somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টের মতই বয়ে চলেছি তোমাকে।

০২ রা আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৪:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনের প্রথম পাসপোর্টটি যখন হাতে পেলাম- তখন আমার একুশ বছর বোধহয় তুমি তখন অষ্টাদশীর ছোঁয়ায়। হাতে নতুন পাসপোর্ট সে এক অব্যক্ত অনুভুতি, এক নতুন শিহরণ বলে বুঝনো যাবে না। পাসপোর্টের পাতা উল্টাই আর নাকের কাছে নিয়ে পাতার নতুন সুগন্ধ অনুভব করি। ঠিক তার কাছাকাছি সময় আমি আবিস্কার করলাম আমার স্বত্ত্বার মাঝে তোমার তীব্র উপস্থিতি। সেও এক অব্যক্ত শিহরণ। পাসপোর্ট সাথে নিয়ে কয়েকবার দেশের বাইরে গেলাম, পাঁচ বছর বাদে একবার রিনিউ করে নিলাম। পাসপোর্টটা সবসময় আমার সাথেই থাকল, শুধু সাথে থাকলে না তুমি। তোমার সাথে কোন কালেই আমার প্রেমের সম্পর্ক হলনা, হলনা কোনরকম কোন আন্ডারস্ট্যান্ডিং। তবুও আমার স্বত্ত্বার মাঝে তোমার তীব্র উপস্থিতি। যতবার তোমার কাছাকাছি হতে চেয়েছি, ততবারই ফিরিয়ে দিয়েছ। তোমার সবটুকু ভালবাসা হয়তো আমার জন্যই ধরে রেখেছিলে অথবা না। হয়তো এখনও আমাকেই ভালবাস অথবা না। সে রহস্য ভেদ করার এখন আর সময় নেই, নেই কোন ইচ্ছে। তোমার আশে পাশের মানুষগুলোর কথার সাথে আজও তোমার কথার কোন মিল খুজে পাইনা।

প্রথম পাসপোর্টটা নিয়ে সর্বশেষ যেদিন সন্ধায় আমার দিল্লি, আগ্রা এবং জয়পুর যাবার কথা, সেদিন সকালেই হাজির হয়েছিলাম তোমার হলের গেটে। তোমার তখন মাত্র ঢাবিতে মাস্টার্স পরিক্ষা শেষ। বিয়ে নিয়ে ফ্যামিলির সাথে তীব্র মতবিরোধ, সবার সন্দেহের তীর আমার দিকে। নিউমার্কেটের সামনে দাড়িয়ে অনেক কথা বললাম সেদিন, এক সময় বললাম - তোমার সাথে আরো অনেক কথা আছে। তুমি বললে কি কথা বলেন, প্রায় দুই ঘন্টা ধরে কথা বলছি শুধু আমার কথাই বললেন, নিজের কথাতো কিছুই বললেন না, দুই ঘন্টা কি কম সময়? আমি বললাম - দুই ঘন্টা আসলেই অনেক কম সময়, এত কম সময় আমার হবে না, আমার কথা শুরু করতে পারি, কখন শেষ হবে আমার কোন ধারনা নেই, এমনও হতে পারে আমার কথা শেষ হবার আগেই তোমার মাথার সমস্ত চুল সাদা হয়ে যেতে পারে। পারবে আমাকে এতটা সময় দিতে? তুমি অট্টহাসি দিলে, মনে হল শুন্যে ভাসছ, বললে - আর আধ ঘন্টা সময় দিতে পারি, এর বেশী পারব না। সেই আধ ঘন্টা সময় মনে হয় এখনও আমার প্রাপ‌্য রয়ে গেছে। সবশেষে বললাম - ফিরে এসে আবার এ নিয়ে কথা বলব, তুমি পারমিশান দিলে তোমার ফ্যামিলির সাথে কথা বলব, ততদিন শক্ত থেকো। উদাসভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললে - চেষ্টা করব। ইন্ডিয়া থেকে ফিরে এসে দেখি তোমার ভিন্নরুপ, ক্ষনে ক্ষনে বদলায়। দোদু্ল্যমান তুমি সিদ্ধান্ত নিতে পারলে না। কোনদিনই বলতেও পারলে না আমাকে ভালবাসার কথা। আমিও অনড়, যে যাই বলুক তোমার অনুমতি ছাড়া একপাও আগাবো না। তোমার আশে পাশের মানুষগুলোর কটাক্ষ দৃস্টি আর বাক্যের তীর, যেন সব দোষ আমার একার। এভাবে কিছুদিন চলতে চলতে আমার প্রথম পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেল, শেষ হয়ে গেল একটা শতাব্দি। আমার আশে পাশে তখন অসংখ্য গোপিনীদের ভীড়, তাদের উপদ্রপে শেষ আশ্রয় চাইলাম তোমার কাছে, তুমি আশ্রয় দিলে না, জানিয়ে দিলে তোমার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত - আমি হয়ে গেলাম অস্তিত্ত্বহীন।

এলো নতুন শতাব্দি। মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টটার সাথে যোগ হল নতুন আর একটা পাসপোর্ট। তোমারও তখন মেয়াদ শেষ, সাথে সাথে আমার জীবনে যোগ হল আর একজন নতুন মানুষ, যে গোপিনীদের কেউ নয়। চিনতাম না, জানতাম না এরকম একজন মানুষকেই নিজের জীবনের সাথে স্থায়ীভাবে জড়িয়ে নিলাম। যে ভালবাসায় ভোলায় মোরে মিছে আশায় ভোলায় না, দু:খ সুখে দোলায় মোরে কল্পনাতে দোলায় না, সেইতো আমার প্রিয়। সে হয়ে গেল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ নারী। আর তুমি - নহ মাতা নহ কন্যা, নহ বধু সুন্দরী রুপসী হে নন্দন বাসিনী উর্বসী। তোমার জন্য আমার মধ্যে কোন আফসোস নেই, নেই কোন জেলাসি, শুধু মনে মনে বলি ভাল থেকো তুমি। মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছে করে, তুমিকি সেই আগের মতই আছো, নাকি অনেক খানি বদলে গেছ? নতুন পাসপোর্টে ভিসা লাগিয়ে দেশের বাইরে যেতাম, প্লেনে চড়তে ভীষন আনন্দ লাগত। ভাল লাগত নতুন মানুষটার সংস্পর্শ। পুরানো পাসপোর্টটা সাথেই থাকে আর সাথে থাকে তোমার অস্তিত্ত্ব।

সময় বয়ে যায় নিজের গতিতে, নুতন মেহমান এলো বাসায়, নতুন পাসপোর্টাকে আবার রিনিউ করতে হল। এরপর আরেকজন নতুন মেহমান, আমার মেয়েটা জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত অনুভব করছি ক্রমশ তার মধ্যে তোমার স্বত্ত্বা প্রকট হয়ে উঠছে। ঠিক ধীরে ধীরে ফিরে আসছ তুমি। তার মাকে প্রায়ই বলি, দেখ আমার মেয়েটার চেহারা দেখতে ঠিক তার (তোমার) মত না! সে হাসে, বলে সব সময় তার কথা চিন্তা করোতো সে জন্যই এরকম মনে হয়। জানিনা সেটাকি শুধুই আমার ভ্রম, নাকি সত্যি সত্যি আমার মেয়েটা দেখতে তোমারই মত, গায়ের রংটাও। হ্যাঁ মিল অবশ্যই কিছুটা আছে, স্রস্টাই জানেন এর রহস্য। সময় বয়ে চলে এক সময় দ্বিতীয় পাসপোর্টটাও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়।

এখন আমার মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট, সাথে জুড়ে আছে আগের দুইটা। রিক্সা, প্রাইভেটকার আর প্লেন জার্নি খুব একটা নাড়া দেয় না আমাকে। পাসপোর্টের পাতায় শুধুই কাগজের গন্ধ, নেই কোন শিহরণ। সেই নতুন মানুষটার সাথে সম্পর্ক এখন ভীষন রকম স্থিতিশীল। খুব একটা মতবিরোধ হয় না। ঝগড়া কিংবা মান অভিমান খুজে পাইনা সহসা। আছে বিশ্বাস আস্থা আর ভালবাসা (নাকি দায়বদ্ধতা?)।

সেদিন আমার এক বাল্যবন্ধু বলছিল - এই বয়সে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা হয়ে যায় ভাইবোনের সম্পর্কের মত। কথাটা মনে হলে হাসি পায়, খুব একটা ভুল বলেনি কথাটা। এত স্থিতিশীলতায় মাঝে মাঝে দম বন্ধ লাগে। দীর্ঘ্য নি:শ্বাস নিতে মন চায় ছুটে যাই প্রকৃতির কাছে, নদীতে নৌকায় ঘুড়তে একা এবং সম্পূর্ণ একা। নিজের জন্য চাই একটু আলাদা সময়, একটু আলাদা স্থান যেখানে থাকব আমি শুধুই একা। আশপাশের সব কিছুকে বলতে ইচ্ছে হয় - আমাকে আমার মত থাকতে দাও, আমি নিজেকে নিজের মত গুছিয়ে নিয়েছি। খুজে পাইনা স্থান, সময় হয় না।

বয়ে চলি নিজের বর্তমান আর মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের সাথে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টের মতই বয়ে চলেছি তোমাকে।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫০
৪৬টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×