somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুনের দায় মাসুদ রানা

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক
ভারী জুতোর গটমট শব্দ তুলে কামরায় ঢুকল লোকটা। ফাইল
থেকে চোখ তুলে একনজর দেখেই চিনতে পারল রানা। বেশ
লম্বা-চওড়া, বয়স কম-বেশি পঞ্চাশ, খেলোয়াড়ি একটা ভাব
আছে চেহারায়, মাথাজোড়া বিশাল টাক, নীল চোখ, পরনে ভাল
দরজির তৈরি দামি পোশাক। ‘মিস্টার মাসুদ রানা, ছোট্ট একটা
কাজ নিয়ে এসেছি আপনার কাছে। আমাকে মনে আছে তো?
লইয়ার অ্যাডাম ক্লিপটনÑও-ও-ই যে, বছর খানেক আগে সেই
পাগলি অলিভা-র কেসে মাফিয়া ডন মারিয়ো মারকাস আর
সলিসিটার হাওয়ার্ড বে−চারের পক্ষে লড়েছিলাম...’
‘কিন্তু জিততে পারেননি, জেল খাটতে হয়েছে ওদেরকে।’
হাসিমুখে বলল রানা, ‘আপনার তো কোনও কাজে আমার কাছে
আসার কথা নয়, মিস্টার ক্লিপটন।’
‘আপনার যোগ্যতাই টেনে এনেছে আমাকে, মিস্টার রানা।
অতীতের কোনও কথা মনে রাখি না আমি,’ বলে রানার
চেয়ারের পাশে দাঁড়ানো বড়জোর সাড়ে চার ফুট লম্বা, কালো,
পাটকাঠির মত শুকনো লোকটার দিকে ভ্রƒ কুঁচকে চাইল
লইয়ার। ‘এই পিওনটাকে এখান থেকে ভাগানো যায়? একটা
গুরুত্বপূর্ণ...’ রানাকে মাথা নাড়তে দেখে থেমে গেল সে।
‘না,’ বলল রানা দৃঢ়কণ্ঠে। ‘ইনিই নিউ ইয়র্ক শাখার বর্তমান
চিফ। ইনি থাকবেন। যা বলতে এসেছেন, এঁর সামনেই বলুন।’

আবছা ইঙ্গিতে দু’জনকেই বসতে বলল রানা।
‘ডেঁড়িয়ে থাকতেই ভাল−াগচে, সার!’ বলল বত্রিশ বছরের
অভিজ্ঞতাসম্পনড়ব বেঁটে লোকটা। ক্যালক্যাটা থেকে বাংলাদেশে
মাইগ্রেট করা দাগী চোর ছিল সে একসময়। জেল খেটেছে
জীবনের বেশিরভাগ সময়। সব ছেড়ে রানার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে
মানুষটা একসময় ভালবাসার বাঁধনে। রানাকে এতই ভক্তি করে
যে ওর সামনে কিছুতেই চেয়ারে বসবে না গিলটি মিয়া। ‘কিচু
মনে করবেন না, সার। সেই সক্কাল থেকে তো বসেই আচি...’
আর একবার গিলটি মিয়ার উপর অসন্তুষ্ট দৃষ্টি বুলিয়ে নিয়ে
রানার সামনের চেয়ারে বসল লইয়ার ক্লিপটন। বড় একটা শ্বাস
ফেলে বলল, ‘একজন লোককে খুঁজছি আমি। এটাই কাজ।’
‘এই কাজ নিয়ে আমাদের কাছে এসেছেন কেন? পুলিশকে
জানান। কিংবা কোনও প্রাইভেট আই-কে দিন কাজটা।’
‘এটা পুলিশের কোনও ব্যাপার নয়, মিস্টার রানা,’ যেন
রানার নিরাসক্তি হতাশ করেছে ওকে। ‘কী ব্যাপার, কাজ
দরকার নেই নাকি আপনাদের?’
‘কাজের অভাব নেই, আবার তেমন একটা চাপও নেই।
আসল কথা, এটা আমাদের লাইনের কাজ নয়।’
‘যা চাইবেন সেই ফি পেলে কি আপনি...’
‘আমাদের ফি সম্পর্কে ধারণা আছে আপনার?’
মাথা নাড়ল লইয়ার। ‘বলুন, কত দিতে হবে আপনাকে?’
গিলটি মিয়ার দিকে ফিরল রানা। ‘শোনাও দেখি, কত
পেলে করবে তুমি কাজটা?’
লোকটার উপর চোখ বুলাল গিলটি মিয়া। মনে মনে বলল,
‘নাহ্! এ-লোককে এট্টুও পচোন্দ হচ্চে না আমার!’ মুখে বলল,
‘সব কতা না শুনে, কদ্দিনের কাজ না জেনে নিদ্দিষ্ট কিচু তো
বলা যাচ্চে না, সার। একটা ধারণা দিতে পারি বড়জোর।
খুনের দায় ৩
আমাদেরকে লিলে পেত্যেক দিনের লেগে দু’ থেকে পাঁচ হাজার
টাকÑ, থুড়ি, ডলার মজুরি গুনতে হবে। আগাম দিতে হবে
দু’দিনের ফিশ।’
কথাগুলো অবশ্য বাংলায় বলেনি ও, নিউ ইয়র্কের সাদা
লোকগুনো বাংলা বোজে না। তাই ইংরেজি-বাংলা-হিন্দি-
জার্মান-ফ্রেঞ্চ-ইটালিয়ান, মোটকথা পৃথিবীর তাবৎ ভাষা মিলিয়ে
কাজ চালানোর মত নিজের একটা বুলি তৈরি করে নিয়েছে ও।
আর আশ্চর্য হলেও সত্যি, ওর কথা বুঝতে কারও অসুবিধে হয়
না, সবাই কী করে জানি বুঝে নেয় ওর বক্তব্য। এই লোকও
বুঝেছে।
‘অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে না?’ ফি-র বহর শুনে ভিরমি খেল
লইয়ার। ‘শুনে তো মনে হচ্ছে, আইন ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে এরকম
একটা অফিস নিয়ে বসলেই ভাল করতাম।’
‘আপনাকে আঁটকাচ্চে কে? সেইটেই করুন না, মিশটার,’
একগাল হেসে নিষ্পাপ চোখ মেলে বলল গিলটি মিয়া।
‘আপনার এই কেস লিয়েই আরাম্ব কত্তে পারেন গোয়েন্দাগিরি।’
গিলটি মিয়ার দিক থেকে চোখ সরিয়ে রানার মুখের দিকে
চাইল ক্লিপটন। ‘ঠিক আছে, উপযুক্ত ফি দিতে রাজি আছি
আমি। ব্যাপারটা হয়েছে কী...’
‘পি−জ, ওর সঙ্গে যান। ওর অফিসে বসে কাজটা বুঝিয়ে
দিন। খাতায় নোট নিতে হবে ওর, অগ্রিম টাকা নিয়ে রসিদও
দেবে ও-ই। আমার ধারণা, দু’দিনের বেশি লাগবে না ওর এই
কাজে।’
‘কিন্তু আপনি শুনবেন না...’
‘শুনব। এই ঘর থেকে আপনাদের সব কথাই শোনা যাবে।’
দেয়ালে বসানো স্পিকার দেখাল রানা ইঙ্গিতে। ‘কাজটা ও-ই
করবে, তবে কাজ শুরু হওয়ার পর প্রয়োজনে আমার পরামর্শ


নেবে। যান।’
মাস দুয়েকের জন্য গিলটি মিয়াকে রানা ইনভেস্টিগেশন
এজেন্সির নিউ ইয়র্ক শাখার দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে ঢাকা
থেকে। যদিও এই দেশটা ওর পচোন্দো নয়, রানার নির্দেশে
আসতেই হয়েছে বাদ্য হয়ে। ক্লিপটনকে সঙ্গে নিয়ে নিজের
কামরায় ফিরে বিশাল সেμেটারিয়েট টেবিলের ওপাশে বসল সে
রিভলভিং চেয়ারে। আইনজীবী বসল সামনের গদিমোড়া
চেয়ারে। বার দুই দোল খেয়ে নিয়ে বেল টিপল গিলটি মিয়া।
জিজ্ঞেস করল, ‘কী খাবেন, মিশটার আদম? চা না কপি?’
সামনের লোকটা মাথা নাড়ছে দেখে বেয়ারাকে বলল,
‘কেবিন সায়েবকে পেঠিয়ে দাও দিকিন।’
ক্যাভিন এসে বাউ করতেই তার দিকে কলম আর প্যাড
এগিয়ে দিল গিলটি মিয়া। ‘এ ভদ্দরনোক যা বলেন, লিকে ল্যাও
তো, ভাই। জানই তো, আমি এক্কেবারে বকলম; আবার এ-ও
জান, পড়তে পারি সব। কাজেই সাবদানে লিকবে, স্যাঙাৎ, কিচু
যেন ছুটে না যায়। ঠিক আচে?’
‘ইয়েস, বস্,’ বলে একটা চেয়ারে বসে পড়ল স্যাঙাৎ। গত
দেড়টি মাস গিলটি মিয়াকে পরম গুরু মেনে নিয়ে মন দিয়ে
শিখছে ক্যাভিন হাওয়ার্ড গোয়েন্দাগিরির নিত্যনতুন, অভূতপূর্ব
সব কৌশল।
শুরু করল অ্যাডাম ক্লিপটন।
‘আমি খুঁজছি রবার্ট স্ট্যানলি নামের এক লোককে। বছর
দেড়েক আগে স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে মোট বিশ লাখ ডলারের
সম্পত্তি রেখে মারা গেছেন এই লোকের চাচা, আর্থার হেনরি।
উইলে এই রবার্ট স্ট্যানলিকে দিয়ে গেছেন তিরিশ হাজার
ডলার। তখন থেকেই উইলের এগজিকিউটার হিসেবে খুঁজছি
আমি ওই লোককে। ওকে না পেলে উইলটা কার্যকর করা যাচ্ছে
খুনের দায় ৫
না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর মাসকয়েক আগে লোকটাকে
লোকেট করা গেল ফ্রান্সের নিস-এ। জানা গেল, স্ট্যানলি
ওখানে হিপ্পি আদর্শের গাঁজা খাওয়া বিদ্রোহী এক অখ্যাত তরুণ
পেইণ্টার। সঙ্গে সঙ্গে আমি এয়ারমেইলে চিঠি দিয়ে তাকে
জানালাম তার প্রাপ্য টাকার কথা, ওটা নেয়ার জন্যে ওকে
এখানে আসতে হবে, তা নইলে অন্যান্য ভাগীদারদের কাউকেই
সম্পত্তির ভাগ দেয়া যাচ্ছে না। সাধারণ ডাকে উত্তর এল সেচিঠির।
ও জানতে চায়: টাকাটা পাঠিয়ে দিলে কী হয়, কেন
ওকে কষ্ট করে নিউ ইয়র্কে যেতে হবে। বার কয়েক চিঠি
চালাচালির পর শেষ পর্যন্ত সপ্তাহ দুয়েক আগে পে−নে উঠেছিল ও
এখানে আসবে বলে। তুমি... আপনি হয়তো খবরটা পড়েছেন,
পে−নটা কেনেডি এয়ারপোর্টে μ্যাশ করে আগুনে পুড়ে ভস্ম হয়ে
যায়।’
‘লে হালুয়া! তাহালে ওকে আর এই দুনিয়ায় খুঁজে লাব কী?
ওপারের কোনও ডিটেকটিবকে...’
‘খবরের কাগজে লিখেছে: ওই দুর্ঘটনায় যে তিনজন প্রাণে
বেঁচেছিল, স্ট্যানলি তাদের একজন।’
‘ও, তা-ই বলুন, বেড়ালের জান। তারপর?’
‘পিছনের দিকে সিট পেয়েছিল ও। অ্যাকসিডেণ্টের ধাক্কায়
পে−নের লেজটা খসে যাওয়ায় ছিটকে বাইরে পড়ে আগুন আর
মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছে।’
‘হাঁ। কপালের জোর আচে বলতে হবে। পঁচালব্বই জনের
মদ্যে বেরালব্বই জনই যকোন খতম, তকোন এটাকে কপাল
ছাড়া আর কী বলা যায়, বলুন।’
লইয়ার বুঝে নিল, সব খবরই রাখে এই পিচ্চি
জোকারÑএকে ছোটনজরে দেখা ঠিক হবে না।
‘কাছেই ব্র“ক হাসপাতাল, সেখানে নিয়ে যাওয়া হলো ওকে।

দেখা গেল, নিশ্চিত মৃত্যুর কবল থেকে বেঁচে যাওয়ায় কিছুটা
উদভ্রান্ত, কিন্তু সারা শরীরে কোথাও কোনও জখম নেই ওর।
এটা জেনে পরদিন সকালে হাসপাতালে ফোন করে ওর সঙ্গে
কথা বলতে চাইলাম। ওরা বলল: হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার
কিছুক্ষণ পরেই বাইরে কোথাও ফোন করেছিল ও, কয়েক
মিনিটের মধ্যে এক সুন্দরী মহিলা এসে নিয়ে গেছে ওকে।
এরপর থেকে আর কোনও খবর নেইÑহাওয়ায় মিলিয়ে গেছে
রবার্ট স্ট্যানলি। কয়েকটা কাগজে বিজ্ঞাপন ছেপে কোনও সাড়া
পাওয়া যায়নি।’
‘খবর লিয়ে দেকেচেন, এই ইস্ট্যানলি ওর পরিবারের
লোকেদের সাতে যোগাযোগ করেচে কি না?’
‘করেনি। এ হচ্ছে সম্পত্তির মালিক পরলোকগত আর্থার
হেনরির ছোট ভাইয়ের পোষ্যপুত্র। পরিবারের কেউ ওকে
দু’চোখে দেখতে পারে না। ছোটবেলা থেকেই নাকি বেয়াড়া
কিসিমের ছিল রবার্ট, কারও সাথেই পড়তা পড়ত না। ওর
পালক বাপ-মা সাত বছর আগে রোড অ্যাক্সিডেণ্টে মারা
যাওয়ার পর আরও বেপরোয়া হয়ে যায় ও, কিছুদিনের মধ্যে
চলে যায় দেশ ছেড়ে, তারপর থেকেই লাপাত্তা। আর্থার হেনরির
মৃত্যুর পর সঙ্গত কারণেই তাঁর উত্তরাধিকারীরা অস্থির হয়ে
উঠেছে তাদের প্রাপ্য বুঝে নেওয়ার জন্যে; অনেক টাকার
ব্যাপার তো, সারাক্ষণ খোঁচাচ্ছে আমাকে।’
চুপচাপ খানিকক্ষণ চিন্তা করল গিলটি মিয়া। তারপর বলল,
‘কত বললেন? তিরিশ হাজার? বেকার এক আটিশের লেগে এ
তো অনেক টাকা। বে থা করেচে?’
‘না, আমি যদ্দূর জানি, করেনি। আমি আসলে চিনি না
ওকে, একটা ফটো পর্যন্ত দেখিনি। পরিবারের সবাই শেষ
দেখেছে ওকে বহু বছর আগে, ওর যখন চার বছর বয়স। ওর
খুনের দায় ৭
পালক বাপও কিছুটা উদ্ভট কিসিমের লোক ছিল, বিয়ে করেছিল
এক রেড ইণ্ডিয়ান মেয়েকে। ওর চাচা যে মনে করে ওকে উইলে
কিছু দিয়ে গেছে, তা দেখে পরিবারের সদস্যরাই শুধু নয়,
আমিও তাজ্জব হয়ে গেছি। কারও সঙ্গে কোনও যোগাযোগ
রাখেনি বলেই ওকে খুঁজে বের করতে এত সময় লেগেছে
আমার।’
‘ওর খোঁজ পেলেন কী করে, মিশটার আদম ব্যাপা... থুড়ি,
কিলিপটন?’
‘আমি না, ওরই এক কাজিন কাগজে ওর নামটা দেখে
আমাকে ফোন করেছিল। নিসের আমেরিকান কনসুলেটের
সামনে পিকেটিং করছিল কয়েকজন আর্টিস্টকে সঙ্গে নিয়ে।
পুলিশ বেঁধে নিয়ে যায় ওদের। আন্দাজে ভর করে একটা চিঠি
ছেড়ে দিলাম। জানা গেল, এ-ই সেই লোক। এত লেখালিখির
পর একটি মাত্র তথ্য জানা গেছে ওর সম্পর্কেÑওর বয়স ছাব্বিশ
বৎসর, ব্যস, আর কিচ্ছু না।’
‘আপনার এ তথ্য মোটেই কাজের কিচু লয়, আদম সায়েব।
ঠিক আচে, আমরা চেষ্টার তুটি করব না, তবে পেত্যেকদিনের
লেগে খরচ পড়বে আপনার আড়াই হাজার করে। একোন বুজে
দেকুন, রাজি?’
‘বেশ। ওর খোঁজ পেলেই আমাকে জানাবেন।’ উঠে দাঁড়িয়ে
পকেট থেকে মোটাসোটা একটা ওয়ালেট বের করে নিজের
ভিজিটিং কার্ড আর দু’দিনের ফি গুনে দিল লোকটা ক্যাভিনের
হাতে। সঙ্গে সঙ্গে একটা রসিদ লিখে দিল ক্যাভিন। রসিদ নিয়ে
ঘুরে দাঁড়াবার আগে নীল চোখের দৃষ্টি রাখল লোকটা গিলটি
মিয়ার উপর। ‘কাজটায় গোপনীয়তা বজায় রাখলে খুশি হব।’
‘কী বললেন?’ জিজ্ঞেস করেই নিজেকে সামলে নিল গিলটি
মিয়া। ‘ঠিক আচে, তাই হবে।’

অ্যাডাম ক্লিপটন বেরিয়ে যেতেই রানার কামরায় এসে ঢুকল
গিলটি মিয়া। দেড়মাস পর রানাকে দু’দিনের জন্য একা
পেয়েছিল, মোটকু লোকটা এসে বাজে একটা কাজ চাপিয়ে দিয়ে
সব ভজকট করে দিয়ে গেল বলে বিরক্ত।
‘কী বুজলেন, সার? বাজে সোমায় নষ্ট না?’
‘কীভাবে এগোবে ভাবছ?’ পাল্টা প্রশড়ব করল রানা।
‘সেই তো থোড়-বড়ি-খাড়া আর খাড়া-বড়ি-থোড়!
হাঁসপাতাল থেকে শুরু কত্তে হবে একোন। জানা দরকার
ছোকরা ওখেন থেকে পালাই-পালাই করল কেন, গেলই বা কার
সাতে, কোতায়। সাঁজ তো হয়ে এল, ভাবচি, এখুনি একবার
গিয়ে খোঁজ লিয়ে আসি।’
‘চলো, আমিও যাব তোমার সঙ্গে,’ সামনের ফাইলটা বন্ধ
করে আউট ট্রে-তে নামিয়ে রেখে বলল রানা। ‘তার আগে,
দাঁড়াও দু’টো টেলিফোন সেরে নিই।’
একটা μেডিট রেটিং হাউসে ফোন করে এক বন্ধুকে দুটো
নাম দিয়ে তাদের রেটিং জানাবার অনুরোধ করল রানা। প্র ম
নামটা নিউ ইয়র্কের অ্যাডাম ক্লিপটন, দ্বিতীয়টা নিস-এর রবার্ট
স্ট্যানলি। এরপর নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক পরিচিত
সাংবাদিকের কাছ থেকে জেনে নিল পে−ন μ্যাশের সঠিক
সময়টা।
ব্র“ক হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ডিউটি অফিসারকে রানা
এজেন্সির লাইসেন্স দেখিয়ে ওদের আগমনের উদ্দেশ্য জানাল
রানা। বলল: রবার্ট স্ট্যানলিকে দরকার তার উত্তরাধিকার সূত্রে
প্রাপ্য ত্রিশ হাজার ডলার বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে লোকটা কোথায় যে হাওয়া হয়ে গেল,
খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। দুর্ঘটনার দিন যেসব ডাক্তার-নার্স
ডিউটিতে ছিলেন তাঁদের সঙ্গে কথা বলা গেলে হয়তো কিছু সূত্র
খুনের দায় ৯
পাওয়া যেত। সব শুনে ভদ্রলোক ইণ্টারকমের মাধ্যমে ব্যবস্থা
করে ওদের সঙ্গে একজন ওয়ার্ড-বয়কে দিলেন ঠিক জায়গায়
পৌঁছে দেয়ার জন্য।
নার্স দুজনের কাছ থেকে রবার্ট স্ট্যানলির চেহারার একই
বর্ণনা পাওয়া গেল: লম্বা, স্পোর্টসম্যানের মত একহারা গড়ন,
ওজন পঁচাত্তর কেজির মত, কালো চুল, সাদামাটা চেহারা।
আন্দাজ, ত্রিশের মত হবে বয়স। কোটের বেশ কিছু অংশ পুড়ে
গিয়েছিল। ডাক্তার বললেন, ‘রবার্ট স্ট্যানলির শরীরে কোথাও
কোনও আঘাত বা জখমের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কেবল কিছুটা
নার্ভাস দেখাচ্ছিল। বলল: ব্যথা অনুভব করছে না, সেডেটিভের
কোনও প্রয়োজন নেই। ঘণ্টাখানেক পর একটু সুস্থির হয়ে
বাইরে কোথায় যেন ফোন করল। বিশ মিনিটের মধ্যেই বছর
পঁচিশেকের সুন্দরী এক মহিলা এসে দেখা করল ওর সাথে।
তারপর ডাক্তারদের কারও বারণ না মেনে চলে গেল ও মেয়েটির
সঙ্গেÑকোথায়, কে জানে!’
‘বেডে শুয়েই ফোন করেছিল?’ জানতে চাইল রানা।
‘হ্যাঁ।’
‘গুড। তা হলে তো নিশ্চয়ই কোথায় ফোন করেছিল তার
রেকর্ড রয়েছে সুইচবোর্ডে। নম্বরটা আমাকে দেওয়া যাবে?’
‘নিশ্চয়ই।’
নম্বরটা নিয়ে ফিরে এল ওরা এজেন্সির অফিসে। গিলটি
মিয়া বলল, ‘কেবিনের এক বন্দু আচে, সার, টেলিফোন
কোম্পানিতে।’
‘বেশ, ডাকো ওকে।’
ইনভেস্টিগেশনে ওর সাহায্য দরকার শুনে বত্রিশ পাটি দাঁত
বেরিয়ে পড়ল ক্যাভিন হাওয়ার্ডের। তিন মিনিটের মধ্যে জানা
গেল নম্বরটা ফিলিপ শেফার্স নামে এক লোকের, ঠিকানা
১৪৪২/ডি, পিজিয়ন লেন, কুইন্সভিল রেসিডেনশিয়াল এরিয়া,
নিউ ইয়র্ক।
রানা জানে, ওখানে নিমড়ব-মধ্যবিত্তদের বাস। রাস্তার দু’পাশে
ছোট ছোট অনেকগুলো একতলা বাড়ি আছে ওখানে লাইন
দিয়ে।
‘চলো, বাড়িটা চিনে আসা যাক,’ বলল রানা। ক্যাভিনের
দিকে চেয়ে হাসল, ‘তুমিও চলো।’
উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল ছোকরা। চোখদুটো জ্বলছে সন্ধ্যাতারার
মত। সোজা কথা? রানা এজেন্সির চিফের সঙ্গে চলেছে সে
একটা কেসের সমাধানে, তাঁকে সাহায্য করতে! বাপরে, বাপ!
নম্বর মিলিয়ে চিনতে অসুবিধে হলো না। বাড়িটার সামনে
ছোট্ট লন। দরজা বন্ধ। ধীর গতিতে গাড়ি চালিয়ে পুরো
এলাকাটা একবার ঘুরে দেখে চলে এল ওরা অফিসের কাছাকাছি
এক রেস্তোরাঁয়। এখানে ভাল বাংলাদেশী রানড়বা পাওয়া যায়।
খাওয়ার পর গিলটি মিয়া ও তার সাকরেদকে বিদায় দিয়ে সেঁটে
একটা ঘুম দেবে বলে চলে গেল রানা নিজের অ্যাপার্টমেন্টে।
ঠিক হলো, আগামীকাল সকাল থেকে শুরু হবে ওদের কাজ।
দায়িত্বে থাকবে গিলটি মিয়া, সহকারী ক্যাভিন হাওয়ার্ড। দুই
দিনের মধ্যে খুঁজে বের করতে হবে স্ট্যানলিকে। কাজটার শেষ
দেখেই রানা চলে যাবে লস অ্যাঞ্জেলেস শাখা পরিদর্শনে।
পরদিন সকাল দশটায় ফোন করল রানা μেডিট অফিসে।
এরা এফবিআই-এর চেয়েও ভাল রেকর্ড রাখে। বন্ধু জানালো,
‘রবার্ট স্ট্যানলির উপর কোনও রেকর্ড নেই; তার মানে লোকটা
বাউণ্ডুলে, বাঁধা কোনও চাকরি বা কাজ নেইÑঅর্থাৎ, μেডিট
রিস্ক। তবে ওই অ্যাডাম ক্লিপটনকে ধার দিলেও ঠকবি। একটা
অ্যাপ−ায়ান্স স্টকে বড় দান মারতে গিয়ে আচ্ছা ধোলাই খেয়েছে
লোকটা বছরখানেক আগে। আইন ব্যবসায় ওর রোজগার বছরে
খুনের দায় ১১
বড়জোর বিশ হাজার ডলার, কিন্তু খরচ করে তার দ্বিগুণেরও
বেশিÑবাড়ি রয়েছে শহরতলির ধনী এলাকায়, দুটো গাড়ি এবং
একটা খরুচে বউ পোষে, গোটা দুই অভিজাত ক্লাবের মেম্বার।
দেনায় গলা পর্যন্ত ডুবে আছে লোকটা। মাস কয়েক আগে
শেয়ার মার্কেটে বেশ ভাল একটা দান মেরে কিছু কিছু ঋণ শোধ
করেছে। কিন্তু এখনও প্রচুর দেনা। ধনী পরিবারে জন্ম।
নিঃসন্তান এক কাকা মারা গেলে উত্তরাধিকার সূত্রে অনেক
টাকার মালিক হবে। কিন্তু কাকাটা কিছুতেই মরছে না, ঊনআশি
বছর বয়সেও পাল−া দিয়ে নিয়মিত টেনিস খেলে চলেছে ছেলে-
ছোকরাদের সাথে। ভাতিজার চেয়ে অনেক ফিট। বুঝলি এখন?’
‘হুঁ,’ বলল রানা। ‘শোন্, আরেকজনের μেডিট রেটিং জানা
দরকার। নামটা হচ্ছে: ফিলিপ শেফার্স। নিউ ইয়র্কেই,
কুইন্সভিল রেসিডেনশিয়াল এরিয়ায় থাকে। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে
বলতে পারবি না?’
‘দশ মিনিটেই পারব। যখন খুশি রিং দিস্, অফিসেই
আছি।’
বন্ধুকে ধন্যবাদ জানিয়ে রিসিভার নামিয়ে রাখল রানা।
সকাল সাতটায় ক্যাভিনকে নিয়ে বেরিয়েছে গিলটি মিয়া।
রানাকে কাজ দেখিয়ে সন্তুষ্ট, এবং স্যাঙাৎকে মুগ্ধ করবার সুযোগ
পেয়ে টগবগ করে ফুটছে সে উৎসাহ, উত্তেজনায়। একটা
ফাইল টেনে নিয়ে মন দিল রানা সেটায়। মুচকি হাসল
ক্যাভিনের লেখা গিলটি মিয়ার মন্তব্য পড়ে: ওর ধারণা, ওই
কেসের দজ্জাল বুড়িটাকে যদি পা বেঁদে উল্টো করে ঝুলিয়ে
দোয়া যেত, তাহালে সত্যি কতাটা বেরিয়ে আসত নিগ্ঘাত!

||| দুই |||
ঠিক সাড়ে আটটায় ফিলিপ শেফার্সের বাড়ি থেকে ত্রিশ গজ দূরে
রাস্তায় পার্ক করা তোবড়ানো টয়োটা ¯িপ্রণ্টারে এসে ঢুকল
গিলটি মিয়া। নাস্তা করতে গিয়েছিল। ফিরে এসেছে দুই হাতে
দুটো প্যাকেট নিয়ে। ছোট প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিল ক্যাভিনের
দিকে, ‘ল্যাও, ভাই, চারটে খেয়ে ল্যাও। তারপর নাববো আমরা
কাজে। খেতে খেতে শোনাও দিকি গত একটা ঘণ্টায় কী
দেকলে।’
কৃতজ্ঞচিত্তে ওস্তাদের আনা প্যাকেটটা খুলল ক্যাভিন। সুন্দর
করে সাজানো রয়েছে সকালের নাস্তা: ম্যাকডোনাল্ডসের দুটো
ক্লাব স্যাণ্ডউইচ, দুটো বার্গার, দুই পিস গ্রিল করা পুরু স্টেইক ও
আলুভাজা। পাশে আলাদা একটা খোপে শোয়ানো আছে
কোকের বোতল। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে শোনাল ক্যাভিন,
‘তেমন কিছুই ঘটেনি, ওস্তাদ। হুম-হাম হুম-হাম, কোঁৎ। সাড়ে
সাতটায় দরজার সামনে দুধের বোতল রেখে গেছে মিল্ক-ভ্যান।
সাতটা পঞ্চাশে সোনালি চুলো এক সুন্দরী ওটা তুলে নিয়ে গেছে
ভেতরে।’
‘শেফার মিয়া কাজে যায়নি?’
‘ঢক-ঢক-ঢক, কেউ বেরোয়নি, কেউ ঢোকেনি, ওস্তাদ।
খুনের দায় ১৩
ঘ্যাঁ---ও!’
মাথা ঝাঁকিয়ে তীক্ষèদৃষ্টিতে বাড়িটার উপর চোখ বুলাল
গিলটি মিয়া কিছুক্ষণ। ‘লে হালুয়া!’ ভাবছে সে, ‘হাতে বেশি
সোমায় নেইকো। ও-বাড়িতে ঢুঁকতে হবে না? সায়েব-বিবি না
বেরুলে পরে টেলিফোনে ছারপোকাটা রাকা তো কটিন হয়ে
যাবে!’
ক্যাভিনের নাস্তা ও কোক শেষ হতেই ওর দিকে বাড়িয়ে
দিল গিলটি মিয়া বড় প্যাকেটটা।
‘কী আছে এর ভেতর?’ জানতে চাইল সাগরেদ।
‘খুলেই দ্যাকো না,’ বলল গিলটি মিয়া। ‘তোমার
বেশভুষো। ল্যাও, পরে ল্যাও এগুনো।’
প্যাকেটের ভিতর থেকে বের হলো টুলবেল্ট, ব্যাগ ও
তোবড়ানো ক্যাপ সহ টেলিফোন মিস্ত্রির একটা আধময়লা
ওভারল। ওগুলো পরা হয়ে যেতেই পকেট থেকে টু ব্রাশের মত
একফালি গোঁফ বের করে সাঁটিয়ে দিল গিলটি মিয়া ক্যাভিনের
নাকের নীচে। একটা লোমওয়ালা জড়–ল বসিয়ে দিল গালে,
চোখের ঠিক নীচে।
‘দারুণ মানিয়েচে, মাইরি!’ বলল সে খুশি হয়ে। ‘এবার
ধরো এই ছারপোকাটা। টেলিফোনের মদ্যে ঢুঁকিয়ে দিয়ে এসো,
আমি বাকি কাজ সেরে রাকচি।’
ক্যাভিনকে বিদায় দিয়ে একটা ওয়ায়্যারলেস রিসিভার ফিট
করল সে ভয়েস কণ্ট্রোল্ড্ রেকর্ডারের সঙ্গে। কথা শুরু হলেই
চালু হয়ে যাবে টেপরেকর্ডার, কথা থেমে গেলে থামবে। সব
রেডি হয়ে গেলে গাড়িটা শেফার্সদের বাড়ি থেকে একশো গজ
দূরে নিয়ে গিয়ে রাখল রাস্তার অপর পাশে।
ওদিকে সোজা গিয়ে শেফার্সদের বাড়ির দরজায় কলিংবেল
টিপল ক্যাভিন। দ্রুতপায়ে এগিয়ে এসে ছিটকিনি সরাল কেউ।

দরজার ফাঁক দিয়ে গোলাপি হাউসকোট পরা সেই সুন্দরী
মেয়েটিকে দেখা গেল। আর কাউকে আশা করেছিল হয়তো,
ওকে দেখে হতাশা ফুটল চোখেমুখে। একনজরে বোঝা গেল,
খুবই উৎকণ্ঠায় রয়েছে মেয়েটি, চোখের নীচের কালচে দাগ বলে
দিচ্ছে, রাতে ঘুমাচ্ছেও কম। হাতের নোটবইয়ের দিকে ভ্রƒ
কুঁচকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল ক্যাভিন, ‘মিসেস ফিলিপ শেফার্স?’
‘হ্যাঁ, আমি মিসেস শেফার্স।’
‘কোড এরিয়া ফোন লাইনে একটা হামিং সাউণ্ড আসছে,
ম্যাম। কোথায় শর্ট হয়ে আছে লাইন দেখতে এসেছি।’ নিজেকে
টেলিফোন কোম্পানির লোক বলে মিথ্যে পরিচয় না দিয়ে
জানতে চাইল, ‘টেলিফোনটা কোথায়, ম্যাম?’
‘আমার ফোন ঠিক আছে।’
‘ইয়েস, ম্যাম,’ হাসিমুখে নরম গলায় বলল ও, ‘তবে
আপনার লাইনে যদি কোনও শর্ট থাকে তা হলে আর সব
সার্কিটে গোলমালের সৃষ্টি করবে। চেক করতে মাত্র কয়েক
সেকেণ্ড লাগবে আমার।’
‘আচ্ছা, ঠিক আছে। আসুন।’
লিভিংরুমটা অত্যন্ত সাদামাটা আসবাবে সাজানো। প্র মেই
রিসিভার তুলে অপারেটরের সঙ্গে কথা বলার ভান করল
ক্যাভিন। তারপর রিসিভারের ¯ঙঊু খুলে মহিলার চোখের সামনেই
ছোট্ট মাইμোসার্কিট ট্র্যান্সমিটারটা ফিট করল জায়গা মত।
এগুলো ছোট হলে কী হবে, টেলিফোনে বলা প্রতিটা শব্দ পৌঁছে
দেবে দুশ’ গজ দূরের রিসিভারে। কাজ হয়ে যেতেই রিসিভারটা
জোড়া লাগিয়ে μেড্ল্ টিপে ছেড়ে দিয়ে ডায়াল টোন চেক
করল, তারপর বলল, ‘আপনার ফোন ঠিকই আছে, মিসেস
শেফার্স। তবু বাড়তি সতর্কতা হিসেবে দুর্বল এক-আধটা পার্টস
বদলে দিলাম। অনেক ধন্যবাদ, ম্যাম।’
খুনের দায় ১৫
গাড়িতে ফিরে এসে ছদ্মবেশ খুলে ফেলল ক্যাভিন হাওয়ার্ড।
মাথা ঝাঁকিয়ে বুঝিয়ে দিল ওস্তাদকে, কাজ হয়ে গেছে। গিলটি
মিয়া জিজ্ঞেস করল, ‘বাড়িতে আর কাউকে দেকলে?’
‘নাহ্, কাউকে দেখিনি। মনে হলো মেয়েটা কারও অপেক্ষায়
আছে, খুব দুশ্চিন্তায়। এবার, ওস্তাদ?’
‘এবার একটু ঘুরে-ফিরে এসো বাইরে থেকে। আদঘণ্টা পর
পাবলিক ফোনবুত থেকে কতা বলবে তুমি মেয়েটার সাতে।’ কী
কথা বলতে হবে ক্যাভিনকে শিখিয়ে দিল গিলটি মিয়া।
আধঘণ্টা পর শেফার্সদের নম্বরে রিং দিল ক্যাভিন। মেয়েটি
রিসিভার তুলে হ্যালো বলতেই গলাটা ভারী করে বলল, ‘মিসেস
শেফার্স, আমি রবার্ট স্ট্যানলির একজন শুভাকাক্সক্ষী, বন্ধু।
আপনি কি...’
‘রং নাম্বারে কল করেছেন!’ বলেই খটাং করে নামিয়ে রাখল
মেয়েটি রিসিভার।
আবার ডায়াল করল ক্যাভিন। পাঁচ-ছয়বার বাজার পর
রিসিভার তুলল মেয়েটি, ‘ইয়েস?’
‘মিসেস শেফার্স, আমি কী বলি না শুনেই রিসিভার নামিয়ে
রাখবেন না। আমি জানি, পে−নμ্যাশের পর আপনি রবার্ট
স্ট্যানলিকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসেছেন। আমরা
উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বড় অঙ্কের টাকা ওঁর হাতে তুলে দিতে
চাই। আপনি যদি...’
‘আমি একবার আপনাকে বলেছি: ভুল নাম্বারে ডায়াল
করেছেন আপনি! রবার্ট কী যেন বললেন, ওই নামের কাউকে
চিনি না আমি। দয়া করে আমাকে আর বিরক্ত করবেন না!’
বলেই আবার আছড়ে রাখল মহিলা রিসিভার।
ক্যাভিনের মনে হলো, হিস্টিরিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে
মেয়েটির আচরণে। ফিরে গিয়ে রিপোর্ট করবার প্রয়োজন হলো

না, ওয়ায়্যারলেস রিসিভারের কল্যাণে সবই শুনেছে গিলটি
মিয়া। বরং সে-ই শোনাল নতুন খবর।
‘তোমার দুইলম্বর কল পাওয়ার আদ মিলিটের মদ্যেই
পোটল্যান হোটেলের ২৩২ লম্বর কামরায় মিশটার ব্রেনান বলে
একজনের সাতে কতা বলেচে মেয়েটা। বোধায় ওই নামেই
ওখেনে উটেছে ইস্ট্যানলি। থত্থর করে কাঁপচে গলা, তোমার
সাতে কী কতা হলো সব জানাল মেয়েটা ওকে। নিজ কানে শুনে
দ্যাকো।’
রেকর্ডার রিওয়াইণ্ড করে চালিয়ে দিল গিলটি মিয়া।
‘শান্ত হও, রিটা। একটুও ঘাবড়িয়ো না তুমি। সব ঠিক হয়ে
যাবে। লোকটা আবার যদি ফোন করে, তুমি সাফ বলে দেবে
ওর একটা কথাও বুঝতে পারছ না। আচ্ছা, রিটা, কয়েকটা দিন
তোমার মায়ের কাছে গিয়ে থাকো না। ঝামেলা সামলে নিয়েই
আমি ডেকে পাঠাব তোমাকে।’
‘ওখানে গিয়ে নাটক করতে পারব না আমি। অসম্ভব।
এমনিতেই ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে আমার। বিশ্বাস করো,
দুশ্চিন্তায় মরে যাচ্ছি... স্রেফ পাগল হবার দশা!’
‘শান্ত থাকার চেষ্টা করো, হানি। এক কাজ করো, টেলিফোন
এলে ধোরো না। কিংবা... তার চেয়ে ভাল হয়, চলে এসো
আমার এখানে।’
‘কিন্তু মা যদি ফোন করে দেখে কেউ ধরছে না, তা হলে কী
তুলকালাম কাণ্ড বাধাবে কে জানে! হয়তো... উফ্! মনে হচ্ছে
ভেঙে চৌচির হয়ে যাচ্ছি আমি!’
‘রিটা, মাথা ঠাণ্ডা রাখো, লক্ষ্মীটি। এখন পর্যন্ত সবই
ঠিকঠাক মত চলছে। আমার কথা শোনো: তোমার ঘনিষ্ঠজনদের
ফোন করে জানিয়ে দাও, দিন কয়েকের জন্যে অন্য কোথাও
যাচ্ছ তুমি, বলবে: এ-বাড়িতে একা থাকতে গা ছমছম করছে
খুনের দায় ১৭
তোমার, চমকে চমকে উঠছ, এইসব আরকী। তারপর চলে
এসো আমার কাছে। দুপুর দুটোর মধ্যে পৌঁছে যাবার চেষ্টা
কোরো। কোনও ভয় নেই, কোনও বিপদ হবে নাÑনিজেকে শান্ত
রাখতে পারলে দেখবে কয়েকদিনেই স্বাভাবিক হয়ে গেছে সব।
তা হলে রাখি এখন... দেখা হচ্ছে দুটোয়, ছাড়লাম।’
‘বাহ্! একেবারে পরিষ্কার রেকর্ডিং!’ হাসল ক্যাভিন। ‘এখন
আমরা কী করব, ওস্তাদ?’
‘সেইটে জানতেই একবার আপিসে যেতে হবে আমাদের,’
বলল গিলটি মিয়া। ‘রেকর্ডারটা অটোতে সেট করাই আচে।
এই ক্যাসেট খুলে আরাকটা ফিট করে দিচ্চি, তুমি গাড়িটা লিয়ে
গিয়ে ও-বাড়ির কাচাকাচি পার্ক করে ইঞ্জিলের বনেট খুলে এটা-
ওটা ঘাঁটো, তারপর দরজা-জানলা লক করে চলে এসো আমার
কাচে। আমরা প্রত্থমে উ-ই ওষুদের দোকানে যাব, তারপর
আপিসে।’
ওষুধের দোকানে ফোনবুক ঘেঁটে জানা গেল, পোর্টল্যাণ্ড
হোটেলটা ব্র“কলিনে।
একটা ট্যাক্সি নিয়ে ফিরে এল ওরা অফিসে। দেখল, দুই পা
টেবিলের উপর তুলে দিয়ে এক হাতে কফির কাপ, অপর হাতে
একটা ফাইল ধরে রেখে জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে রয়েছে
মাসুদ রানা। ওদের দেখে সোজা হয়ে বসল।
চুপচাপ শুনল রানা আদ্যোপান্ত সব। দু’বার বাজিয়ে শুনল
টেলিফোনের আলাপ।
‘এবার?’ জিজ্ঞেস করল ও, ‘এবার কী করবে ভাবছ?’
‘অ্যাকোন ওই আদম ব্যাপারী, থুড়ি, আদম কিলিপটন
সায়েবকে ঠিকানাটা জানিয়ে দিলেই আমাদের কাজ শেষ।’
মাথা নাড়ল রানা।
‘তার আগে জানতে হবে এই লোক সত্যিই রবার্ট স্ট্যানলি

কি না। আর যদি স্ট্যানলিই হয়, পালিয়ে বেড়াচ্ছে কেন, কীসের
ভয়ে। রিটা শেফার্সের সঙ্গেই বা তার কী সম্পর্ক। তা-ই না?’
‘ঠিক বলেচেন, সার!’ একযোগে মাথা ঝাঁকাল ক্যাভিন ও
গিলটি মিয়া।
রানা বলল, ‘চলো, আমিও যাচ্ছি তোমাদের সঙ্গে।’
ি তন
মাঝারি মানের হোটেল, তবে নতুন। ছোকরা ঘাবড়ে যেতে
পারে ভেবে গিলটি মিয়া আর ক্যাভিন হাওয়ার্ডকে নীচের ফয়ে-
তে অপেক্ষা করতে বলে উঠে এসেছে রানা তেতলায়। টোকা
দিতেই খুলে গেল ২৩২ নম্বর কামরার দরজা। জিন্সের প্যাণ্ট
আর হালকা নীল, বুক-খোলা শার্ট পরা লম্বা এক লোককে দেখা
গেল দরজার ওপাশে। চেহারা হুবহু মিলে যায় নার্সদের বর্ণনার
সঙ্গে। অপরিচিত লোক দেখে কুঁচকে গেল ভুরু। বলল, ‘সিধে
রাস্তা মাপো, মিস্টার। কিছু কেনার মুডে নেই আমি এখন।’
কথাগুলোর সঙ্গে ভেসে এল সস্তা হুইস্কির গন্ধ। দরজাটা বন্ধ
করে দেবার আগেই জুতো পরা পা ঢুকিয়ে দিল রানা কপাটের
ফাঁকে, তারপর বের করে দেখাল রানা এজেন্সির ইনভেস্টিগেশন
লাইসেন্স।
‘আপনার সঙ্গে কথা আছে, মিস্টার স্ট্যানলি।’
নামটা শুনে একটু বড় হলো চোখ, কার্ডটা খুঁটিয়ে দেখে নাক
কোঁচকাল স্ট্যানলি। ‘ও, প্রাইভেট টিকটিকি! ভাল চান তো
খুনের দায় ১৯
কেটে পড়–ন, নইলে পুলিশ ডাকতে বাধ্য হব।’
‘ডাকুন না,’ অমায়িক হাসি হাসল রানা। ‘আপনি কিন্তু
আমার উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু না জেনেই বিরূপ আচরণ করছেন।
আমি এসেছি আপনাকে ত্রিশ হাজার ডলার পাইয়ে দিতে। এ
ব্যাপারে কিছু শুনতে কি আপনি বিরক্তি বোধ করবেন? নিশ্চয়ই
না?’
‘ঠিক আছে, বলুন কী বলার আছে আপনার।’ রানার
জুতোটা লক্ষ করছে সে বাঁকা চোখে।
‘করিডোরে দাঁড়িয়ে?’
‘হ্যাঁ। যা বলবার এখানে দাঁড়িয়েই বলুন। বেশি সময় দিতে
পারব না। আপনাকে উকিল ক্লিপটন আমার পেছনে লাগিয়েছে,
তাই না?’
‘ঠিক ধরেছেন। ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না কেন?
উইল মোতাবেক বণ্টন-নিষ্পত্তির জন্যে খুঁজছেন তিনি
আপনাকে, ধরে খেয়ে নেবার জন্যে নয়।’
‘যখন ইচ্ছে হবে, আমি নিজেই দেখা করব। আপনি গিয়ে
ওকে বলুন, পেছনে টিকটিকি লাগিয়ে আমাকে উত্ত্যক্ত করার
কোনও দরকার নেই। ওর আচরণ মোটেই পছন্দ হচ্ছে না
আমার।’
এক হাত উঁচু করে চুল ঠিক করল স্ট্যানলি। আঙুলের
ফোলা গিঁঠগুলো দেখে ওটাকে শিল্পীর হাত মনে হলো না রানার,
মনে হলো কোনও বক্সারের হাত। নরম গলায় বলল,
‘টাকাগুলো নিতেই আটলাণ্টিক পাড়ি দিয়ে এসেছেন আপনি
আমেরিকায়। তা হলে কি ধরে নেব, আপনার প্রাপ্য ত্রিশ হাজার
ডলারে আপনার আর আগ্রহ নেই?’
‘ঠিক জানি না,’ যেন খুব চিন্তায় পড়ে গেছে এমনি ভঙ্গিতে
বলল স্ট্যানলি। ‘এ-টাকা পাওয়া মাত্র একলাফে আমার ইনকাম

চলে যাবে উঁচু ট্যাক্স-ব্র্যাকেটে। ট্যাক্স বেড়ে যাবে অনেক। কে
জানে, আখেরে হয়তো ক্ষতিই হবে। ভাবছি, নিসে ফেরত
যাওয়াই হয়তো আমার জন্যে ভাল হবে।’
‘ক্লিপটনকে ফোন করে একথা জানিয়ে দেননি কেন?’
‘ইচ্ছে হয়নি, তাই।’ বলেই সিধে হয়ে বুক ফুলিয়ে দাঁড়াল
স্ট্যানলি। ‘এবার পা-টা সরিয়ে নিয়ে কেটে পড়–ন, মিস্টার।
আর একটা কথা বললে এক ঘুসিতে নাকটা ফাটিয়ে দেব!’
হাসল রানা। ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে, ভাই। অত চটে
যাওয়ার মত কিছু হয়নি।’ হাত বাড়িয়ে দিল সামনে। ‘আমরা
হাসিমুখেই বিদায় নিতে পারি।’
সুযোগটা হাতছাড়া করল না বদমেজাজি যুবক। খপ্ করে
ধরল রানার হাত। ধরেই গায়ের জোরে চাপ দিল, মুখে শায়েস্তা
করার হাসি। হাসল রানাও। তারপর ও যখন পাল্টা চাপ দিতে
শুরু করল, প্র মে বিস্ময় ফুটল শিল্পীর চোখে, তারপর মলিন
হয়ে গেল হাসি। রানা আর একটু চাপ বাড়াতেই ফ্যাকাসে হয়ে
গেল মুখটা, ঘাম দেখা দিল কপালে। ফরসা মুখটা যখন ব্যথায়
নীল হয়ে যাচ্ছে, তখন ওর হাত একটু ঝাঁকিয়ে দিয়ে পা সরিয়ে
নিল রানা দরজার ফাঁক থেকে। নিজের হাতটা চিত করে দেখল
স্ট্যানলি আঙুল পাঁচটাই আছে কি না, তারপর দড়াম করে
লাগিয়ে দিল দরজা।
নীচে নেমে ফয়ে থেকে অ্যাডাম ক্লিপটনকে টেলিফোন করল
রানা। স্ট্যানলির ছদ্মনাম ও ঠিকানাটা জানাল তাকে, তারপর
বলল, ‘মনে হচ্ছে, টাকাটার ব্যাপারে তেমন কোনও আগ্রহ নেই
ওর মধ্যে। নিসে ফিরে যাওয়ার কথাও একবার উচ্চারণ করল।’
‘তা হলে এখানে এসেছে কী করতে?’
‘সেটা আপনিই জিজ্ঞেস করুন ওকে। আমাদেরকে ওর
পেছনে লাগানোয় রেগে গেছে লোকটা। আমার মনে হচ্ছে, কী
খুনের দায় ২১
এক কারণে যেন পালাই পালাই করছে, ওকে ধরতে হলে উড়ে
চলে আসতে হবে আপনার এখানে।’
‘আচ্ছা,’ বলল ক্লিপটন। ‘আপনাকে অনেক ধন্যবাদ,
মিস্টার রানা। চমৎকার কাজ দেখিয়েছেন। আপনাদের কাজ
শেষ, আর কোনও সাহায্য দরকার হবে না আমার।
...রাখলাম।’
‘দাঁড়ান, এক সেকেণ্ড,’ বলল রানা। ‘আমাদের ধারণা,
স্ট্যানলি এখন হোটেল বদলাবে। এক্ষুনি না এলে ওর দেখা
পাবেন না।’
‘ঠিক আছে। আপনাদের পছন্দ করছে না যখন, এখন থেকে
যা করার আমি নিজে করব, আপনাদের দায়িত্ব শেষ।
ধন্যবাদ।’ কানেকশন কেটে দিল অ্যাডাম ক্লিপটন।
চিন্তিত ভঙ্গিতে জুলফির নীচটা চুলকাল রানা। তারপর
গিলটি মিয়া ও ক্যাভিনকে নিয়ে গাড়িতে উঠে তেতলায় যা-যা
ঘটেছে সব বলল।
‘আমার সন্দো হচ্চে, সার, সব একোনও শেষ হোইনিকো।’
‘ঠিক বলেছ,’ বলল রানা। ‘তোমাদের এখন ওই
ট্র্যান্সমিটারটা উদ্ধার করতে হবে শেফার্সদের টেলিফোন থেকে।
তা নইলে ওটা পুলিশ বা টেলিফোন কোম্পানির কারও চোখে
পড়লে আজ হোক বা কাল, মস্ত ঝামেলায় জড়িয়ে যাবে রানা
এজেন্সি।’
‘মেয়েটা বেরিয়ে গেলেই ওটা খুলে লিয়ে আসব, সার।’
মাথা নাড়ল রানা। ‘দিনে-দুপুরে ও-বাড়িতে ঢোকা খুবই
রিস্কি হবে। চারপাশে অনেক লোক, অনেক বাড়িঘর। আবার
একবার টেলিফোন মিস্ত্রীও সাজা যাবে না। কাজটা সারতে হবে
তোমাদের সন্ধের পর।’
তবে অফিসে ফেরার পথে পিজিয়ন লেন হয়ে এলো ওরা।

ক্যাভিনের তোবড়ানো টয়োটা ¯িপ্রণ্টার সামান্য কাত হয়ে
দাঁড়িয়ে রয়েছে রাস্তার ধারে। মোড় ঘুরেই দাঁড় করালো রানা
গাড়ি, একটা কাগজে লিখল: গাড়িটা বিকল, মেকানিকের
অপেক্ষায় দাঁড়ানো, তারপর ক্যাভিনকে বলল, ‘এটা সাঁটিয়ে
দিয়ে এসো ওটার উইণ্ডশিল্ডে।’
অফিসে ফিরে গিলটি মিয়া তার লোকজন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে
পড়ল কাজে। রানা ঢুকল গিয়ে নিজের অফিস কামরায়। পিওন
ছুটল সবার জন্য লাঞ্চ আনতে।
প্র মেই ফোন করল রানা μেডিট রেটিং অফিসে ওর বন্ধুর
কাছে। বন্ধু জানাল: শেফার্সরা দুজন মিলে বছরে আয় করে
এগারো হাজার দুইশ’ ডলার। বিশ হাজার দিয়ে কিনেছে ওরা
বাড়িটা চার বছর আগে, পনেরো হাজার ডলার শোধ হবে
ইন্সটলমেণ্টে আগামী পনেরো বছরে। বাড়ির আসবাবও কেনা
হয়েছে ইন্সটলমেণ্টে। টাকা পরিশোধে কোনও গড়িমসি বা
অনিয়ম নেই। মেয়েটা টাইপিস্টের কাজ করে একটা রিয়েল
এস্টেট কোম্পানিতে, ফিলিপ শেফার্স ট্রান্স-আটলাণ্টিক
এয়ারলাইন্সের রিজার্ভেশন ক্লার্ক।’
‘এদেরই একটা পে−ন কদিন আগে μ্যাশ করেছে না?’
‘হ্যাঁ। ফিলিপ শেফার্স মারা গেছে ওই পে−নμ্যাশে। আর
কিছু জানতে চাস, দোস্ত?’
‘না রে, তোকে ধন্যবাদ,’ খুব ধীরে উচ্চারণ করল রানা শব্দ
ক’টা।
খুনের দায় ২৩
চার
লাঞ্চের পর একটানা সন্ধে পর্যন্ত ফাইল দেখে আজকের মত
কাজ শেষ করল রানা। মনের মধ্যে খচ্ খচ্ করছে সেই দুপুর
থেকে। সন্ধ্যা নামতে গিলটি মিয়া ও ক্যাভিন হাওয়ার্ডকে নিয়ে
বের হলো ও। প্র মে নিউ ইয়র্ক টাইমসের অফিসে গিয়ে বন্ধুর
সাহায্যে পুরনো কাগজ বের করে পে−নμ্যাশের নিউজটা মন
দিয়ে পড়ল ও আগাগোড়া। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়াদের মধ্যে
ফিলিপ শেফার্সের নাম রয়েছে। যাত্রীদের প্রায় সবারই একটা
করে পাসপোর্ট সাইজ ছবি ছাপা হয়েছে, তার নীচে বিস্তারিত
রিপোর্ট। শেফার্সের ছবির নীচে লিখেছে: এয়ারলাইন্সের
কর্মচারী হিসাবে নিখরচায় ফ্লাই করছিলেন ফিলিপ শেফার্স।
প্যারিসে ছুটি কাটিয়ে ফিরে আসবার সময় জে.এফ.কে
ইণ্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আগুনে পুড়ে
মারা যান তিনি। চেহারা সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে গিয়েছিল
তাঁরÑশনাক্ত করা গেছে সঙ্গের নাম খোদাই করা লাইটারটা
দেখে। ওটা বিমান কোম্পানির তরফ থেকে বড়দিনের উপহার
দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।
মূল খবরের সঙ্গে আর একটা মর্মস্পর্শী সাইডস্টোরিও তুলে
ধরা হয়েছে: তাঁর সঙ্গে তাঁর স্ত্রীরও প্যারিস যাওয়ার কথা ছিল।
তিনি আমাদের প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, ‘ট্রান্স-আটলাণ্টিক

এয়ারলাইন্সে আমার স্বামীর চাকরির পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে
তার সঙ্গে প্যারিস থেকে ঘুরে আসার জন্যে আমাকেও ফ্রি
টিকেট দেয়া হয়েছিল। আমার কোম্পানী ছুটি মঞ্জুরও করেছিল।
কিন্তু আমার ইমিডিয়েট বস্ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় সে-ছুটি
বাতিল হয়ে যায়। এর ফলে আমি প্রাণে বেঁচে গেছি বটে, কিন্তু
এ-বাঁচা অর্থহীন।’
পত্রিকা অফিস থেকেই টেলিফোনে নিউ ইয়র্ক পুলিশের
ক্যাপটেন জোসেফ μাউলিকে চাইল রানা। কর্তব্যরত অফিসার
জানালেন, μাউলির ডিউটি রাত দশটা থেকে। যদি তাঁর পক্ষে
কোনও সাহায্য...
‘বেশ, দশটার পরেই ফোন করব,’ বলে রিসিভার নামিয়ে
রাখল রানা।
পত্রিকা অফিস থেকে বেরিয়েই চলল ওরা কুইন্সভিল
রেসিডেনশিয়াল এরিয়ার দিকে। যাওয়ার পথে ক্যাভিনকে
জিজ্ঞেস করল রানা, ‘কীভাবে ওটা খুলে আনবে বলে ভাবছ?’
‘বাইরে থেকে একটা ফোন করব, সার, আগে,’ বলল তরুণ
শিক্ষানবীশ। ‘যদি কেউ না ধরে, তা হলে বুঝতে হবে বাড়ি
খালি। যন্ত্রটা খুলে আনতে আমার একমিনিটের বেশি লাগবে না,
সার।’
‘হাঁ, এতক্খনে জায়গাটা লিরিবিলি হয়ে যাওয়ার কতা,’
বলল গিলটি মিয়া। ‘তবে ঢোঁকার আগে তোমার পিও ছ্যাঁকরা
গাড়িটা ও-বাড়ির কাচ থেকে সরিয়ে লিলে ভাল হয়,’ পরামর্শ
দিল সে, ‘তারপর নিচ্চিন্ত হবার লেগে হালকা দুটো টোকা দেবে
দরজায়, সাড়া না পেলে তবেই গে ঢোঁকা।’
বাঁক ঘুরে পিজিয়ন লেনে ঢুকতে গিয়ে চমকাল রানা। সম্পূর্ণ
বদলে গেছে এলাকার পরিবেশ। শেফার্সদের বাড়ির সামনে
দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা লরিসহ তিনটে জিপগাড়িÑরাস্তায়
খুনের দায় ২৫
গিজগিজ করছে পুলিশ, এলাকার বেশ কিছু কৌতূহলী লোকও
আছে তাদের সঙ্গে। ব্রেক করতে গিয়েও মত পরিবর্তন করল
রানা। জটলার পাশ দিয়ে ধীর গতিতে এগিয়ে গেল সামনে।
‘এইবার?’ জিজ্ঞেস করল রানা।
ক্যাভিনকে পরামর্শ দিল গিলটি মিয়া। ‘আর কী! আজ আর
হোলোনিকো। যাও, কেবিন ভায়া, লিয়ে এসো তোমার গাড়ি।
আগে হুডটা তুলে যন্তোপাতি লাড়াচাড়া করবে, তারপর ইস্টাট
দেবে। ওই জটলার কাচে গিয়ে জেনে আসবে কী হয়েচে, এত
ভিড়-ভাড়াক্কা কীসের। বুজলে?’
আধঘণ্টা পর ফিরে এল ক্যাভিন, একবার হর্ন বাজিয়ে পাশ
কাটিয়ে চলে গেল আরও সামনে। রানার গাড়ি চলল ওর পিছু
পিছু। কয়েকটা ব−ক পেরিয়ে তারপর থামল ওরা। নেমে এল
ক্যাভিন।
‘সর্বনাশ হয়ে গেছে, সার!’ বলল ও। ‘রিটা শেফার্স আজ
দুপুরে কোন্ এক হোটেলে গিয়ে খুন করেছে আমাদের
স্ট্যানলিকে। একেবারে হাতে-নাতে ধরেছে ওকে পুলিশ
পিস্তলসহ।’
‘আয়-হায়!’ বলল গিলটি মিয়া। ‘এত দৌড়ঝাঁপ করেও
টাকাগুনো দোয়া গেল না ছোঁড়াটার হাতে!’
‘স্বীকারোক্তি দিয়েছে মেয়েটা?’ জিজ্ঞেস করল রানা।
‘না, সার। শুনলাম, খুনের পর থেকে একটা টুঁ শব্দও করেনি
রিটা শেফার্স। গ্রেফতারের পর কোনও উকিলের সাহায্যও
চায়নি। এক্কেবারে বোবা।’
মাথা ঝাঁকাল রানা। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে রানা বলল,
‘চলো, অফিসে ফিরি।’
অফিসে পৌঁছে টেপ রেকর্ডারটা নিয়ে সবাই মিলে ঢুকল
রানার কামরায়। টেবিলের উপর ওটা রেখে টেপটা রিওয়াইণ্ড

করে নিয়ে চালিয়ে দিল গিলটি মিয়া শুরু থেকে। রিটা শেফার্সের
মায়ের কল শোনা গেল প্র মে। মেয়েকে ধৈর্য ও সাহস না
হারিয়ে বর্তমান বিপর্যয় মোকাবিলা করার ব্যাপারে অনেকক্ষণ
ধরে নানানভাবে উপদেশ দিলেন মহিলা। তারপর শোনা গেল
রবার্ট স্ট্যানলির অধৈর্য কণ্ঠ, ‘কী ব্যাপার! দশ মিনিট ধরে চেষ্টা
করছি, লাইন পাচ্ছি না। কার সঙ্গে কথা বলছিলে?’
‘মা। ওহ্-হো! মাকে তো বলতেই ভুলে গেছি, আগামী
কয়েকটা দিন থাকছি না এখানে।’
‘পরে ফোন করে জানিয়ে দিলেই হবে। একটা ব্যাগে
তোমার জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও, তবে এখুনি বেরিয়ে পোড়ো না,
আমি ফোন করলে তারপর। ক্লিপটনের লেলিয়ে দেয়া ত্যাড়া
এক প্রাইভেট আই একটু আগে এসেছিল এখানে, ব্যাটা কী করে
জানি খুঁজে বের করে ফেলেছে আমাকে। তাই এই হোটেল
ছেড়ে এখনই সরে যেতে হচ্ছে।’
‘তোমার খোঁজ বের করল কেমন করে ওরা? ইশ্শ্! এসবের
মধ্যে না জড়ালেই আমরা ভাল করতাম। ভীষণ ভয় লাগছে
আমার, ফিল! এত টেনশন হচ্ছে যে...’
‘মাথা ঠাণ্ডা রাখো, ডারলিং। কিচ্ছু ভেবো না তো! ভয়
পাওয়ার মত কিছুই ঘটেনি এখন পর্যন্ত, ভবিষ্যতেও ঘটবে না।
উত্তরাধিকারের ব্যাপারে আমার কোনও আগ্রহ নেই জানিয়ে
দিয়ে আমি ভাগিয়ে দিয়েছি ব্যাটাকে। আরেকখানে সরে গিয়েই
তোমাকে ফোন দেব। সাহস হারিয়ো না, নিজেকে শান্ত রাখো,
লক্ষ্মী। বড়লোক হয়ে যাচ্ছি আমরা শীঘ্রি।’
এরপরের কলটা কতক্ষণ পর এল তা বোঝা গেল না, কারণ
টেলিফোনের কথা শেষ হয়ে যেতেই টেপ রেকর্ডার বন্ধ ছিল।
আবার সেই একই লোকের গলা শোনা গেল। বলছে, ‘সরে
এসেছি, রিটা। ম্যানহাটনের ছোট, অখ্যাত, পুরোনোÑতবে
খুনের দায় ২৭
পরিষ্কার-পরিচ্ছনড়ব একটা হোটেলে; নাম মারলিন। দূর থেকেই
একটা মাছের ছবি দেখতে পাবে। ডেস্কে বলে রাখব আমি, তুমি
সোজা দোতলার একশ’ তিন নম্বর কামরায় চলে আসবে।
এখানে কেউ খুঁজে পাবে না আমাদের। ব্যাগ গুছিয়ে তুমি তৈরি
তো?’
‘হ্যাঁ।’
‘গুড! গাড়িটা গ্যারেজেই থাক, একটা ট্যাক্সি নিয়ে চলে
এসো তুমি। এখন বাজে তিনটে। এখনই রওনা হলে পৌঁছে
যাবে...’
গুলির শব্দে চমকে উঠল ওরা তিনজন। চাপা
আওয়াজÑকিন্তু শব্দটা যে গুলির তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
পিস্তলের নলটা সম্ভবত লোকটার পিঠে ঠেকিয়ে টানা হয়েছে
ট্রিগার।
‘উ-উ-হ!’
‘কী হলো! ফিল! ফিল! কীসের...’
খটাং শব্দে μেডলে রাখল কেউ ফোনের রিসিভার। কেটে
গেল কানেকশন। থেমে গেল টেপ।
প্র ম থেকে শেষ পর্যন্ত টেপটা আবার একবার শুনল রানা।
ডুবে গেল গভীর চিন্তায়। ওকে চিন্তামগড়ব দেখে আলগোছে
কামরা থেকে বেরিয়ে গেল গিলটি মিয়া তার সাগরেদকে নিয়ে।
ঠিক দশটায় ফোন করে নিউ ইয়র্ক পুলিশের ক্যাপটেন
জোসেফ μাউলিকে সিটেই পেল রানা। বহুদিনের পরিচয়,
রানার গলা পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতে যাচ্ছিলেন μাউলি;
থমকে গেলেন ওর প্রশড়ব শুনে। জানতে চাইলেন, ‘কোন্ খুনটা
মিস্টার রানা? মারলিন হোটেলের সেই রবার্ট স্ট্যানলি?’
‘হ্যাঁ। মৃত্যুর সঠিক সময়টা আমার জানা দরকার।’
‘ঠিক আছে, জেনে নিয়ে জানাচ্ছি। আপনি অফিসে না

বাসায়?’
‘অফিসে।’
‘ঠিক আছে, জানাচ্ছি... ভাল কথা, এই কেসে কার ব্যাপারে
আপনি ইণ্টারেস্টেড?’
‘প্র মত, রিটা শেফার্সের ব্যাপারে।’
‘খুনি মেয়েটাকে ডিফেণ্ড করবেন নাকি?’
‘চেষ্টা করব।’
‘কী বললেন? আপনি একটা খুনির হয়ে...’
‘খুনটা ও করেনি, ক্যাপটেন,’ শান্ত কণ্ঠে বলল রানা।
‘অ্যাঁ?’ মনে হলো খাবি খেলেন ক্যাপটেন μাউলি। ‘বলেন
কী, মিস্টার রানা? হাতে-নাতে ধরা হয়েছে ওকে! আপনি প্রমাণ
করতে পারবেন যে, কাজটা ওর নয়?’
‘পারব। তবে প্রমাণটা নিñিদ্র করতে হলে আপনার সাহায্য
লাগবে। মেয়েটি নিরপরাধ।’
থমকে গেলেন অফিসার। চুপ করে থাকলেন কিছুক্ষণ।
রানার মন্তব্য ঘাবড়ে দিয়েছে তাঁকে। তা হলে কি ভুল মানুষকে
ধরে এনেছেন?
‘সত্যিই যদি নিরপরাধ হয়,’ বললেন ক্যাপটেন, ‘একশোবার
সাহায্য করব আমি। আর আসল খুনি যদি ধরা পড়ে, তা হলে
তো সোনায় সোহাগা! আমি কি চলে আসব আপনার অফিসে?’
‘আমিই আসছি আপনার কাছে। ইতিমধ্যে মৃত্যুর সঠিক
সময়, আর আজ বিকেলে ওই হোটেলে ঠিক কী কী ঘটেছে
জেনে নিয়ে তৈরি হয়ে থাকুন। বলা যায় না, আসল খুনি ধরা
পড়তেও পারে! ইন দ্যাট কেস, দ্য হোল μেডিট গোজ টু ইউ।
ঠিক আছে?’
‘হানড্রেড পার্সেণ্ট!’ বললেন উল−সিত ক্যাপটেন। ‘তা হলে
চলে আসুন। রাখলাম।’
খুনের দায় ২৯
পাঁচ
রাত দুটো দশে ফোন করল রানা লইয়ার অ্যাডাম ক্লিপটনের
বাড়ির নম্বরে। রানার গলা শুনেই মহা খাপ্পা হয়ে উঠল
আইনজীবী, ‘মিস্টার মাসুদ রানা, রাত কয়টা বাজে
এখনÑআপনার কি সময়জ্ঞান বলতে...’
‘দুটো বেজে এগারো,’ বলল রানা। ‘আপনার সঙ্গে এখনই
একবার দেখা হওয়া দরকার আমার। আশাকরি রবার্ট স্ট্যানলির
মৃত্যুর খবরটা জানা আছে আপনার?’
‘পুলিশ জানিয়েছে আমাকে। ওর লাশের পকেটে আমার
লেখা চিঠি পাওয়া গেছিল। কিন্তু, রানা, এই রাতে আপনি...’
‘ক্লিপটন, আধঘণ্টা পর আপনাকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে
নেব আমি। তৈরি থাকবেন!’ বলেই লাইন কেটে দিল রানা।
ঠিক আধঘণ্টা পর গেটের সামনে এসে দাঁড়াল রানার গাড়ি।
বড়সড় একটা লনের ওপাশে আঁধার হয়ে আছে উকিলের
বাড়িটা। গেটের পাশে একটা পিলারের গায়ে হেলান দিয়ে
অপেক্ষা করছিল ক্লিপটন, রানা থামতেই লম্বা পা ফেলে এগিয়ে
এল। মাথায় বড়সড় একটা টুপি পরেছে, গায়ে গাঢ় রঙের দামি
সুট, হাতে নরম পিগস্কিনের পাতলা গ−াভস। টুপি আর গ−াভস
দেখে কিছুটা স্বস্তি বোধ করল রানা। পাশের সিটে উঠে বসতে
বসতে জিজ্ঞেস করল লইয়ার, ‘আমার সঙ্গে যে দেখা করতে

আসছেন একথা আর কে কে জানে, রানা?’
‘এত রাতে কোথায় পাব জানাবার লোক? তা ছাড়া জানাতে
যাবই বা কেন?’ বলে গাড়ি ছেড়ে দিল রানা। ভাবছে, কখন
জানি রেগে গিয়ে মেরে বসে লোকটা!
শহরতলির শেষ প্রান্তে পৌঁছে বাঁক নিয়ে একটা খোয়া
বিছানো, সরু, নির্জন রাস্তায় ঢুকল রানার গাড়ি। কিছুদূর গিয়ে
থেমে দাঁড়াল ঝোপঝাড়ের পাশে।
‘থামছেন যে?’ জানতে চাইল ক্লিপটন। ‘রাস্তার মাঝখানে
থেমে দাঁড়াচ্ছেন কেন?’
আড়চোখে রানা দেখল, গ−াভ পরা হাত দুটো কোলের উপর
রাখা। একটু যেন বেশি শান্ত লাগছে লইয়ারকে। রানা ভাবল,
ওর যদি কোথাও কোনও ভুল হয়ে থাকে, তা হলে বেইজ্জতির
সীমা-পরিসীমা থাকবে না। ‘কথা আছে,’ বলল ও। ‘আপনি
আমাদেরকে কাজ দিয়েছিলেন আপনার একজন মক্কেলকে খুঁজে
দেবার জন্যে, যাকে হারিয়ে ফেলেছিলেন আপনি। আমরা
আপনার সে-কাজটা করে দিয়েছি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে,
ব্যাপারটা গড়িয়েছে গিয়ে খুনে। খুন হয়ে গেছে লোকটা!’
‘এই কথা বলতে এত রাতে আমাকে ঘুম থেকে তুলে
এনেছেন, রানা? স্ট্যানলির সঙ্গে কোথাকার কোন্ মিসেস
শেফার্সের গোপন প্রেম ছিল কি ছিল না, কেন সে স্ট্যানলিকে
খুন করল; এসবের সঙ্গে আমার বা আপনার কী সম্পর্ক?’
‘আপনার কথা বলতে পারব না, ক্লিপটন, কিন্তু আমার
সম্পর্ক আছে। আপনিই জড়িয়েছেন আমাকে। আমি আপনাকে
বলেছি, কাজটা আমাদের লাইনে পড়ে না, আর কাউকে
দিনÑআপনি জোর করে চাপিয়েছেন ওটা রানা এজেন্সির ঘাড়ে;
কেন তা আপনিই বলতে পারবেন। তখন জানতাম না, এভাবে
খুন হয়ে যাবে আমাদের টার্গেট।’
খুনের দায় ৩১
‘আপনার বক্তব্য আমার কাছে পরিষ্কার হচ্ছে না, রানা।
মনে হচ্ছে, মেয়েলোকটার হাতে স্ট্যানলির খুন হয়ে যাওয়াটা,
আপনার ধারণা, আমি ঠেকাতে পারতাম!’
‘ক্লিপটন, ও এই খুনটা করেনি। ওর টেলিফোনে আমরা
আড়ি পাতা যন্ত্র ফিট করেছিলাম। গতকাল সকাল থেকে বিকেল
পর্যন্ত রিটা শেফার্স-এর ফোনে যে যা বলেছে, সব রেকর্ড করা
আছে আমাদের টেপে। পেছনের সিটেই রাখা আছে রেকর্ডারটা,
আপনি চাইলে আমি বাজিয়ে শোনাতে পারি। পুলিশের
মেডিকেল এগজামিনার স্ট্যানলির মৃত্যুর সময় নির্ধারণ
করেছেন: দুপুর তিনটে থেকে তিনটে দশ। আমার টেপ বলছে
তিনটের সময় পিজিয়ন লেনের বাড়ি থেকে টেলিফোনে কথা
বলছিল মিসেস শেফার্স স্ট্যানলির সঙ্গে, ঠিক সেই সময়েই
গুলির শব্দ হয়। বুঝতে পারছেন? দশ মিনিটের মধ্যে
ম্যানহাটনে পৌঁছানো সম্ভব ছিল না ওর পক্ষে। রিটা শেফার্সের
অকাট্য অ্যালিবাই রয়েছে আমার টেপে।’ কয়েক সেকেণ্ড চুপ
করে থাকল রানা। লক্ষ করল উকিলের হাত দুটো এখনও
কোলের উপর রাখা। ‘গুলিটা করে আপনি মারলিন হোটেলের
ওই কামরাতেই ওঁৎ পেতে অপেক্ষায় ছিলেন মেয়েটির
জন্যেÑজানতেন ও আসছে। মেয়েটি যখন পাগলের মত
কামরায় ঢুকল, আপনি মাথায় বাড়ি মেরে অজ্ঞান করে পিস্তলটা
ধরিয়ে দিলেন ওর হাতে। তারপর নিশ্চিন্তে বেরিয়ে গিয়ে
পুলিশকে খবর দিলেন, একটা গুলির আওয়াজ শোনা গেছে
মারলিন হোটেলের দোতলা থেকে। পুলিশও গিয়ে হাতে-নাতে
ধরল ওকে। আপনার খুনের দায় চাপল রিটার কাঁধে।’ হাসল
রানা, ‘এবার কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে, জনাব?’
শান্ত ভঙ্গিতে বসে আছে লইয়ার। তার মনের ভিতর কী
চলছে, সে-ই বলতে পারবে। পাশ ফিরে চেয়ে রয়েছে রানার

মুখের দিকে। হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে রানার আসল
উদ্দেশ্যটা কী। আড়চোখে আর একবার ওর হাতের দিকে
তাকাল রানাÑঅলস ভঙ্গিতে রাখা ও দুটো কোলের উপর।
‘উদ্ভট এক গল্প ফেঁদেছেন, রানা,’ বলল সে কিছুক্ষণ পর।
‘আপনার ইচ্ছেটা কী? কোনও ধরনের ব−্যাকমেইল?’
‘আমি কি আপনার কাছে টাকা-পয়সা চেয়েছি, ক্লিপটন?’
মাথা নাড়ল রানা। ‘আপনি জানেন, আমরা সবসময় ন্যায়ের
পক্ষে কাজ করতে চেষ্টা করি। কোনও বদমাইশ অনর্থক কাউকে
খুন করে সে-খুনের দায় অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেবে নিরীহ একটা
মেয়ের ওপর, আর আমরা চুপচাপ সেটা চেয়ে চেয়ে
দেখবÑবাংলাদেশের মানুষ আমরা অতটা হৃদয়হীন, পাষণ্ড নই,
ক্লিপটন। আমরা আপনাকে সাবধান করিনি একথা বলতে
পারবেন না। তারপরেও কাজটা আপনি আমাদের ঘাড়ে
চাপালেন। আপনার জানা উচিত ছিল, মক্কেল সম্পর্কে খোঁজ
নেয়াও আমাদের কাজের মধ্যে পড়ে। যখন জানলাম, আপনি
দেউলিয়া হওয়ার পথে, শেয়ার ব্যবসায় মার খেয়ে আর্থার
হেনরির ফাণ্ড থেকে কয়েক দফায় মোটা অঙ্কের টাকা তুলে
ফেঁসে গেছেন, তখন ভাল করে নজর দিতেই হলো।
উত্তরাধিকারীরা টাকার জন্যে চাপ দিচ্ছে, দেবেই, টাকাটা
ওদের। স্ট্যানলিকে পাওয়া যাচ্ছে না, একথা বলে বহুদিন
ওদেরকে ঠেকিয়ে রেখেছিলেন এই ভেবে যে, আপনার কাকা
মারা গেলে তার টাকা দিয়ে ফাণ্ড পূরণ করে দেবেন। কিন্তু কাকা
আর মরে না। তারপর ওরা যখন নিজেরাই স্ট্যানলির খোঁজ বের
করে দিল, তখন তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বাধ্য হলেন
আপনি অনিচ্ছাসত্ত্বেও। কিন্তু পে−নটা μ্যাশ করল। ভাবলেন,
বাঁচা গেল বুঝি; কিন্তু না, জানা গেল জীবিত তিনজনের মধ্যে
রবার্ট স্ট্যানলিও একজন। ওকে গায়েব করে দিয়ে বা খুন করে
খুনের দায় ৩৩
বাঁটোয়ারা পিছিয়ে দেওয়ার প−্যান ছিল আপনার আগে থেকেই।
কিংবা হয়তো ভেবেছিলেন, ওর সঙ্গে একটা সমঝোতায় এসে
ওকে দিয়ে কেস করাবেন আরও বেশি টাকার জন্যেÑফলে
বাঁটোয়ারা পিছিয়ে যাবে আরও। মোট কথা, আপনার কাকার
মৃত্যু পর্যন্ত যেমন করে হোক ঠেকিয়ে রাখতে হবে ভাগাভাগিটা।
কিন্তু স্ট্যানলি হাসপাতাল থেকে গায়েব হয়ে যাওয়ায় চিন্তায়
পড়ে গেলেন আপনি, ভাবলেন কবে না জানি হাজির হয়ে যায়
ছোকরা টাকার জন্যে। আরও ভয়, কবে না জানি ও যোগাযোগ
করে বসে অন্যান্য ভাগীদারদের সঙ্গে! কাজে কাজেই আমাদের
সাহায্য আপনার দরকার হয়ে পড়ল।’
‘রানা, মিথ্যে ভ্যাজর-ভ্যাজর করছ!’ সম্বোধনটা তুমিতে
নেমে আসায় মনে মনে খুশি হলো রানা। ক্লিপটনের কঠোর মুখ
ঘামে চকচক করছে। ‘তোমাকে আমি নিখোঁজ এক লোককে
খুঁজে বের করবার কাজ দিয়েছিলাম, তুমি সে কাজ করেছÑএর
মধ্যে কোনও অন্যায় বা ঘোরপ্যাঁচ নেই। লোকটা যদি পরবর্তী
সময়ে খুন হয়ে যায়, সে-দায় কিছুতেই আমার ওপর বর্তায় না!’
রানা ভাবছে, এখনও পিস্তল বের করছে না কেন লোকটা!
বলল, ‘এই মৃত্যু বণ্টনের কাজটা দেরি করিয়ে দেবে না বলতে
চান? যেটুকু সময় পাওয়া যাবে তার মধ্যে যদি আপনার কাকা
মারা না যায়, তাকে মারাও তো আপনার জন্যে কঠিন কোনও
কাজ নয়। কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করছেন, যেন আপনার কাকা
মারা যায়, কিন্তু আসল কথাটাই তো আপনার জানা নেইÑওই
লোকটা রবার্ট স্ট্যানলি ছিল না।’
বজ্রপাতের পরমুহূর্তের স্তব্ধতা। আত্মা চমকে গেছে অ্যাডাম
ক্লিপটনের।
‘তোমার এই গাঁজাখুরি গপ্পো শোনার ধৈর্য আর আমার নেই,
রানা। আমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে...’

‘পে−ন μ্যাশেই মারা গিয়েছিল আসলে রবার্ট স্ট্যানলি।’
কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থাকল রানা। ‘ফিলিপ শেফার্সও ছিল
একই পে−নেÑবেঁচে যাওয়াদের একজন। স্ট্যানলি মনে করে
আপনি এই ফিলিপ শেফার্সকে খুন করেছেন, ক্লিপটন। দুর্ঘটনায়
একটুও জখম হয়নি শেফার্স, বরং ঝাঁকি খেয়ে বুদ্ধি খুলে
গিয়েছিল ওর। ইনশিওরেন্সের মোটা টাকার জন্যে মাথায় খেলে
গিয়েছিল পরিচয় বদলের আইডিয়াটা। স্ট্যানলির জ্বলন্ত
মৃতদেহের পাশে পড়ে থাকা ওয়ালেটটা কুড়িয়ে নিয়ে নিজের
লাইটার ছুঁড়ে দিয়েছিল ওর লাশের গায়ে। স্ট্যানলি হিসেবে
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার একঘণ্টার মধ্যে ফোন পেয়ে ওর স্ত্রী
রিটা শেফার্স এসে ওকে নিয়ে যায়। ফিলিপ শেফার্সের মতলবটা
বোঝা কঠিন কিছু নয়: ইনশিওরেন্সের টাকা ছাড়াও ওর বউ
ট্রান্স-আটলাণ্টিক এয়ারলাইন্স থেকে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ
তুলবে, তারপর দুজন মিলে দেশান্তরি হবে। আগুনে পুড়ে ভস্ম
হয়ে যাওয়ায় কোন্টা কার লাশ চেনার কোনও উপায় ছিল না।
সেই অনিশ্চয়তার সুযোগ নিয়েই...’
‘এটা তোমার আরেক ধাপ্পাবাজি!’ বলে উঠল ক্লিপটন। ওর
চোখ দুটোকে নীল মার্বেলের মত লাগছে এখন দেখতে। সাপের
মত ঠাণ্ডা দৃষ্টি সে-চোখে।
‘আপনার ওই তিরিশ হাজার ডলারের লোভ যে ফিলিপকে
বেশ কিছুটা দুলিয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। স্ট্যানলির
ওয়ালেটে আপনার চিঠি পেয়ে ওই টাকার ব্যাপারে জেনেছিল
সে। কিন্তু সামনে আসতে ভয় পেয়েছে বেচারা, ভেবেছে,
হয়তো আপনার বা স্ট্যানলির পরিবারের কারও কাছে ধরা পড়ে
যাবে যে ও আসল লোক নয়। ও তো জানত না, আপনি বা
স্ট্যানলির ভাগীদারদের কারও জানা নেই ও দেখতে কেমন।
ডিয়ার অ্যাডাম ক্লিপটন, আর সব অ্যামেচারদের মতই নিরেট
খুনের দায় ৩৫
গাধামি করেছেন আপনি। মিসেস শেফার্স ছাড়া একমাত্র
আপনিই জানতেন কোথায় লুকিয়ে আছে স্ট্যানলি, ওরফে
ফিলিপ শেফার্স। গতকাল দুপুরে আপনাকে যখন আমি
টেলিফোনে জানালাম, পোর্টল্যাণ্ড হোটেলের ২৩২ নম্বর কামরায়
পল ব্রেনান নাম নিয়ে আছে রবার্ট স্ট্যানলি, ছুটলেন আপনি
সেখানে। কিন্তু পৌঁছেই জানতে পারলেন, হোটেল ছেড়ে চলে
যাচ্ছে স্ট্যানলি। ওর পিছু নিয়ে আপনিও চলে গেলেন
ম্যানহাটনের মারলিন হোটেলে। তারপর আড়াল থেকে যখন
শুনলেন রিটা শেফার্স নামে একটা মেয়েকে ডাকছে স্ট্যানলি ওই
হোটেলে, তখনই মাথায় ঝিলিক দিল শয়তানি বুদ্ধি। ওর পিঠে
পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করলেন আপনি, তারপর ঘাপটি মেরে
অপেক্ষা করলেন রিটার জন্যে।’
দরদর করে ঘামছে এখন অ্যাডাম ক্লিপটন। মাথা থেকে
টুপিটা সরাল। বোঝা গেল, ওখানেই ছিল ওর দুই শটের
ডেরিঞ্জার পিস্তলটা। রানার বুক বরাবর তাক করে ধরল সে
ওটা। ‘তোমার এই বেপরোয়া দুঃসাহসের প্রশংসা করতে পারছি
না, মাসুদ রানা। গাধামি আমি নই, তুমিই করেছ এই নির্জন
জায়গায় আমাকে নিয়ে এসে। কষ্ট করে সত্যটা আবিষ্কার করেছ
বটে, কিন্তু তাতে লাভ হলো না কিছুই। বুঝতেই পারছ, এত
কথা বলে নিজের মৃত্যু নিজেই ডেকে এনেছ তুমি। বাধ্য হয়েই
তোমাকে এখন খুন করতে হচ্ছে আমার!’
‘আরে, করেন কী, করেন কী!’ আর্তনাদ করে উঠল রানা।
‘দেখুন, স্টিয়ারিং ধরে আছি আমি দুই হাতে। ভয় পেয়ে
তাড়াহুড়োয় কিছু না করে আমার কথাটা শেষ করতে দিন। তার
আগে গ−াভ কম্পার্টমেণ্টটা খুলে ট্র্যান্সমিটারটা একনজর দেখে
নিন। এতক্ষণ আমাদের যা কথা হয়েছে সব শুনেছেন ক্যাপটেন
জোসেফ μাউলি, সেইসাথে সবকিছু রেকর্ডও হয়ে গেছে

পুলিশের টেপ রেকর্ডারে। আমাদের সব কথা ব্রডকাস্ট করেছি
আমি, ক্লিপটন! খুলেই দেখুন সামনের গ−াভ কম্পার্টমেণ্টটা।’
ঠাণ্ডা, নীল দৃষ্টি রানার চোখের উপর স্থির রেখে
কম্পার্টমেণ্টটা খুলল ক্লিপটন, দস্তানা পরা বামহাত বাড়িয়ে বের
করে আনল ট্র্যান্সমিটারটা। ধারা বিবরণীর মত বলে চলেছে
রানা, ‘খুবই শক্তিশালী জিনিস, রেঞ্জ দু’হাজার গজেরও বেশি,
পুলিশের...’
‘এসব চালবাজি তোমাকে রক্ষা করতে পারবে না, রানা।
এটা ট্র্যান্সমিটার না কচু! ট্র্যান্সমিটার আমি চিনি না মনে করেছ?
এর অ্যাণ্টেনা কোথায়? টিউব কোথায়? মাইμোফোন কোথায়?
ধোঁকা দেয়ার...’
‘নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে আপনার...’
দপ্ করে চারপাশ থেকে একই সঙ্গে জ্বলে উঠল অনেকগুলো
ফ্ল্যাশলাইট। বিশালদেহী ক্যাপটেনের দু’পাশে দাঁড়িয়ে আছে
গিলটি মিয়া ও তার স্যাঙাৎ ক্যাভিন হাওয়ার্ড। প্রচণ্ড এক হাঁক
ছাড়লেন ক্যাপটেন, ‘ঘিরে ফেলেছি আমরা তোমাকে, ক্লিপটন!
ড্রপ দ্য গান!’
চারপাশের ঝোপ-ঝাড় থেকে সাব-মেশিনগান হাতে বেরিয়ে
এল আট-দশজন কমব্যাট পুলিশ। আতঙ্কে বিকৃত হয়ে গেছে
অ্যাডাম ক্লিপটনের চেহারা। হতচকিত ভাবটা কাটিয়ে উঠে
ঠেসে ধরল ডেরিঞ্জারটা রানার পাঁজরে। ‘বেরোও, রানা! বেরোও
গাড়ি থেকে! তোমাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করব আমি!’
ক্লিপটনের কব্জি চেপে ধরল রানা। ধস্তাধস্তি চলছে, এমনি
সময়ে গিলটি মিয়ার মার্বেল-পিস্তল থেকে ছুটে এল একটা
অব্যর্থ গোলা। মার্বেলটা ঠকাস করে ক্লিপটনের টাকে লেগে
পিছলে বেরিয়ে গেল জানালা দিয়ে। ব্যথায় চেঁচিয়ে উঠল খুনি
লইয়ার। টান দিয়ে দু’পাশের দরজা খুলে ফেলল দু’জন আর্মড
খুনের দায় ৩৭
পুলিশ।
‘আমি শেষ!’ দাঁতে দাঁত চেপে বলল ক্লিপটন। ‘কিন্তু
তোমাকেও ছাড়ছি না, রানা!’ বলেই টিপে দিল সে ট্রিগার। ছোট
মরিচের ঝাল বেশিÑপ্রচণ্ড আওয়াজ হলো গুলির। এটাও রেকর্ড
হয়ে গেল টেপ রেকর্ডারে।
এতক্ষণে হাসি ফুটল রানার মুখে। বলল, ‘এবার সত্যিই
মরলেন, মিস্টার ক্লিপটন। আপনাকে আর বাঁচাবার সাধ্য নেই
কারও।’
গুলির আওয়াজ শুনে ছুটে গাড়ির পাশে চলে এল গিলটি
মিয়া। হতচকিত, নিষ্পাপ দৃষ্টি রাখল রানার মুখে, ‘আপ-
আপনাকে লেগেচে, সার?’
‘হ্যাঁ, বেশ জোরে ধাক্কা লেগেছে।’
কোটের ল্যাপেল তুলে নীচে পরা বুলেটপ্র“ফ ভেস্টটা
দেখিয়ে দিল রানা।
***
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×