সুমন আশুলিয়ার একটা গার্মেন্টসে চাকরি করে।বেতন যা পায় তা দিয়ে কষ্ট করে নিজে চলে আর বাড়িতে ২ হাজার টাকা পাঠাতে পারে।বাবা বেচে নেই।মা,ছোট একটা বোন আর একটা ছোট ভাই নিয়েই তাদের পরিবার।
খেয়ে পরে বেচে থাকার সংসার।মা ভাই বোনদের কখনও বাড়তি কিছু কিনে দিতে পারেনি।এই ঈদে কিছু টাকা বোনাস পাবে তা দিয়ে চিন্তা করলো ভাইকে একটা ক্রিকেট ব্যাট আর একটা গেঞ্জি কিনে দিবে।বাড়িতে গেলেই দেখে ছোট ভাইটা অন্যের ব্যাট দিয়ে খেলে।খুব শখ তার নিজের একটা ব্যাট হবে।
বোনটা আমার সাজতে চায় কিন্তু কখনও মুখ ফুটে বলে না আমার এইটা লাগবে ভাইয়া।অভাবের সংসার।তাই নিজের ইচ্ছা হয়ত প্রকাশ করতে নেই।
বোনটাকে একটা লাল টুকটুকে শাড়ি কিনে দিবে সাথে টিপ,চুড়িও দিবে।ঈদের দিন সুন্দর করে সেজে বান্ধবীদের নিয়ে ঘুরবে।বোন তার বয়সে কাছাকাছি আগে যখন বাবা থাকতো সুমনের কিছু লাগলে বোনটাই বাবার কাছে সুপারিশ করতো যে ভাইয়া পিকনিকে যাবে ভাইয়ার জুতা লাগবে।
মায়ের দিকে এখন আর তাকাতে পারেনা সুমন।তার আম্মার এখন সব দায়িত্ব।নিজের দিকে খেয়ালও করেনা এই মহিলা।এত আত্মত্যাগ পৃথিবীতে কেউ করতে পারে বলে জানা নেই সুমনের।বাড়িতে একটা মুরগি রান্না হলে নিজে কখনই খাবেনা।আম্মা অনেক অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।ঈদের পর আম্মাকে ঢাকায় এনে ডাক্তার দেখাবে।আম্মার জন্যই বেচে থাকা।
তবুও তাদের সংসারটা অনেক সুন্দর।অভাব থাকলেও তাদের কোন লোভ নেই।
একদিন বন্ধ পেয়ে নিউমার্কেট এর দিকে রওনা হল সুমন।বাসে বসে চোখ বন্ধ করে বাড়ির কথা চিন্তা করতেছে।অনেকদিন পর বাড়ি যাবে ভাবতেই তার মনটা খুশিতে ভরে যাচ্ছে।আরও একজন তার অপেক্ষায় থাকবে।সুমন কষ্ট করে একদিন সব অভাব দুর করবে।বোনটাকে বিয়ে দিয়ে দেয়ার পর তাকেও ঘরে নিয়ে আসবে।
বাসে এক ফেরিওয়ালা উঠলো কি যেন কি বিক্রি করতেছে সে খেয়াল করেনি।ফেরিওয়ালার একটা কথা তার কানে এল “এত টাকা দিয়ে কি হবে, সুখ কি টাকা দিয়া পাওয়া যায়রে ভাই,গুলশানে ৫ টা ফ্ল্যাট এক লোকের কিন্তু লোকের প্রস্ত্রাব হয়না। বলুন তার কি সুখ আছে? আমার কাছ থেকে ২০ টাকার একটা ট্যাবলেট নিন আপনার প্রস্রাব………….”
সুমনের কথাটা ভালই লাগলো আসলেই সুখ টাকা দিয়ে পাওয়া যায়না।
বাস থেকে নেমে মার্কেট এ ডুকলো।
সবার জন্যই কিছু কিনলো।নিজের জন্য কিনতে ভুলে গেল।
কিন্তু নিজের জন্য কিছু না কিনলে আম্মা রাগ করবে বলে ফুটপাথ থেকে একটা গেঞ্জি নিল।
এখন সে তার গার্মেন্টসে যাবে পরের দিন বাড়ি যাবে খুব খুশি লাগছে তার।
ঢাকা কলেজের সামনে থেকে বাসে উঠবে।ওভারব্রিজ এ না উঠে রাস্তা দিয়েই হাটা শুরু করলো।
জুতাটা একটু ছেড়া ছিল হটাত পুরো ছিড়ে যাওয়ায় রাস্তার মাঝখানেই থেমে যেতে হল তাকে।
কখন যে একটা বাস তার উপর দিয়ে চলে গেলো বুঝতেই পারেনি।
মাথা ফেটে তার লাল রক্ত তার বোনের জন্য কেনা লাল শাড়িতে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে।তার দেহটা আস্তে আস্তে মাটিতে পরে গেল।
মাগরিবের আজান হচ্ছে।তার মা মুরগীগুলি খাচায় ভরে নামাজে বসল।কাল ছেলে যাতে সাবধানে আসতে পারে দোয়া করতে থাকলো……..
(শেষে একটা কথাই বলতে চাই সময় বড় জীবন বড় এই নীতি কথার থেকে সাবধানে ডানে বায়ে দেখে রাস্তা পার হবেন।অসাবধানতার ফলে একটি মানুষের দৈহিক মৃত্যু ঘটে আর অনেকগুলি মানুষের বেচে থেকেও বারবার মৃত্যুবরণ করতে হয়)
তানভীর মাহমুদুল হাসান
২/৮/২০১২
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:২০