somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

জাদুকরের প্রতিশোধ – স্টিফেন লিকক

১৮ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন’, জাদুকর বললেন, ‘এই কাপড়টি ঝেড়ে দেখালাম, এর মধ্যে কিচ্ছু নেই। এবার এর ভেতর থেকে সোনালি মাছভরা একটি পাত্র বের করে দেখাচ্ছি আপনাদের। এই যে!’

হলভর্তি লোক বলাবলি করল, ‘কী অদ্ভুত! কীভাবে যে করে!’ কিন্তু সামনের আসনে বসা সবজান্তা লোকটি উঁচু গলায় ফিসফিস করে আশপাশের লোকদের জানাল, ‘বুঝলেন না, ওটা ওর আস্তিনের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল।’ শ্রোতারা হাসিমুখে মাথা নেড়ে বলল, ‘ঠিক ঠিক।’ ক্রমে সারা হলঘরের লোকেরা নিচু স্বরে বলাবলি করল, ‘ওটা ওর আস্তিনে লুকিয়ে রেখেছিল।’

জাদুকর বললেন, ‘এবার আপনাদের সেই বিখ্যাত হিন্দুস্তানি আংটির খেলা দেখাব। এই দেখুন, আংটিগুলো আলাদা আলাদা আছে। আমার একটি ঘায়ে সব জোড়া লেগে যাবে। (ঘটাং ঘটাং) এই দেখুন।’

দর্শকদের মুগ্ধ গুঞ্জনকে ছাপিয়ে সবজান্তা লোকটির ফিসফিসানি শোনা গেল, ‘নিশ্চয়ই আরেক সেট ওর আস্তিনের মধ্যে লুকানো ছিল।’

তখন সবাই মাথা নেড়ে নিচু স্বরে বলাবলি করল, ‘আংটিগুলো ওর আস্তিনের ভেতর ছিল।’

জাদুকরের মুখ কালো হয়ে গেল। ভ্রূ কুঁচকে গেল। তিনি বললেন, ‘এবার একটা মজার খেলা দেখাব। একটা টুপির ভেতর থেকে যতগুলো ইচ্ছা ডিম বের করব। কেউ একটা টুপি দেবেন? এই যে, ধন্যবাদ। হ্যাঁ, এবার দেখুন।’

টুপির ভেতর থেকে একে একে ১৭টা ডিম বের করলেন তিনি। দর্শকেরা মুগ্ধ হয়ে গেল। কিন্তু কেবল ৩৫ সেকেন্ডের জন্য। তার পরই সামনের আসনের ওই সবজান্তা লোকটি ফিসফিস করে বলল, ‘ওর আস্তিনের ভেতর একটা মুরগি রয়েছে।’ তখন সবাই বলাবলি শুরু করল, ‘ওর আস্তিনের ভেতর অনেক মুরগি রয়েছে।’

ডিমের খেলা মাটি হয়ে গেল।

এমনি করেই চলল। সবজান্তা লোকটির ফিসফিসানি থেকে জানা গেল, জাদুকরের আস্তিনে আংটি, মুরগি ও মাছ ছাড়াও ছিল কয়েকটি তাস, একটা পাউরুটি, একটা পুতুলের দোলনা, একটা জ্যান্ত গিনিপিগ, একটা ৫০ সেন্টের মুদ্রা ও একটা রকিং চেয়ার।

জাদুকরের সুনামের পারা নামতে নামতে শূন্য ডিগ্রিও ছাড়িয়ে গেল। মরিয়া হয়ে তিনি একটা শেষ চেষ্টা করলেন।

‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান’, তিনি বললেন, ‘আমার শেষ খেলা একটি বিখ্যাত জাপানি ভেল্কি। টিপেরারির লোকেরা এই খেলাটা সম্প্রতি আবিষ্কার করেছে।’ তিনি সবজান্তা লোকটির দিকে ফিরে বললেন, ‘স্যার, দয়া করে আপনার সোনার ঘড়িটা আমায় দেবেন?’

ঘড়িটা হাতে নিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘এটা হামানদিস্তায় গুঁড়ো করার অনুমতি চাই। পাব কি?’

সবজান্তা লোকটি সবজান্তার হাসি হেসে সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়ল।

জাদুকর ঘড়িটিকে একটি হামানদিস্তায় ফেলে পেল্লাই একটা হাতুড়ি তুলে নিলেন। দমাদ্দম হাতুড়ি পেটানোর শব্দ হলো। সবজান্তা ফিসফিস করে বলল, ‘ঘড়িটা ও আস্তিনের মধ্যে চালান দিয়ে দিয়েছে।’

‘এবার স্যার’, জাদুকর তাকে বললেন, ‘আপনার রুমালটি ফুটো করতে আমায় দেবেন কি? ধন্যবাদ। লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান্ট, দেখুন, এতে কোনো ফাঁকি নেই। ফুটোগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।’

সবজান্তা লোকটির পুরো মুখ কৌতুক-উত্তেজনায় ঝলমল করে উঠল। খেলাটার রহস্যটা তাকে আকৃষ্ট করেছে।

‘এবার স্যার, আপনার সিল্কের টুপিটা দয়া করে দেবেন? ওর ওপর আমি নাচব। ধন্যবাদ।’

এতক্ষণে সবজান্তার মুখে একটা বোকা বোকা ভাব ফুটে উঠল। সে ফিসফিস করে বলল, ‘ব্যাপারটা আমাকে গোলমালে ফেলেছে। রহস্যটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।’

দর্শকদের অখণ্ড নীরবতার মধ্যে জাদুকর সটান খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে সবজান্তার ওপর একঝলক অগ্নিবর্ষী দৃষ্টি হেনে শেষ কথা বললেন,

‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন! আপনারা দেখলেন যে আমি এই ভদ্রলোকের অনুমতি নিয়ে তাঁর ঘড়ি ভেঙেছি, কলার পুড়িয়েছি, চশমা চুরমার করেছি, তাঁর টুপির ওপর নেচেছি। যদি তিনি তাঁর ওভারকোটটির ওপর সবুজ ডোরা আঁকার অনুমতি আমায় দেন, তো সানন্দে তা করে আপনাদের দেখাই। আর তা যদি না দেন, তো আজকের মতো খেলা এখানেই শেষ।’ সুমধুর অর্কেস্ট্রা সংগীতের সঙ্গে যবনিকা নামল। দর্শকেরাও বাড়িমুখো হলো। তারা বুঝল, জাদুর খেলা যেমনই হোক, এর মধ্যে এমন কিছু খেলাও থাকে, যা জাদুকরের আস্তিনে লুকানো থাকে না।

অনুবাদঃ প্রকাশ জয়সূর্য

স্টিফেন বাটলার লিককঃ জন্ম-১৮৬৯, মৃত্যু-১৯৪৪। ১৯০৮ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও অর্থনীতিবিজ্ঞানের অধ্যক্ষ। রাজনীতি-অর্থনীতিবিষয়ক রচনা এবং রসরচনা দুটিতেই সিদ্ধহস্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:২৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×