রামায়ন: রাম, লক্ষন ভরত আর শত্রুঘ্নের জনম কাহিনী
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
রামায়নের মূখ্য পুরুষ চরিত্র রাম ও তার অনুজ ভরত লক্ষন ও শত্রুঘ্নের জন্ম বেশ বিচিত্র ও মজার। শুনুন তাদের জন্ম কথা। প্রথমে একটু পেছনে যাই।
অযোধ্যার রাজা ছিলেন অজ আর রানী ছিলেন ইন্দুমতি। তাদের এক ছেলে দশরথ। দশরথের বয়স যখন এক বছর তখন অজ আর ইন্দুমতি পরলোক গমন করেন। শিশু দশরথকে তখন কে দেখবে? ঠিক তখন বশিষ্ঠ মুনি তাকে নিয়ে গেলেন নিজ আশ্রমে। সেখানে তাকে শেখালেন বিভিন্ন শাস্ত্র, অস্ত্রবিদ্যা শিখালেন আরো দিলেন অন্যান্য প্রশিক্ষন। পাচ বছর বয়সে তিনি সিংহাসনে আরোহন করেন। ভৃগুরাম মুনি তাকে নিজ অস্ত্র দিলেন, শেখালেন শব্দভেদী বানের (তীর) ব্যাবহার।
তার বয়স যখন ত্রিশ বছর তখন কোশল রাজার কন্যা কৌশল্যাকে বিয়ে করেন।
এরপর গরিরিাজ কন্যা কৈকেয়ীর স্বয়ম্বরায় রাজা দশরথ গেলে বাকি রাজাগন তাকে সসম্মানে কৈকেয়ীর সাথে বিয়ে দিয়ে দেন, তারা কোন আপত্তি করেননি।
এরপর রাজা দশরথ সিংহলের রাজা সুমিত্রের পরমা সুন্দরী কন্যা সুমিত্রাকে বিয়ে করেন। সুমিত্রাকে দেখে বাকি দুই রানী কৌশল্যা আর কৈকেয়ী হিংসায় তার দুর্ভাগ্যের জন্য শিবের আরাধনা করতে থাকেন।
রাজা দশরথ তিন সুন্দরী স্ত্রী নিয়ে মহানন্দে অন্তপুরে দিন কাটায় আর অন্যদিকে রাজ্যে অনাবৃস্টি, খরাতে ফসল সব ধ্বংশ হয়ে গেল। ণাখেয়ে চারিদিকে লোক মারা যেতে লাগল আর তখন রাজার হুশ ফিরল। রাগে রাজা গেলেন স্বর্গলোকে এর প্রতিকারের জন্য। ইন্দ্র তাকে বুঝ দিলেন, তারপর তিনি গেলেন শনির সাথে দেখা করতে যদি তার আনুকুল্য পাওয়া যায়। শনি ঘর থেকে রাজার দিকে তাকানো মাত্র রাজা দশরথের রথ ভেঙ্গে টুকরা, রাজা রথ থেকে পড়তে শুরু করলেন। তার অবস্হা দেখে জটায়ু নামে এক পাখী তাকে নিজ পাখায় আশ্রয় দিল। তাতে রাজা প্রানে বাচলেন।
রাজা আবার গেলেন শনির কাছে, তখন শনি বললেন তুমি আবার রাজ্যে গেলে তোমার রাজ্যে বৃস্টি হবে ফসল টসল সবই হবে, আর তোমার ঘরে স্বয়ং নারায়ন পুত্ররুপে জন্ম নিবেন। এই ভাবে খরা কাটল আর রাজ্যে সুখ ফিরে আসল।
এরপর বহুকাল কেটে যায়। রাজার পুত্র সন্তান আর জন্ম গ্রহন করেনা। অন্যদিকে রাবন নামে রাক্ষসরাজ প্রচন্ড প্রতাপে তখন লংকায় রাজত্ব করছিলেন। তিনি ব্রম্মার বরে অমর ছিলেন।
সেই বর পেয়ে তিনি মনুষ্য দেবতা সবাইকে দারুন হেনস্হা করছিলেন। নারায়ন তখন রাবন বধ করার জন্য গরুড় নামক এক অসাধারণ ক্ষমতাবান পাখিকে নিয়ে রাবন মারতে যাবার পরিকল্পনা করেন। তখন ব্রম্মা তাদের বুঝিয়ে বলেন যে তার বরেই রাবন দেবতার অবধ্য। এখন যুদ্ধ হলে দেবতারা রাবনকে বধ করতে পারবেননা।
নারায়নের প্রশ্নের উত্তরে ব্রম্মা জানালেন যে স্বয়ং নারায়ন রঘু বংশে দশরথের ঔরশে কৌশল্যার গর্ভে পুনরায় জন্ম নিবেন এবং রাবনকে বধ করতে পারবেন। এদিকে নারায়ন জন্ম নিবেন মানুষ রুপে তার পত্নী লক্ষী তখন যাবেন কোথায়? তখন ব্রম্মা বললেন লক্ষী মিথিলার রাজা জনকের রাজ্যে সীতা হয়ে জনম নিবেন। আর অন্য দেবতারা যায় কোথায়? তারা তখণ সবাই বানর হয়ে জন্ম নিবেন বলে ঠিক হল।
তখন রাজা দশরথ পুত্র সন্তানের জন্য যজ্ঞ করেন এবং যজ্ঞের মুনি ঋষ্যশৃঙ্গ যজ্ঞ থেকে একটা ফল পান এবং সেই ফল রাজাকে দিয়ে তার পত্নীদের খাওয়াতে বলেন।
সেই মোতাবেক দশরথ ফল নিয়ে দুই ভাগ করে তার প্রধান দুই রানী কৌশল্য আর কৈকেয়ীকে খেতে দেন। এমন সময় ৩য় রানী সুমিত্রা এসে কান্নাকাটি করল পুত্রলাভের ফলের জন্য। তখন কৌশল্যা দয়াবতী হয়ে তার ভাগের আর্ধেকটা ফল আরো দুভাগ করে একভাগ সুমিত্রাকে দেন।
যথাসময়ে কৌশল্যার ঘরে রাম জন্ম নিলেন। ক'দিন পর কৈকেয়ীর ঘরে ভরত জন্ম নেন আর সুমিত্রার ঘরে যময পুত্র লক্ষন আর শত্রুঘ্ন জন্ম নেন।
এই হল রাম লক্ষন ভরত শত্রুঘ্নদের জন্ম কাহিনী।
একই সময়ে লক্ষী মিথিলার রাজা জনকের ঘরে সীতা বা জানকী হয়ে জন্ম নেন আর দেবতারা সব বানর হয়ে জন্ম নেন।
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে
তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না
সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন
লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা
ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।
মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না
নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন