somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুষ্টিয়ায় আরেক পরিমল

১৮ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পান্না মাস্টার। পুরো নাম হেলাল উদ্দিন পান্না। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষক পরিমল জয়ধর স্টাইলে একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে সেক্স করে গোপন ক্যামেরায় ভিডিওচিত্র ধারণ করেছে। পরে এসব ছাত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করে আরও অনেককে ফাঁদে ফেলেছে সে। পরিমলের সঙ্গে পান্নার পার্থক্য পরিমল জেল খাটলেও পান্না পার পেয়ে যাচ্ছে। কারণ, গত শুক্রবার ব্যাপারটি টের পেয়ে জনগণ হেলাল উদ্দিন পান্নাকে গণধোলাই দিতে শুরু করলে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের নেতারা তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। আর এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে জেলাজুড়ে। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবি করেছেন অভিভাবকরা। এ ঘটনায় একাধিক অভিভাবক জানিয়েছেন, সন্তান নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। কিন্তু মান-সম্মানের ভয়ে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো মামলা বা স্কুল কমিটির কাছে অভিযোগ দিতে ইচ্ছুক নন। এ সুযোগে অভিযুক্ত শিক্ষক পান্না স্কুল কমিটির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছে। এদিকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাময়িকভাবে অভিযুক্ত শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠিত হবে। তদন্তের পর তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তবে এত বড় ঘটনার কিছুই জানেন না জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
একাধিক ছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধারণ করা নগ্ন ভিডিওচিত্র ও ছবি এ ঘটনার সঙ্গে পান্নার ঘনিষ্ঠজনরাই ফাঁস করে দিয়েছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষক হেলাল উদ্দিন পান্নার আড়াই ঘণ্টার ৬টি নগ্ন ভিডিওচিত্রের কপি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে মেমোরি কার্ড, পেন ড্রাইভের মাধ্যমে বিভিন্ন সাংবাদিক ও স্থানীয় পত্রিকা অফিসে। ভিডিওচিত্রে থাকা ১২-১৬ বছরের একাধিক তরুণীর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া গেলেও ভুক্তভোগীরা সকলেই স্কুলছাত্রী বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ১নং হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের হাটশ হরিপুর গ্রামের তসলিম উদ্দিনের ( কাঠ মিস্ত্রী) পুত্র হেলাল উদ্দিন পান্না। সে কুষ্টিয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০০৩ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে। যোগদানের পর থেকেই সে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিদ্যালয়ের ছাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেয়েদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের দৃশ্য গোপনে ভিডিও করে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে অবাধে অনৈতিক কাজে মিলিত হতে বাধ্য করতো। সূত্র আরও জানায়, পান্না যশোর এলজিডিতে চাকরিরত তার এক ইঞ্জিনিয়ার বন্ধুর সঙ্গেও ছাত্রীদের সেক্স করতে বাধ্য করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণিতের শিক্ষক পান্না প্রাইভেট পড়ানোর সুবাদের স্কুলের একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে এসব শিক্ষার্থীকে গোপন কক্ষে ডেকে নিয়ে মেলামেশা করতো এবং নগ্ন ভিডিও ধারণ করতো। পরে নগ্ন ভিডিও দেখিয়ে দীর্ঘদিন তার সঙ্গে মেলামেশা করতে বাধ্য করা হতো। এরই ধারাবাহিকতায় সমপ্রতি ওই বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ফাঁদে ফেলে তার সঙ্গে পান্না মেলামেশার চেষ্টা করলে বিষয়টি টের পায় ওই ছাত্রীর আত্মীয়স্বজন। এর জের ধরে ওই ছাত্রীর ফুফাতো ভাই স্কুলশিক্ষক হেলাল উদ্দিন পান্নার মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ কেড়ে নেয়। মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ থেকে উদ্ধার করা হয় ওই শিক্ষকের ধারণ করা বিভিন্ন ছাত্রীর সঙ্গে মেলামেশার শ’ শ’ ছবি ও ৬টি গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা সেক্স ভিডিও। পরে ফাঁস হওয়া ভিডিও ছবি ছড়িয়ে পড়লে শহরজুড়ে শুরু হয় আলোচনা।
ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর বরাত দিয়ে ওই বিদ্যালয়ের পড়ুয়া সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, পান্না মেয়েদের সঙ্গে সখ্য তৈরির পর শহরের একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে অবৈধ মেলামেশার দৃশ্য গোপন ক্যামেরা ও মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখতো। বিশেষ করে স্কুলপড়ুয়া সুন্দরী ছাত্রী ছিল তার টার্গেট। এ শিক্ষক মেয়েদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে আপত্তিকর দৃশ্যের ছবি তুলে পরে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। পরে ওইসব অশ্লীল ছবি দেখিয়ে সে দিনের পর দিন ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নে বাধ্য করেছে। এমনকি বিয়ের পরও তার লালসা থেকে রেহাই পায়নি কয়েক ছাত্রী।
গতকাল হাটশ হরিপুর ঘুরে জানা যায়, ছাত্রীদের সঙ্গে এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পান্না কয়েক বছর আগে নিজ গ্রামের দশম শ্রেণীর এক স্কুলছাত্রীকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে একাধিকবার যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হলে মেয়েটি গর্ভধারণ করে। স্থানীয় সালিশি বৈঠকে তাকে জরিমানা করে তাকে গ্রাম থেকে বিতাড়িত করে এলাকাবাসী। দু-তিন বছর পরে প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় আবারও সে গ্রামে ফিরে আসে।
স্কুলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, স্কুল ছুটির পর শিক্ষার্থীদের জাপটে ধরা, শ্লীলতাহানি করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এক ছাত্রী জানায়, স্যারের কাছে পড়তে গেলে তার ল্যাপটপের স্ক্রিনে (তার জাঙ্গিয়া পরা) ছবি বিভিন্ন নগ্ন ছবি রেখে আমাদের পড়তে বলে বাইরে যেতেন। এসব ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে আস্তে আস্তে সম্পর্ক গড়তেন তিনি।
এদিকে ফাঁস হওয়া ছবিতে স্কুলের একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় হয়ে বসে থাকার ছবি রয়েছে। ওই ছবিগুলোতে ছাত্রীরা স্কুল ড্রেস পরে আছে।
ভিডিওচিত্রে যা আছে: লম্পট পান্নার নিকট থেকে পাওয়া ল্যাপটপ ও একটি মোবাইল সেটের মেমোরি কার্ডে একাধিক ছাত্রীর ছবি ও ভিডিওচিত্র ধারণ করা হয়েছে। ছাত্রীদের বিবস্ত্র অনেক অশ্লীল দৃশ্য সেখানে ধারণ করা আছে।
৬টি ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, পৃথক পৃথক দিনে পৃথক ৫টি স্কুলছাত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করছে শিক্ষক পান্না। সেখানে একই বেডরুম। একই অসবাবপত্র। যৌন সম্পর্ক স্থাপনকালে প্রত্যেককে ভালবাসার কথা বলছে ও নিজের করে নেয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে সে। ওই ৬টি ভিডিওচিত্রে একটি সুসজ্জিত কক্ষে কুরুচিপূর্ণ যৌনচারে লিপ্ত থাকতে দেখা যায় ওই স্কুলশিক্ষককে।
একটি সূত্র জানায়, সুসজ্জিত ওই কক্ষটি কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়াস্থ সোনালী ব্যাংকের পেছনে অবস্থিত। হেলাল উদ্দিন পান্না শিক্ষকতার অন্তরালে নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার জন্য ওই কক্ষটি ভাড়া নিয়েছিল।
ছবিতে যা আছে: লম্পট পান্নার ল্যাপটপ ও মোবাইল থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা যায়, স্কুলের অসংখ্য ছাত্রীর অশোভন ছবি রয়েছে। একাধিক ছাত্রীর নগ্ন ছবিও আছে তাতে। স্কুল ড্রেস পরা অবস্থায় একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলেছে সে। এছাড়াও লম্পট পান্না বেঞ্চে কয়েকজন ছাত্রীর খুব কাছ থেকে খোলামেলা ছবি তুলেছে। এছাড়াও তার মেমোরি কার্ডে দেশী-বিদেশী পর্নো মুভি পাওয়া গেছে। এক অভিভাবক বলেন, এ রকম শিক্ষক নামের লম্পটদের কঠিন শাস্তি হওয়া দরকার। শিক্ষার নামে যদি এই ভাবে ছাত্রী নির্যাতন করা হয় তাহলে মানুষ আর শিক্ষকের কাছে কোন মেয়েকেই পাঠাবে না। এব্যাপারে বারখাদা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামছুর রহমান বলেন, এ ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। সত্যতা পাওয়ার পর বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সদস্যরা তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আবদুর রশীদ বলেন, পান্না শিক্ষক জাতির কলঙ্ক। আমরা তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছি। তবে এ ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে তাকে নির্দোষ বানানোর চেষ্টা করছে একটি মহল।
জেলা শিক্ষা অফিসার সায়েদুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলীমুন রাজীব বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। কোন অভিভাবক যদি এ ব্যাপারে অভিযোগ করে তাহলে দেশের আইনানুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেহেতু বিষয়টি র্স্পশকাতর সেহেতু অভিভাবকরা কোন অভিযোগ না করলেও জননিরাপত্তার অভিযোগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

দেলোয়ার রহমান, কুষ্টিয়া থেকে:
Manobzamin
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:২৮
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×