somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ম ও বস্তুবাদ ঃ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অবান্তর সংঘাত

০২ রা আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৫:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধর্ম ও বস্তুবাদ ঃ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অবান্তর সংঘাত

যুক্তির শেষ কোথায়। অথবা যুক্তি-তর্কের লাস্ট স্টপেজ বলে আদৌ কি কিছু আছে ? যুক্তি আর রাজনীতি কি একই মাল্যের ফুল, যার সমাপ্তি নেই বলে সর্বজন স্বীকৃত ? তাই যদি হয়, তাহলে যুক্তিবাদী আর রাজনীতিক কি একই কাতারের সৈনিক ? কিন্তু তাদেরও তো শেষ আছে। তিরোধান অন্তর্ধান আছে। তারাও তো বেলাশেষে খেলাশেষে নীরব নিথর হয়ে পড়ে থাকে। চিরকালের মতো ঘুমিয়ে থাকে। তবে তাদের মস্তিষ্ক উত্থিত যুক্তির কফিন কেন কবর খুঁজে পাবেনা ? তাদের চিন্তা-তর্ক-মতবাদ কেন সমাপ্তির চিরায়ত আইন উপেক্ষা করে, কালের দুর্লঙ্ঘ প্রাচীর ভেঙে অসমাধিত জাগরুক থাকবে চিরকাল ?
ভালো কথা, যুক্তিবাদীরা মাটির তৈরি আদম সন্তান হলে যুক্তিও তো পৃথিবীর অংশ বৈ নয়। আদমের সমাধি থাকলে যুক্তির সৌধ কোথায় ? সবাই মানে, পৃথিবীর শেষ আছে। মহাপ্রলয় আর কেয়ামত যা-ই বলুন, আছে তো ! তখন এত সাধের যুক্তি ঠাঁই পাবে কার আঁচল তলে ? যুক্তিকে কোনমতে কি পৃথিবীর পরিচালক বলা যায় ? ‘মাটির তৈরি আদম’ বলেÑসন্দেহ নেইÑডারউইনের সঙ্গে বখেরা বাঁধিয়ে দিয়েছি। এখন আস্তিক ও নাস্তিক মিলে তর্কের আসর বসাবেন। আমার প্রশ্ন, যুক্তির কি কোন বস্তুগত অস্তিত্ব আছে ? নাকি এটা কেবলই কথার মারপ্যাঁচ, যেখানে অগুণতি মেধাবীরা অহর্নিশ ফেঁসে যায় নেহাৎ গবেটদের ফাঁদে ? যেমনÑ রাবেয়া বসরী একদিন রান্নার জন্য আগুন খুঁজতে বেরিয়েছেন। পথে কাউকে জ্বলন্ত কুপি হাতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় পেলে আগুন ? সে ফু দিয়ে দপ করে কুপিটি নিভিয়ে দিলো। তারপর প্রত্যুত্তর করলো, আপনি বলুন, আগুনটা এখন কোথায় গেলো ?
বস্তুবাদীরা ভালো বলতে পারবেন, যদ্দুর মনে পড়ে, যুক্তি কোন বস্তুর অধীন থেকেই শুধু ক্রিয়া ফলাতে পারে। এটা মেনে নিলে বস্তুর সঙ্গে যুক্তির সমাপ্তি ঘটতে বাধ্য। হ্যাঁ, ক্রিয়া সংঘটনের নেপথ্যে থাকে যুক্তির রসায়ন। তাই তাকে অবহেলা করা চলেনা। কিন্তু বস্তুর নেপথ্যে কী আছে ? বস্তুর অস্তিত্ব ও অনস্তিত্ব ঘটে বা ঘটবে কার মাধ্যমে ? কে সেই মহা শক্তিমান ? এ প্রশ্নও কি ফেলে দেয়া যায় ? বস্তু বলতে আমি ক্ষুদ্র বালুকণা থেকে সুবিশাল বিশ্বজগত অবধি কোনকিছুকেই বাদ দিতে চাই না। যুক্তি দিয়ে যা প্রমাণ করা যায় না, বস্তুবাদীরা তা অবান্তর বলে উড়িয়ে দিতে চান। অদৃশ্য; অবয়ব না থাকলেও অস্তিত্ব আছে, এমন বস্তু মানতেও তাদের অস্বস্তি। বিজ্ঞান বলে, চোখে দেখা সব দৃশ্যের ধারনাও সঠিক নয়। আমরা গোঁধুলি বেলায় আবির মাখানো আকাশ দেখি। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলায় ছবি। এইসব নাকি আলোর ভেলকি। চোখের ভুল। শৈশবে ইংরেজি বইতে পড়া বাক্যÑদ্য স্কাই ইজ ব্লুÑআকাশের রঙ নীলÑ সেটাও ভুল। পৃথিবী থেকে আকাশের দূরত্ব যতখানি, আমাদের দৃষ্টি ততটা পাওয়ারফুল নয়, শূন্যের একটা স্তরে আইলাইট বাধা পেয়ে নীল আবরণ ছড়িয়ে দেয়।
আমাদের এক টিচার একবার হাতে একটা কলম নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, বলতো, এটা কি ? আমরা তো অবাক। এটা যে কলম সেটা স্যার জানেন নাÑ এমন সন্দেহ করাটা বোকামি। আমরা সাহস করে বললাম, কলম, স্যার। স্যার বললেন, উঁহু, হয়নি।এটা একটা পদার্থ। এর নাম কলম। এবার আমরা আরো সাত হাত জলে। বলে কি, এই পদার্থের নামটা কলম ! তাহলে ‘পদার্থ’ নামটা কে দিলো ? সেটাও তো একটা নাম। আমি কেÑ কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে যদি, তবে উত্তরে আমাকে বলতে হবে, আমি একজন মানুষ; আমার নাম...! যদি কারো নাম মানুষ রাখা হয়Ñ‘মানব’ নাম তো আছেÑতখন কী বলবেন ? মানুষ বা মানবও তো একটা জাতির নাম বৈ নয় ? এখন প্রশ্ন উঠবে, অন্য কোন জাতি এসে মানুষকে ধরে বসলোÑ তোমরা কারা ? আমরা উত্তরে কী বলবো তখন ? বলবো, আমরা একটা সম্প্রদায়, আমাদের নাম মানব ! আবার তাদেরকে কেউ জিজ্ঞেস করলো। তারপর আবার তাদেরকে অন্যকেউ। এভাবে বহুদূর যাবে। শেষমেশ কেউ একজন থাকবে, যাকে জিজ্ঞেস করার মতো কিছুই বাকি থাকবেনা। কে তিনি ? তিনিই কি ¯্রষ্টা ?
অথবা যদি কেউ জানতে চায়, পদার্থ কি। উত্তরে পদার্থবিদদের বানানো সংজ্ঞা বলতে হবে। সেই সংজ্ঞার শব্দগুলি নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়Ñএটা কি, ওটা কিÑ এমন করে অনেক দূর, দূরান্ত। অসীম। অনন্তকাল।
যা হোক, আকাশের কথা চলছিলো। স্যাটেলাইট আবিষ্কারের পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা মহাশূন্যে নিত্য নতুন অনেক বিষয়ের সন্ধান পেয়েছেন, যা তাদের চিন্তা, চেতনা, কল্পনা, কিংবা অনুভবে আদৌ ছিলো না। যেমনÑ এক সময় আমরা জানতাম, সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা নয়টি। এখন দশটি। নতুন আবিষ্কৃৃত গ্রহটির নাম সবাই জানেÑ এক্স। এর মানে কি এসবের অস্তিত্ব আগে ছিলো না ? স্যাটেলাইটের আলো পড়তেই অলৌকিক অবিকল অস্তিত্বে এসে গেছে ? তাই যদি হয়, তাহলে বিগ ব্যাং-এর সময় এই স্যাটেলাইট কোথায় ছিলো ? আর তারপরে এই স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ যন্ত্র আবিষ্কারে মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে কেন ? প্রকৃতি অলমাইটি এত কিছু সৃষ্টি করলো, সেটা জানাতে তার কোন তাগিদ থাকবে না ? সে এর তুলনায় অতি নগণ্য কতক স্যাটেলাইট প্রযুক্তি মানুষকে অর্পণ করবে না ? কেন করবে না ? এটা কি প্রকৃতির খামখেয়ালি !
বস্তুবাদীদের মতে নীলাকাশ বা প্রথম আকাশের ধারনা বেমালুম ভুল। এই আকাশের নিচে, পৃথিবীর উপরে এই সুবিশাল শামিয়ানার নিচে যেই অধরা অস্পৃশ্য জগতÑ জানা-অজানা গ্রহ-উপগ্রহ, অগণিত নক্ষত্র মন্ডলি, ধুমকেতু, ছায়াপথ, কৃষ্ণ গহ্বর, অসংখ্য বরফি খন্ড এবং প্রতিনিয়ত সেখানে ঘটে চলা ঘটনা-দুর্ঘটনার কয়টাই বা বিজ্ঞান জেনেছে, আর কতটুকুই বা আমাদের জানিয়েছে ? যন্ত্র নির্ভর মানুষ কোনদিন আকাশে পৌঁছতে পারবে কি না, আজও তার নিশ্চয়তা দেয়নি বিজ্ঞান। অধিকাংশের ধারনা, চরম উৎকর্ষের পরেও সেটা সম্ভব নয়। যেখানে আমাদের সবচে’ নিকটবর্তী আকাশ ‘প্রথম আকাশ’ জয় করার ভয়ে তটস্থ বিজ্ঞান। সন্ত্রস্ত হয়ে পিছু হটে আসে তাবৎ দুনিয়ার তামাম আবিষ্কার। ‘সপ্ত আকাশের’ প্রসঙ্গ তোলা তো সেখানে নিতান্ত বাতুলতা, উলূবনে মুক্তো ছড়ানো বৈকি। অথচ সেই অধরা দুনিয়ার সন্ধান দিয়েছে ধর্ম; ধর্মীয় গ্রন্থাবলীর অথৈ রহস্যময় ভূবন।
পাঠক, আপনি সঙ্গে আছেন তো ! আমরা এতক্ষণে বস্তুবাদের সঙ্গে ধর্মের কথা বলার সূত্র ও সুযোগ খুঁজে পেয়েছি।
ফলাফল কী দাঁড়ালোÑ না-জানা, না-দেখা যদি অনস্তিত্বের প্রমাণ না হয়, তবে জগতের সকল কর্মকান্ডকে ¯্রষ্টাহীন প্রকৃতির কর্মযজ্ঞ বলে চালিয়ে দেয়া মূলত প্রকৃতির নয়, বস্তুবাদীদের খামখেয়ালি এবং অনানুসন্ধিৎসু মনের পরিচয়।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×