে কোন সাহায্য করতে পারে সে জন্য কো- আই তাকে বার বার অনুরোধ করতে লাগলো। জাদুকর অনেক পুথি পত্র ঘেঁটে চুপ করে রইলো। কো- আই কিন্তু নাছোড় বান্দা।
শেষ পর্যন্ত জাদুকর বলেই ফেলল,- অতবড় আকারের ঘণ্টা তৈরি করতে হলে তার গলিত ধাতুর মধ্যে কোন কুমারী মেয়ের রক্ত মেশাতে হয়। শাস্ত্রে বলেছে, তবেই সে ঢালাই নিখুত হয়।
জাদুকরের কথা শুনে কোআই চমকে ওঠে। তারপর নানা চিন্তা করতে করতে বাড়ি ফিরে গেলো।
কুয়ান-ইয়ু আবার কয়েক সপ্তাহ ধরে নতুন করে ঘণ্টা ঢালাই করবার তোরজোড় করলো।
সে এবার খুব সতর্ক হয়ে সব ব্যাবস্থা করতে লাগলো- যাতে কোথাও কোন ত্রুটি না থাকে। কোআই তার বাবাকে উতসাহ দিয়ে বলতে লাগ্ল,এবার ঘণ্টা টা নিশ্চই নিখুত হবে।
বারবার তিন বার। এবারও ঢালাইয়ের দিন খুব লকজনের ভিড় হল। রাজা এলেন, পাত্র মিত্র সব এলেন। কিন্তু যখন ধূমায়িত ধাতু ছাঁচে ঢালা হচ্ছে, তখন হটাত সবাই গেলো গেলো বলে চিৎকার করে উঠলো। সকলের চোখের সামনে কোআই সেই টগবগ করা ফুটন্ত ধাতুর মধ্যে লাফিয়ে পড়লো।
তার বাবা তাকে বাঁধা দেয়ার জন্য ছুটে গেলো। সে তাকে ধরেও ফেলেছিল, কিন্তু তার পায়ের ছোট এক পাটি জুতো মাত্র তার হাতে রয়ে গেলো, আর কিছুই সে রাখতে পারলো না। সেই জুতো টি হাতে নিয়ে সে ডুকরে কেদে উঠলো। তার বন্ধুরা তাকে সরিয়ে নিয়ে গেলো।

আশ্চর্যের কথা এই , এবারের ঘণ্টা টা যখন ছাঁচ থেকে বের করা হল, দেখা গেলো তা নিখুঁত হয়েছে, কোথাও একটুকু ফাঁকা নেই, ফাঁপা নেই। ঘণ্টার গাঁয়ের সুক্ষ কারিগরি টুকু চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে।
ঘণ্টাটি দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে গেলো, রাজাও খুশি হলেন।
ঘণ্টা ঘরে টাঙ্গানো হল ঘণ্টা টি। তারপর বাজানো হল। অত বড় ঘণ্টা- গং করে বেজে উঠে বহু দূরে ভেসে যাবে তার স্বর- কিন্তু তার বদলে শব্দটা যেন বাজতে লাগলো হুশিয়ে হুশিয়ে করে। চীনা ভাসায় জুতাকে বলে হুশিয়ে।সে শব্দ শুনে সবাই বলাবলি করতে লাগলো- কোআই তার জুতা চাইছে।
সেইদিন থেকে আজ পর্যন্ত সেই বৃহৎ ঘণ্টাটি বাজলেই শোনা যায় কোআই তার জুতা চাইছে।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৪৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×