somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

The Blind Side - একটি অতি সাধারণ মুভির পেছনে একজন অসাধারণ মায়ের গল্প

০৫ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মা এই শব্দটার চেয়ে বেশি কিছু কি আর বলার আছে? যেহেতু রিভিউ লিখতে বসেছি সেহেতু এক লাইনে শেষ না করে আমার দেখা একটা চমৎকার মুভি দেখার অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। আর মুভিটা বেস প্লট কিন্তু মাকে নিয়ে না হলেও অসাধারণ একটি চরিত্র আছে মা নিয়ে। ছবিটির নাম “The Blind Side”। আমেরিকার জনপ্রিয় ফুটবল খেলোয়ার মাইকেল ওহারকে জীবন নিয়ে গল্প। যেইসব গল্প দেখে আমরা ভাবি এইগুলো শুধু সিনেমায় সম্ভব, সেই গল্পগুলোকেও হার মানায় মাইকেল ওহারের জীবনের গল্প।


শেয়াল কুকুরের মত অনেকগুলো ভাই বোনের মধ্যে জন্ম নেওয়া মাইকেল জানতো না বাবা কাকে বলে ? মায়ের আদর কি জিনিস? জীবনের কষাঘাতে জর্জরিত হওয়া মাইকেলের তারপরেও ছিলো খেলাধুলার মত অসম্ভব টান। ভালো বাস্কেটবল আর ফুটবল (যারা জানেন না তাদের জন্যে বলছি আমেরিকান ফুটবল মানে রাগবি, আমাদের ফুটবলকে তারা সকার বলে) খেলতে জানতো বলে তাকে স্কুলে ভর্তির সুযোগ দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন ফুটবল কোচ কটন। অবশেষে তিনি সফলও হন। নোংরা জামা কাপড় নিয়ে ক্লাসে ঢুকেই সবার উপেক্ষার স্বীকার হলেন মাইকেল।যেখানে নিজের মায়ের আজীবন উপেক্ষার স্বীকার মাইকেল সেখানে সে সবার উপেক্ষা গায়ে মাখবে কেনো? ক্লাস শেষে শুধু ক্লাস টিচার কে জিজ্ঞেস করলেন এইবার কি আমি যেতে পারি?

এক শীতের রাতে গুড়ি গড়ি বৃষ্টিতে স্কুল জিমের দিকে যাচ্চিলেন মাইকেল। হঠাৎ-ই মিসেস এনি টাহির চোখে পড়লো মাইকেলের দিকে। তিনি গাড়ি থেকে নেমে জিজ্ঞেস করলেন মাইকেলকে যে সে কোথায় যাচ্ছে ? জবাবে মাইকেল জানালো স্কুল জিমে। তিনি ঘুরে চলে আসার সময় তার মনে পড়লো এত রাতে তো স্কুল জিম খোলা থাকার কথা না। তিনি আবার ঘুরে তাকে এই কথায় বললেন আর জানতে চাইলেন মাইকেল কেনো স্কুল জিমে যেতে চায়? জবাবে মাইকেল বললো কারণ সেখানে ঠান্ডার হাত থেকে কিছুটা হলেও বাচা যাবে। মিসেস এনি টাহির মাতৃত্ব কেনো জানি জেগে উঠলো আর মাইকেলের সারা জীবন পাল্টে গেলো এই এক মুহুর্তেই। সেই রাতে মাইকেল কোন কিছু চুরি কি করে পালাবে কিনা এই আশংকা কাজ করছিলো মিসেস এনি টাহিরের। সকালে উঠে দেখলেন মাইকেলে চলে যাচ্ছে। তিনি তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন যে সে আজকে রাতে কোথায় যাবে ? মাইকেল জানালো স্কুল জিমের চেয়ে তার কাছে থাকার জন্যে এরচেয়ে ভালো কোন জ়ায়গা নায়। মিসেস এনি টাহি তাকে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন। এরপরের গল্প পুরাই সিনেমার মত। মাইকেলকে দত্তক নিলেন টাহি পরিবার। তাকে ট্রাক কিনে দিলেন (আমেরিকায় পিকআপকে ট্রাক বলে) তাও আবার তার পছন্দমত। মিসেস এনি টাহির ছোট ছেলে এস যে কে নিয়ে ট্রাকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে এক্সিডেন্ট হলো গাড়িটির।নিজে মারাত্মক আহত হওয়ার পরেও ছোট ভাই এস যেকে বাচালো মাইকেল। মিসেস এনি টাহি বুঝতে পারলো তার সহজাত প্রতিরক্ষা করার ক্ষমতাটি সম্পর্কে যেটা পরবর্তীকালে স্কুল থেকে মিসেসরাও তাকে জানিয়েছিলো। ফুটবল ট্রেইনিং এর সময় এই জিনিসটিকেই কাজে লাগালেন মিসেস এনি টাহি।এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মাইকেলের।

লেখাপড়ায় অমনোযোগী ছিলো বলে তার জন্যে আলাদা টিচারেরও ব্যবস্থা করলেন মিসেস এনি টাহি যাতে তার পছন্দমত স্কুলে মাইকেল বৃত্তি পেয়ে ভর্তি হতে পারে। কিন্তু মাইকেল ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাস ও করলো। এদিকে মাইকেলের পছন্দ অন্য স্কুল যেটা আবার মিসেস এনি টাহির পছন্দ না। তিনি কৌশলে তাকে রাজি করালেন তার পছন্দের স্কুলে ভর্তি করানোর যেটা একসময় গিয়ে মাইকেল জানতে পারলো আর ঘর থেকে বের হয়ে গিলেন। ফিরে গেলেন তার পুরানো জায়গায়। সেইখানে গিয়ে তার সঙ্গী সাথীদের মুখে তার মিসেস এনি টাহির মেয়ে মানে তার ছোট বোন সম্পর্কে খারাপ কথা শোনায়া মারধর করে চলে আসলেন।মিসেস এনি টাহিকে ফোন করে আসতে বললেন মাইকেল আর মিসেস এনি টাহি নিজের ভুল বুঝতে পারলেন।নিজের ছেলের পছন্দকেই নিজের পছন্দ করে নিলেন আর মাইকেল ?......

সব যদি বলেই ফেলি মুভিটা দেখারতো আর কোন দরকার-ই তাহলে মুভি আর কি দেখলেন? এই লেখা না পড়ে মুভিটা ডাউনলোড করে এখনি দেখতে বসে যান আর নিজের মায়ের কাছে গিয়ে একবার বলুন, “Love you Ma”।

আসলে কি কোন হলিউডের মুভিতে মাতৃত্ব জিনিসটা এইভাবে ফুটিয়ে তুলতে আমি এর আগে দেখিনি, তাই হয়তো এতো বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। সে যাই হোক Sandra Bullock কিন্তু এই মুভিতে অসাধারণ অভিনয়ের জন্যে পেয়েছিলেন অস্কার। যেইখানে নিজের মা ড্রাগে আসক্ত হয়ে ভুলে গিয়েছিলেন নিজের ছেলের কথা সেইখানে নিজের ভালোবাসার ছায়ায় তাকে দিয়েছেন স্বপ্ন দেখার সাহস আর পৃথিবীকে জয় করার বিশ্বাস সেই মা মিসেস এনি টাহিকে শত সহস্র সালাম। মাতৃত্বের জয় হোক। সবাই ভালো থাকুন।

উৎসর্গঃ মরহুম টিপু ভাই আর পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি।
বিঃদ্রঃ এই লেখাটি সর্বপ্রথম ফেসবুকে আমাদের মুভি গ্রুপে প্রকাশিত হয়েছিলো।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১২ সকাল ৭:৩০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×