somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নকল পোষাক পড়িয়ে আমাকে...

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১২ রাত ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শনিবার। হাটের দিন। স্থানীয় হাটে লোকজনের ভিড়। বিশেষ করে আম-কাঁঠালের বাজারের ভিড় চোখে পড়ার মত। মানুষের ভিড় কাটিয়ে একটু সামনে যেতেই খোলামত একটি যায়গায় দেখা গেল গোল হায়ে অনেক মানুষ দাঁড়ানো। সেখান থেকে ড্রামসেট, ঢোল, হারমোনিয়ম, করতাল ইত্যাদি যন্ত্রের উচ্চ বাদ্য শোনা যাচ্ছে। একটু কৌতুহল জাগলো। এগিয়ে গেলাম সামনে।
মানুষের ভিড়ের মধ্যে যাঁরা বিভিন্ন ধরণের বাদ্য বাজাচ্ছিলেন, তাঁরা প্রায় সবাইই আমার চেনা।
দেখলাম, দিলীপ কুমার। দিলীপ কুমার মালী একটি সাইড-ড্রাম বাজাচ্ছেন। দিলীপরা ওইখানে শখের বসে গান-বাজনা করতে আসেননি। তাঁরা এসেছেন একজন ক্যানভাসারের (রাস্তার পাশের ওষুধ বিক্রেতা) সঙ্গে ভাড়ায় (চুক্তিতে)। তাঁদের কাজ গান-বাজনা করে জলসা জমিয়ে দেওয়া। গান শুনতে লোকজন জমে গেলে ক্যানভাসার সাহেব মাইক্রোফোন হাতে নিবেন। এবং ওষুধ বিক্রির কাজ শুরু করবেন।
আমার মন যেন কেমন করে উঠলো। কেননা, দিলীপতো ছিল এক সময়ের ডাকসাইটে নায়ক। একজন নায়ক এভাবে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বা বসে ড্রাম বাজাবেন? তাও আবার জীবীকার তাগিদে? এ কী করে হয়!
বেশ কয়েক বছর আগের কথা। পাশের এক শহরে বেড়াতে গিয়েছিলাম। বিকেল বেলা একটি টি-স্টলে বসে আড্ডা দিচ্ছি। এরই মধ্যে শুনলাম মাইকিং হচ্ছে--
হৈ-হৈ কাণ্ড, রৈ-রৈ ব্যাপার,
যাত্রা, যাত্রা, যাত্রা..............
সুদূর ... থেকে আগত... যাত্রা পালায় আজ মঞ্চস্থ হবে কমলার বনবাস। এতে কমলার ভুমিকায় থাকছেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী মঞ্জু রানী। আর নায়ক হিসেবে রয়েছেন, আপনাদের বহুল পরিচিত দিলীপ কুমার!
যে লোকটি মাইকিং করছিলেন, উনি কাছাকাছি আসতে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম--- আচ্ছা, দিলীপ কুমারের বাড়ি কোথায়?
উনি বললেন, তা তো জানি না। তবে চ্যাতা (খুবই ভালো) অভিনয় করেন। ওনাকে অনেক টাকা দিতে হয়।
জানতে চাইলাম আপনি কি প্যান্ডেলের দিকে যাবেন?
উনি বললেন, হ্যাঁ। বললাম নায়ক দিলীপ কুমারকে বলবেন-- আপনার জন্য টি-স্টলে একজন লোক অপেক্ষা করছেন।
অল্প সময়ের মধ্যেই দিলীপ বাবু আসলেন। ‘দাদা কেমন আছেন’ বলে দৌড়ে এসে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন দিলীপ। অনেক কথা হলো। রাতে দিলীপ আমার সঙ্গে আমার আত্মীয়ের বাড়িতে খেলেন। এর পর অনেকটা জোর করেই আমাকে নিয়ে গেলেন যাত্রাপালা দেখতে।
দেখলাম, দিলীপ সত্যিই খুব ভালো অভিনয় করেন। ওই রাতে তাঁর অভিনয় এবং গানে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই তাঁকে পুরস্কৃত করেছেন।

দিলীপ এক সময় নিয়মিত যাত্রার দলের শিল্পী হিসাবে কাজ করতেন। আমি যে সময়ের কথা বলছি, ওই সময় থেকেই দেশে নিয়মিত যাত্রার দলের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। আর এ কারণে শৌখিন শিল্পীদের উদ্যোগে প্রতি মৌসুমে দুএকটি দল সংগঠিত হয়ে বিভিন্ন এলাকায় পালা করে বেড়াতে শুরু করে। দিলীপ ওই রকম একটি মৌসুমী দলের সঙ্গেই ছিলেন।
শেষ রাতের দিকে প্রদর্শনী প্রায় শেষ হতে চলছে। এ সময় দর্শক শ্রোতাদের মধ্য থেকে ওই এলাকার সম্ভ্রান্ত পরিবারের এক নারী অনুরোধ লিখে পাঠালেন-- দিলীপ বাবুকে একটি গান গাইতে হবে। দিলীপ তৈরি হচ্ছিলেন গান গাওয়ার জন্য। ইশারায় আমাকে কাছে ডাকলেন। বললেন-- দাদা, মান্না দের গাওয়া একটি গান গাই ‘
বললাম, হুম, ঠিক আছে।
মঞ্চে ইঙ্গিত করতেই অর্কেস্ট্রা বেজে উঠলো। নায়কোচিত মেজাজে মঞ্চে আসলেন দিলীপ কুমার। গান ধরলেন,
'দুঃখ আমাকে দুঃখী করেনি,
করেছে রাজার রাজা-------
ও রানী সাহেবা, বিদায় এবার,
তোমার সাজঘরে রাজা সাজবো না আর
তুমি নকল পোষাক পড়িয়ে আমাকে
অনেক দিয়েছো সাজা-----'
দারুণ গাইলেন, দিলীপ। তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হলাম।
গানের শেষ দিকে দেখলাম দিলীপ কাঁদছেন। তাঁর গাল ভিজে গেছে চোখের পানিতে। আমার মনে হলো, দিলীপের এ কান্না কোনো অভিনয় নয়। গানের এ কথাগুলো যেন দিলীপেরই জীবন-গাঁথা, অসংখ্য দিলীপদের জীবন-গাঁথা।
যে সব দিলীপরা এক সময় অভিনয়কে, যাত্রার দলে কাজ করাকে পেশা হিসাবে নিয়েছিলেন, এখন তাঁদের অনেকেই কর্মহীন। জনপ্রিয় নায়ক দিলীপ কুমার মালী একজন ক্যানভাসারের সঙ্গে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ড্রাম বাজান বেঁচে থাকার প্রয়োজনে। অন্যরা হয়তো এরকম একটু কাজও পাচ্ছেন না। যাত্রা শিল্পীদের মধ্যে অর্থ কষ্টে ঘর-সংসার ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছেন এমন ঘটনাও রয়েছে।
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×