somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসংলগ্ন প্রলাপ-১

০৫ ই আগস্ট, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব ছোট বেলায় বাবার হাত ধরে যখন ঢাকা শহরে আসতাম তখন ঢাকা ছিল আমাদের মত মফস্বলে বেড়ে উঠা বালকদের কাছে স্বপ্নের নগরী। নান্দনিক ঢাকা অবাক বালকের চোখে স্বপ্ন বীজ বোপন করে দিত স্বপ্নের শহরে বসতি গড়ার। ছিমছাম ঢাকা শহরে ছিল শান্তির আবেশ। সবুজ তরু খেরা সরোওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, বোটানিকেল গার্ডেন, চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক কার না দৃষ্টি আকর্ষণ করতো? পঞ্চাশের দশক অথবা তারও আগে থেকে ঢাকাকে আদর করে বলা হত “মসজিদের শহর”। বায়ান্ন হাজার তেপ্পান্ন গলির এই অলিক শহরের অলিতে গলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অজস্র মসজিদের কারনেই মূলত এই নামকরন। মাত্র ৫০ বা তারও একটু বেশি সময়ের ব্যবধানে সেই আদুরে “মসজিদের শহর” রুপান্তরিত হয়েছে “যানজটের শহরে, দূষণের শহরে”। এখন আর অবাক বালক স্বপ্নবীজ বোপন করে না বসতি গড়ার, এখন সে প্রহর গুনে মুক্তির।
অসহনীয় যানজট ও সীমাহীন পরিবেশ দূষণের পদতলে পিষ্ঠ হয়ে আমাদের নাগরিক জীবন আজ হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ ও স্থবির। অসহনীয় এই যানজট ও পরিবেশ দূষণ আমাদের নাগরিক জীবন, সামাজিক জীবন, পারিবারিক জীবন সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিনিয়ত নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় রাষ্ট্রযন্ত্রের শাসক গোষ্ঠী কি এক অজানা কারনে এই সমস্যা গুলো হতে উত্তরণের তেমন কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করছে না। যা করছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
শুধুমাত্র যানজটের কারনে প্রতিদিন যতটুকু কর্মঘন্টা আমাদের রাষ্ট্রীয় ও বাক্তিজীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কি আমাদের জানা আছে? মনে হয় না! আমাদের এই সকল বিষয় নিয়ে চিন্তা করার সময় কোথায়? আমরাতো দলাদলি, দলীয়করন, মেরুকরণ, আত্বীয়করন, ক্ষমতা হরন, চরিত্র হরন ইত্যাদি নানা গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে বাস্ত। “কর্মঘন্টা”!! সেটাতো পাগলের অসংলগ্ন প্রলাপ।
একটা সহজ হিসেব দেয়া যাক; আমরা জানি ঢাকা শহরের বর্তমান জনসংখা প্রায় ২ কোটি, এখন এদের মধ্যে ২০% মানুষও যদি সরাসরি কোন না কোন কাজের সহিত জড়িত থাকে তাহলে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষকে প্রতিদিন নিজ নিজ কাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হতে হয়। ধরে নিলাম এদের মধ্য থেকে ৫০% অর্থাৎ ২০ লক্ষ মানুষের বাসস্থান ও কর্মস্থল কাছাকাছি হওয়ার কারনে তারা গনপরিবহন ব্যবস্থা গ্রহন করে না। বাকি ২০ লক্ষ মানুষকে প্রতিদিন কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য গনপরিবহন ব্যবস্থা গ্রহন করতে হয়। এখন যানজটের কারনে যদি প্রতিদিন তাদের মোট কর্মঘন্টার ১ ঘন্টা করেও নষ্ট হয়, তাহলে প্রতিদিন ২০ লক্ষ ঘন্টা কর্মঘন্টা নষ্ট হচ্ছে। ২০ লক্ষ কর্মঘন্টা = ২২২২২২ কর্মদিবস (৯ ঘন্টা কর্মঘন্টা = ১ কর্মদিবস)। ধরে নিলাম আমাদের প্রতি দিনের গড় আয় ৩০০ টাকা, তাহলে উপরোক্ত হিসেব মোতাবেল শুধু মাত্র যানজটের জন্য প্রতিদিন আমরা প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা নস্ট করছি।
কি কারনে বা কেন এই যানজটের সৃষ্টি, কে বা কারা এই নাগরিক দুর্ভোগের অন্তরালের নায়ক তা কম-বেশি আমাদের সকলের জানা। প্রায় প্রতিনিয়ত এই বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু নেয়া হচ্ছে না কোন কার্যকর বাস্তব পদক্ষেপ। মানধাত্তার আমলের ধান-ধারণার আলোকে নেয়া অকার্যকর পদক্ষেপ গুলো প্রতিনিয়ত কঠিন বাস্তবতার কাছে মার খেয়ে যাচ্ছে। নগর পরিকল্পনাবিদরাও ঐতিহ্যগত ভাবে দুই-তিন ধারায় বিভক্ত। তারা শুধু টকশো বা গোলটেবিল আলোচনায় কথার তুবড়ি ছোটাতে পারেন, পারেন না কোন সর্বজন গ্রহণযোগ্য বাস্তব পরিকল্পনা দিতে।
আলোচনার স্বার্থে যানজট বিষয়ক কিছু পুরোনো ও সর্বজন জ্ঞাত বিষয় নিচে তুলে ধরা হলো; বিরক্তির উদ্রেক হলে প্রথমেই ক্ষমা প্রাথনা করে নিচ্ছি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন ঢাকা শহরকে যানজট মুক্ত করতে হলে ফুট্পাতকে অবৈধ দখলদার মুক্ত করতে হবে, করতে হবে যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং ব্যবস্থা নিষিদ্ধ। কিন্তু কে করবে এই কাজ? যাদের ব্যবস্থা গ্রহনের ভুমিকায় থাকার কথা, তারা এই সকল বিষয়ে একেবারেই নিশ্চুপ। কারন এগুলো বন্ধ করলে তাদের আয়ের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে, সুতরাং নিরবতাই শ্রেয়।
সমন্নয়হীন রাস্তা খোড়াখুড়ির কারনে একদিকে রাস্তার উপর চালান হচ্ছে অকথ্য নির্যাতন অন্যদিকে খোড়াখুড়ির নাম করে প্রতি বছর লোপাট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এই বছর ওয়াসা কাটছে তো আগামী বছর কাটবে ডেসা, তার পরের বছর বিটিআরসি। যতবার কাটা হবে ততবার ঠিক করা হবে আর হবে টাকা লুটের মহৌত্সব। ফলশ্রুতিতে আমরা সাধারন জনগন গ্রহন করছি ভোগান্তি “যানজট”।
নতুন বিষফোঁড়া হিসেবে দেখা দিয়েছে রিক্সা চলাচলের জন্য আলাদা লেন সৃষ্টির লক্ষে পোর্টেবল ডিভাইডার স্থাপন। এটিও সরকারী কোষাগারের টাকা লোপাটের নতুন উপায় বৈ আর কিছুই না। উল্টো ডিভাইডার স্থাপন করে সংকীর্ণ রাস্তা গুলোকে আরো সংকীর্ণ করে ফেলা হচ্ছে। মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছে করে, কার বা কাদের উর্বর মস্তিস্ক প্রসূত প্রসব বেদনার ফল এই পোর্টেবল ডিভাইডার স্থাপন?
কিছু কিছু রাস্তায় হাস্যকর ভাবে রিক্সা চলাচলের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে লাভবান হয়েছে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা, ঝামেলায় পড়েছে সাধারন যাত্রীরা। কারন আগে যদি যানজট শুরু হত মোড়ে, এখন শুরু হচ্ছে মোড়ের ৩০০ মিটার আগে। কারন মোড় হতে ৩০০ মিটার আগে সব রিক্সা এসে জট বাধিয়ে রাখে।
‘বিআরটিএ’ নামক আমাদের একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান আছে, যারা মূলতঃ রক্তচোষার কাজ করতে পারঙ্গম। কিন্তু মূল কাজের ক্ষেত্রে লবডংগা। গাড়ীর ফিটনেস বলে যে শব্দটি আছে, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় তারা এর সাথে একেবারেই পরিচিত নয়। ঢাকার রাস্তায় আজও এমন কিছু যানবাহন চলাচল করে, যেগুলোর রাস্তায় চলাচলের জন্য ফিটনেসতো দুরের কথা কোন জাদুঘর কর্তৃপক্ষও সেগুলোকে প্রদর্শনীর জন্য জাদুঘরে রাখতো কিনা যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে। কিন্তু আমাদের মহান বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ এই সকল পোরশে (!) গাড়ীকে রাস্তায় চলাচলের উপযোগী মনে করছে, তাই সার্টিফিকেটও প্রদান করেছে। উদাহরন স্বরূপ মিরপুর বিআরটিএ সদর দপ্তরের সামনে দিয়ে চলাচল করা “মিরপুর ১৪ থেকে গাবতলী” রুটের লেগুনা গাড়িগুলোর কথা উল্লেখ করা যায়। যারা এই রুটের নিয়মিত যাত্রী তারা নিশ্চয়ই আমার সাথে একমত পোষণ করবেন যে, এই সকল লক্কর ঝক্কর গাড়ীগুলো শুধু যাত্রী ভোগান্তিই বাড়ায় না, যত্রতত্র নস্ট হয়ে যানজটও বাড়িয়ে দেয়। আর এইগুলো থেকে নিঃশেষিত ধোঁয়া পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারন (দূষণ নিয়ে আগামী পর্বে আলোচনা করা হবে)। এভাবে ঢাকায় প্রায় প্রতিটি রুটে বিআরটিএ এর ফিটনেস সার্টিফিকেটধারী গাড়ী যাতায়াত করে। আর বিআরটিএ? নাকে তেল দিয়ে ঘুমায় ।
ঢাকার প্রধান প্রধান সড়ক গুলোতে রিক্সা চলাচল বন্ধ করা সময়ের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে । কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? পাছে জনপ্রিয়তা কমে যায়।
এই লেখাটি লিখছি আর ভাবছি কার উদ্দেশ্যে এই পুরাতন কাসুন্দী গুলো আউরাচ্ছি । কেনইবা এই অসংলগ্ন প্রলাপে মাত্চি । আমাদের মত আমজনতার দাবী-দাওয়া কর্ণপাত করার সময় কি কারো আছে? সবাইতো নিজ নিজ আখের গোছাতে বাস্ত। তবুও লিখছি কারন প্রতিদিন অফিসে যেতে ২ ঘন্টা, ফিরে আসতে ২ ঘন্টা, মোট ৪ ঘন্টা সময় রাস্তায় বায় করে যখন বাসায় ফিরে আসি তখন ছোটবেলার স্বপ্নের ঢাকা শহর ছেড়ে স্বৃতিময় মফস্বল শহরে ফিরে যেতে মন কাঁদে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×