somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিনেমা প্রেম (চতুর্থ পর্ব) : দেশের সিনেমা

০৫ ই আগস্ট, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি। আমার জন্ম ঢাকায়। অবশ্য সে কারণে ভাগ্যবান নই, ভাগ্যবান কারণ জন্ম থেকেই ঘরেই টেলিভিশনের উপস্থিতি ছিল। তাই একেবারে ছোট বেলা থেকেই টেলিভিশন দেখে অভ্যস্ত আমি। ফলে সিনেমা বিষয়টা অনেক আগে থেকেই আমাকে টানে।

ঠিক কবে থেকে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখি মনে নাই। তবে মার কাছে যাতোটুকু শুনেছি, আমার মা, বড় ফুপু এবং আশপাশের আরো কয়েকজন মিলে সিনেমা দেখতে যেতেন বলাকায়। এবং তা প্রতি সপ্তাহেই। প্রথম প্রথম আমি জমা থাকতাম খালাদের কাছে। যেহেতু নানা বাড়ি ছিল পায়ে হাটা দুরত্বে। কিন্তু অল্প কিছুদিন পরেই আমাকে এবং আমার ফুপাতো ভাইকে (মাই পার্টনার ইন ক্রাইম) নিয়েই হলে যাওয়া শুরু হয়। কি দেখেছি.. একেবারেই মনে নেই কারণ মনে রাখার মত বয়স আমাদের ছিল না।

মনে রাখার মত বয়স হলো আরেকটু পরে। তখন আমরা আলাদা থাকি। বাবার একটা অভ্যাস ছিল সবাইকে নিয়ে সপ্তাহে একদিন খাওয়া দাওয়া করতে পছন্দ করতেন। ঠিক একই বাজার করে এক ব্যাগ দিয়ে আসতেন বড় ফুপুর বাসায়। আরেকটি আসতো আমাদের বাসায়। দুপুর হলেই আমার খালা-মামাদের এক বিশাল রাবণের গুষ্টি এসে হাজির হতো আমাদের বাসায়। তাদের নিয়ে পাঝে মধ্যেই সিনেমা দেখতে যাওয়া হতো। তখন ঢাকায় বেশ ভালো ভালো মুভি আসতো। মনে আছে বাবার সঙ্গে সে সময়েই হেলন অব ট্রয় দেখেছি মধুমিতায়। সিনবাদের দুটি পর্ব - সেভেন্থ ভয়েজ অব সিনবাদ এবং আই অব দ্য টাইগার এসেছিল অভিসারে। বেনহার দেখেছিলাম মধুমিতায়। আর বাংলা সিনেমা বেশিরভাগ সময়েই দেখা হতো বলাকায়। অবশ্য বাবার সঙ্গে একা একাও সিনেমা দেখা হতো। শুধু আমি আর বাবা। সিনেমার প্রতি তারও একটা আকর্শন ছিল। আমার দুঃথ যে, আমার ঘরে এখন কয়েক হাজার ডিভিডি, শুধু বাবা নেই।

মার সঙ্গে বাংলা সিনেমা দেখা শুরু অল্প কয়েকদিনের মধ্যে বুঝে ফেললাম কার সিনেমা "ভালো' আর কার টা "খারাপ"। তখন ভালো মানে হলো, ছবিতে অ্যাকশন থাকতে হবে। আর সে হিসেবে আমার প্রিয় নায়ক হয়ে গেলেন সোহেল রানা ও ওয়াসিম। কারণ তারাই তথনকার অ্যাকশন স্টার। সে সময়ে রাজ্জাকের সিনেমাও দেখেছি। পছন্দের নায়িকা ববিতা। তাই ববিতা থাকলেই সে সিনেমা দেখা নিশ্চিত ছিল। তবে ওই যে বললাম, সিনেমা দেখাই হতো মার কল্যানে তাই সব ধরনের সিনেমাই দেখা হয়েছে।

বাসায় দৈনিক প্রত্রিকা রাখা হতো তিনটি। দৈনিক বাংলা, ইত্তেফাক এবং অবজাভার। এরমধ্যে ইত্তেফাক আমার প্রিয় ছিল শুধু মাত্র সিনেমার বিজ্ঞাপনের জন্য। ওই বিজ্ঞাপন দেখেই আমি ঠিক করতাম কোন সিনেমা দেখবো আর কোনটা বাদ দেব। অ্যাকশনের পাশাপাশি রাজা-রানী মাত্র ফোক ফ্যান্টাসিও তখন প্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ঈদের সময়ে তো কোন হলে কোন সিনেমাটা চলছে সে হিসাবও রাখা হতো। এমনও হয়েছে, সারাদিন তিন হলে তিনটি সিনেমা দেখে বাসায় ফিরেছি আমরা।

এক সময় আরো বড় হলাম। বাসা আবার আজিমপুরে। আবারো ফুপাতো ভাইয়ের সঙ্গে একেজোট হলাম। ফুপাতো ভাইয়ো তখন বলাকায় একের পর সিনেমা দেখে চলেছে। তারও প্রিয় ফোক ফ্যান্টাসি। ফলে আমাদের আলোচনার বিষয়টিও এক হয়ে গেল। সম্ভবত ক্লস সিক্সে পড়ার সময়ে আমরা দুভাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম একাই সিনেমা দেখব। আর কাউকে বিরক্ত করবো না। সম্ভবত সেটা ছিল ‌‌'সুপার গার্ল' নামের একটি ইংরেজি সিনেমা। সেই থেকে শুরু আমাদের একা সিনেমা দেখা। একদিকে আমার মা যেমন একটু খুশি যে আমার জন্য তাকে আর বিরক্তিকর সময় নষ্ট করতে হবে না, আরেকদিকে ফুপাও খুশি ছেলের জন্য অখাদ্য ভক্ষণ করতে হবে না। আর আমরা দুই ভাই খুশি, নিয়ে চলো নিয়ে চলে আর কারো সামনে "মাথা নত" করতে হবে না। মহানন্দে শুরু হলো আমাদের দুই ভাইয়ের বলাকা অভিযান।

এর কিছুদিন পরেই ফুপুর বাসায় ভিসিপি চলে আসে। আস্তে আস্তে ফুপাতো ভাইয়ের হলে যাওয়া কমতে থাকে। কিন্তু আমার নেশা তো কাটে না। তাই এক শুভক্ষণে শুরু করলাম একই যাওয়া। যেহেতু তখনও কোনো হাত খরচ পেতাম না। তাই টিকেটের অর্থ যোগান করতে কিছুটা সমস্যা হতো। টাকা মিলতো না বলে অনেক সিনেমাই ফসকে গেছে। কিন্তু আমার দেখা থামেনি, একটা মিস তো হয়েছে কি, পরের সপ্তাহে তো আরেকটা আছেই.. ততদিনে আরো বড় আমি। বলাকার গণ্ডি পেরিয়ে.. শ্যামলী, অভিসার, জোনাকি, গুলিস্তান, মধুমিতা আসন চিনতে শুরু করে দিয়েছি।
পরিচালকদের ভুল ভালও বুঝতে পারি। আমার মনে আছে এজে মিনটু পরিচালিত লালু মাস্তান নামে একট সিনেমা সেরা সিনেমা, সেরা পরিচালকসহ বেশকয়েকটি পুরস্কার পেয়েছিল। অল্প কিছুটা দেখার পরেই বুঝলাম সেটি অমিতাভের গ্রেফতারের কপি। ভিসিপির কল্যাণে নকল সিনেমা ধরতে পারতার সহজেই। কিন্তু সিনেমা দেখা বাদ দেইনি।

আমার নেশা যে তখন তুঙ্গে... ততদিনে ভবিষ্যত লক্ষ্যও যে ঠিক করে ফেলেছি, আজ হোক কাল হোক কিংবা দশ বছর পর.. সিনেমা আমি বানাবোই...


প্রথম পর্ব Click This Link
দ্বিতীয় পর্ব Click This Link
তৃতীয় পর্ব Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩১
১০টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×