somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ুন আহমেদ - এক ম্যাজিশিয়ান এর কথা বলছি

০৬ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট বেলায় টিভি তে অনেক ম্যাজিক শো দেখেছি।ভালো লেগেছে,কিন্তু ভালো লাগা টা খুব বেশি কখনো হয় নি।কিন্তু কিছু দিন পর এক ম্যাজিশিয়ান এর দেখা পেলাম।পলিমার ক্যামিস্ট্রি তে PhD করা ঢাকা বিস্ববিদ্যালয় এর এক শিক্ষক।যে কিনা আমাদের প্রতি দিনের সহজ সরল ভাষা দিয়ে বই এর পাতায় কি সব গল্প লেখেন!তিনি এই সব গল্প কোথায় পেতেন;যা পড়া মাত্র মনে হত,হ্যা এই গল্প টাই তো আমি এতো দিন শুনতে চাচ্ছিলাম।আর এই গল্পকার,"হুমায়ুন আহমেদ"; বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ম্যাজিশিয়ান। যে চার দশক তাঁর ম্যাজিক দিয়ে কোটি কোটি মানুষ কে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন।অবশেষে ম্যাজিশিয়ান এর ম্যাজিক শো শেষ হল... ... ...

বর্তমানে আমরা এমন এক প্রজন্মে বাস করি যখন টেক্সট বুকের যে গল্প টা সিলেবাস এ নেই,সেটা কেউ ভুলেও পড়ে দেখে না।কেউ যদি রেফার করে দেয় যে এই বই টা এই রকম সেই রকম তাও হাইয়েস্ট ১০-১৫ পেজের বেশি পড়তে মন চায় না (অনেক বই প্রেমি আছে,কিন্তু আমি মেজরিটির কথা বলছি) , এমন সময় এক শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মেধাবী বড় ছেলে,যে ছিলেন তাঁর ছাত্র জীবনে এক জন নিখুঁত ভালো ছাত্র সেই মানুষ টা বাংলা সাহিত্যে লেখা শুরু করলো।আর তার পর যা ঘটলো,তা শুধু ইতিহাস... ... সেই যে অলস ছেলে টা,সাহিত্য চর্চা যার কাছে চিরতার রস সেও একা একা বই পড়ে হাঁসা শুরু করলো।আর ওই যে ফাকিবাজ মেয়ে টা,যে বই পড়ার চেয়ে বান্ধবীর সাথে গল্প করতেই বেশি পছন্দ করে সেও খাটে উপুড় হয়ে উপন্যাসে ডুবে গেল,ক্লাশের সব চেয়ে ভালো ছেলেটাও এখন চশমা চোখে মিসির আলি কিংবা শুভ্র পড়া শুরু করলো।বাংলা সাহিত্যে সামনের দিন গুলায় অনেক সুন্দর সুন্দর বই আগামী প্রজন্মের পাঠক পড়বে,কিন্তু একটি কথা এই পাঠক দের হাতে খড়ি কিন্তু ওই সেই ম্যাজিশিয়ান এর হাতেই।
আর শুধুই কি পড়া,বই যে টাকা খরচ করে কিনতে হয়,এই তাড়না টা কিন্তু হুমায়ুন আহমেদ ই আমাদের মাঝে জাগিয়েছেন।


শুনেছিলাম গতবারের বই মেলায় মোট বিক্রির ৮০% শুধু তাঁর একার বই বিক্রি হয়েছে,আজ আমাদের দেশের প্রকাশনী ব্যাবসার যে রমরমা অবস্থা তাতে ওই ম্যাজিশিয়ান এর অবদান কত টুকু তা বলা লাগে না।


প্রথম তাঁর কোন বই টা পড়েছিলাম,বলতে পারবো না,হয়তো সেই ছোট বেলার "বোতল ভুত" ই হবে,কিন্তু যেটাই পড়েছি মুগ্ধ হয়ে গেছি।তা সে সেই নন্দিত নরকে হোক বা গত বই মেলার হিমু'র বই টাই হোক না কেন।হুমায়ুন আহমেদ স্যারের লেখার সব চেয়ে সেরা দিক যেটা ছিল তা হল,তাঁর লেখা গুলা পড়লে মনে হত গল্পের সব চরিত্র গুলা যেন আমাদের আসে-পাশেই আছে।তাদের কষ্ট,তাদের ভালবাসা আমরা ও যেন দেখতে পারতাম।আর তাঁর বই গুলা যেন আমাদের 'হিপ্নোটাইস' করে রাখতো,তাই তো বই শেষ হওয়ার পর ও অনেক ক্ষণ শুধু গল্পের কথা গুলা মাথায় ঘুরতো।যেমন- "হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম" বই টা পড়া শেষ হয়েই মনে হয়েছিল,ইশ কেন হিমু মারিয়া কে রেখে চলে গেল! কিংবা "তেতুল বনে জোছনা"র নায়িকা টা কেন তার ডাক্তার কে রেখে চলে গেল।এই 'কেন' গুলার জবাব হয় তো পাই নি,তবে বই গুলা পড়ে যে আনন্দ পেয়েছি তা আজ শত গুন হয়ে যেন হুমায়ুন আহমেদ এর জন্য দোয়ায় পরিণত হয়।


জীবনে আমরা সবাই ই না কত সুন্দর সুন্দর লেখা পড়েছি বা মুভি দেখেছি, যার প্রত্যেক টা তেই অসাধারণ সব নায়ক-নায়িকা ছিল,কিন্তু বলুন তো এর ক'জনের মত আপনি হতে চেয়েছেন?মনে পড়ছে না?কিন্তু এবার বলুন এমন এক জন মানুষ ও কি আপনি পাবেন যে হিমু'র বই পড়ে একবার ও ভাবে নি,"ইশ আমি যদি হিমু হতাম।" পাবেন না।কেন না হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে খালি পায় হিমু শুধু বই এর পাতায় হাটে নি, হেঁটেছে প্রত্যেক টা পাঠক এর মনেও।আর এই সব সম্ভব করেছে,কেবল মাত্র হুমায়ুন আহমেদ।


কিন্তু সেই ম্যজিশিয়ান আজ আর আমাদের মাঝে নাই।ফেব্রুয়ারি মাসে বুক শেলফে নতুন বই আর জমা হবে না, বড় আপু রা আর ভাইয়া দের কাছে বই মেলায় নিয়ে যাওয়ার বায়না করবে না,হলুদ রঙ এর নতুন হিমু'র বই দিয়ে কেউ তার প্রিয় জন কে চমকে দিতে পারবে না।মিসির আলির নতুন যুক্তি গুলা আর শোনা হল না।মাজেদা খালা,রুপা,শুভ্র,মৃন্ময়ী,কিংবা এক পা খোঁড়া কুকুর,আহা জাদুকর তাঁর জাদু দিয়ে এদের সবাইকে আমাদের কত আপন ই না করেছিল। তারা আজ অনেক দূরে চলে গেছে।আর তাদের গল্প শোনা হবে না।কিন্তু ম্যাজিশিয়ান ও কি হারিয়ে যাবে???? না।তিনি হারাতে পারেন না।বিকাল বেলায় যখন ই কেউ হলুদ পাঞ্জাবি পড়া কোন যুবক কে দেখবে,তাঁর কথা মনে পড়বে।হাত ভরা চুড়ি পড়ে যখন কোন মেয়ে "রুপা"র মত দাড়িয়ে থাকবে তাঁর কথা মনে পড়বে।রাতের বেলায় যখন কয়েক বন্ধু হাটতে হাটতে হঠাৎ বলবে,"আয় জোছনা খাই" তখন তাঁর কথা মনে পড়বে।কারণ এই এক জন হুমায়ুন আহমেদ ই আমাদের শিখিয়েছে,জ্যোৎস্না দেখা,সমুদ্র বিলাস করা,ভালবাসা,আরও কত কি!তাঁর সম্পর্কে লিখতে গেলে শেষ করা যাবে না,তাই শেষে এসে তাঁর "তিথির নীল তোয়ালে" বই এর একটা লাইন বলি- "উইড়া যায় রে বনের পঙ্খি পইরা থাকে মায়া"----হুমায়ুন আহমেদ তাঁর মায়া রেখে গেছেন। তাঁর তৈরি হাজারো গল্প হাজারো চরিত্র।তাদের মাঝেই তিনি বেঁচে থাকবেন।তিনি মরে অমর হয়েছেন। ম্যাজিশিয়ান চলে গেলেও তাঁর ম্যাজিক থেকে যাবে অনন্ত কাল... ... ... ...
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×